সূফী কাকে বলে ?? ইসলামের দৃষ্টিতে সুফীবাদ


সুফিবাদের সিলসিলা কয়টি?,সুফিদের প্রধান বিশ্বাস ও অনুশীলন কি ছিল?,সুফি সিলসিলা বলতে কি বুঝায়?,সুফিবাদে মুর্শিদ কি?,ইসলামে সুফি শব্দের অর্থ কি?,পৃথিবীর প্রথম দার্শনিক কে,বাংলাদেশে আগত প্রথম সুফি কে?,একজন সুফি সাধকের নাম কি?  Feedback  W  Wikipedia  https://bn.wikipedia.org › ...  সুফিবাদ  মধ্যে সবচেয়ে সুপরিচিত সাহাবা ছিলেন আবু হুরাইরা। ... কেননা, মুসলমানদের মধ্যে যারা হিন্দুত্ব-প্রভাবিত সুফিবাদেরএটি বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত সুফী সাধকদের অন্যতম হজরত খাজা সৈয়দ নিজামউদ্দীন আউলিয়ার (1325-1238 CE) দরগাহ (সমাধিসৌধের)। এটি দিল্লির হজরত নিজামুদ্দিনের পশ্চিম অঞ্চলে অবস্থিত, দরগাহটি প্রতি সপ্তাহে প্রায় কয়েক হাজার মুসলমান দর্শন করেন এবং হিন্দু, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য ধর্মের লোকদেরও এখানে সমমর্যাদা দেওয়া হয়।সুফিরা প্রধানত 10টি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ অনুসরণ করেছেন, যেগুলো হল “তাওবা”, “জুহদ”, "ওয়ারা”, "ফকর”, “সাবর”, “শুকরা”, “রাজা", "রিজা”, “খাউফ”, “তাওওয়াক্কুল”।.কয়েকজন সুফি-দরবেশ ইসলাম ও সুফিবাদ প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাঁদের মধ্যে শেখ জালালুদ্দিন তাব্রিজি (র.), শাহ জালাল (র.), শেখ আলাউল হক (র.), খান জাহান আলী (র.), শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামা (র.), শাহ ফরিদউদ্দিন (র.) প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।

সুফিবাদ একটি ইসলামি আধ্যাত্মিক দর্শন। আত্মা-সম্পর্কিত আলোচনা এর মুখ্য বিষয়। আত্মার পরিশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনই হলো এই দর্শনের মর্মকথা।

আরবী صُوفِيّ‎ (সূফী) শব্দটি 'সুফ' থেকে এসেছে যার অর্থ পশম। যারা পশমী বস্ত্রে পরিধানের অভ্যাস করে ও আধ্যাত্মিক সাধনায় জীবনকে নিয়োজিত করে, যিনি নিজেকে এইরূপ সাধনায় সমর্পিত করেন ইসলামের পরিভাষায় তিনি সূফী صُوفِيّ‎ নামে অভিহিত হন। রাসূলে পাক দঃ جُبَّةٌ من صُوفٍ পশমের জুব্বা মুবারক পরিধান করেছেন। অর্থাৎ, সূফী হচ্ছেন ওই ব্যক্তি, যিনি পশমী ও মোটা কাপড় পরিধান করেন এবং দুনিয়ার ভোগ-বিলাস পরিহার করে সরল সোজা ও সাদামাটা জীবন যাপন করেন। যাকে হাদিসের ভাষায় عابد (আবেদ) বলা হয়। 


অর্থাৎ, সূফী মানেই সর্বোচ্চ মাকামের আল্লাহর ওলী নন, বরং সাধনারত একজন সাধক, যিনি বেলায়াতে ছোগরার স্তরের হতে পারেন অথবা বেলায়াতে কুবরা বা উলিয়া স্তরেরও হতে পারেন বা আরো ঊর্ধ্ব মর্তবার হতে পারেন আবার বেলায়াতপ্রাপ্ত নন এমন সাধকও হতে পারেন। যেমন বর্তমানেও এমন সূফী রয়েছে যারা মূলত আল্লাহর ওলী নন তবে সূফীবাদে বিশ্বাসী বিধায় তিনারা সূফী লিখে থাকেন। 

সুফিবাদে স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে আধ্যাত্মিক ধ্যান ও জ্ঞানের মাধ্যামে জানার প্রচেষ্টা করা হয়। আল- গাজ্জালি এর মতে, আল্লাহর ব্যতীত অপর মন্দ সবকিছু থেকে আত্মাকে পবিত্র করে সর্বদা আল্লাহর আরাধনায় নিমজ্জিত থাকা এবং সম্পূর্ণ রূপে আল্লাহুতে নিমগ্ন হওয়ার নামই সুফিবাদ বলে।

সূফীবাদের মূল বিষয় হল, আপন নফসের সঙ্গে জিহাদ করে আত্মশুদ্ধি লাভ করা। 

হজরত মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘মানবদেহে একটি বিশেষ অঙ্গ আছে, যা সুস্থ থাকলে সমগ্র দেহ পরিশুদ্ধ থাকে, আর অসুস্থ থাকলে সমগ্র দেহ অপরিশুদ্ধ হয়ে যায়। জেনে রাখো, এটি হলো কলব বা হৃদয়। আল্লাহর জিকর বা স্মরণে কলব কলুষমুক্ত হয়।’ সার্বক্ষণিক আল্লাহর স্মরণের মাধ্যমে কলবকে কলুষমুক্ত করে আল্লাহর প্রেমার্জন সুফিবাদের উদ্দেশ্য।

আবার অনেকের মতে সূফী শব্দটি এসেছে 'আসহাবে সুফফা' থেকে, সাহাবীদের একটি দল, মসজিদে নববীর বারান্দায় 'সুফফা' নামক স্থানে অবস্থান করে সার্বক্ষনিক ইবাদত করতেন। এ কারণে একজন মুর্শীদের দরবারে অবস্থান করে সার্বক্ষনিক ইবাদতে মশগুল থাকা ব্যক্তিদের সূফী বলা হয়।

কেউ কেউ মনে করেন সূফী শব্দটি صفاء (পবিত্রতা ও স্বচ্ছতা) থেকে নির্গত হয়েছে। কেননা তারা পূতপবিত্র ও স্বচ্ছ জীবন যাপন করেন। সূফীর সংজ্ঞায় বর্ণিত এই কথাটি ঠিক নয়। কারণ সূফীরা নিজেদেরকে صوفي (সূফী) বলে উল্লেখ করেন। صفاء শব্দ থেকে সূফীর উৎপত্তি হয়ে থাকলে তারা নিজেদেরকে صفائي (সাফায়ী) বলতেন। অথচ এই মতবাদে বিশ্বাসী কোন লোক নিজেকে সাফায়ী বলেন না, বরং সূফী বলেন।

সূফীদের মধ্যে অনেকে শারয়ী জ্ঞান সম্পন্ন সূফী হতে পারেন, এমনকি শারয়ী জ্ঞান হাসিল ছাড়াও সূফী থাকতে পারে। যেমন হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহ. বলেন: আমার পীর ও মুর্শিদ হযরত সিররী সাকাতী রহ. আমাকে দোয়া করলেন: আল্লাহ পাক তোমাকে হাদিসবীদ বানিয়ে অতঃপর সূফী বানাক এবং হাদীসবীদ হওয়ার পূর্বে তোমাকে সূফী না বানাক।

ইমাম গাজ্জালী রহ. বলেন: হযরত সিররী সাকাতী রহ. এই দোয়ার ব্যাখ্যায় বলেন: যে ব্যক্তি প্রথমে হাদিস ও জ্ঞান অর্জন করে সুফিবাদে প্রবেশ করে, সে সফলকাম হয়। আর যে ব্যক্তি দ্বীনী জ্ঞান অর্জনের পূর্বে সূফী হতে চায়, সে নিজেকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করল। (শরিয়ত ও তরিকত, ২০ পৃষ্ঠা)

অতএব, যে সকল সূফী শারয়ী জ্ঞান + ইলমে তাসাউফ উভয়ই অর্জন করেছেন তাঁরা সর্বোত্তম। যারা শারয়ী জ্ঞান ব্যতীত শুধুমাত্র ইলমে তাসাউফ চর্চা করেন তাদের চেয়ে মুহাক্কিক আলিমদের মর্যাদা বেশী।

উল্লেখ্য যে, কিছু সূফীদের মধ্যে ইসলাম বিরোধী আকীদাহ রয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট আকীদাহ (বিশ্বাস) হচ্ছে, عقيدة الحلول والاتحاد আকীদাতুল হুলুল ওয়াল ইত্তেহাদ তথা সৃষ্টির মধ্যে আল্লাহর সত্বাগত অবতরণে বিশ্বাস করে। সূফীদের আরেক দল ওয়াহদাতুল উজুদে বিশ্বাসী। ওয়াহ্দাতুল উজুদের এর তাৎপর্য হচ্ছে

وأما الاتحاد فمعناه (عند الصوفية) أن عين المخلوقات هو عين الله تعالى

সৃষ্টি এবং স্রষ্টা একই জিনিষ। অর্থাৎ সৃষ্টিজীব এবং আল্লাহ তাআলার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই, উভয়ই এক ও অভিন্ন।

এসব বাতিল মতবাদকে রদ বা খণ্ডন করেছেন হযরত মুজাদ্দিদ আলফেসানী রহ.। এজন্যে সবচেয়ে পরিশুদ্ধ ও পরিচ্ছন্ন সূফীবাদ বা তাছাউফতত্ত্ব রয়েছে হযরত মুজাদ্দিদ আলফেসানী রহ. এর দর্শনে। এছাড়াও অন্যান্য হক্ব তরিকার মধ্যেও পরিশুদ্ধ ও পরিচ্ছন্ন তাসাউফ চর্চা রয়েছে। 

কয়েকজন সুফি-

দরবেশ ইসলাম ও সুফিবাদ প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাঁদের মধ্যে 

শেখ জালালুদ্দিন তাব্রিজি (র.) 

শাহ জালাল (র.)

শেখ আলাউল হক (র.)

খান জাহান আলী (র.)

শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামা (র.)

শাহ ফরিদউদ্দিন (র.) 

বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত সুফী সাধকদের অন্যতম হলেন হজরত খাজা সৈয়দ নিজামউদ্দীন আউলিয়ার (1325-1238 ) দরগাহ (সমাধিসৌধের)। এটি দিল্লির হজরত নিজামুদ্দিনের পশ্চিম অঞ্চলে অবস্থিত, দরগাহটি প্রতি সপ্তাহে প্রায় কয়েক হাজার মুসলমান দর্শন করেন এবং হিন্দু, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য ধর্মের লোকদেরও এখানে সমমর্যাদা দেওয়া হয়।


সুফিরা প্রধানত 10টি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ অনুসরণ করেছেন

 যেগুলো হল “তাওবা”, “জুহদ”, "ওয়ারা”, "ফকর”, “সাবর”, “শুকরা”, “রাজা", "রিজা”, “খাউফ”, “তাওওয়াক্কুল”


মহান আল্লাহ তাআলা সবাইকে সঠিক ও ছহীহ্ সূফী ও তাসাউফ জানার ও বুঝার তৌফিক দান করুক আমীন। 





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ