নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাটির তৈরী নাকি নূরের তৈরী?

হে নবী আপনি বলে দিন আমি তোমাদের মতো মানুষ  আল্লাহর নূরে নবী পয়দা কুরআনে প্রমাণ  নবী কিসের তৈরি মাটির না নুরের  নবী কিসের তৈরি আমির হামজা  Q  Q  Q  নবীজি মাটির তৈরি  নবী কিসের তৈরি আল কাউসার  Islami Jindegi  http://www.islamijindegi.com › মা...  রাসূল মাটির তৈরী না নূরের তৈরী  ৩। মিশকাত শরীফ ২য় খন্ড ২৫০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছেঃ হযরত আয়িশা রা. বলেন, "রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একজন মানুষ ছিলেন।” ৪। বুখারী শরীফ ১ম ...  P  Priyo  https://m.priyo.com> রাসুল-সা-...  রাসুল [সা.] নুরের তৈরি নাকি মাটির তৈরি মানুষ  পশ্ন কথিত আছে যে আমাদের নবী মহাম্মাদ আলাইহিসপ্রশ্ন রাসূল (ছাঃ) কি নূরের না মাটির তৈরী?,নবীজী মাটির না নূরের তৈরী? - জামিআ আরাবিয়া লিল বানাত,রাসূল সাঃ মাটির তৈরী কোরআন ও হাদিস থেকে দলিল দ্বারা প্রমানিত,নবিজী মোঃ (সঃ) কি নূরের তৈরী নাকি মাটির নাকি নুর এবং মাটি উভয় দিয়ে .

 প্রসঙ্গঃ নুরের তৈরীঃ

আদম আঃ মাটির তৈরী। মানে মাটি আগে আদম পরে।জাহাজ লোহার তৈরী,মানে লোহা আগে জাহাজ পরে।রুটি ময়দার তৈরী মানে ময়দা আগে রুটি পরে।

এবার বুঝুন নবীজীﷺ নুরের তৈরী এমন বলতে গেলে তো নুর আগে সৃষ্টি এবং নবীজী নুরের পরে সৃষ্টি মানতে হবে!। 

আসলে তো তেমন নয়, আসলে তো নবীজী اول الخلق, আসলে তো নবীজীই সৃষ্টির শুরু এবং প্রথম।

তো নুরের তৈরী না বললে সমস্যা কোথায়?ডাইরেক্ট ১ম সৃষ্টি যে নুর সেটাই নবীজী,সেটাই নুর নবী,সেটাই খোদার জাতের জ্যোতি,সেটাই লুমআয়ে উ'লা,সেটাই জাতিনুর।এমনটি বললে কোন আকিদাগত সমস্যা হয়?নিশ্চয় নয়।

নাহ্, জাতিনুর বলে কেউ আবার এটা বুঝে যাবেননা যে আল্লাহর জাতের অংশ,বা জাতেইলাহীর দ্বিতীয় রূপ, পরিবর্তিত রূপ!।না না এমন না।العياذ بالله এমনটি বললে বা বিশ্বাস করলে যে শিরক হয়!মুরতাদ হয়ে যায়!এর দায়ী কে হবে?

আলাহজরত এ ব্যাপারে সমাধান তো দিয়েই গেছেন।

যার সারসংক্ষেপ হলোঃ

হাদিসে জাবিরের ❝নুরা নবীয়্যীকা❞এবং

 ❝মিন নুরীহী❞ 

উভয় ইবারতেই এযাফতদ্বয় এযাফতে বয়ানিয়্যাহ্।মানে মিন জাতিহী এবং নবীয়্যাকা।

অর্থাৎ আল্লাহ পাক স্বয়ং কোন মাধ্যম ছাড়াই কুদরতে কামেলায় কুন দ্বারা মুহাম্মদ সৃষ্টি করেছেন।❝মুস্তফা নুরে জনাবে আমরে কুন❞

"নুরে আওয়াল কা জলওয়া হামারা নবী"।

আগে নুর সৃষ্টি করে তা থেকে পরে নবীকে সৃষ্টি করেছেন, বিষয়টি এমন নয় এরকমও নয়!।

না বুঝলে বা বুঝতে না পারলে, বুঝতে চেষ্টা করুন!জাননে ওয়ালার সহযোগিতা নিন! সমস্যা কোথায়!?

শুধু আক্ষরিক বিতর্ক করে সাধারন সুন্নীদেরকে ডিভাইড করে কি লাভ বলুন!

আমাদের প্রিয় নবী রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নূর মুবারক সর্বপ্রথম সৃষ্টি। যখন আরশ-কুরছি, লাওহ-কলম, জান্নাত-জাহান্নাম, আসমান-জমীন কোন কিছুই ছিল না তখনও সেই নূরে মুহাম্মাদী ছিল। হযরত আদম (আঃ) সৃষ্টির ১৪ হাজার বছর পূর্বেও প্রিয় নবীজি নূর হিসেবে ছিলেন। এক পর্যায়ে সেই নূরে মুহাম্মদীকেই হযরত আদমের পৃষ্ঠদেশে রাখা হয়েছে। অতঃপর সেই নূর ধারাবাহিকভাবে নবীজির পিতা হযরত আব্দুল্লাহ (রাঃ) এর পেশানি হয়ে মা আমেনা (রাঃ) এর রেহেম-এ শুভাগমন করেন। আর সেই নূরে মুহাম্মদী থেকেই রাসূলে পাক (দঃ)এঁর জেসেম বা দেহ মুবারক সৃষ্টি হয়েছে এবং মানবরূপে প্রকাশ হয়েছেন। অতএব, প্রিয় নবীজি (দঃ) সেই নূরে মুহাম্মদী থেকেই তৈরী বা নূরের তৈরী। নিচে এ বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের কয়েকজন ইমামের মতামত উল্লেখ করা হলো।

হে নবী আপনি বলে দিন আমি তোমাদের মতো মানুষ  আল্লাহর নূরে নবী পয়দা কুরআনে প্রমাণ  নবী কিসের তৈরি মাটির না নুরের  নবী কিসের তৈরি আমির হামজা  Q  Q  Q  নবীজি মাটির তৈরি  নবী কিসের তৈরি আল কাউসার  Islami Jindegi  http://www.islamijindegi.com › মা...  রাসূল মাটির তৈরী না নূরের তৈরী  ৩। মিশকাত শরীফ ২য় খন্ড ২৫০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছেঃ হযরত আয়িশা রা. বলেন, "রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একজন মানুষ ছিলেন।” ৪। বুখারী শরীফ ১ম ...  P  Priyo  https://m.priyo.com> রাসুল-সা-...  রাসুল [সা.] নুরের তৈরি নাকি মাটির তৈরি মানুষ  পশ্ন কথিত আছে যে আমাদের নবী মহাম্মাদ আলাইহিসপ্রশ্ন রাসূল (ছাঃ) কি নূরের না মাটির তৈরী?,নবীজী মাটির না নূরের তৈরী? - জামিআ আরাবিয়া লিল বানাত,রাসূল সাঃ মাটির তৈরী কোরআন ও হাদিস থেকে দলিল দ্বারা প্রমানিত,নবিজী মোঃ (সঃ) কি নূরের তৈরী নাকি মাটির নাকি নুর এবং মাটি উভয় দিয়ে .

ইমাম ইবনে হাজার মক্কী হাইতামী রহ. বলেন-

اختلفت الروايات في اول المخلوقات وحاصلها كما بينتها في شرح الشمائل الترمذي أن اولها النور الذي خلق منه عليه الصلاة والسلام ثم الماء ثم العرش.

অর্থাৎ, প্রথম সৃষ্টি সম্পর্কিত রেওয়ায়েত গুলোর মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে, মূল বক্তব্য হলো যা আমি শরহে শামাইলে তিরমিজির মধ্যে বয়ান করেছি। নিশ্চয় সর্বপ্রথম সৃষ্টি হলো নূর, যা থেকে রাসুলে পাক (দঃ)কে সৃষ্টি করা হয়েছে। (মোল্লা আলী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ১/১৪৮, হা/৭৯)

ইমাম আব্দুল বাক্বী যুরকানী রহ. বলেন-

اشارة الى النور الذي خلق منه كما قال صلى الله عليه وسلم "يا جابر ان الله تعالى قد خلق قبل الاشياء نور نبيك من نوره" رواه عبد الرزاق.

অর্থাৎ, ওই নূরের প্রতি ইশারা করেছেন যা থেকে তিনি সৃষ্টি হয়েছে, যেমন রাসূলে পাক (দঃ) বলেছেন: হে জাবের! নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা সবকিছুর পূর্বে তার নূর থেকে তোমার নবীর নূর সৃষ্টি করেছেন, ইমাম আব্দুর রাজ্জাক রহ. ইহা বর্ণনা করেছেন। (শরহে যুরকানী আলাল মাওয়াহেব, ৫ম খন্ড, ২৬১ পৃষ্ঠা)    

ইমামুল হারামাইন ইমাম মোল্লা আলী কারী হানাফী রহ. বলেন-

وأنا أول المسلمين، وكان صلى الله عليه وسلم يقول تلك تارة وهذه أخرى; لانه اول مسلمي هذه الامة، بل جاء أن النور الذي خلق منه سبق إيجاده قبل خلق الخلق بأزمنة طويلة،

অর্থাৎ, আমি সর্বপ্রথম মুসলমান, আর প্রিয় নবীজি (দঃ) এই উম্মতের মাঝেও আরেকবার এরূপ বলেছেন, কেননা তিনি এই উম্মতের মাঝেও সর্বপ্রথম মুসলমান। বরং হাদীসে এসেছে- নিশ্চয় সকল সৃষ্টি অস্তিত্বে আসার পূর্বেই তিনি নূর ছিলেন যা থেকে তিনি সৃষ্টি হয়েছেন। (মোল্লা আলী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ২/৬৭২, হা/৮০১)

আরও পড়ুন....

• একজন মুসলমানের জানা উচিৎ!

• মৃত্যুর পরেও নেকি পাওয়ার ৬ টি উপায়

• হাদীসের আলোকে অধিকাংশ নারী জাহান্নামী হওয়ার কারণ

• ওহাবীরা বিশ্বাস না করলেও সত্য - হজরত তাহির কুর্দি(রহঃ) 

প্রখ্যাত তাবেঈ হযরত কা'ব আহবার রহ. বলেন-

وفي رواية كعب الاحبار أنه نودى تلك الليلة في السماء وصفاحها والأرض وبقاعها أن النور المكنون الذي منه رسول الله صلي الله عليه وسلم يستقر الليلة في بطن أمه،

অর্থাৎ, হযরত কা'ব আহবার রহ. এর এক বর্ণনায় রয়েছে- নিশ্চয় তিনি ওই রাতে আসমান ও জমীনে আহবান করেছেন, নিশ্চয় ইহা সুরক্ষিত নূর যা থেকেই প্রিয় নবীজি (দঃ) হয়েছেন এবং সেই রাতেই হযরত আমেনা (রাঃ) এর গর্ভে স্থিরীকৃত হয়েছেন। (তারিখুল খামীছ, ১ম খন্ড ১৮৫ পৃষ্ঠা)

ইমাম ইবনু জামাআ আল-কিনানী রহ. (ওফাত ৭৬৭ হি.) তদীয় কিতাবে আরেকটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করেছেন- 

ويروى أن الله تعالي لما أراد خلق نبيه صلي الله عليه وسلم في بطن أمه آمنة في ليلة رجب ليلة الجمعة أمر في تلك الليلة رضوان خازن الجنان ان يفتح أبواب الفردوس، ونودي في السموات والارض، بأن النور المكنون المخزون الذي يكون منه الهادي في هذه الليلة يستقر في بطن أمه الذي فيه يتم خلقه ويخرج الى الناس بشيرا ونزيرا.

অর্থাৎ, বর্ণিত আছে- নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা যখন রজব মাসে জুময়ার রাতে হযরত আমেনা রাঃ এর গর্ভে হযরত মুহাম্মদ (দঃ)কে মানবীয় সূরতে সৃষ্টি করতে ইচ্ছা করলেন, তখন রেদ্বয়ান ফেরেস্তা ও খাজিনুল জিনানকে জান্নাতুল ফেরদৌসের দরজাসমূহ খুলে দেওয়ার আদেশ দিলেন। আসমান ও জমীনে এলান করা হল- নিশ্চয় ইহা সুরক্ষিত ও আচ্ছাদিত নূর যা থেকে নবী হাদী (দঃ) হয়েছেন, এই রাতেই হযরত আমেনা রাঃ এর গর্ভে স্থিরীকৃত হয়েছেন, যিনি এককভাবে ছিলেন এবং মানব জাতির প্রতি সুসংবাদ দাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী হিসেবে প্রকাশ হবেন। (মুখতাসারুল কাবীর ফি সিরাতি রাসূল, ১ম খন্ড ২০ পৃষ্ঠা)

ঠিক অনুরূপ হযরত সাহল ইবনু আব্দির রহমান আল-তাসতারি রহ. (ওফাত ২৭১ হি.) বলেছেন-

ألا إن النور المخزون المكنون الذي يكون منه النبي الهادي في بطن آمنة

অর্থাৎ, শুনে রাখ! নিশ্চয় এই রাতে হযরত আমেনা রাঃ এর গর্ভে স্থিরীকৃত হয়েছে সুরক্ষিত ও আচ্ছাদিত নূর যা থেকেই নবী হাদী (দঃ) হয়েছেন। (শরহে যুরকানী আলাল মাওয়াহেব, ১ম খন্ড ১৯৭ পৃষ্ঠা)

ইমাম আবু জাফর মুহাম্মদ কালিনী আর-রাজী রহ. (ওফাত ৩২৮ হি.) তদীয় কিতাবে উল্লেখ করেন- হযরত আবু আব্দিল্লাহ (আঃ) থেকে সনদসহ বর্ণনা করেন-

وهو النور الذي خلق محمد صلي الله عليه وسلم وعليا رضي الله عنه،

অর্থাৎ, আর ইহা সেই নূর যা থেকে হযরত মুহাম্মদ (দঃ) ও হযরত আলী (রাঃ)কে সৃষ্টি করা হয়েছে। (আল উসূল মিনাল কাফী, ৩য় খন্ড ১৭ পৃষ্ঠা)

এ বিষয়ে আরো প্রচুর সংখ্যক দলিল রয়েছে যা এখানে উল্লেখ করা সম্ভব হচ্ছে না। 

অতএব, প্রিয় নবীজি (দঃ)'র নূর মুবারক সর্বপ্রথম সৃষ্টি এবং সেই নূরে মুহাম্মদী থেকেই তিনার জেসেম বা দেহ মুবারক সৃষ্টি। এটাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের চূড়ান্ত আক্বিদা। 


হে নবী আপনি বলে দিন আমি তোমাদের মতো মানুষ  আল্লাহর নূরে নবী পয়দা কুরআনে প্রমাণ  নবী কিসের তৈরি মাটির না নুরের  নবী কিসের তৈরি আমির হামজা  Q  Q  Q  নবীজি মাটির তৈরি  নবী কিসের তৈরি আল কাউসার  Islami Jindegi  http://www.islamijindegi.com › মা...  রাসূল মাটির তৈরী না নূরের তৈরী  ৩। মিশকাত শরীফ ২য় খন্ড ২৫০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছেঃ হযরত আয়িশা রা. বলেন, "রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একজন মানুষ ছিলেন।” ৪। বুখারী শরীফ ১ম ...  P  Priyo  https://m.priyo.com> রাসুল-সা-...  রাসুল [সা.] নুরের তৈরি নাকি মাটির তৈরি মানুষ  পশ্ন কথিত আছে যে আমাদের নবী মহাম্মাদ আলাইহিসপ্রশ্ন রাসূল (ছাঃ) কি নূরের না মাটির তৈরী?,নবীজী মাটির না নূরের তৈরী? - জামিআ আরাবিয়া লিল বানাত,রাসূল সাঃ মাটির তৈরী কোরআন ও হাদিস থেকে দলিল দ্বারা প্রমানিত,নবিজী মোঃ (সঃ) কি নূরের তৈরী নাকি মাটির নাকি নুর এবং মাটি উভয় দিয়ে .

এবার আলোচনা করি 'নুতফায়ে জাকিয়া' সম্পর্কে।

বর্তমানে একটি মহল প্রিয় নবীজির জেসেম বা দেহ মুবারক আমাদের মত নুতফার তৈরী, কখনো মদিনা শরীফের মাটির তৈরী প্রমাণের ষড়যন্ত্র করছে।

মনে রাখবেন, দয়াল নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মা আমেনা (রাঃ)'র গর্ভে نطفة الزكية (পবিত্র নুতফা) অবস্থায় ছিলেন! এই ধরণের কথা হিজরী ৯০০ বছর পর্যন্ত কেউ বলেননি। পরবর্তীতে যারা এই শব্দ ব্যবহার করেছেন সেটা ব্যাখ্যা সাপেক্ষ গ্রহণ করতে হবে। স্বয়ং ইমাম কাস্তালানী রহ. নিজেই نطفة الزكية এর ব্যাখ্যায় النور المكنون সুরক্ষিত নূর বলেছেন। ইমাম যুরকানী রহ. বহুবার النور المستقر في آمنة মা আমেনার গর্ভে নূর স্থিরীকৃত হওয়ার কথা বলেছেন। শায়েখ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিস দেহলভী রহ. স্পষ্ট করে বলেছেন- আব্দুল্লাহ'র ললাটে রক্ষিত নূরে মুহাম্মদী (দঃ) আমিনার গর্ভে স্থানান্তরিত হয়েছে। (মাদারেজুন নবুয়ত, ২/১০) কারণ এই নূর সবকিছুর পূর্বে সৃষ্টি হয়েছে। 

অপরদিকে طينة المدينة ত্বিনতে মদিনা বা মদিনার মাটি দিয়ে প্রিয় নবীজির জেসেম বা দেহ মুবারক সৃষ্টির কথাটি ভাবতেই তনু শিহরিয়ে ওঠে! কারণ মদিনা শরীফসহ গোটা আসমান ও জমীন সৃষ্টি হয়েছে প্রিয় নবীজির উছিলায়। 

সনদবিহীন মাকতু পর্যায়ের একটি জাল আছার দিয়ে প্রিয় নবীজিকে মদিনার মাটি দিয়ে সৃষ্টি বলার যৌক্তিকতা কি হতে পারে?! পাবলিককে বুঝানোর জন্য বলা হচ্ছে "নূরানী মাটি" কি হাস্যকর কৌশল।

অথচ স্পষ্ট উল্লেখ আছে- النور الذي خلق منه অর্থাৎ, নূরে মুহাম্মাদী থেকে রাসূলে পাক (দঃ) সৃষ্টি হয়েছে। এই নূর এর মারজা من نوره এর ه এর দিকে নয় বরং نور نبيك এর দিকে। নূরে মুহাম্মাদী থেকেই নূরনবী (দঃ) এঁর জেসেম মুবারক সৃষ্টি। সুতরাং প্রিয় নবীজি প্রথম সৃষ্টি থাকছে না! এরূপ অপব্যাখ্যার সুযোগ রইল না। কারণ প্রিয় নবীজি (দঃ) ছিলেন সেই নূরে মুহাম্মদী এবং সেই নূরে মুহাম্মদীই হলেন আমাদের দয়াল নবীজি (দঃ)। এখানে নবীজির "আউয়াল মাখলুক" নিয়ে আর কথা বলার কোন সুযোগ থাকে না। হযরত মুজাদ্দিদ আলফেসানী (রাঃ) বলেছেন- "রাসূলে পাক (দঃ) এঁর অজুদ বা দেহ মুবারক সম্ভাব্য জগত (মদিনার মাটি, নুতফা) থেকে সৃষ্ট নহে বরং তাদের বহু ঊর্ধ্বে। এজন্যই তাঁর দেহ মুবারকের ছায়া ছিল না। (মাকতুবাত শরীফ, ৫/৩৩৪, মাকতুব নং ১০০)

অতএব, যারা নবীজিকে নুতফার তৈরী বা মদিনার নূরানী মাটির তৈরী দাবী করছেন, তাদের তাহকীক সঠিক হতে পারেনা। আমরা দেখেছি তারাও একসময় প্রিয় নবীজিকে নূরের তৈরী বলেছে। নিচে বিস্তারিত আলোকপাত করা হল। 

সৃষ্টি জগতের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম। মানব জাতির মধ্যে نطفة নুতফার অস্তিত্বের বহু পূর্বেই প্রিয় রাসূল (দঃ) নূর হিসেবে ছিলেন। যেমন হযরত আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে আছে, প্রিয় নবীজি (দঃ) বলেছেন- 

كنت نورا بين يدى ربي قبل أن يخلق آدم بأربعة عشر ألف عام.

অর্থাৎ, হযরত আদম (আঃ) সৃষ্টি হওয়ার ১৪ হাজার বছর পূর্বে আমি আল্লাহ তা'য়ালার দরবারে নূর ছিলাম। (আজলুনী: কাশফুল খাফা, ১/২৩৮; কাস্তালানী: মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া, ১/৭২; সালেহী: সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১/৬৯)

অনুরূপ হযরত সালমান ফারসী ও হযরত জাবের (রাঃ) থেকেও মারফু হাদিস বর্ণিত রয়েছে। (আবুল হাসান ওয়াসেতী: মানাকিবু আলী ইবনে আবি তালিব, হা/৪৮৩-৮৪; আল-ফেরদৌস, হা/২৯৫২)

সুতরাং, নুতফাতো দূরের কথা, হযরত আদম আঃ সৃষ্টির ১৪ হাজার বছর পূর্বেও রাসূলে পাক (দঃ) নূর হিসেবে ছিলেন। অতঃপর পরবর্তীতে সেই নূরে মুহাম্মদীকেই হযরত আদম (আঃ)'র পৃষ্ঠদেশে রাখা হয়েছে। যেমন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ)'র বর্ণনায় রয়েছে,

فلما خلق الله آدم عليه السلام ألقى ذلك النور في صلبه 

অর্থাৎ, যখন হযরত আদমকে সৃষ্টি করা হলো তখন তাঁর পৃষ্ঠদেশে ওই নূর রাখা হল। (তারিখুল খামিস, ১/২১; আযরী: আশ-শারিয়াত, হা/৯৬০; তারিখে বাগদাদ, ১৭/৯৪; শরহে যুরকানী আলাল মাওয়াহেব, ১/৯৬)

অনুরূপ ইমাম আইদারুস রহ. এর 'আন-নূরুস সাফির' কিতাবে ১/৮-৯ এবং ইমাম ইবনু হাজার মক্কী রহ. এর 'আশরাফুল অসাইল' কিতাবে ১/৩৭ এর মধ্যে উল্লেখ রয়েছে। হাদীসটি মারফু ও মাওকুফ উভয়ভাবেই উল্লেখ আছে। 

অতঃপর সেই নূরে মুহাম্মদী (দঃ) একের পর এক পবিত্র পৃষ্ঠদেশ হয়ে স্বীয় পিতা হযরত আব্দুল্লাহ (রাঃ)'র পবিত্র পৃষ্ঠদেশ পর্যন্ত পৌঁছে। যেমন হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলে পাক (দঃ) বলেছেন-  

فأهبطني الله تعالي الي الارض في صلب آدم، وجعلني في صلب نوح، وقذف بي في صلب ابراهيم... حتى أخرجني من بين ابوي،

অর্থাৎ, আল্লাহ তা'য়ালা আমাকে জমীনের মধ্যে হযরত আদমের পৃষ্ঠদেশে অবতরণ করলেন, অতঃপর হযরত নূহ (আঃ) এঁর পৃষ্ঠদেশে ও হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এঁর পৃষ্ঠদেশের মাধ্যমে আগুনে নিক্ষেপ করলেন।.. এমনকি আমাকে আমার পিতা হতে বের করেছেন। (সালেহী: সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১/৬৯ ও ২৩৭: সিরাতে হালাভিয়া, ১/৪৬; সুয়ূতী: খাসাইসুল কুবরা, ১/৬৬; শিফা শরীফ, ৩২৮ পৃ.)

এটা সরাসরি হাদিসে রসূল (দঃ)। এভাবেই নূরে মুহাম্মদী হযরতে আব্দুল্লাহ'র পৃষ্ঠদেশ পর্যন্ত পৌঁছে। যেমন ইমাম ফখরুদ্দিন রাজি, ইমাম আবু হাইয়ান আন্দালুছী, ইমাম সিরাজুদ্দীন দামেস্কী, ইমাম কাস্তালানী, ইমাম যুরকানী রহ.সহ একদল ইমাম পবিত্র কোরআনের তাফসিরে বলেছেন-

وتقلبك في الساجدين قيل معناه انه كان ينتقل نوره من ساجد الى ساجد.

অর্থাৎ, সেজদাকারীদের মধ্যে আপনার তাকাল্লুব হয়েছে, বলা হয়: ইহার অর্থ হল- নিশ্চয় প্রিয় নবীজির নূর মুবারক এক সেজদাকারী থেকে আরেক সেজদাকারীর মধ্যে স্থানান্তর হয়েছে। (তাফসিরে বাহারে মুহীত, ৮/১৯৮; তাফসিরে কবীর, ১৩/৩২; আল-লুবাব ফি উলুমিল কিতাব, ৮/২৩৩; শরহে যুরকানী আলাল মাওয়াহেব, ১/৩২৭)

এখানে স্পষ্ট যে, নূর মুবারক স্থানান্তরিত হয়েছে, কোন নুতফা নয়। সেই নূরে মুহাম্মদী (দঃ) হযরত আব্দুল্লাহ'র ললাটে সূর্যের আলোর ন্যায় চমকাতো। যেমন প্রিয় নবীজির সন্মানিত চাচা হযরত আব্বাস (রাঃ)'র বর্ণনায় আছে-

ولد اخي عبد الله وهو اصغرنا كان في وجهه نور يزهر كنور الشمس،

অর্থাৎ, আমার ভাই আব্দুল্লাহ জন্ম হলো, সে আমাদের ছোট ছিল, তার চেহারার মধ্যে সূর্যের আলোর ন্যায় ঔজ্জ্বল্য বা নূর চমকাতো। (সুয়ূতী: খাসাইসুল কুবরা, ১/৮৩)

ইমাম আব্দুল বাক্বী যুরকানী রহ. বলেন-

نور نبينا محمد صلي الله عليه وسلم كان في وجبهته،

অর্থাৎ, প্রিয় নবী মুহাম্মদ (দঃ)'র নূর মুবারক হযরত আব্দুল্লাহ'র ললাটে ছিল। (শরহে যুরকানী আলাল মাওয়াহেব, ৭/৭৮)

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদার ইমাম, আবুল মনসুর মাতুরিদি রহ. বলেন-

والنور الذي كان في وجه من كان في صلبه وقت كونه فيه، والضوء الذي روي أنه كان وقت ولادته،

অর্থাৎ, নূর হলো যা (আব্দুল্লাহ'র) চেহারার মধ্যে ছিল এবং যা তাঁর পৃষ্ঠদেশে ছিল, আর সেই ঔজ্জ্বল্যটি ছিল যা তিঁনার জন্মের সময় দেখা গিয়েছে। (তাফসিরে মাতুরিদি, ৪/৪৯২)

সেই নূরে মুহাম্মদী (দঃ) হযরত আব্দুল্লাহ'র পৃষ্ঠদেশ থেকে স্বীয় মাতা হযরত আমেনার গর্ভে স্থানান্তরিত হয়েছে। স্পষ্টত যে, মা আমেনার গর্ভে যেটা ছিল সেটা কোন نطفة নুতফা ছিল না বরং نور محمدى নূরে মুহাম্মদী ছিল। যেমন হযরত কা'ব আহবার রহ. ও হযরত সাহল ইবনু আব্দিল্লাহ তাসতারী রহ. বলেছেন-

أن النور المكنون الذي منه رسول الله صلي الله عليه وسلم يستقر الليلة في بطن أمه آمنة،

অর্থাৎ, নিশ্চয় সুরক্ষিত নূর থেকেই রাসূলে পাক দঃ হয়েছেন, যা ওই রাত্রেই প্রিয় নবীজির মা আমেনার গর্ভে স্থিরীকৃত হয়েছে। (তারিখুল খামিছ, ১/১৮৫; শরহে যুরকানী আলাল মাওয়াহেব, ১/১৯৭; ইবনু জামাআ: মুখতাসারুল কাবীর, ১/২০)

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)'র হাদিস উল্লেখ করে ইমাম নুরুদ্দিন আলী হালাভী রহ. বলেন-

أنه حين وقع عليها انتقل اليها ذلك النور وقالت حمل برسول الله صلي الله عليه وسلم،

অর্থাৎ, নিশ্চয় যখন হযরত আমেনার গর্ভে নবীজির ধারণের বিষয়টি সংগঠিত হলো তখন তিনার মধ্যে এই নূর মুবারক স্থানান্তরিত হয়েছে। তিনি বলেন: রাসূলে পাক দঃ কে ধারণ করা হয়েছে। (সিরাতে হালাভিয়া, ১/৭০; শরহে যুরকানী আলাল মাওয়াহেব, ১/১৯৪; তারিখুল খামিছ, ১/১৮৫)  এ বিষয়ে সকল ইমামগণই বলেছেন- 

فقد انتقل النور المكنون الي بطن آمنة 

অর্থাৎ, সুরক্ষিত নূর মুবারক হযরত আমেনার গর্ভে স্থানান্তরিত হয়েছে। (তারিখুল খামিছ, ১/১৮৫)

হাদিস শরীফে আছে, প্রিয় নবীজি (দঃ) বলেছেন-

إن امي رأت في المنام أن الذي في بطنها نور، 

অর্থাৎ, নিশ্চয়ই আমার মা আমেনা (রাঃ) স্বপ্নে দেখেছেন তাঁর গর্ভের মধ্যে নূর রয়েছে। (সুয়ূতী: খাসাইসুল কুবরা, ১/৯৬; খারকুশী: শারফুল মুস্তফা, ১/৪৪৭)

হযরত আবু উমামা (রাঃ) ও একদল সাহাবী থেকে বর্ণিত অন্য হাদিস রয়েছে, 

ورأت امي حين حملت بي أنه خرج منها نور،

অর্থাৎ, আমার মা যখন আমাকে গর্ভে ধারণ করেন তখন দেখলেন, তাঁর মধ্য হতে নূর বের হচ্ছে। (আল-মুস্তাদরাক, হা/৪১৭৪; বায়হাক্বী: দালাইলুন নবুয়ত, ১/৮৩; সুয়ূতী: খাসাইসুল কুবরা, ১/৭৮)

এমনকি প্রিয় নবীজি (দঃ) যখন দুনিয়াতে শুভাগমন করেন তখনও মা আমেনা দেখেছেন নূরে বের হচ্ছে, যা একাধিক সহীহ্ হাদিসে রয়েছে। হযরত ইরবাদ্ব বিন সারিয়া (রাঃ)সহ একদল সাহাবী ইহা বর্ণনা করেছেন যে-

رَأَتْ حِينَ وَضَعَتْهُ نُورًا أَضَاءَتْ مِنْهُ قُصُورُ الشَّامِ 

অর্থাৎ, আমার আম্মাজান আমার জন্মকালে দেখেছিলেন- একটি নূর বের হয়েছে, যার ফলে সিরিয়ার প্রাসাদসমূহ পর্যন্ত আলোকিত করেছে।”

অতএব, বহু সংখ্যক হাদিস ও আইম্মায়ে কেরামের বক্তব্য দ্বারা বিষয়টি স্পষ্ট যে, প্রিয় নবীজি (দঃ) সৃষ্টির প্রথমেই নূর ছিলেন, নূর হয়েই হযরত আদমের পৃষ্ঠদেশে এসেছেন এবং নূর হয়েই সকলের পবিত্র পৃষ্ঠদেশ হয়ে হযরত আব্দুল্লাহ'র পবিত্র পৃষ্ঠদেশ হয়ে মা আমেনার গর্ভে নূর হয়েই স্থিরীকৃত হয়েছেন। সেই নূরে মুহাম্মদীই পৃথিবীতে মানবরূপে প্রকাশ হয়েছে। 

আ'লা হযরত রহ. এর দৃষ্টিতে নূরের তৈরী


হে নবী আপনি বলে দিন আমি তোমাদের মতো মানুষ  আল্লাহর নূরে নবী পয়দা কুরআনে প্রমাণ  নবী কিসের তৈরি মাটির না নুরের  নবী কিসের তৈরি আমির হামজা  Q  Q  Q  নবীজি মাটির তৈরি  নবী কিসের তৈরি আল কাউসার  Islami Jindegi  http://www.islamijindegi.com › মা...  রাসূল মাটির তৈরী না নূরের তৈরী  ৩। মিশকাত শরীফ ২য় খন্ড ২৫০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছেঃ হযরত আয়িশা রা. বলেন, "রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একজন মানুষ ছিলেন।” ৪। বুখারী শরীফ ১ম ...  P  Priyo  https://m.priyo.com> রাসুল-সা-...  রাসুল [সা.] নুরের তৈরি নাকি মাটির তৈরি মানুষ  পশ্ন কথিত আছে যে আমাদের নবী মহাম্মাদ আলাইহিসপ্রশ্ন রাসূল (ছাঃ) কি নূরের না মাটির তৈরী?,নবীজী মাটির না নূরের তৈরী? - জামিআ আরাবিয়া লিল বানাত,রাসূল সাঃ মাটির তৈরী কোরআন ও হাদিস থেকে দলিল দ্বারা প্রমানিত,নবিজী মোঃ (সঃ) কি নূরের তৈরী নাকি মাটির নাকি নুর এবং মাটি উভয় দিয়ে .

প্রিয় রাসূল (ﷺ) সৃষ্টির প্রথম, নূরের সৃষ্টি, জাতি নূরের জ্যোতি, তাঁর ছায়া মোবারক ছিল না, কারণ দেহ মোবারক নূর, নূরের বাশার মর্মে আ'লা হযরত তিনটি কিতাব লিখেছেন যথাঃ

১.সালাতুস্ সফা ফী নূরিল মুস্তফা।

২.নাফিউল ফায় আম্মান ইস্তানারা বি নুরিহী কুল্লা শাই।

৩.কামরুত তামাম ফী নাফি আয জিল আনসাইয়্যিদিল আনাম।

আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান রহ. লিখেন,

قال سألت رسول الله صلى الله عليه وسلم عن اول شئ خلقه الله تعالى فقال هو نور نبيك يا جابر خلقه الله

-‘হযরত জাবির রাদ্বি. বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট আরয করলাম যে, আল্লাহ্ তা‘আলা সবকিছুর পূর্বে সর্বপ্রথম কী সৃষ্টি করেছেন? জবাবে তিঁনি বললেন- হে জাবির! আল্লাহ্ সর্বপ্রথম তাঁর নূর থেকে তোমার নবীর নুর সৃষ্টি করেছেন।’ (আ‘লা হযরত: সালাতুস্ সফা ফী নূরিল মুস্তফা: ৫ পৃ.)

মাওলানা আবদুল আলিম ছিদ্দিকী মিরঠী আ'লা হযরতের সান্নিধ্যে উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানতে চাইলেন- হুযুর সর্বপ্রথম কোন জিনিস সৃষ্টি করা হয়েছে? আ'লা হযরত উত্তর দিলেন: হাদিসে আছে-

يَا جَابِرُ إِنَّ اللَّهَ قَدْ خَلَقَ قَبْلَ الْأَشْيَاءِ نُوْرُ نَبِيِّكَ مِنْ نُوْرِهِ 

-হে জাবের! আল্লাহ তায়ালা সমস্ত জিনিসের পূর্বে তোমার নবীর নুর তার নূর থেকে সৃষ্টি করেছেন।(মালফুজাত-ই আলা হযরত ১ পৃ. 'আল মদিনা প্রকাশনী)

আ'লা হযরত এখানে লিখেছেন সমস্ত জিনিসের পূর্বে নবীর নুর তার নূর থেকে সৃষ্টি। আ'লা হযরত আরো বলেন-

انه تعالى نور ليس كالانوار والروح القدسية لمعة من نوره والملائكة شرر تلك الانوار وقال صلى الله عليه و سلم اول ما خلق الله نورى ومن نورى خلق كل شئ

-‘আল্লাহ তা‘আলা নুর, তবে অন্য কোন নুরের মত নন। আর নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র রূহ্ সে নুরেরই ফয়েয বা জ্যোতি। আর ফেরেশতাগণ ঐ জ্যোতিরই ফুল। হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- আল্লাহ্ সর্বপ্রথম আমার নুরকে সৃষ্টি করেছেন, আর আমার নুর হতেই সবকিছু সৃষ্টি করেছেন।’ (আ‘লা হযরত: সালাতুচ্ছফা ফী নূরিল মুস্তফা: ০৩)

আ‘লা হযরত শাহ্ আহমাদ রেযা খান রহ.বলেন-

ﻧﻮﺭ ﻣﺤﻤﺪﯼ ﺟﺐ ﻗﺪﯾﻢ ﺍﻭﺭ ﺍﺯﻟﯽ ﻧﻮﺭ ﮐﯽ ﭘﮩﻠﯽ ﺗﺠﻠﯽ ﮨﮯ ﺗﻮ ﮐﺎﺋﻨﺎﺕ ﻣﯿﮟ ﺑﮭﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﺗﻌﺎﻟﯽ ﮐﮯ ﻭﺟﻮﺩ ﮐﺎ ﻭﮬﯽ ﺳﺐ ﺳﮯ ﭘﮩﻠﮧ ﻣﻈﮭﺮ ﮨﮯ

-‘নূরে মুহাম্মদি যখন নুরে কাদিম ও নুরে আযালি তথা আল্লাহর যাতের প্রথম তাজাল্লি। কাজেই সৃষ্টিসমূহের মধ্যেও তিনিই হলেন আল্লাহ্ তা‘আলার ওজুদ বা অস্তিত্বের প্রথম প্রকাশ।’ (আ‘লা হযরত: সালাতুস সফা ফী নূরিল মুস্তফা)

আ‘লা হযরত শাহ্ আহমাদ রেযা খান রহ. আরো বলেন-

حضور پر نور سيد عالم صلي الله عليه وسلم بلاشبہ اللہ عز وجل کے نور ذاتی سے پیدا ہین

-‘হুযুর পুর নুর সায়্যিদে আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ আযযা ওয়া জাল্লা-এর যাতি নুর থেকে সৃষ্টি।’ (আ‘লা হযরত: সালাতুস সফা ফী নূরিল মুস্তফা)

আ'লা হযরত এর আকিদা আল্লাহ্ সর্বপ্রথম নুর মোবারক সৃষ্টি করেছেন এবং জাতি নূর থেকে হুযুর পুর নুর সায়্যিদে আলমকে সৃষ্টি করেছেন, কিন্তু তথাকথিতদের আকিদা নূরের সৃষ্টি নয় কেবল নূর।

‘আল্লাহর প্রকৃত যাত (عين ذات الهى) থেকে সৃষ্টি’-এর দ্বারা কি উদ্দেশ্য- এ ব্যাপারে আ‘লা হযরত রহ. বলেন-

ﮬﺎﮞ ﻋﯿﻦ ﺫﺍﺕ ﺍﻟﮭﯽ ﺳﮯ ﭘﯿﺪﺍ ﮨﻮﻧﮯ ﮐﮯ ﯾﮧ ﻣﻌﻨﯽ ﻧﮩﯿﮟ ﮐﮧ ﻣﻌﺎﺫ ﺍﻟﻠﮧ ﺫﺍﺕ ﺍﻟﮭﯽ ﺫﺍﺕ ﺭﺳﺎﻟﺖ ﮐﮯ ﻟﮱ ﻣﺎﺩﮦ ﮨﮯ ﺟﯿﺴﮯ ﻣﭩﯽ ﺳﮯ ﺍﻧﺴﺎﻥ ﭘﯿﺪﺍ ﮨﻮﺍ ﯾﺎ ﻋﯿﺎﺫ ﺑﺎﻟﻠﮧ ﺫﺍﺕ ﺍﻟﮭﯽ ﮐﺎ ﮐﻮئى ﺣﺼﮧ ﯾﺎ ﮐﻞ ﺫﺍﺕ ﻧﺒﯽ ﮨﻮﮔﯿﺎ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ ﺣﺼﮯ ﺍﻭﺭ ﭨﮑﺮﮮ ﺍﻭﺭ ﮐﺴﯽ ﮐﮯ ﺳﺎﺗﮧ ﻣﺘﺤﺪ ﮨﻮﺟﺎﻧﮯ ﯾﺎ ﮐﺴﯽ ﻣﯿﮟ ﺣﻠﻮﻝ ﻓﺮﻣﺎﻧﮯ ﺳﮯ ﭘﺎﮎ ﻭﻣﻨﺰﮦ ﮨﮯ ﺣﻀﻮﺭ ﺳﯿﺪ ﻋﺎﻟﻢ ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻭﺳﻠﻢ ﺧﻮﺍﮦ ﮐﺴﯽ ﺷﺊ ﮐﻮ ﺟﺰﺀ ﺫﺍﺕ ﺍﻟﮭﯽ ﺧﻮﺍﮦ ﮐﺴﯽ ﻣﺨﻠﻮﻕ ﮐﻮ ﻋﯿﻦ ﻭﻧﻔﺲ ﺫﺍﺕ ﺍﻟﮭﯽ ﻣﺎﻧﻨﺎ ﮐﻔﺮ ﮨﮯ

‘আইনে যাতে ইলাহি বা আল্লাহর প্রকৃত যাত থেকে সৃষ্টি হওয়ার অর্থ এ নয় যে, (আল্লাহর পানাহ!) আল্লাহর যাত রাসুল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’র যাত সৃষ্টির জন্য মাদ্দা বা মূল ধাতু, যেমন মাটি দ্বারা মানুষ সৃষ্টি করা হয়েছে। অথবা (নাউযুল্লিাহ!) এর অর্থ এটাও নয় যে, আল্লাহর যাতের কোন অংশ বা আল্লাহর পূর্ণ যাত বা সত্ত্বা নবী হয়ে গিয়েছেন। মহান আল্লাহ্ অংশ, টুকরো এবং কোন কিছুর সাথে একাকার হয়ে যাওয়া অথবা কোন বস্তুর মধ্যে হুলুল (ভর করা বা একীভূত) হওয়া থেকে পবিত্র। হুযুর সায়্যিদে আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনকি কোন বস্তুকে আল্লাহর যাতের অংশ এমনকি কোন সৃষ্টিকে প্রকৃত যাত ও নফসে যাতে ইলাহি মানা বা আক্বিদা রাখা কুফরি।’ (আ‘লা হযরত: সালাতুস সফা ফী নূরিল মুস্তফা)

সুতরাং আল্লাহর প্রকৃত যাত (عين ذات الهى) থেকে সৃষ্টি-এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, কোন মাধ্যম ছাড়াই আল্লাহ্ তা‘আলার যাতের তাজাল্লি। 

এ ব্যাপারে আ‘লা হযরত রহ. আরো বলেন-

ﺍﻟﻠﮧ ﺗﻌﺎﻟﯽ ﻧﮯ ﻣﺤﻤﺪ ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻭﺳﻠﻢ ﮐﯽ ﺫﺍﺕ ﭘﺎﮎ ﮐﻮ ﺍﭘﻨﯽ ﺫﺍﺕ ﮐﺮﯾﻢ ﺳﮯ ﭘﯿﺪﺍﮐﯿﺎ ﯾﻌﻨﯽ ﻋﯿﻦ ﺫﺍﺕ ﮐﯽ ﺗﺠﻠﯽ ﺑﻼ ﻭﺍﺳﻄﮧ ﮨﻤﺎﺭﮮ ﺣﻀﻮﺭ ﮨﯿﮟ ﺑﺎﻗﯽ ﺳﺐ ﮨﻤﺎﺭﮮ ﺣﻀﻮﺭ ﮐﮯ ﻧﻮﺭ ﻭﻇﮭﻮﺭ ﮨﯿﮟ

-‘আল্লাহ্ তা‘আলা হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র সত্বাকে স্বীয় যাতে কারিম থেকে সৃষ্টি করেছেন, এর অর্থ হল- কোন মাধ্যম ছাড়াই আল্লাহ্ পাকের প্রকৃত যাতের তাজাল্লি আমাদের হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আর বাকি সব আমাদের হুযুরের নূরে প্রকাশ।’ (আ‘লা হযরত: সালাতুস সফা ফী নূরিল মুস্তফা)

অতএব, হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ পাকের যাতি নুর থেকে সৃষ্টি তথা তিনি কোন মাধ্যম ছাড়াই আল্লাহর যাতি নূরের ফয়েয বা জ্যোতি (বিচ্ছুরন) এবং তিনিই আল্লাহ্ পাকের প্রথম তাজাল্লি।

সেই সর্বপ্রথম সৃষ্টি নূর-এ মোহাম্মদী থেকেই রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আপাদমস্তক তৈরি। যার ফলে প্রিয় নবীজির দেহ মোবারক এর কোন ছায়া পড়তো না।

যেমন আ'লা হযরত রহ. আরো বলেন-

قال ابن سبع من خصائصه صلى الله تعالى عليه وسلم ان ظله كان لا يقع على الارض وانه كان نورا فكان اذا مشى فى الشمس أو القمر لا ينظر له ظل قال بعضهم ويشهد له حديث قوله صلى الله تعالى عليه وسلم في دعائه واجعلني نورا

ইবনে ছাবা' বর্ণনা করেছেন, হুজুর আকরম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা এর মহান বৈশিষ্ট্যর একটি ছিল যে, তাঁর ছায়া জমিনে পতিত হত না, তিনি শুধুই নূর ছিলেন। অতএব, তিনি যখন সূর্যের আলোতে চন্দ্রের কিরণে চলতেন, তাঁর ছায়া দৃশ্যমান হত না। (আ‘লা হযরত, নাফিউল ফায় আম্মান ইস্তানারা বি নুরিহী কুল্লা শাই, আল্লামা জয়নুল আবেদীন জুবায়ের সাহেব গ্রন্থটি নুরুল মোস্তফা নামে বাংলায় অনুবাদ করেছেন, ৪৬ পৃ)

আ'লা হযরত রহ. আরো বলেছেন-

لم يقع ظله على الأرض ولارئ له ظل في شمس ولا قمر قال ابن سبع لانه كان نور ا قال رزين لغلبة انواره

অর্থঃ- নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা এর ছায়া জমিনে পড়ত না। হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা এর ছায়া দৃশ্যমান হত না। সূর্য্যের আলোতেও না, চন্দ্রের কিরণেও না। ইবনে ছাবা বলেছেন- কেননা তিনি নূর ছিলেন। আর ইমাম রজিন বলেছেন, হুজুর আকরম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা এর নূর সকল কিছুর উপর গালিব ছিল। (আ‘লা হযরত: নাফিউল ফায় আম্মান ইস্তানারা বি নুরিহী কুল্লা শাই। নুরুল মোস্তফা ৪৬ পৃ.)

আ'লা হযরত রহ. আরো বলেন-

ومن دلائل نبوته صلى الله تعالى عليه وسلم ( ماذكر بالبناء للمجهول والذي ذكره ابن سبع من انه بيان ما الموصولة الاظل تشخصه ای جسده الشريف اللطيف اذا كان في شمس ولا قمر مما ترى فيه الظلال الحجب

অর্থাৎ- আর তাঁর নবুয়াতের অন্যতম প্রমান হল যা ইবনে সাবা উল্লেখ করেছেন, তাঁর পবিত্র দেহের কোন ছায়া ছিল না। তিনি যখন সূর্য্য বা চন্দ্রের আলোতে চলতেন, তখন কোন ছায়া পড়ত না। এর কারণ হিসাবে ইবনে সাবা বলেন, যেহেতু তিনি ছিলেন নূর আর নূর হল সূক্ষ্ম। তাকে কোন কিছু ঢাকতে পারে না, আর নূরের কোন ছায়া থাকেনা। (আ‘লা হযরত: নাফিউল ফায় আম্মান ইস্তানারা বি নুরিহী কুল্লা শাই। নুরুল মোস্তফা ৪৮ পৃ.)

নূরী সত্ত্বার সাথে মাটির আবার কিসের তুলনা! হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা বাশার (মানুষ), কিন্তু আলমে উলব্যি হতে লক্ষ দরজা সম্মানিত। হুজুর মানবীয় দেহ রাখেন, কিন্তু রুহু ফেরেশতা হতে হাজার গুন লতিফ বা সুক্ষ্ম। (আ‘লা হযরত: নাফিউল ফায় আম্মান ইস্তানারা বি নুরিহী কুল্লা শাই। নুরুল মোস্তফা ৬০ পৃ.)

আ'লা হযরত আহমদ রেযা খান বেরেলভী রহ. লিখেন-

❝পবিত্র শরীয়ত পদ্য ও গদ্য সবকিছুর জন্য দলীল, কিন্তু পদ্য শরীয়তের জন্য দলীল হতে পারে।❞ (ফতাওয়া রাযভিয়্যাহ, ২১/১১৮-১১৯)

আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান রহ. লিখেন-

جس نے ٹکڑے کئے ہیں قمر کے وہ ہے نور وحدت کا ٹکڑ ا ہمارا نبی 

জিস নে টুকড়ে কিয়ে হ্যাঁয় কুমর কে উঅহ্ হ্যায় নূরে ওয়াহদাত কা টুকড়া হামারা নবী।

-‘‘যে মহান সত্তা চাঁদকে আঙ্গুল মুবারকের ইশারায় দ্বিখণ্ডিত করেন, খোদায়ী নূরের জ্যোতি গড়া এ নবী আমাদের নবী।” (হাদায়েক্বে বখশিশ শেএর নং- ৫৩ঃ২১ প্রকাশনায়: আলা হযরত রিসার্চ এন্ড পাবলিকেশন্স।)

[আ'লা হযরত উক্ত পঙক্তিতে উর্দুতে লিখেছেন নূরে ওয়াহদাত কা টুকড়া হামারা নবী, যদিও এখানে ভিন্ন অর্থে বলেছেন অর্থাৎ একত্বের দীপ্তির নূর কিন্তু ওয়াহদাত কা টুকড়া শব্দটি সম্মানের অর্থে হলেও ব‍্যবহার করেছেন অথচ এক শ্রেণির মানুষের কাছে জাতি নূরের তৈরি বললেই শিরক!]

আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান রহ. লিখেন-

بزم آخر کا شمع فروزاں ہوا نور اول کا جلوہ ہمارا نبی

বযমে আখির কা শাম'আ ফরোযাঁ হুয়া;

নূরে আওয়াল কা জলওয়া হামারা নবী।  

‘‘হাশরের সমাবেশে আলোকবর্তিকা হয়ে দীপ্ত প্রভায় সমুপস্থিত হবেন তিনি, সৃষ্টির প্রথম প্রকাশ খোদায়ী নূরের ঝলক হয়ে মূর্ত হন আমাদের নবী।’’ (হাদায়েক্বে বখশিশ শেএর নং-৫৩ঃ৩)


মাটি ও নুতফা

আ‘লা হযরত (رحمة الله)-এর ফতোয়ায়ে আফ্রিকায় বর্ণিত একটি হাদিসের অপব্যাখ্যা করা হচ্ছে। উক্ত হাদিসটি নিয়ে সমাজের কিছু নামধারী আলেম রাসূল (ﷺ)কে তাঁর রওযা মোবারকের মাটি দ্বারা সৃষ্টি তা প্রমাণের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে।

ইমাম আহমদ রেযা খাঁন ফাযেলে বেরলভী (رحمة الله) তাঁর ফতোয়ায়ে আফ্রিকা ৮৯ পৃষ্ঠায় খতিবে বাগদাদীর বরাতে মানব সৃষ্টির ব্যাপারে আলোচনা করতে গিয়ে উক্ত হাদিসটি উলে­খ করেন আমি, আবু বকর, উমর একই মাটির তৈরী এবং একই জায়গায় দাফন হব। আমাদের কতিপয় হযরতগণ দাবী করে থাকেন যে, ইমাম আহমদ রেযা খাঁন রহ. রাসূল (ﷺ) কে মাটির তৈরি বলেছেন। নাউযুবিল্লাহ!

প্রথমত, আ’লা হযরত (رحمة الله) হাদিস বর্ণনাকারী নন বরং খতিবে বাগদাদী রহ. এই হাদিস তাঁর গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন বলে আ’লা হযরত (رحمة الله) তাঁর কিতাব থেকে হাদিসটি সংকলন করেছেন।

দ্বিতীয়ত. উক্ত হাদিসটির সনদের উপরে ভিত্তি করবে হাদিসটি গ্রহণযোগ্য না অগ্রহণযোগ্য।

তৃতীয়ত. মুহাদ্দিসগণের মতামত কী উক্ত হাদিসের ব্যাপারে তা দেখতে হবে, তারপর বলা যাবে যে উক্ত হাদিসের উপরে আক্বীদা রাখা যাবে কি না।

অপরদিকে এটি আ‘লা হযরত রহ. এর কথা বা উক্তি নয়, বরং তিনি একটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করেছেন মাত্র। আমাদের কতিপয় বিভ্রান্ত আলেম এ জাল হাদিসকে তাঁর অভিমত বলে চালিয়ে দিতে চান।

ফতোয়া রযভিয়‍্যাহ ২৮/৪০৭পৃষ্টা ইমাম শাহ আহমদ রিদা খান রহ. লিখেন-

استقرار نطفه زکیه در ایام حج بر قول اصبح در اوسط ایام تشریق

شب جمعه بود، وازیں جہت امام احمد حنبل رحمۃ اللہ علیہ لیلۃ

الجمعه را فاضل تر از لیلة القدر داشته الخ

اصح قول کے مطابق نطفہ مطہرہ کا استقرار حج کے دنوں میں ایام تشریق کے درمیان جمعہ کی رات کو ہوا۔ اسی وجہ سے امام 

احمد بن حنبل رحمۃ اللہ تعالی علیہ شب جمعہ کو شب قدر سے 

افضل سمجھتے ہیں الخ 

অর্থাৎ, সেই পবিত্র নুতফাটি জুমা রাতে স্থানান্তরিত হয়ে মা আমিনার রেহেমে আসে। তাই ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের কাছে জুমা রাত কদরের চেয়েও বেশি ফযিলতপূর্ণ ছিলো।

জবাবঃ জুমার ফযিলত উল্লেখ করতে গিয়ে নুতফার কথা আ'লা হযরত কেবল কথাটি উল্লেখ করেছেন মাত্র, ঐটা তার মত নয়। সহীহ বুখারীতে আত্মহত্যার হাদীস এসেছে ছিহাহ্ সিত্তাহ গ্রন্থ সমূহে অনেক জঈফ, মানসুখ শায রেওয়ায়েত উল্লেখ আছে তাই বলেই কি ঐগুলোর ভিত্তিতে আকিদা রাখা যাবে?   

আ'লা হযরতের অনেক গ্রন্থ ও ফাতোয়া একত্রিত করে ৩০খণ্ডের ফতোয়া রযভিয়‍্যাহ গ্রন্থটি সংকলন করা হয়েছে। যেভাবে হাদীস গ্রন্থে কোন হাদীস উল্লেখ থাকলেই তা দলিলযোগ্য নয় সনদ যাচাই করা হবে সনদ হচ্ছে দ্বীন তদ্রুপ ফতোয়া রযভিয়‍্যাহ গ্রন্থে বর্ণিত বর্ণনা তখনই দলিলযোগ্য হবে যখন সনদ বিশুদ্ধ হবে। প্রিয় নবীজি দঃ নুতফা ছিলেন এই মর্মে কোন জাল হাদিসও নেই।

আ'লা হযরত ‘‘মাতলাউল কামরাইন ফী এবানাতে ছাবকাতিল ওমরাইন’’ গ্রন্থে বলেন-

رشاذ خلاف پر نہ مل سکے بہت مسائل مسلمہ مقبولہ جنہیں ہم اہل حق اپنا دین و ایمان سمجھے ہوئے ہیں ان کے خلاف میں بھی ایسے اقوال مرجوحہ ، مجروحہ مہجورہ ، مطروحہ بتلاش مل سکتے ہیں، کتابوں میں بحث و مین اور رطب و یابس کیا کچھ نہیں ہوتا ، مگر خدا سلامت طبع دیتا ہے، تو صحیح وسقیم میں امتیاز میسر ہوتا ہے، ورنہ انسان ضلال بدعت ، یا وبال حیرت میں سرگرداں رہ جاتا ہے۔ اگر شریر طبیعتوں، فاسد طینتوں کا خوف نہ ہوتا تو فقیر اپنی تصدیق دعوی کو چند مسائل اس قسم کے معرض تحریر میں لاتا، مگر کیا کیجیے کہ بعض طبائع اصل جبلت میں حساسہ جساسہ بنائے گئے ہیں کہ شب وروز تبع اباطیل و تفحص قال وقیل میں رہتے ہیں۔ كما قال ربنا تبارك وتعالى

অনেক অকাট‍্য মাস'আলা যেগুলো কে আমরা আহলে হক্বরা দ্বীন ও ঈমান মনে করি, ঐগুলোর বিরুদ্ধেও মারজুহা, মাজরুহা মাহজুরাহ, মতরুহা উক্তি কিতাবে পাওয়া যায়। কিন্তু ঐগুলো কাবেল'ই কবুল নয়। জমহূর ও প্রসিদ্ধ মতের সামনে শায মত গ্রহণযোগ্য নয়। অন্যথায় একজন ব্যক্তি বিভ্রান্তিতে, বা সম্পূর্ণ বিস্ময়ের মধ্যে পড়ে থাকবে। যদি দুষ্ট প্রকৃতির এবং কলুষিতদের সম্পর্কে ভয় না থাকত, তবে আমি ফকির (আ'লা হযরত) এই ধরণের কয়েকটি শায মত উদাহারণ স্বরূপ উল্লেখ করতাম।

আ'লা হযরত রহ. আরো বলেন-

لیا ہے وباللہ التوفیق، فوائد الاعمال سے متعلق بات کرنا باقی ہے میرے مہربان کیسی کتاب کا معتقدین کے ہاں معتبر ہونا ایک بات ہے اور اس کتاب کی اپنی حیثیت میں معتبر ہونا اور بات ہے نیز کسی کتاب کے معتبر ہونے کا یہ مطلب نہیں کہ اس میں جو کچھ موجود ہے وہ تمام معتبر و مختار ہو مرکز ایسا نہیں ہے کیونکہ بڑے بڑے اللہ کرام کی کتابوں میں سے کوئی بھی کتاب ایسی نہیں کہ اس کے بعض مقامات قابل تنقید و تنقیح نہ ہوں، تو ہم نئے لوگوں کی کتابوں کے بارے میں یہ کیسے کہا جا سکتا ہے کہ

কোন কিতাব প্রসিদ্ধ নির্ভরযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য হওয়া তার মানে এই নয় যে এটির মধ্যে বিদ্যমান সবই নির্ভরযোগ্য। বড় বড় আইম্মায়ে কিরাম এর কিতাব সমূহের মধ্যে এমন কোন কিতাব নেই যে কিতাবের কোথাও না কোথাও এমন কথা মওযুদ না নেই যেগুলো আপত্তিকর নয়। আল্লাহর কিতাব ব‍্যতিত এমন কোন কিতাব নেই যে ঐ কিতাবের প্রতিটি শব্দ গ্রহণযোগ্য। (ফাতাওয়া-রদ্বাভিয়্যাহ্ ৭/৫৫১)

দ্বিতীয় ব‍্যাখ‍্যা হলো- আ'লা হযরত রহ. অন্য একটি কিতাবের সূত্রে নুতফাতুয জাকিয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। অথচ নুতফা পবিত্র হয়না নুতফার কারণে গোসল ফরয হয়। আ'লা হযরত রহ. অন্য জায়গায় নুরে মুহাম্মদী স্থানান্তরিত হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। 

যেমন আ'লা হযরত লিখেন, হাদীসে পাকে রয়েছে, নবী করিম (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন-

لم يزل الله ينقلني من الاصلاب الطيبة الى الارحام الطاهرة مصفى مهذبا لا تتشعب شعبة الأكنت في خيرهما 

আল্লাহ তাআলা আমাকে পবিত্র পৃষ্ঠদেশ থেকে পাক উদরে স্থানান্তর করতে থাকেন, যাঁরা ছিলেন নিষ্কলুষ, নির্দোষ হালতে। যখনই সে ধারা দুভাগে বিভক্ত হয়েছে, আমি ছিলাম তার মধ্যে উত্তম ভাগে। 

অপর রেওয়ায়েতে রয়েছে হুযুর (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন- 

لم ازل انقل من اصلاب الطاهرين الى ارحام الطاهرات رواهما ابو نعيم في دلائل النبوة عن ابن عباس رضى الله تعالى عنهما

'আমি বরাবর পবিত্র পৃষ্ঠদেশ থেকে পবিত্র জঠর দেশে স্থানান্তর হয়ে এসেছি।' উভয় হাদীস হযরত আবু নুয়াইম দালায়েলুন্নুবুয়ত গ্রন্থে ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু হতে বর্ণনা করেন।

অপর এক হাদীসে নবী করিম (সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন-

لم يزل الله ينقلني من الاصلاب الكريمة والارحام الطاهرة حتى اخرجني من ابوی رواه ابن ابی عمر العدني في مسنده بن عباس رضى الله تعالى عنه 

অর্থাৎ-আল্লাহ পাক আমাকে (আমার নূর) সভ্রান্ত পৃষ্ঠদেশ থেকে পবিত্র জঠরে স্থানান্তরিত করতে থাকেন। এভাবে শেষ পর্যায়ে আমার পিতামাতা থেকে আমাকে প্রকাশিত করেন। (আ'লা হযরত (রহ.) কৃত 'শুমূলুল ইসলাম'১২পৃ, প্রকাশনায়: আ'লা হযরত রিসার্চ এন্ড পাবলিকেশন্স।)

আ'লা হযরত রহ. আরো বলেছেন-

وايضا قال تعالى وتقلبك في الساجدين على احد التفاسير فيه ان

المراد تنقل نوره من ساجد الى ساجد وحينئذ فهذه صريح في ان ابوى النبي صلى الله تعالى عليه وسلم أمنة وعبد الله من اهل الجنة لانهما اقرب

অর্থাৎ, এবং নামাযীদের মধ্যে আপনার প্রত্যাবর্তন এ আয়াতের এক তাফসীর এটাও যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম'র 'নূর মুবারক' একজন সাজদাকারী (অর্থাৎ আল্লাহওয়ালা) থেকে অপর সাজদাকারীর মধ্যে স্থানান্তর হয়ে হয়ে এসেছিল।

(আ'লা হযরত (রহ.) কৃত 'শুমূলুল ইসলাম' ৩১পৃ, প্রকাশনায়: আ'লা হযরত রিসার্চ এন্ড পাবলিকেশন্স।)

এখানে আ'লা হযরত রহ. পৃষ্ঠদেশ থেকে নূর স্থানান্তরিত হওয়ার কথা লিখেছেন। আমরা জানি যে বীর্য বা (নুতফা) তা পিতা-মাতার শরীরেই তৈরী হয়, পূর্বে এর অস্তিত্ব থাকেনা এবং পূর্ব পুরুষ হতেও স্থানান্তরিত হয়ে আসে না। অতএব, আ'লা হযরত এর আকিদা হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সৃষ্টির মাদ্দাহ বা উপাদান হল নূর, কোনো বীর্য নয়। সে নূর আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করতঃ তাঁর মধ্যে আমানত রাখা হয়েছে এবং পরবর্তীতে তা পবিত্র নসলে স্থানান্তরিত হয়ে সর্বশেষ মানব রূপে পৃথিবীতে বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

হযরত আব্দুল্লাহ'র পবিত্র পৃষ্ঠদেশ হয়ে মা আমেনার গর্ভে নূর হয়েই স্থিরীকৃত হয়েছেন। সেই নূরে মুহাম্মদীই পৃথিবীতে মানবরূপে প্রকাশ হয়েছে। 

আরও পড়ুন : পাপ থেকে বাঁচতে সেরা উপায় ইব্রাহিম ইবনে আধাহাম 

আল্লামা ইসমাইল হাক্বী হানাফী রহ. বলেন- 

'নিশ্চয় নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধুই নূর, আর নূরের ছায়া হয় না। এতে এদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, নিশ্চয় তিনি কুনী ও ফিল্লীর অস্তিত্ব ফানা করে দিয়েছেন। আর তিনি মানুষের আকৃতিতে নূরের শরীর বিশিষ্ট।' (ইসমাইল হাক্কী: রুহুল বায়ান: ৬/৪৮০)

হযরত মুজাদ্দিদ আলফেসানী রহ. বলেছেন-

باید دانست که خلق محمدی صلی اللہ علیہ وسلم در رنگ خلق سائر افراد انسانی نیست بلکہ بخلقی هیچی فردی از افراد عالم مناسبت نہ دارد کہ اوصلى الله علیہ وسلم باوجود نشاء عنصری از نور حق جل واعل مخلوق گشته است كما قال عليه الصلوة والسلام خلقت من نور الله

'জেনে রাখা অতীব প্রয়োজন যে, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সৃষ্টি অপরাপর মানুষের মত নয়। এমনকি কুলকায়েনাত বা সমগ্ৰ সৃষ্টি জগতের কেহই সৃষ্টির মধ্যে তাঁর সাথে কোন প্রকার সাদৃশ্য রাখে না। কেননা তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মানবীয় দেহ বিশিষ্ট হয়ে জন্মগ্রহণ করলেও আল্লাহ জাল্লা শানুহুর নূর থেকে সৃষ্টি হয়েছেন। আল্লাহর হাবীব নিজেই ইরশাদ করেছেন- আমি আল্লাহর নূর থেকে সৃষ্টি হয়েছি। (মুজাদ্দিদে আলফেসানী, মাকতুবাত, মাকতুব নং- ১০০) 

এটাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের চূড়ান্ত আক্বিদা। 

মহান আল্লাহ তা'আলা সবাইকে বুঝার তৌফিক দান করুক, আমীন।


পুরোটা পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ 

আপনাদের পরামর্শ আমাদেরকে জানান কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে কমেন্ট বক্সে লিখে কমেন্ট করুন ।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ