গল্প: ছোট পরী ও রাখাল

চারিদিকে পাহাড় ঘেরা উপত্যকার মাঝে ছিল অপূর্ব সুন্দর এক সরোবর। স্বর্গও লজ্জা পায় এমন সুন্দর পরিবেশ সেখানে। সেই সরোবরের তীরে প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে বেড়াতে আসে সাত পরী, সাত বোন। তারা ডানাগুলো একটা গাছের তলায় রেখে আনন্দ করে জলে খেলে বেড়ায়। জনশূন্য চারপাশ। ঠিক সাতদিন ধরে আনন্দ করে আবার ডানাগুলো পরে উড়ে যায় নন্দনকাননে, তাদের নিজের দেশে।


এদিকে কাছাকাছি যে কিছু গ্রাম আছে সে খবর তারা না রাখলেও পরীদের সব খবর রাখে কিন্তু সেই গ্রামেরই এক অনাথ রাখাল ছেলে। সে গরু চরায়, বাঁশি বাজায় আর দূর থেকে দেখতে থাকে পরীদের কান্ডকারখানা। একসময় তার খুব ভালো লেগে যায় সবচেয়ে ছোট পরীটিকে। কি অপরূপ মিষ্টি চেহারা! ওকে দেখলেই রাখালের বাঁশিতে বেজে ওঠে স্বর্গীয় সব সুর। দূর থেকে পরীরা তা শোনে আর অবাক হয়ে ভাবে এমন সুন্দর সুর কে বাজায়, এ সুর তো নন্দনকাননের পাখিদেরও অজানা! তারা মুগ্ধ হয়ে শোনে, কিন্তু রাখাল থাকে আড়ালে, তাকে কেউ দেখতে পায় না।


একবার হলো কি, রাখালের মাথায় একটা দুষ্টবুদ্ধি জাগলো। পরীরা যখন স্নানে ব্যস্ত, সে চুপিচুপি এসে দাঁড়ালো সেই গাছতলাটিতে যেখানে খুলে রাখা আছে পরীদের ডানাগুলো। বেছে বেছে সব চেয়ে ছোট ডানাজোড়া নিয়ে সে লুকিয়ে রেখে দিল একটা বড় গাছের ফোকরে। তারপর ধীরে ধীরে সরে পড়ল সেখান থেকে। এখন সাতদিন পরে পরীদের যাবার সময় হলে দেখা গেল তাদের ছোটবোনের ডানাজোড়া নেই সেখানে, অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তারা সেটা পেল না।


এদিকে বাবার কড়া হুকুম, একসপ্তাহের বেশি তাদের স্বর্গ ছেড়ে থাকা চলবে না। কি করে, সবচেয়ে যে বড় পরী সে তার ছোট বোনকে বুঝিয়ে বলল, 'উপায় নেইরে বোন, আমাদের যেতেই হবে, আর গেলে পরের বছরের আগে আর আসতে পারব না। তুই বরং এখানে থেকে ডানা জোড়া ভাল করে খুঁজে দেখ, পেলেই দেশে চলে আসিস, কেমন? আমরা বাবাকে বুঝিয়ে বলব তিনি যেন রাগ না করেন'।


ছয় পরী ছোট বোনকে একা সরোবরের তীরে ফেলে রেখে তো উড়ে চলে গেল, বেচারী ছোটপরী মনের দু:খে বসে বসে কাঁদতে লাগলো। তাকে ওভাবে কাঁদতে দেখে রাখাল সাহস করে আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো। সব শুনে সে তাকে নিজের বাসায় নিয়ে গেল, তারপর অনেকক্ষণ ধরে বাঁশি বাজিয়ে শোনাল। এই রাখালের বাঁশিই যে তাকে দূর থেকে এত আনন্দ দিয়েছে ভেবে পরীর খুব ভালো লাগলো, তাদের বন্ধুত্ব হতে দেরী হলো না।


রাখাল আর পরী গ্রামের একপ্রান্তে একটি কুঁড়েঘরে থাকে, একত্রে গরু চরায়। রাখাল বাঁশি বাজায় আর পরী ঘাঘরা উড়িয়ে নাচে, দেখে গ্রামের লোকেরা ঠিক করলো এদের বিয়ে হওয়া উচিত। রাখাল তো রাজি ছিলই, পরীও কি আর করে, রাজি হয়ে গেল। তারপর একদিন বেশ একটা উৎসবের মধ্যে দিয়ে তাদের বিয়ে হয়ে গেল।


রাখাল আর পরীর দিনগুলো বেশ সুখেই কাটে। আবার পরীর চোখ মাঝে মাঝে জলে ভরে ওঠে ফেলে আসা দিনগুলোর কথা, তার দিদিদের কথা ভেবে, কি আনন্দই না করত তারা সাতজনে। নন্দনকাননের অপূর্ব শোভা, বাবার স্নেহ, বাবা তাঁর প্রিয় মেয়েকে ছেড়ে আছেন কি করে সে কথা ভেবে অভিমানও হয়। এরকম সময়ে রাখাল তাকে বাঁশিতে মিষ্টি সুর বাজিয়ে শোনায়, পৃথিবীর, মানুষদের সব গল্প বলে, শেষে একসময় তারা সব ভুলে ঘুমিয়ে পড়ে।


ঠিক একবছর হবার আগে পরীর কোল আলো করে একটি ছেলে এলো। তাকে পাবার পরে পরী যেন যেটুকু দু:খকষ্ট ছিল তাও ভুলে গেল। দেখতে দেখতে একবছর পার হয়ে গেল। পরী তো ভুলেই গেছিল কিন্তু রাখালের মনে ছিল, তার দিদিদের আসার সময় হয়ে এলো।


রাখালের ঠিক চোখে পড়ল পরীর দিদিরা এক এক করে সরোবরের তীরে নামল। কিন্তু তারা জলে না নেমে এদিক ওদিক খুঁজতে লাগলো। রাখাল তখন তাদের সামনে গিয়ে নিজের পরিচয় দিল, তারা তো ছোটপরী ভালো আছে শুনে খুশি হয়ে তখনি রাখালের সাথে চলে এলো তাদের বাসায়। তারপর তো সাতবোনের একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্না, হাসি আর গল্প চলল সারারাত ধরে। ছোটপরীর ছেলেটিকে মাসীরা মিলে খুব আদর করলো।



ঠিক সাতদিন পরে যখন তাদের যাবার সময় হলো, রাখাল একফাঁকে ছুটে গিয়ে ছোটপরীর ডানাজোড়া নিয়ে এসে তার হাতে দিয়ে সব কাহিনী খুলে বলল। পরী স্তম্ভিত হয়ে শুনলো। শেষে রেগেমেগে ডানাজোড়া পরে বলল, 'তুমি যা করেছ, তার জন্যে ক্ষমা নেই। তুমি থাক এখানে তোমার ছেলে নিয়ে একা, আমি চললাম দিদিদের সাথে। তারপর সে সত্যিই সরোবরের তীরে এসে দিদিদের সাথে দেখা করে ওদের সঙ্গে উড়ে চলে গেল স্বর্গরাজ্যে তাদের বাসায়।


কিন্তু স্বর্গে এসেও শান্তি নেই। ছোটপরীর মন পড়ে আছে সরোবরের তীরের সেই পাহাড়ি গ্রামের ছোট্ট এক কুঁড়েঘরে, যেখানে আছে তার ছেলে আর সেই রাখাল। এক এক করে তার সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়তে লাগলো, সেই রাত জেগে তাদের গল্প করা, নির্জন মাঠে রাখালের বাঁশি শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়া। একটা চাতুরী রাখাল করেছিল, কিন্তু মানুষটা তো সে খারাপ নয়, চাইলে তো সে পাখাগুলো ফেরত না দিলেও পারত। স্বর্গে সব আছে, সবকিছুই সুন্দর এখানে, কিন্তু ভালবাসা নেই, বন্ধুত্ব বলে কিছু নেই। আর দু:খের স্বাদ যে একবার পেয়েছে সেই জানে একটানা সুখও বড় একঘেয়ে- স্বর্গে তো দু:খ বলে কিছু নেই। সবচেয়ে বড় কথা সে ভুলতে পারছে না সেই ছোট্ট বাচ্চাটিকে যে আর কদিন পরেই তাকে মা বলে ডাকত, না জানি সে কত কাঁদছে, রাখাল কি একা সামলাতে পারছে ঐটুকু বাচ্চাকে? ছোট পরীর চোখে ঘুম নেই, চোখ বুজলেই কানে আসে ছোট শিশুর কান্নার আওয়াজ। সেও কাঁদে আর শুধু এইসব কথা চিন্তা করে।


ছোট যাই করুক বড়দিদিদের চোখ এড়ায় না। শেষে ব্যাপারটা তাদের বাবাও জানতে পারলেন। তিনি বললেন ' মানুষের দুনিয়ায় সংসার পেতে তুমি তো পরীদের দুনিয়ার নিয়ম ভেঙেছ। এর জন্য আমারও কিছুটা সম্মানহানি হয়েছে । তা শুধু শুধু তোমার শাস্তি বাড়িয়ে তো সে সম্মান আমি ফিরে পাব না, তুমি যাও, যেখানে গিয়ে সুখ পাও যেতে পার'। রাজা চলে গেলেন, বোধহয় তাঁর চোখেও জল এসে পড়েছিল।


এদিকে রাখালেরই কি খুব সুখে দিন কাটছিল? পরী চলে যাবার পর থেকে ঘর-দোর অগোছালো, ছেলেকে সে না পারে ঠিকভাবে খাওয়াতে, না পারে ঘুম পাড়াতে। এক বুড়ি দাই দেখাশোনা করে বলেই কোনমতে বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছে। যাবার সময় পরী তার উপর রাগ করে গেছে। সেটাই স্বাভাবিক, তা বলে সে একবারও ভাবলো না তার কোলের ছেলেটির কথা। আর কি সে ফিরে আসবে কোনদিন! রাখাল ভাবে আর অভ্যাসমত ছেলেকে কোলে করে রোজই এসে বসে থাকে সরোবরের তীরে, সেই গাছটির তলায়। তার আজকাল আর বাঁশি বাজানোতেও মন নেই।


সেদিনও অমনি বসে আছে সরোবরের তীরে, হঠাত মনে হলো, আকাশ থেকে কে যেন একটা নামছে। প্রথমে ঈগলপাখি ভেবে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে লুকোতে যাচ্ছিল, তারপর বুঝতে পেরেই তার চোখ-মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। এ যে ছোটপরী। রাখাল ভাবলো পরী বোধহয় থাকতে না পেরে তার ছেলেকে নিয়ে যেতে এসেছে। রাখাল ধীরে ধীরে ছেলে কোলে পরীর দিকে এগিয়ে গেল।


কিন্তু একি করছে ছোট পরী, সে মাটিতে নেমে ডানাজোড়া প্রথমে খুলে রাখল। তারপর কোত্থেকে একটা চকমকি বের করে তা ঠুকে আগুন জ্বালালো। তারপর পাখাজোড়াটাকে নিয়ে সেই দৃঢ়ভাবে সেই আগুনে ফেলে দিল।


'একি, করলে তুমি', ছুটে এলো রাখাল, জিজ্ঞাসা ভরা দৃষ্টিতে তাকাল পরীর দিকে। 'আর তো তুমি ফিরে যেতে পারবে না'।


'আর আমি যেতে চাইও না; এখানে তুমি আছো, আমার ছেলে আছে, আমার পরিবার ছেড়ে আমি কোথাও গিয়েই আনন্দে থাকতে পারব না।' বলে ছুটে এসে সন্তানকে কোলে তুলে নিল ছোটপরী।

তারা পরম নিশ্চিন্তে হাঁটা দিল গ্রামের পথে। পিছনে পুড়ে ছাই হতে থাকলো পরীর ডানাজোড়া।

--মাছ খাবো

—মা আজ তো প্রথম রোজা তাই না। আজ কি একটু মাছ ভাত খাইতে পারবো না। রাফিদের বাসায় না আজ অনেক কিছু রান্না করছে । রাফি আমাদের সবাইকে বললো।জানো মা আমাকে না ওরা বললো? আমি কি দিয়ে খাবো। আমি কিছু না বলে চলে আছি। মা ও মা বল না। আজ কি সেই শাক আর ভাত খাবো। মা জানো আমার না। আজ খুব মাছ দিয়ে ভাত খাইতে ইচ্ছে করছে। মা অনেক দিন ধরে। তো শাক আর ভাত খাচ্ছি। কখনো তো বলি নাই। আমি শাক দিয়ে খাবো না। ও মা আজ একটু মাছ দিয়ে ভাত দিবে। প্রথম রোজা তো তাই বলছি। তাছাড়া বলতাম না। আচ্ছা থাক মা তুমি আমাকে শাক দিয়ে। ভাত দিয়েও রোজা থাকতে হবে। 

—আরিফ স্কুল থেকে বাসায় এসেছে কথা গুলো ওর মাকে বললো?? আরিফের মা কিছু না বলে কথা গুলো শুনলো। আরিফের কথা গুলো শুনে? ওর মা আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারলো না। আরিফ মা ভাবতে লাগলো

 —হে আল্লাহ আমি কি অন্যায় করছি। আল্লাহ তুমি আমাকে এমন অবস্থা ফেলে দিলে৷ আজ আমার ছেলে মুখ ফুটে কিছু খেতে চাইছে। আমি এমন অবস্থায় আছি। যে ইচ্ছে হলেও আমার ছেলেকে মাছ খাওয়াতে পারবো না। আল্লাহ অল্প বয়সে আমার স্বামীকে কেড়ে নিলে। এতো টা বছর অন্য বাড়িতে কাজ করে যা পাইছি ছেলেটাকে তাই খাইছে। 

—আরিফের মা কথা গুলো মনে, মনে বলে কান্না করতে লাগলো। আরিফের মা চোখ মুছে নিয়ে। কাজে গেলো আর আরিফ এই দিকে পড়তে বসেছে। আরিফ ভাবতে লাগলো..?

— আচ্ছা মাছ খেতে চাই ঠিক করলাম না। মা তো আমাকে অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করছে। আমি দেখেছি মা আমাকে খাওয়া নিজে না খেয়ে থাকে। সেই খানে আমি কি করে মার কাছে এই আবদার করলাম। দূর আমার মাথায় বুদ্ধি নাই। কেনো যে চাইলাম আমার ভাবার উচিত ছিলো মা কিভাবে আমাকে মাছ খাওয়াবে৷ দূর ভালো লাগে না।  

— কথা গুলো ভাবতে ভাবতে আবার পড়ায় মনযোগ দিলো। এই দিকে আরিফের মা যেই বাড়িতে কাজ করে। সব কাজ করে মালকিন কে বললো..??

-- ম্যামসাহেব আমাকে কি অগ্রিম কিছু টাকা দিতে পারবেন।

— তোমার মাস হলে তো টাকা দিয়ে দেয়। এখন অগ্রিম টাকা দিতে পারবো না৷ মাস হলে টাকা দিবো এর আগে দিতে পারবো না। 

—- মালকিন আমার টাকা টা খুব দরকার। যদি টাকা টা দিতে তাহলে উপকার হতো। 

—- দেখো সব সময় অগ্রিম টাকা দিতে পারবো না। এতে কাজ করলে কর না। হলে থাক তোমাকে আর কাজ করতে হবে না।

— আরিফের মা আর কিছু বললো না না বলে চলে বাহিরে চলে আসলো। রাস্তা দিয়ে হাটছিলো আর আরিফের কথা গুলো মনে করতে করতে। বাড়িতে চলে আসলো। আরিফের মা পাশের বাড়ি রহিমা দের বাসায় গিয়ে দরজায় টক টক করতে লাগলো। রহিমা বেগম দরজাটা খুলে দেখে আরিফের মা। 

—- ভাবি কিছু বলবেন। 

— না মানে ভাবি আজ আপনাদের কি রান্না হয়েছে।

— আজ আমাদের মাংস রান্না করছি। সেহেরিতে জন্য। 

—- ও আচ্ছা ভাবি কিছু মনে না করলে একটা কথা বলবো?

-- হ্যা ভাবি বলেন? আপনাকে তরকারি দিতে হবে নাকি.?

-- না মানে আসলে ভাবি..?? আরিফ আজ নিজের মুখে বলছে? ওর নাকি মাছ খেতে ইচ্ছে করছে। তাই আপনার কাছে আসলাম মালকিনকে বললাম কিছু টাকা দিতে দিলো না। আমার কাছে টাকাও নাই যে ওকে মাছ কিনে খাওয়াবো। 


---- পিছন থেকে কথা গুলো শুনে রহিমার বেগমের স্বামী রহিম মিয়া বলে উঠলো.?

-- ভাবি কিছু মনে না করলে আমার সাথে একটু বাজারে যাবেন।

-- এখন আবার বাজারে কেনো যাবে? 

-- দরকার আছে তুমি থাকো তো..।

 -- ভাই আমি বাসায় যাই অনেক রাত হয়ে গেছে। আরিফ না খেয়ে আছে মনে হয়। আমি এখন যাই ভাই। 

-- আচ্ছা ভাবি আপনে যান আমি মাছ নিয়ে আপনাদের বাসায় আসতাছি।

--- রহিম মিয়ার কথা শুনে ভ্র কুচকে রহিমা বেগম তাকালো আর আরিফের মা অবাক হয়ে বললো..?

-- মানে বুঝলাম না ভাই?

-- কি বলছো মাছ কই পাবে ফ্রিজে কেনো মাছ নাই। তুমি মাছ কিভাবে দিবে..? 

—- সেইটা আমি বুঝে নিবো ভাবি আপনে যান আমি মাছ নিয়ে আসতাছি। 

-- ভাই ভাবি তো বলছে মাছ নাই থাক ভাই বাদ দেন। ভাই যদি পাবেন আমাকে টাকা ধার দিবেন। 

--- আরে ভাবি আপনে যান আমি বুঝে নিবো যান।

--- রহিম মিয়া আরিফের মা কে জোর করে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলো। আরিফের মা বাসায় চলে গেলো মন খারাপ করে। রহিমা বেগম দরজা উকি দিয়ে দেখলো। আরিফের মা গেছে নাকি যখন দেখলো চলে গেছে। তখন রহিম মিয়ার কলার ধরে বলল..?


-- এই তুই মাছ কই পাবি হ্যা। খুব মায়া তোর তাই না দেখ আমি তোকে আমার ফ্রিজের মাছ দিবো না। তুই কোন থেকে দিবি দে আমার মাছের হাত ও দিবি না বলে দিলাম।  

-- কথা গুলো বলে রহিমা বেগম চলে গেলো নিজের রুমে। রহিম মিয়া বাজার চলে গেলো। গিয়ে মাছ কিনে আনলো কিনে। আরিফে দের বাসায় গিয়ে আরিফকে ডাক দিলো। 

--- আরিফ আরিফ ঘুমিয়ে পড়ছো নাকি? ভাবি ভাবি ঘরে আছেন কি?? দরজা টা খুলেন! এই আরিফ দরজা খুলো দেখো তোমার জন্য মাছ এনেছি।

-- অনেক ক্ষন ডাকা ডাকি করে যখন দেখলো কেনো ছাড়া পাচ্ছে না। দরজায় যেই ধাক্কা দিতে যাবে তখনই দরজাটা খুলে গেলো। দেখলো আরিফের মা দাঁড়িয়ে আছে। আরিফের মা চোখ দিয়ে পানি বয়ে বের হয়েছে। রহিম মিয়া মিষ্টি করে একটা হাসি দিয়ে। দেখিয়ে বলল..??

-- ভাবি কান্না কেনো করছেন। এই নেন দেখেন কত বড় মাছ। আরিফ কই ওর জন্য মাছ নিয়ে এসেছি।

-- কথা গুলো বলে ঘরে ঢুকে দেখে আরিফ খাটে ঘুমিয়ে আছে।

তা দেখে রহিম মিয়া বলল

-- ভাবি এতো দেখি ঘুমিয়ে গেছে। আচ্ছা ভাবি সেহেরি সময় ওকে মাছ টা রান্না করে খাওয়া দিয়েন।আর হ্যা ভাবি টাকা দিতে হবে না। আমি ওকে ভালোবাসে দিয়েছি যাই হোক। ভাবি আমি তাহলে এখন আছি।

-- ভাই সাহেব আপনে আপনার মাছ নিয়ে যান। এই মাছের কেনো দরকার নাই।  

--- রহিম মিয়া ভ্র কুচকে আরিফের মায়ে দিকে তাকিয়ে বললো??

-- কেনো ভাবি এমন ভাবে বলছেন! কেনো আমি আমার ছেলে দিলাম ধরেন। ও ছোট মানুষ একটু মাছ তো খেতে চাইছে তাই কিনে দিলাম। আপনে ওকে রান্না করে দিয়েন। তো আমি এখন যাই। 

--- ভাই লাগবে না আপনে মাছ নিয়ে যান। মাছ দিয়ে আমি কি করবো মাছ আমার আর লাগবে না ভাই।

-- কেনো লাগবে না আরিফ কে খাওয়াবেন?

-- না ভাই ওই আর কোন দিন মাছ খাইতে চাইবে না।

-- মানে কি বলেন??

-- আরিফের মা চিৎকার কান্না করতে করতে বলল??

-- ও আর কোন দিন মাছ খেতে চাইবে না। আপনে আপনার মাছ নিয়ে যান। ও আর কোন দিন মাছ খাবে না। কারণ ওই যে আর এই দুনিয়াতে আর নাই। কাকে আমি মাছ খাওয়াবো বলতে পারেন। কাউকে খাওয়ানোর মতো নাই৷ কেউ বলবে না মা মাছ খাবো। আজ থেকে কেউ আর কেনো আবদার করবে না। যে আমি মাছ খাবো। সব আবদার আজ থেকে শেষ হয়ে গেছে।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ