বাংলা ১ম পত্র - নবাব সিরাজউদ্দৌলা

 



 মূল গল্পে যাওয়ার আগে প্রাসঙ্গিক কিছু কথা বলে  নিই ।


ভারতবর্ষ প্রথমে একটি উপমহাদেশ ছিল তা আমরা জানি এবং এটি বিভিন্ন প্রদেশে ভাগ করা ছিল। পুরো ভারতবর্ষের যিনি শাষনকর্তা ছিলেন তাকে বলা হত 'বাদশাহ্' । বাদশাহ্ এর অধনস্ত, যারা প্রদেশগুলো পরিচালনা করতেন তাদের বলা হত 'নবাব'। এই প্রদেশগুলো আবার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নগর বা শহরে ভাগ করা ছিল এবং এইগুলোর পরিচালনার জন্য যাদের নিয়োগ করা হত তাদের বলা হত 'রাজা'। অর্থাৎ বর্তমানে যে মেয়ররা আছে।


অর্থাৎ, বাদশাহ্ ➡ নবাব➡ রাজা।


উপমহাদেশটির উল্লেখযোগ্য প্রদেশের মধ্যে ছিল

*বাংলা

*বিহাড়

*উরিষ্যা

*মাদ্রাজ

*কর্নাটক

*দক্ষিনাত্বক

*পান্জাব

*সিন্ধু

*দিল্লি 


দিল্লি হলো ভারত উপমহাদেশের মূল সাম্রাজ্য অর্থাৎ বাদশাহ্ এখানে বসতেন।


দ্বিতীয় জাহাঙ্গির শাহ্ যখন শাষনে ছিলেন তখন ভাষাগত দিক থেকে মিল থাকার কারনে "বাংলা, বিহাড়, উড়িষ্যাকে" একসাথে কাউন্ট করা হত। এবং এই তিনটি প্রদেশের জন্য একটি নবাব। নিয়োগ করা হত।


আমরা যে সময়ের প্রক্ষাপট থেকে পড়ছি তখনকার নবাব ছিলেন 'আলিবর্দি খান'। 

আসল নাম: মীর্জা মুহাম্মাদ আলী। এবং তিনি বংসপরম্পরায় নন বরং সাধারন কর্মচারি থেকে নিজ যোগ্যতায় সেনাপতি হন এবং পরে নবাব সার্ফরাজ খানকে হত্যা করে নিজে নবাব হন

নবাবের তিনটি কন্যা ছিল কিন্তু কোনো পুত্র ছিলনা।


১ম কন্যা: মহেরুননিসা/নেসা (ঘষেটি বেগম)

২য়: শাহ্ বেগম (নাটকে তার তেমন ভুমিকা নেই। তাই তার ব্যাপারে কিছু বলবনা)

৩য়: আমিনা বেগম


যেহেতু নবাবের কোনো ছেলে ছিল না তাই তিনি ঠিক করলেন তার কন্যাদের স্বামীদের মধ্য থেকে কাউকে নবাব বানিয়ে দিয়ে যাবেন। আর তাই তিনি তার ভাইয়ের ছেলেদের সাথে তার মেয়েদের বিয়ে দেন।


নবাবের তিন কন্যার মাঝে ঘষেটি বেগমের কোনো সন্তান ছিলোনা। তাই তিনি একটি পালকপুত্র নেন। তার নাম ছিলো 'সওকত জং'।

সওকত জং ব্যক্তিগত ভাবে খুব বাজে লোক ছিলেন। সর্বক্ষন মদ/নারী নিয়ে পরে থাকতেন। ঘষেটি বেগম তাকে পালক নেন কারন যদি বড় মেয়ের সন্তান হিসেবে সওকত জংকে নবাব বানানো হয় তবে তিনি হবেন রাজমাতা।


আমিনা বেগমের আবার তিন পুত্র ছিল। ( আমেনা বেগমের সব পুত্রই ঘষেটি বেগমের কাছে বড় হয়)


আমেনা বেগমের ছোট ছেলের নাম ছিল সিরাজ। সে যুদ্ধ/সাহসিকতা ও মেধার দিক দিয়ে সবচেয়ে ভালো ছিলেন। তাই নবাব তাকে খুব পছন্দ করতেন এবং তার মৃত্যুর পর সিরাজকে নবাব বানাবেন ঠিক করে গেলেন।


অতএব, ১৭৫৬ সালে যখন আলিবর্দি খান মারা যান তখন মাত্র ২৩ বয়সেই সিরাজ বাংলা, বিহাড়, উড়িষ্যার নবাব হয়ে যান।

কিন্তু এই ব্যাপারটি অনেকেই মেনে নিতে পারেনি। যার ফলে কিছু মানুষ তার পক্ষে ও কিছু মানুষ বিপক্ষে চলে যায়।


আমরা এখন একটু নবাবের পক্ষ ও বিপক্ষ নিয়ে আলোচনা করব। কারন বইয়ে পড়তে গেলে দেখা যায় আমরা অনেক সময় বুঝে উঠতে পারিনা কে নবাবের পক্ষে আর কে বিপক্ষে কথা বলছে। কিন্তু বিষয়টি আমাদের ভালো ভাবে মনে রাখা দরকার। পারলে এখান থেকে মুখস্ত করে ফেল। 


প্রথমে নবাবের বিপক্ষের দিকে আসছি।

এরা হলেন,

১/ সিপাহ্ সালার( সেনাপতিদের প্রধান). ইনি ইতিহাসে মীর জাফর নামে পরিচিত( আসল নাম: মীর জাফর আলি খান )

২/ মীর জাফরের পুত্র- মীর মীরন।

৩/ রাজা রাজবল্লভ।

৪/ রাজা রায় দুর্লভ।

৫/রাজা মানিকচাঁদ।

৬/ একজন দূতকে আমরা নাটকে পাবো। নাম 'উমিচাঁদ'। এই ব্যাক্তিটা ছিল মারাত্বক রকমের খারাপ একজন লোক। তিনি কখন কার হয়ে কাজ করত বুঝা দায় ছিল

। সহজ ভাষায় আমরা যেটাকে কূটনামি বলি। একজনের কথা আরেকজনের কছে লাগিয়ে দেয়া।


এখন পক্ষের কথা বলি,,


১/ মহোনলাল ( নবাবের জন্য জীবন দিয়েছে ) 

২/ মীর মর্দান।

৩/ সাফ্রে ( একজন ফরাসি ব্যাক্তি যিনি নবাবকে পলাশির যুদ্ধে অনেক সাহায্য করেন। তিনি কলকাতার চন্দন নগরে ছিলেন যেটা ইংরেজরা দখল করে নেয়।)

৪/ একজন গুপ্তচর- রাইসুল জুহলা। তিনি বিভিন্ন পশু-পাখির ডাক নকল করতে পারতেন।


=> পর্ব-২য়


*১৭৫৬ সালে আলটিমেটলি সিরাজ নবাব হয়ে যান।

সেই সময় আমাদের দেশে অনেক বিদেশিরা ব্যবসা করতে আসেন।এদের মধ্যে ছিলো,,

*ডাচ্

*পর্তূগিজ,

*ফরাসি

 আরো অনেকে,,,,,,

একদম সবার শেষে যারা আসে তারা হলো EIC (East India Company).

যাদেরকে আমরা ইংরেজ বলে জানি।


*কিন্তু তাদের (ইংরেজ) কাজকর্মে নবাব মোটামোটি ভয় পেয়ে গেলেন। কারন তারা ব্যবসা-এর পাশাপাশি রাজনীতিতে ডুকে গেছে এবং অচিরেই তারা কর্নাটক, মাদ্রাজ ও দক্ষিনাত্বক দখল করে নিয়েছে, এবং দিল্লির যে বাদশাহ্ তাকে উপহার পাঠিয়ে শান্ত করে রেখেছিল। এই পরিস্থিতি দেখে নবাব এর বিরোধিতা করার চেষ্টা করেন এবং ফলস্বরুপ তিনি ইংরেজদের বিতারিত করে দেন।


নবাবের ইংরেজদের বিতারিত করার পিছনে কিছু উল্লেখযোগ্য কারন ছিল,,


১/ যখন কেউ নবাব হন তখন সবাই তাকে উপহার বা উপঢৌকন পাঠান, নিয়মঅনুসারে সিরাজ নবাব হওয়ার পর সবাই তাকে উপহার পাঠালেও ইংরেজরা পাঠায়নি। ( যদিও এটি তেমন বড় কোনো কারন নয়, তবে একটি কারন।)

২/ কাশিমবাজার নামে একটি জায়গা ছিল যেখানে তারা পণ্যের বদলে অস্ত্র মজুত করছিলো।

৩/ কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম দূর্গের আশে পাশে তারা অনেক বড় বড় প্রাচীর বানালো যার কারনে দূর্গের ভিতরে কি হচ্ছে না হচ্ছে তা দেখা যাচ্ছিলনা।

৪/ সবচেয়ে বড় অপরাধটি ছিল, আমরা রাজবল্লব নামে একজন রাজাকে পাবো, তার পুত্র কৃষ্ণবল্লব রাজার কোষাগার থেকে টাকা চুরি করে পালিয়ে যায় এবং ইংরেজরা তাকে ঘুস এর বিনিময়ে আশ্রয় দেয়। নবাব তখন তাদের কাছে চিঠি পাঠায় যে " কৃষ্ণবল্লব আমাদের রাজবন্দি। তাকে তোমরা ফিরিয়ে দাও"

কিন্তু তখনকার যিনি ইংরেজ প্রধান 'রজারড্রেক' তাকে তো পাঠায়ই নি, উল্টো চিঠি পাঠিয়েছে 'আমরা তাকে ছাড়বোনা, আপনি যা খুশি করেন' , মূলত ঘুস নেয়ার কারনেই তারা এই রিস্কটি নেয়।


এখন কোনো নবাবকে যদি বলে আপনি যা খুসি করেন তাহলে কোনো নবাবই আসলে সহ্য করবেনা। নবাব সিরাজ ও করেননি। ফলস্বরূপ তিনি একটি যুদ্ধ ঘোষনা করেন ইংরেজদের বিরুদ্ধে।


অতএব, ১৭৫৬ সালে কলকাতায় একটি যুদ্ধ হয়। ( নবাব বনাম ইংরেজ).


কিন্তু যুদ্ধে নবাবের সৈনিকদের কাছে ইংরেজরা কোনো পাত্তাই পেলোনা। ফলে কলকাতা থেকে বিতারিত হয়ে ভাগিরথী নদীতে আশ্রয় নিলো।


*নবাব ইংরেজদের বিতারিত করে দিয়ে কলকাতার নাম দিলেন আলিনগর এবং এর শাষনকর্তা নিয়োগ দিলেন মানিকচাঁদকে।

ইংরেজদের বিতারিত করার পর নবাব ঘোষনা দিলেন কেউ ইংরেজদের সাথে পন্য ক্রয় বিক্রয় করবেনা, তাই অনেকেই তাদের সাথে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ করে দিল।

কিন্তু আমাদের দেশে অনেক আগে থেকেই কিছু রাজাকার ছিলো, তারা চড়া দামে পণ্য মজুত করতে লাগলো।


এ সময় দুইটি ঘটনা ঘটলো,

* যে উমিচাঁদ ছিলো সে মানিকচাঁদকে রাজি করিয়ে বড় অঙ্কঘর ঘুসের বিনিময়ে ইংরেজদের কলকাতায় পুনরায় প্রবেশের অনুমতি পত্র পাঠায়।( আমরা আগের পর্বে জেনেছি যে মানিকচাঁদ নবাবের বিপক্ষে ছিল)


* এবং অন্যদিকে দেখা যায় মাদ্রাজ থেকে ৫ টি জাহাজ আসছে। আর যিনি আসছেন তার নাম হলো 'লর্ড ক্লাইভ' 

উক্ত দুইটি ঘটনায় রজার ড্রেক প্রফুল্ল হয়ে যায়, অর্থাৎ সাহস পায়

Missing point of previous part: রাইসুল জুহলার আসল নাম 'নারান সিং',,,


=> পর্ব:৩

এখন মূল কাহিনিতে যাই,


* কলকাতা থেকে ইংরেজদের বিতারিত করে দেওয়ার পরও সকলের পরামর্শে, মূলত মীর জাফর, মানিকচাঁদ, রাজবল্লব এদের কথায় নবাব ইংরেজদের আবার কলকাতায় ডুকতে দেন, এবং নবাব ও ইংরেজদের মাঝে একটা সন্ধি হয়। নাম 'আলিনগরের সন্ধি'।

এই আলিনগরের সন্ধি হিসেবে,

*ইংরেজরা পুনরায় ব্যবসা করতে পারবে।

*নবাবকে নিয়মিত রাজস্ব বা কর প্রদান করতে হবে।

*দেশে যে সকল লবনচাষীরা আছে তাদের ইজারাদার হিসেবে কাজ করবে, অর্থাৎ তাদের নিকট হতে কর সংগ্রহ করবে এবং তাদের দেখাশুনা করবে।

এবং নবাব তাদের একজন লোক ওয়াটসন ( এডমিরাল চার্লস ওয়াটসন) কে রেখে দিলেন। যদি ইংরেজরা উল্টা পাল্টা কিছু করে তবে এর দায়ভার সে নিবে।


অন্যদিকে ঘষেটি বেগম তার নিজ প্রাসাদে (মতিঝিল প্রাসাদ) অন্য সকলকে ( মীর জাফর, শতকত জং, উমিচাঁদ, রাজবল্লব ও অন্যান্য) নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। ষড়যন্ত্রের মূল উদ্দেশ্যটা ছিল শতকত জংকে নবাব বানানো। আমরা আগেই বলেছি শওকত জং একটা বাজে লোক। নারী ও মদ নিয়ে বেচে থাকে। তো সে কেবল নামে মাত্র নবাব হবে, দায়িত্বটা চলে যাবে ঘষেটি বেগমের হাতে। অন্যদিকে, ঘষেটি বেগমের সাথে একটা লোকের বাজে সম্পর্ক আছে, তিনি রাজবল্লব, তো আলটিমেটলি আসল দায়িত্বটা তার হাতে চলে যাবে।


*সেইখানে উমিচাঁদ একজন লোককে নিয়ে আসে। সে হলো রাইসুল জুহালা (নবাবের খুব বিশ্বস্ত গুপ্তচর), আমরা আগের টিওটোরিয়ারে তার পরিচয় দিয়েছি, তার কাজ হলো পশু পাখির ডাক নকল করার মাধ্যমে সবাইকে এন্টারটেইন করা। তাই তাকে কেউ সন্দেহ করেনি এবং সবাই তাকে একটা দায়িত্ব দেন যে তিনি ইংরেজদের সাথে ঘষেটি বেগম ও অন্যান্যদের চিঠি আনা নেওয়া করবে, এবং কিছু টাকার বিনিময়ে হলে সে কাজটি করবে বলে জানায় রাইসুল জুহালা।

( কিন্তু তিনি যেটা করতেন, সেটা হলো তিনি চিঠিগুলো নিয়ে নবাবকে দিতেন, নবাব চিঠিগুলো পড়ে তার মত করে চিঠি লিখে পাঠিয়ে দিতেন।)


* আলোচনা চলাকালীন সময়ে হঠাৎ নবাবের আগমন ঘটে এবং তিনি হুঙ্কার দিয়ে ওঠেন যে এখানে কি হচ্ছে, 

সবাই বলে যে তারা এমনিতেই গল্প করছে কিন্তু নবাব জানে যে তারা কি করছে। সেই সময় তিনি দুটি আদেশ দেন।

* মতিঝিল প্রাসাদ বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং ঘষেটি বেগম তার সাথে মূর্শিদাবাদ (রাজধানীতে) থাকবেন।

* শওকত জংকে দেশদ্রোহিতার কারনে হত্যা করা হবে,, এবং দায়িত্বটা দেন মোহনলালকে।

এখানেই এই ষড়যন্ত্রের অবসান ঘটলেও সমস্যার সমাপ্তি হয় না।


* উক্ত ঘটনার পর নবাবের কাছে একজন লোক আসে। লবন চাষী, তিনি বিচার নিয়ে আসেন ইংরেজদের বিরুদ্ধে, লবনের যে ইজারাদার আছে অর্থাৎ ইংরেজরা যে কাজটি করল,

মনে করি, লবনের বাজারদর ৫ টাকা, কিন্তু ইংরেজরা তা ৮

টাকায় কিনবে বলে জানায়, সব লবনচাষী খুসি হয়ে সব লবন বিক্রি করে দেয়, একসময় দেখা যায় দেশে কোথাও লবন নেই। এখন লবন ছাড়া তো চলা মুশকিল, তাই না। তখন ইংরেজরা বলল আমাদের কাছে আসো, লবন আমাদের কাছে আছে। তারা সেই লবন ১৫ বা ২০ টাকা দরে বিক্রি করতে শুরু করল। এবং সবাই বাধ্য হলো কিনতে।


তাদের এ ব্যবহারে পরেরবার কেউ আর লবন বিক্রি করল না ইংরেজদের কাছে, ফলস্বরুপ তারা অত্যাচার শুরু করল লবন চাষীদের উপর।

যে লোকটি নবাব এর কাছে এসেছে সেও ভুক্তভোগী।

সে লবন বিক্রি না করাতে ইংরেজরা তার স্ত্রীকে তুলে নিয়ে যায় এবং অনেকজন মিলে তাকে ধর্ষন। করে আর চাষীকে সেটা দেখতে বাধ্য করে। যখন সে দেখতে না চায় তখন তার নোখের ভীতর খেজুর কাঁটা ফুটিয়ে দেয়া হয়।


উক্ত ঘটনায় নবাব এতোটাই ব্যথিত হন যে তিনি নিজেকেই এর জন্য দোষারোপ করলেন এবং ক্ষুব্দ হয়ে সকল অমাত্য অর্থাৎ মীর জাফর, রাজবল্লর আরো যারা আছেন। সকলকে ডেকে পাঠান। যদিও পরে তাদের ক্ষমা করে দের, এবং এটিই রাজার সবচেয়ে বড় দোষ বলে আমি মনে করি।


=> শেষ পর্ব


গত পর্বে আমরা দেখেছি নবাব ইংরেজদের কর্মকান্ড শোনার পর সকল অমাত্যদের ( মীর জাফর, রাজবল্লব, রায়দুর্লভ) ডেকে পাঠান। তিনি এতটাই কষ্ট পেলেন ও ক্ষুব্দ হয়ে গেলেন যে তিনি সকলকে বলেন 'আমি ইংরেজদের পুনরায় সুযোগ দিয়ে ভুল করছি, যার ফল ভোগ করতে হচ্ছে আমার প্রজাদের। আমি দোষি, আপনারা আমার বিচার করুন'

কিন্তু তারা বুঝতে পারছিলেন নবাব আসলে কি বলতে চাইছেন। ( নবাব মূলত তাদের কথাতেই ইংরেজদের আবাবর ব্যবসা করার অনুমতি দেন)

পরে নবাব সকলকে দিয়ে প্রতিজ্ঞা করান (কুরআন, বাইবেল যার যার ধর্মীয় জিনিস দিয়ে) যে, তারা দেশ ও দেশবাসীর কল্যানে কখনো দেশদ্রোহীতা বা নবাবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবেনা।

কিন্তু কথায় আছে "কয়লা ধুইলে ময়লা যায়না",,, সবচেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতকতাই তারা করল এরপর।


*উক্ত ক্ষেত্রে আমাদের দুটি বিষয় মনে রাখতে হবে।

* দ্বিতীয় অঙ্কের ১ম দৃশ্যের কোনো একজায়গায় পাবো, নবাবের খুব বিশ্বস্ত সেনাপতি মোহনলাল নবাবের আদেশে সকলের সামনে তরবারি বের করে যেটাকে মীর জাফরসহ সকলে অপমান মনে করে। কারন মোহনলাল তাদের থেকে নিচু পোস্টে ছিল।

* যেহেতু আলিনগরের দায়ীত্বে মানিকচাঁদ ছিলেন এবং ইংরেজরা তার সাহায্যে চন্দননগরে হামলা করে তাই নবাব তাকে কারাগারে বন্দি করে।


উক্ত ঘটনা দুইটির জন্য মীর জাফরসহ সকলে রেগে যায় ও সিদ্ধান্ত নেয় নবাবকে যেভাবেই হোক সরাতে হবে।

যেহেতু ইংরেজরাও নবাবকে চাইতেননা তাই তারা উভয় মিলে চুক্তিবদ্ধ হয়।

যে ইংরেজরা যুদ্ধের সকল খরচ দিবে এবং মীর জাফরকে নবাব বানাবে কিন্তু মীর জাফর নবাবের হয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহন করলেও তাদের পক্ষ হয়ে কাজ করবে।


নবাব আসলে সবই জানতেন যে কারা কলকঠি নাড়ছে। কিন্তু তিনি কিছু বলেনি। কারন স্বদেশপ্রেমী নবাবের অবাস্তবিক কল্পনা ছিল, হয়ত কখনো তাদের মাঝে দেশের প্রতি ভালবাসাটা জাগবে 


অতপর যুদ্ধ ঘোষনা হয়েই যায়।

বিখ্যাত সেই যুদ্ধ,,,


পলাশির প্রান্তর- ২৩এ জুন,১৭৫৭ সাল।

যুদ্ধে নবাবরে ছিল,

*৫০,০০০ সৈনিক

*৫৩ টি কামান

অন্যদিকে ইংরেজদের ছিল,

*মাত্র ৩০০০ সৈনিক

*৮ কামান। (ব্যাচ-২০২০ বই অনুসারে, ব্যাচ ২০১৯ বইয়ে একটু গরমিল আছে। নবাবের কামানের সংখ্যা ৫০ ও ইংরেজদের কামানের সংখ্যা ১০ দেয়া আছে। যে যে যার যার বই অনুসারে পড়বা)।কিন্তু তবুও নবাব পিছিয়ে ছিলেন।


যুদ্ধের প্যাটার্নটা এরকম ছিল যে,

*নবাব একপ্রান্তে দারিয়ে আছেন, তার সামনে মোহনলাল, সাফ্রে, নৌবে সিং, রাইসুল জুহালা ৩০০০ সৈন্য নিয়ে যুদ্ধ করছে এবং অন্যদিকে ইংরেজরা লক্ষবাগ নামের এক স্থানে দারিয়ে আছে আর তাদের সামনে মীর জাফর, রাজবল্লভ, মীর মীরন, রায় দুর্লভ ৪৭০০০ সৈন্য নিয়ে কেবল পিলারের মত দারিয়ে আছে। যুদ্ধ করছেনা। ওয়ান কাইন্ড অফ গার্ড দিচ্ছিল ইংরেজদের। তবুও নবাব কিছু বলছিলেননা, দেখতে চেয়েছিলেন শেষ পর্যন্ত তাদের মাঝে দেশপ্রেম আসে কিনা, কিন্তু হায়! সেটা কখনোই আসে নাই।


তবুও নবাব যুদ্ধে এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু তখনি বৃস্টি চলে। আসে আর কামানের সকল বারুদ ভিজে নষ্ট হয়ে যায়,, কিন্তু তবুও মোহনলাল, নৌবে সিং, সাফ্রে থেমে থাকেনা, যুদ্ধ চালিয়ে যায়। এমন সময় সিপাহসালার যুদ্ধ আজকের জন্য স্থগিত বলে ঘোষনা দেয় এবং ক্লান্ত সৈন্য ফিরে যাচ্ছিল। হঠাৎ ইংরেজদের সৈন্য পিছন থেকে আক্রমন করে ফলে সৈন্যরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় আর মারা যেতে থাকে।

নৌবে সিং, মোহনলাল মারা যায়।

যুদ্ধের পরিস্থিতি খারাপ দেখে সাফ্রে নবাবকে মুর্শিদাবাদে ফিরে গিয়ে সৈন্য কালেক্ট করে আবার আসতে বলেন


নবাব রাজধানীতে গিয়ে সকলকে বলে 'আমি কোষাগার খুলে দিচ্ছি , যার যত টাকা লাগে নিয়ে যাও এবং সৈন্য নিয়ে আসো'

সবাই টাকা নিয়ে চলে যায় কিন্তু কেউ আর ফিরে আসেনা।


এই অবস্থায় নবাব অসহায় হয়ে যায় এবং স্ত্রী লুৎফুন্নেসাসহ সপরিবার পাটনার উদ্দেশ্যে পাড়ি দেয়। পথিমধ্যে ইংরেজদের হাতে ধরা পড়ে এবং নবাবকে অন্ধকার করাগারে ও অন্যদের প্রাসাদে বন্দি করে রাখে।


অতপর, মীর জাফর নবাব হন ও নবাব হয়েই ইংরেজদের অনেক অনেক সুবিধা দেয়, চব্বিশ পরগনা নামের একটা জায়গা পুরোটুকু ইংরেজদের নামে দিয়ে দেয়।


তখন যে ইংরেজ প্রধান রবার্ট ক্লাইভ( ইংল্যান্ডে বাজে কাজ করার জন্য তাকে শাস্তিস্বরুপ ইন্ডিয়া পাঠিয়ে দেয়) জনবিক্ষোভের আশঙ্কায় নবাবকে হত্যার আদেশ দিতে বলে মীরজাফরকে। কিন্তু তিনি ভয় পান নবাবকে হত্যা করতে এবং তা প্রত্যাখ্যান করেন।


অন্যদিকে মীর মীরন নবাবের স্ত্রী লুৎফুন্নেসাকে পছন্দ করত ও বিয়ে করতে চাইত। তখন ক্লাইভ তাকে বলেন, যদি তুমি লুৎফুন্নেসাকে বিয়ে করতে চাও তবে নবাবকে হত্যা কর।


অতপর মোহাম্মদি বেগ নামের একজন লোক মীর মীরনের কথায় ১০,০০০ টাকার বিনিময়ে নবাবকে নির্মমভাবে হত্যা করে।


মোহাম্মদি বেগ- সিরাজের পিতা মির্জা জয়নুল তাকে অনাথ অবস্থায় নিয়ে আসে এবং নিজের ছেলেদের সাথেই মানুষ। করেছিলেন। অথচ তিনিই অর্থের লোভে অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে।


অতপর, ২রা জুলাই, ১৭৫৭ সাল


এভাবেই বাংলা তার শেষ স্বাধীন নবাবের সাথে সাথে তার স্বাধীনতার সূর্যটাও হারিয়ে ফেলে। যাকে পুনরুদ্ধার করতে আমাদের প্রায় ২০০ বছর লেগে যায়। আলটিমেটলি ১৯৭১ আমরা তা পুনরুদ্ধার করতে পারি।


প্রয়োজনে এ রকম আরো post পেতে আমাদের follow করতে পারেন। শেয়ার করে বন্ধুদেরও পড়তে সাহায্য করুন। 

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ