হযরত আবু বকর সিদ্দিক ( র :) এর জীবনী ২য় পর্ব

 


আসওয়াদ আনাসী ও তুলাইহাকে দমন : ভন্ডনবিদের আবির্ভাবে হযরত আবু বকর ( রা ) বিচলিত না হয়ে ইস্পাত কঠিন শপথ গ্রহণ করে বিদ্রোহরত সকল অঞ্চলে ১১ টি মুসলিম সেনাদল প্রেরণ করেন । খলিফা প্রথমে ভক্তনবি আসওয়াদ আনসীর সমর্থক বিদ্রোহী ' আবস ' ও ' জুবিয়ান ' গোত্রদ্বয়কে যুলকাশা ও রাবারজার যুদ্ধে পরাজিত করেন । আসওয়াদ আনাসী শোচনীয়ভাবে মৃত্যুবরণ করে । এভাবে আসওয়াদ আনাসী ও তার সমর্থক গোষ্ঠী নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় । এরপর হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদকে প্রেরণ করা হয় তুলাইহা ও তার সমর্থক বিদ্রোহী তামিম ও ইয়ারবু গোত্রদ্বয়কে দমন করার জন্য । হযরত খালিদ ( রা . ) অত্যন্ত সফলতার সাথে এ গোত্রদ্বয়কে পরাজিত করে তুলাইহাকে দমন করেন । খলিফার নির্দেশে তোলায়হা বহু অনুচররসহ ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয় । 

মুসাইলামা ও সাজাহকে দমন : ভন্ডনবিদের মধ্যে মুসাইলামা ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী । সে মহিলা ভন্ডনবি সাজাহকে বিয়ে করে বানু হানীফা গোত্রের চল্লিশ হাজার লোকের একটি বিদ্রোহী দল গঠন করে ইসলামকে ধ্বংস করতে উদ্যত হয় হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ ( রা ) ইয়ামামার যুদ্ধে মুসাইলামাকে শোচনীয়বাবে পরাজিত করেন । মুসাইলামাসহ হানীফা গোত্রের প্রায় দশ হাজার ধর্মত্যাগী যুদ্ধে নিহত হয় । ঐতিহাসিক ‘ তাবারী ' একে ‘ মৃত্যুর বাগান ' বলে উল্লেখ করেন ।

 জোসেফ হেল বলেন , “ কঠিনতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধসমূহের মধ্যে ইয়ামামার যুদ্ধ অন্যতম । " মুসলমানদের পক্ষে বহু সাহাবী এবং সত্তর জন হাফিজ - ই কোরআন শাহাদাতবরণ করেন । এ যুদ্ধে জয় - পরাজয়ের ওপর ইসলামের অস্তিত্ব নির্ভর করছিল । এ যুদ্ধের পর সাজাহ বনু হানীফা গোত্রের লোকজনসহ ইসলাম গ্রহণ করে ।

কুরআন শরীফ সংকলন : মহানবি ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম. ) এর আমলে পবিত্র কুরআন লিখিত রূপ পায়নি । তখন তা সাধারণত হাফিজগণই মুখস্থ রাখতেন । কিন্তু হাফিজদের মৃত্যুর পর তা বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে হযরত উপরের পরামর্শে ওহি লেখক সাহাবি হযরত যায়িত বিন সাবিতের নেতৃত্বে পবিত্র কুরআনকে একত্রে পুস্তক আকারে সংকলিত করা হয় । কুরআন সংকলন ও সংরক্ষণ হযরত আবু বকর ( রা . ) এর সর্বশ্রেষ্ঠ ও অমর কীর্তি ।

ইসলামের প্রতি হযরত আবু বকর ( রা . ) এর অবদানের স্বীকৃতি দেখা যায় প্রখ্যাত সাহাবি ইবনে মাসউদের বক্তব্যে : “ মহানবির ( স . ) ইনতিকালের পর আমরা এমনি অবস্থায় পতিত হয়েছিলাম যে , যদি আল্লাহ তাআলা আবু বকর ( রা . ) এর মাধ্যমে আমাদের অনুগ্রহ না করতেন , তাহলে আমরা ধ্বংস হয়ে যেতাম । ”

 শুধু আবু বকরের জন্যই ইসলাম বেদুইনদের সাথে আপস করতে না গিয়ে অঙ্কুরেই নিশ্চিহ্ন বা বিনষ্ট হয়ে যায়নি । বস্তুত ইসলামের সকল বিপর্যয়ের ধাক্কা প্রথমেই হযরত আবু বকর ( রা . ) কে সামলাতে হয় । তাঁর চরিত্রে রয়েছে অনেক মহৎ গুণের সমারোহ । তিনি একাধারে বিদ্বান , সিদ্দীক উপাধিপ্রাপ্ত , দৃঢ়চেতা সাহসী শাসক । ঐতিহাসিক সৈয়দ আমীর আলী তাঁর মূল্যায়ন করেছেন এভাবে : “ Like his master , Abu Bakar was extremly simple in his habits gentle but firm , he devoted all his energies to the administration of new born state and to the good of people . ” অর্থাৎ ইসলামের প্রতি তাঁর এ সকল অবদানের কথা বিবেচনা করেই হযরত আবু বকর ( রা ) -কে ইসলামের ত্রাণ কর্তা বলা হয় ।

রিদ্দা যুদ্ধের সমালোচনা : হযরত আবু বকর ( রা ) খিলাফত কালে ভন্ডনবি ও অন্যান্য বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধকে অধিকাংশ ঐতিহাসিকগণ রিদ্দা বা স্বধর্মত্যাগীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বলে আখ্যায়িত করেছেন । একমাত্র Cambridge Medieval History গ্রন্থের প্রণেতা উইলিয়াম বেকার এ ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করেন । তাঁর মতে যারা বিদ্রোহী হয়েছিল তারা প্রকৃতপক্ষে কোনদিনই মনে প্রাণে ইসলাম গ্রহণ করেনি ।

 হযরত মুহাম্মদ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর বিরাট ব্যক্তিত্বের ভয়ে তারা শুধু মুখে ইসলামের কথা উচ্চারণ করেছিল । তারা ইসলামের অন্তর্নিহিত সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়নি । কাজেই তাদের রিবুদ্ধে পরিচালিত যুদ্ধকে কোন ক্রমেই রিদ্দা যুদ্ধ বলা উচিত নয় । বেকারের এই মতবাদকে সম্পূর্ণ যুক্তিসংগত বলে মনে হয় না কারণ --

১। স্বধর্মত্যাগীদের আন্দোলন যে সমগ্র আরব উপদ্বীপকে প্রভাবিত করেছিল তার কোন প্রমাণ উইলিয়াম বেকার দিতে সমর্থ হননি । 

২। যারা হযরত মুহাম্মদ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর জীবদ্দশায় ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন , তারা বিদ্রোহীদের কোন লোভ লালসায় , প্রভাবান্বিত হয়ে ইমানের পথ থেকে বিচ্যুত হননি । 

৩। মুনাফিকদের জোর জবরদস্তি ফরে সাময়িকভাবে মদিনার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছিল , তারা কেন্দ্রীয় শাসনকে অস্বীকার করতে সাহসী ছিল না । 

৪। তার আনুগত্য বর্জন করেছিলেন এমন কোনো নজির পাওয়া যায়নি । 

৫। এ বিদ্রোহের সময় মক্কা নগরীসহ কতিপয় অঞ্চলে শান্তি বিরাজমান ছিল । ফলে এ সকল অঞ্চলের অধিবাসীগণ সন্তুষ্ট চিত্তে ইসলাম গ্রহণ ও মহানবির আনুগত্যে অবিচল ও অটট ছিল ।


 হযরত মুহাম্মদ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর নবুয়ত লাভের সাফল্য , বিশেষ ব্যক্তিত্ব ও সম্মান এবং প্রতিপত্তি লাভ প্রত্যক্ষ করে আরবের অনেক লোকের মনে নবুয়ত লাভের প্রেরণা তীব্রভাবে জেগে উঠে । জাগতিক - সুযোগ - সুবিধা লাভের আশায় তারা শুধু মৌখিকভাবে ইসলাম গ্রহণ করে তারা কখনো ইসলামের সামাজিক , রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিকমূল্যবোধকে মনেপ্রাণে মেনে নেয়নি ।

 মহানবি ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর জীবনে শেষ দিকে আরবের বিভিন্ন অংশে কতিপয় ভণ্ড নবির আবির্ভাব ঘটে । মহানবি ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর ওফাতের পর তারা বিদ্রোহী হয়ে উঠে এবং ইসলামের ধ্বংস সাধনে লিপ্ত হয় । যে সমস্ত ধর্মত্যাগী মুসলমান নিজেদেরকে নবি বলে দাবি করেন তাদের মধ্যে ইয়ামেনের আনসী গোত্রের নেতা আসাদ আনসি , ইয়ামামার বনু হানিফা গোত্রের মুসায়লামা , বনু আসাদ গোত্রের তোলায়হা , বানু ইয়ারবু গোত্রের মহিলা সাজাহ ভন্ড নবিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য । সংক্ষেপে ভন্ডনবিদের পরিচয় দেয়া হল 

আসাদ আনসি : ভন্ড নবিদের মধ্যে ইয়ামেনের আনসি গোত্রের নেতা আসাদ আনসি সর্বপ্রথম নবুয়ত দাবী করে এবং ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে । রসুল ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর জীবিতাবস্থায় হিজরি দশম সালে সে নবুয়াতের দাবিদার হয় । সে ইয়ামেনে মুসলিম শাসন কর্তাকে বিতাড়িত ও হত্যা করে রাজধানী সানআ ও নাজরানে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে ।

 অতপর সে পাশ্ববর্তী গোত্র প্রধানদের সহায়তায় একটি শক্তিশালী সৈন্যবাহিনী গঠন করে এবং সমগ্র দক্ষিণ আরব তার দখলিভুক্ত করে নেয় । মহানবি ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এ বিদ্রোহ দমনের জন্য হযরত সা'দ বিন জাবালকে প্রেরণ করেন । কিন্তু ভন্ড নবি আসাদ মহানবি ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর মৃত্যুর দু - এক দিন পূর্বে ইয়ামেনের নিহত শাসন কর্তার এক আত্মীয় ফিরোজ দায়লামী কর্তৃক নিহত হয় । মহানবি ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর মৃত্যুর পর ইয়ামেনের পুনরায় বিদ্রোহ দেখা দেয় । প্রথম কলিফা হযরত আবু বকর ( রা ) মুহাজির নেতৃত্বে বিদ্রোহীদের ধ্বংস করে দেন ।

মুসায়লামা : মধ্য আরবের ইয়ামামার বনু হানিফা গোত্রের মুসায়লামা নিজেকে নবি বলে দাবী করে । স্বরচিত বাণীকে ঐশীবাণী বলে প্রচার করে নিজেকে নবি বলে প্রকাশ করে । সে মহানবি ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) কে জানায় যে , ধর্ম প্রচারে ও আরব উপদ্বীপ শাসন কার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে সে তাঁর সমতুল্য । মহানবি ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) তাকে ভন্ডামী , ধর্মদ্রোহীতা ও রাষ্ট্র বিরোধী কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার জন্যে নির্দেশ দেন । কেননা , সে প্রতিনিধি আগমনের বর্ষে মহানবি হযরত মুহাম্মদ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর নিকট ইসলাম গ্রহণ করেছিল । কিন্তু ভন্ড মুসায়লামা মহানবি ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর নির্দেশে কর্ণপাত করেনি । বরং পরিত্র কোরআনের বাণী নকল নিজস্ব পদ্ধতিতে নামাজ ব্যবস্থা চালু করে । 

তোলায়হা : উত্তর আরবের বানু সাদ গোত্রের তোলায়হা নামক এক ব্যক্তিও নিজেকে নবি বলে দাবী করে । মদিনার বেদুইনদের সাথে ষড়যন্ত্র করে সে যাকাত বিরোধী এক আন্দোলন গড়ে তোলে । মহাবীর হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ ( রা ) বুজাখার যুদ্ধে পরাজিত করেন । ফলে সে পালিয়ে গিয়ে সিরিয়ায় আত্মগোপন করে । খলিফা হযরত আবু বকর ( রা . ) বানু সাদ গোত্রকে ক্ষমা করেদেন । এ সুযোগে তোলায়হা ফিরে আসে এবং ইসলাম গ্রহণ করে ।

 সাজাহ : প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর ( রা . ) হযরত ইকরামা ও সুরাহবিল তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দমনে প্রেরণ করেন । তারা এ যুদ্ধে মুসায়লামার বিরাট বাহিনীর কাছে পরাজিত হন । অতঃপর হযরত আবু বকর ( রা ) খালিদ বিন ওয়ালিদকে এ বিদ্রোহ দমনে প্রেরণ করেন । এ সময় মধ্য আরবের বানু ইয়ারবু গোত্রের ৫৬ নবি খ্রিষ্টান রমনী সাজাত মুসায়লামার সাথে যোগদান করে তাকে আরো শক্তিশালী করে তোলে । মহাবীর খালিদের সাথে ৬৩৩ খ্রিষ্টাব্দে ইয়ামামার যুদ্ধে সে অসংখ্য অনুচরসহ নিহত হয় । এ যুদ্ধে মুসলমানদের বহু কুরআনে হাফিজ সাহাবি শাহাদাত বরণ করে ।

 


মদিনা রক্ষার ব্যবস্থা : বিদ্রোহ দমনের জন্য সেনাবাহিনীকে বিভক্তকরণ  সমগ্র আরবে বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়লে নব প্রতিষ্ঠিত শিশু ইসলামি সাম্রাজ্যে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় । বিভিন্ন স্থানে তারা বিদ্রোহ করে যাকাতা আসায় বন্ধ , ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধিদের হত্যা প্রভৃতি নাশকতামূলক কার্যক্রম চালায় । কৃত্রিম ধর্ম প্রচারকদের প্ররোচনায় জনসাধারণের মধ্যে প্রচন্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয় । অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমান বিদ্রোহীদের হাতে প্রাণ হারাতে থাকেন । আরবের বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্রোহ ভক্তনবিদের দ্বারা ইসলাম ও মুসলিম রাষ্ট্র বিপন্ন হয়ে উঠে । তাদেরকে দমন করার উদ্দেশ্যে ও ভন্ডনবিদের সাথে যুদ্ধ করার জন্যে হযরত আবু বকর ( রা ) সেনাবাহিনীকে ১১ টি ভাগে বিভক্ত করেন । প্রতিটি বিভাগে এক একজন সেনাপতি নিযুক্ত করেন । এরপর এক একটি দল আরবের বিভিন্ন অংশে পাঠান ।

 ১ . মহাবীর হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদকে প্রথমে তোলায়হা ও পরে মালিক বিন নুবায়াবার বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন । 

২ . হযরত ইকরামা বিন আবু জাহেল ( রা ) -কে মুসায়লামা কাযযাব এর বিরুদ্ধে প্রেরণ করা হয় । হযরত সুরাহবিল ( রা . ) হযরত ইকরামা ( রা ) এর সাহায্যার্থে পরে যোগ দিয়েছিলেন । 

৩. মোহাজির বিন আবি উমাইয়া ( রা ) -কে আসাদ আনসি ও কায়েস ইবনে আসের বিরুদ্ধে যথাক্রমে ইয়ামেন ও হাজরামাউত এ প্রেরণ করেন ।

 ৪. খলিফা আবু বকর ( রা ) আমর ইবনুল আসকে আরব ও সিরিয়া সীমান্তে ওয়াদীয়হ এবং হাবিসের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন ।

 ৫. খলিফা হযরত আবু বকর ( রা ) খলিদ ইবনে সাঈদকে স্থানীয় গোত্রসমূহ দমনে সিরিয়া পাঠান ।

 ৬. খলিফা আবু বকর ( রা ) আলা ইবনে হাজরামীকে আল হাতাম ইবনে দাবিয়ার বিরুদ্ধে বাহরাইন প্রেরণ করেন ।

 ৭ . সুয়ায়দ ইবনে মাকরানকে খলিফা আবু বকর ( রা ) ইয়ামেনের নিম্নাঞ্চলের বিদ্রোহ দমনের জন্য প্রেরণ করেন । 

৮. হযরত আরফাজাহ ইবনে হাযছামাকে লাকিত ইবনে মারিক আল - আযদির বিরুদ্ধে মাহরায় প্রেরণ করা হয় । 

৯. খলিফা হযরত আবু বকর ( রা ) হুযায়ফা ইবনে মুহসিনকে বনু সালাম ও হাওয়াজিন গোত্রদ্বয়ের দমন করার জন্যে প্রেরণ করেন । 

১০. হযরত তুরাইফাকে খলিফা হযরত আবু বকর ( রা ) আরবের নিম্নাঞ্চল অভিযানে প্রেরণ করেন । 

১১. খলিফা হযরত আবু বকর ( রা ) সুরাহবিল ইবনে হাসনাহকে ইয়ামামায় ইকরামার সাথে প্রেরণ করেন । 

১২. মদিনাকে রক্ষা করার নিমিত্তে একটি বাহিনীকে খলিফা তার সঙ্গে রাখেন । মদিনা হতে প্রধান সেনাপতিরূপে তিনি বিদ্রোহ দমন অভিযান দক্ষতা ও দৃঢ়তার সাথে পরিচালনা করেন ।

খলিফা হযরত আবু বকর ( রা . ) এর বিজয় অভিযানসমূহ  :

পারস্য অভিযান : রিদ্দা যুদ্ধের সময় পারস্যবাসীরা বাহরাইনের বিদ্রোহীদের উস্কানী ও সাহায্য অব্যাহত রেখেছিলেন । হযরত আবু বকর ( রা ) ইসলামি সম্রাজ্যের মধ্যে সকল বিদ্রোহ দমন করে ইসলামি রাষ্ট্রের সীমানা বৃদ্ধির দিকে মনোনিবেশ করেন । পারস্য অভিযান ছিল এ ধরনের ঘটনারই ফসল । খলিফা ইসলামি সীমানা বৃদ্ধি ও নিরাপত্তা বিধান করে পারস্য সীমান্ত বিদ্রোহ রোধ করার চিন্তা করেন । এজন্য ৬৩৩ খ্রিষ্টাব্দে সেনাপতি হযরত মুসান্নার নেতৃত্বে ৮,০০০ সৈন্যের এক বাহিনী প্রেরণ করেন । কিন্তু খলিফা আবু বকর ( রা ) এতে নিশ্চিত হতে না পেরে বিখ্যাত সেনাপতি মহাবীর হযরত খালিদের নেতৃত্বে আরও ১০,০০০ সৈন্যের একটি বাহিনী হযরত মুসান্নার সাহায্যার্থে প্রেরণ করেন । হযরত খালিদ বাহিনী ইউফ্রেটিস নদীর উপকূলে অবস্থিত মুসান্না বাহিনীর সাথে মিলিত হন । সম্মিলিত বাহিনী ইসলামের নীতি মোতাবেক প্রথমে তাদেরকে ইসলাম গ্রহণের আহ্বান জানান । তারা ইসলাম গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায় এবং জিজিয়া দিতেও অস্বীকার করে । সম্মিলিত ইসলামি বাহিনী মুসান্না ও খালিদের নেতৃত্বে উবাল্লার হাকির নামক স্থানে পৌঁছলে পারস্য বাহিনী প্রধান হরমুজ তাদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখে । 

এজন্য এ যুদ্ধকে শৃঙ্খলার যুদ্ধ  বলা হয় অতপর হরমুজ মহাবীর খালিদের সঙ্গে সংঘটিত এক দ্বৈতযুদ্ধে নিহত হলে হরমুজ বাহিনী সম্পূর্ণভাবে পরাজিত হয় । মুসলিম বাহিনী এবার জনৈকা পারসিক রাজকুমারীর দ্বারা রক্ষিত একটি দুর্গ জয় করেন , যা কে মহিলা দুর্গ  বলা হয় । পারসিক সেনাপতি বাহমান হযরত মুসান্না ও হযরত খালিদের নিকট পরাজয় বরণ করে । এ যুদ্ধটি ওয়ালাজারা যুদ্ধ নামে প্রসিদ্ধ । অপর একটি যুদ্ধে পারস্য বাহিনী মহাবীর খালিদ - এর নিকট পরাজয় বরণ করে । এ যুদ্ধটি ওয়ালাজারা যুদ্ধ নামে প্রসিদ্ধ । অপর একটি যুদ্ধে পারস্য বাহিনী মহাবীর খালিদ এর নিকট পরাজিত হয় । এ যুদ্ধে জয়লাভ করে তিনি হিরা দখল করেন । হিরার অধিবাসীগণ খলিফার বশ্যতা স্বীকার করে জিজিয়া প্রদানের সম্মত হয় । অঙ্গীকারে একটি সন্ধিপত্রে স্বাক্ষর করে । হিরা অধিকারের পর খালিদ উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে আনবার , আইনুত তামুর ও দুমায় মুসলিম আধিপত্য বিস্তার করেন ।

সিরিয়া অভিযান : মহানবি হযরত মুহাম্মদ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর জীবিত থাকাবস্থায় রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াস তার প্রেরিত দূতকে সম্মান করতেন । কিন্তু পরে তিনি মুসলিম রাষ্ট্রের শক্তি বৃদ্ধিতে ঈর্ষান্বিত ও শংকিত হয়ে বিরুদ্ধাচরণ করেন । মহানবি হযরত মুহাম্মদ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর ওফাতের পর রোম সম্রাট সিরিয়ার আরব গোত্রগুলোকে বিদ্রোহের প্ররোচনা ও সাহায্য দান করে তারা ইসলামকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র চালায় । খ্রিষ্টান শাসনকর্তা সুরাহবিল মৃতায় মুসলিম দূতকে হত্যা করে এতে মুসলিম রাষ্ট্রের অস্তিত্ব রক্ষা ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার অভাব দেখা দেয় ফলে খলিফা আবু বকর ( রা ) রোমানদের ব্যাপারে আশংকা বোধ করেন । হযরত আবু বকর ( রা ) সাহাবিদের ডেকে একত্রিত কররেন । পরামর্শের পর সিদ্ধান্ত মোতাবেক , হযরত আবু বকর সিরিয়ায় অভিযান প্রেরণ করেন ।  . হযরত আবু বকর ( রা ) ইসলামি বাহিনীকে চার ভাগে বিভক্ত করেন । হযরত আমর ইবনুল আস ( রা ) -কে একটি অংশের নেতৃত্ব দিয়ে ফিলিস্তিনে যাওয়ার নির্দেশ দেন । হযরত আবু ওবায়দা ( রা ) -কে দ্বিতীয় অংশের নেতৃত্ব দিয়ে হেমসের দিকে প্রেরণ করেন । ইয়াজিদ ইবনে আবি সুফিয়ান ( রা ) কে তৃতীয় অংশের নেতৃত্বে দিয়ে দামেস্কে প্রেরণ করেন এবং সুরাহবিল ইবনে হাসানাহ ( রা . ) কে চতুর্থ অংশের নেতৃত্বের নির্দেশ দিয়ে জর্দানের দিকে যাওয়ার আদেশ দেন । 

হযরত আবু ওবায়দা ( রা ) জাবিয়ায় , হযরত সুরাহবিল ইবনে হাসানা ( রা ) বসরায় এবং হযরত আমর ইবনুল আস ( রা ) আরবায় তাদের সৈন্য বাহিনী নিয়ে উপনীত হন । হযরত আবু ওবায়দা ( রা ) ছিলেন এ অভিযানের সর্বাধিনায়ক । খলিফা পরে হিরা থেকে মহাবীর খালিদ বিন ওয়ালিদকেও মুসলিম বাহিনীর সাথে যোগদানের নির্দেশ দেন । সম্রাট হিরাক্লিয়াসের ভ্রাতা থিওডোরাসের নেতৃত্বে ২,৪০০০০ সৈন্যের এক শক্তিশালী বাহিনী গঠন করা হয় এ বিশাল সৈন্য বাহিনীর মোকাবিলায় মুসলিম সৈন্য সংখ্যা ছিল ৪০,০০০০ হাজার । আজানাদাইনের প্রান্তরে ৬৩০ খ্রিষ্টাব্দে যে যুদ্ধ সংঘটিত হয় তাতে মুসলিম বাহিনীর নিকট থিওডোরাস পরাজিত হয় । সম্রাট হিরাক্লিয়াস এন্টিয়াকে পলায়ন করেন । ফলে সমগ্র প্যালেষ্টাইন মুসলিম আধিপত্যে চলে আসে । অতপর মুসলিম বাহিনী দামেস্ক অবরোধ করে দক্ষিণ সিরিয়া দখল করেন ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ