অর্থনীতি দ্বিতীয় পত্র - দ্বিতীয় অধ্যায় -বোড প্রশ্ন ২০১৮ সকল বোর্ড

 


প্রশ্ন | বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। পূর্বে সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদ হলেও বর্তমানে কৃষিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। কৃষি উৎপাদনেও বৈচিত্র্য এসেছে। যার জন্য পূর্বের তুলনায় কৃষকদের বেশি পরিমাণে মূলধন প্রয়োজন হচ্ছে। কিন্তু নানা কারণে কৃষক প্রাতিষ্ঠানিক উৎস থেকে পর্যাপ্ত কৃষিঋণ সংগ্রহ করতে পারে না। অতিসম্প্রতি সরকার কৃষিঋণ ও উপকরণ বিতরণ অধিকতর সহজলভ্য করেছে। যার ইতিবাচক প্রভাব কৃষি উৎপাদনে পরিলক্ষিত হচ্ছে


[ঢা. বো. ১৮. বো. ১৮. সি. বো. ১৮ দি. বো. ১৮/]


ক. কৃষিজাত কাকে বলে? 

খ. মধ্যস্বত্ব ভোগীদের দৌরাত্ম্যের কারণেই কৃষকগণ ফসলের ন্যায্যমূল্য পায় না-ব্যাখ্যা কর। 

গ. প্রাতিষ্ঠানিক উৎস থেকে ঋণ সংগ্রহে কৃষকের সমস্যাসমূহ উদ্দীপকের আলোকে বর্ণনা কর ।

 ঘ. কৃষির উন্নয়নে সরকারের গৃহীত কৃষিঋণ ও কৃষি উপকরণ বিতরণ যথেষ্ট কি? তোমার মতামত দাও।


=> প্রশ্নের উত্তর 

ক) কৃষক যে আয়তনের জমির ওপর কৃষিকাজ পরিচালনা করে তাকে কৃষিজাত বলে। এরকম জোত ক্ষুদ্র, মাঝারি কিংবা বড় হতে পারে।


খ ) কৃষিপণ্য খামার থেকে ভোক্তার হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত মধ্যবর্তী ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য রয়েছে। ফড়িয়া, দালাল, মজুতদার, বেপারি, মহাজন ইত্যাদি মধ্যস্বত্বভোগীরা কৃষকদের আর্থিক সংকটের সুযোগে হাতিয়ে নেয় মোটা অঙ্কের মুনাফা। এরা অনেক সময় কৃষকদেরকে দ্রব্যের চাহিদা ও যোগান সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়ে কৃষকদেরকে তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত করে। সুতরাং দেখা যায়, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যের কারণেই কৃষকগণ ফসলের ন্যায্যমূল্য পায় না।


গ ) প্রাতিষ্ঠানিক উৎস থেকে ঋণ সংগ্রহে কৃষকের সমস্যাসমূহ

উদ্দীপকের আলোকে বর্ণনা করা হলো-

 ১. ঋণের অপর্যাপ্ততা : বাংলাদেশে কৃষিঋণের চাহিদার তুলনায় যোগানের পরিমাণ অত্যন্ত কম। ঋণদানকারী প্রাতিষ্ঠান কৃষিঋণের মোট প্রয়োজনের মাত্র ১৫ হতে ২০ ভাগ পূরণ করতে সক্ষম ।


২. গ্রামাঞলে ঋণদানকারী প্রাতিষ্ঠানের স্বল্পতা : বাংলাদেশে কৃষিঋণ প্রদানকারী প্রাতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশ জেলা ও উপজেলা শহরে অবস্থিত। অশিক্ষিত কৃষকদের পক্ষে শহরে গিয়ে তদবির করা সম্ভব হয় না। 

৩. জটিল ঋণদান পদ্ধতি : বাংলাদেশের ঋণদান প্রতিষ্ঠানসমূহের ঋণদান পদ্ধতি এতই জটিল ও শর্তসাপেক্ষ এসব জটিল, হয়রানিমূলক ও শর্তসাপেক্ষ ঋণদান পদ্ধতির জন্য এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণের আগ্রহ কৃষকদের থাকে না। 

৪. প্রাতিষ্ঠানিক ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের স্বল্পতা : বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণদানকারী সংস্থার সংখ্যা অত্যন্ত কম। তাছাড়া এসব ঋণদানকারী সংস্থার ঋণ প্রদানের ক্ষমতা খুবই কম। 

৫. ঋণ প্রদানে অযথা বিলম্ব : আমলাতান্ত্রিক ও ত্রুটিপূর্ণ ঋণদান পদ্ধতির কারণে কর্তৃপক্ষ ঋণ প্রদানে অযথা বিলম্ব ঘটায়। এসব কারণে সময় এত বেশি লাগে যে প্রকৃত প্রয়োজনের সময় ঋণ পাওয়া যায় না।


৬. উপযুক্ত জামানতের অভাব : বাংলাদেশে বিভিন্ন ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান হতে কৃষিঋণ পেতে হলে ঋণের পরিবর্তে প্রয়োজনীয় জামানত দিতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশের অধিকাংশ কৃষকের জামানত রাখার মতো সম্পদ নেই। ফলে ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে অধিকাংশ কৃষকদের অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। 

প্রাতিষ্ঠানিক উৎস থেকে ঋণ সংগ্রহের জন্য কৃষককে উপরিউক্ত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।


ঘ ) না, কৃষির উন্নয়নে সরকারের গৃহীত কৃষিঋণ ও কৃষি উপকরণ বিতরণ যথেষ্ট নয় । কারণ এগুলো ছাড়াও অনেকগুলো পদক্ষেপ নিতে হবে—


 ১. ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ানো : ঋণ সুবিধা সকল কৃষকের নিকট পৌছে দেওয়ার জন্য ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ানো উচিত।


 ২. ঋণের পরিমাণ বাড়ানো : ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান বাড়ানোর পাশাপাশি ঋণের পরিমাণ বাড়ানো জরুরি। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক সকল প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সুবিধা দিতে পারে।


 ৩. ঋণদান পদ্ধতি সহজ করা : গ্রামের কৃষকেরা ঋণদান ও পরিশোধ পদ্ধতির জটিলতার কারণে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণগ্রহণ করতে চায় না। ঋণদান পদ্ধতিকে সহজ-সরল করা একান্ত আবশ্যক ।


 ৪. প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাংক স্থাপন : ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের শাখা গ্রামাঞ্চলে বিস্তৃত করতে হবে যাতে কৃষকরা ঋণ সহজে গ্রহণ করতে পারে।


 ৫. সময়মতো ঋণ প্রাপ্তি : কৃষক যেন প্রয়োজনে সময়মতো ঋণ পায় সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে ।


 ৬. দুর্নীতি দমন : ঋণ বিতরণ ব্যবস্থার সাথে জড়িতদের দুর্নীতি, দালালি, স্বজনপ্রীতি বন্ধ করে যথাযথ ব্যক্তিকে ঋণদানের ব্যবস্থা করতে হবে।


 ৭. ঋণ বণ্টনে সমতা নিশ্চিত করা : দরিদ্র, প্রান্তিক, ভূমিহীন কৃষকদের ঋণের প্রয়োজন বেশি। অথচ ঋণী কৃষকরাই অধিক পরিমাণে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের সুবিধা পায়। ঋণের এ অসম বণ্টন


 দূর করে দরিদ্র কৃষকরা যেন বেশি ঋণ পায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। 

যেহেতু কৃষি উন্নয়নে উদ্দীপকের ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়াও উল্লিখিত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তাই বলা যায়, কৃষি উন্নয়নে সরকার গৃহীত কৃষিঋণ ও কৃষি উপকরণ বিতরণ যথেষ্ট নয় ।


প্রশ্ন ২| মি. 'ক' একদিন খবরের কাগজ পড়ছিলেন। সেখানে একটি খবরের প্রতি তার দৃষ্টি আটকে যায়। খবরে বলা হয় বগুড়ার মহাস্থানগড় বাজারের সবজির দামের সঙ্গে ঢাকার কাওরান বাজারের সবজির দামে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। খবরে আরও জানতে পারেন, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, মধ্যস্বত্বভোগী ও দালালদের দৌরাত্ম্য কৃষকদের সচেতনতার অভাব ইত্যাদি কারণে দামের এ পার্থক্য সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমান সরকার এসব সমস্যা সমাধানে রাস্তাঘাট নির্মাণ ও প্রযুক্তির মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের চেষ্টা করছে

 [রা. বো. ১৮: চ. বো. ১৮; কু. বো. ১৮; ব. বো. ১৮]


 ক. জীবন নির্বাহী খামার কী?


 খ. দীর্ঘমেয়াদি কৃষি ঋণ কৃষি উন্নয়নের ভিত্তি—ব্যাখ্যা কর। 

গ. উদ্দীপকের আলোকে বাংলাদেশের কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণের সমস্যাসমূহ আলোচনা কর।


 ঘ. কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্যে নিশ্চিত করতে সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমূহ কি যথেষ্ট? উদ্দীপকের ভিত্তিতে বিশ্লেষণ কর ।


=>  ২নং প্রশ্নের উত্তর


 ক) জীবন নির্বাহের জন্য স্বল্প পুঁজি, নিজস্ব শ্রম ও নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কৃষক যে কৃষিকাজ পরিচালনা করে তাকে জীবন নির্বাহী কৃষি খামার বলে ।


 খ ) যে ঋণের টাকা পাঁচ বছর থেকে বিশ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হয় তাকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বলে। সাধারণত জমির স্থায়ী উন্নয়ন, ট্রাক্টর ক্রয়, ভারী যন্ত্রপাতি ক্রয়, পুরনো ঋণ পরিশোধ ইত্যাদি

 কাজে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ গ্রহণ করা হয়। সুতরাং দেখা যায়, দীর্ঘমেয়াদি কৃষি ঋণ উন্নয়নের ভিত্তি


 গ) উদ্দীপকের আলোকে বাংলাদেশে কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণের


 সমস্যাসমূহ আলোচনা করা হলো— অনুন্নত পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা : কৃষিপণ্যের বাজারজাতকরণের অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে উন্নত পরিবহন ও যাতায়াত ব্যবস্থা। কিন্তু বাংলাদেশের যাতায়াত ও পরিবহন ব্যবস্থা খুবই নিম্নমানের। তাই দূরবর্তী স্থানে পণ্য বিক্রয় করা ব্যয়বহুল, কষ্টকর ও সময়সাপেক্ষ। তাই কৃষকরা স্থানীয়ভাবে কম দামে পণ্য বিক্রয় করতে বাধ্য হয় ।


 মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য : কৃষিপণ্য খামার থেকে ভোক্তার হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত মধ্যবর্তী ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য রয়েছে। ফড়িয়া, দালাল, মজুতদার, বেপারি, মহাজন ইত্যাদি মধ্যস্বত্বভোগীরা কৃষকদের আর্থিক সংকটের সুযোগে হাতিয়ে নেয় মোটা অঙ্কের মুনাফা। এরা অনেক সময় কৃষকদেরকে দ্রব্যের চাহিদা ও যোগান সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়ে কৃষকদেরকে তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত করে।


 কৃষকের অজ্ঞতা : আমাদের দেশের কৃষকরা বাজারের চাহিদা, যোগান এবং মূল্য সম্পর্কে সচেতন নয়। ভবিষ্যতে দ্রব্যের চাহিদা ও দাম কেমন হবে তা অনুমান করতে পারে না। তাছাড়া বিভিন্ন রকম বাজারে দ্রব্যের বিভিন্ন রকম দাম দেখা যায়। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মধ্যস্বত্বভোগীরা কৃষকদের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত করে ।


ঘ) উদ্দীপকে কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমূহ যথেষ্ট নয়। কারণ এছাড়াও অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।


 ২ ,পর্যাপ্ত ঋণ সরবরাহ নিশ্চিত : স্বল্পসুদে ঋণদানের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ঋণদান সংস্থা গ্রামাঞ্চলে স্থাপন করতে হবে যাতে কৃষকের প্রয়োজনের সময় পর্যাপ্ত ঋণ সরবরাহ করা সম্ভব হয় ।


 ৩. দালাল ও ফড়িয়ার বিলোপ সাধন : কৃষিপণ্যের বাজার থেকে দালাল ও মধ্যবর্তী ফড়িয়াদের বিলোপ সাধন করতে হবে। উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ ও সমবায় সমিতি স্থাপনের মাধ্যমে এদের কার্যকলাপ বন্ধ করতে হবে।


 ৪. গুদাম ও ঋণ : শস্য সংরক্ষণের সময় শস্যের যেন ক্ষতি না হয়, এজন্য সরকারকে গুদামঘর নির্মাণ করতে হবে এবং শস্য গুদামে মজুদ রাখার বিপরীতে সরকার ঋণ দিতে পারে ।


 ৫. বাজার নিয়ন্ত্রণ : বিভিন্ন বাজারে কৃষকদের নিকট থেকে যাতে আড়ৎদারি, পাল্লাদারি, টোল, চাঁদা প্রভৃতির অজুহাতে অর্থ আদায় করতে না পারে, সেজন্য আমাদের গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন বাজারগুলো সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার।


 ৬. সুষ্ঠু ওজন ও পরিমাপের ব্যবস্থা : দেশের সকল অঞ্চলে একই মাপের ওজন ব্যবস্থা প্রচলন করতে হবে। এর ফলে ফড়িয়া ও দালালগণ কৃষকদেরকে ঠকাতে পারবে না ।


 ৭. উন্নতমানের পণ্য উৎপাদন : কৃষিজাত পণ্যের ন্যায্যমূল্যের নিশ্চয়তা বিধান করতে হলে পণ্যের মান উন্নত করতে হবে। উপরের ব্যবস্থাদি সঠিকভাবে গৃহীত হলে কৃষিজাত পণ্যের বিপণন ব্যবস্থা উন্নত হবে এবং কৃষকেরা উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য লাভ করবে। সুতরাং দেখা যায়, কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমূহ যথেষ্ট নয় ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ