![]() |
সাজেশন |
১. বাঙালি জাতির নৃতাত্ত্বিক পরিচয় আলোচনা করো।
উত্তর:
বাঙালি জাতি পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন ও বৈচিত্র্যময় জাতিগোষ্ঠী। নৃতাত্ত্বিক দিক থেকে একে কোনো একক জাতি বলা যায় না। প্রাচীনকাল থেকে এ অঞ্চলে আর্য, দ্রাবিড়, অস্ট্রিক, মঙ্গোলীয়, আরব, পারসিক ও তুর্কিদের আগমন ঘটে। তাদের ভাষা, সংস্কৃতি, জীবনাচার ও ধর্মীয় প্রভাব মিলেমিশে এক স্বতন্ত্র জাতিসত্তার জন্ম দেয়।
তাই বাঙালি জাতির নৃতাত্ত্বিক পরিচয় হলো এক মিশ্র জাতি, যার বৈশিষ্ট্য সমন্বয় ও সহনশীলতা।
২. বাঙালি সংস্কৃতির সমন্বয়বাদিতা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর:
বাংলার ভূগোল ও ইতিহাসে নানা জাতি ও ধর্মের মানুষের বসবাসের ফলে এখানে এক অনন্য সমন্বিত সংস্কৃতি গড়ে ওঠে।
হিন্দু যুগে পুরাণ ও লোকজ সংস্কৃতি,
বৌদ্ধ যুগে অহিংসা ও মানবতাবাদ,
মুসলিম যুগে সুফি-দরবেশদের মিলনবাদী আদর্শ,
ইংরেজ আমলে পাশ্চাত্য শিক্ষা ও আধুনিকতার প্রভাব
সব মিলিয়ে গড়ে ওঠে বাঙালি সংস্কৃতি।
এখানে ধর্মীয় বিভাজন থাকলেও ভাষা, সাহিত্য, সংগীত, পোশাক ও উৎসবে সমন্বয়ের ছাপ স্পষ্ট। তাই বাঙালি সংস্কৃতি হলো সমন্বয়বাদী সংস্কৃতি।
আরও দেখুন: অর্থনীতি প্রথম পত্র সাজেশন
৩. বঙ্গভঙ্গ (১৯০৫) কেন করা হয়েছিল এবং এর ফলাফল কী হয়েছিল?
উত্তর:
লর্ড কার্জন ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর বঙ্গভঙ্গ ঘোষণা করেন। যুক্তি দেওয়া হয়—বাংলা প্রদেশটি অতিরিক্ত বড়, তাই প্রশাসন চালানো কঠিন। ফলে পূর্ববাংলা-আসাম ও পশ্চিমবঙ্গ নামে দুটি নতুন প্রদেশ গঠন করা হয়।
তবে এর অন্তরালে ছিল ব্রিটিশদের Divide and Rule নীতি, যাতে হিন্দু-মুসলিম ঐক্য ভেঙে যায়।
ফল:
প্রবল গণবিক্ষোভ ও বয়কট আন্দোলন শুরু হয়।
জাতীয়তাবাদী চেতনা বৃদ্ধি পায়।
অবশেষে ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ বাতিল হয়।
৪. ১৯০৯ সালের ভারত শাসন আইন (মর্লে-মিন্টো সংস্কার) এর তাৎপর্য কী?
উত্তর:
এই আইনের মাধ্যমে প্রথমবার ভারতীয়রা আইনসভায় প্রতিনিধিত্বের সুযোগ পায়।
আইনসভা সম্প্রসারিত হয়।
অল্পসংখ্যক ভারতীয়কে সরকারে নেওয়া হয়।
মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচনী ব্যবস্থা চালু করা হয়।
এর ফলে মুসলমানরা রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ শুরু করে, তবে হিন্দু-মুসলিম বিভেদও বৃদ্ধি পায়।
৫. ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইন (মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার) ব্যাখ্যা করো।
উত্তর:
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতীয়দের রাজনৈতিক অধিকার কিছুটা বাড়ানো হয়।
প্রদেশে দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা চালু হয়, যেখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি ভারতীয় মন্ত্রীরা পরিচালনা করতে পারতেন।
কেন্দ্রীয় আইনসভায় সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়।
তবে ব্রিটিশ গভর্নরের ভেটো ক্ষমতা অক্ষুণ্ণ থাকায় ভারতীয়দের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। ফলে অসন্তোষ বাড়ে।
৬. ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।
উত্তর:
এটি ছিল ভারতের সাংবিধানিক ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ ও গুরুত্বপূর্ণ আইন।
প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হয়।
কেন্দ্রীয় ফেডারেশন গঠনের প্রস্তাব করা হয়।
দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা বিলুপ্ত করা হয়।
কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক পর্যায়ে নির্বাচনের বিধান করা হয়।
এই আইন পরবর্তীতে ভারত ও পাকিস্তানের সংবিধান প্রণয়নে ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
৭. দ্বিজাতিতত্ত্ব কী এবং এর গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো।
উত্তর:
দ্বিজাতিতত্ত্ব হলো মুসলিম লীগ নেতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর রাজনৈতিক দর্শন, যেখানে বলা হয়—হিন্দু ও মুসলমান দুই ভিন্ন জাতি। তাদের ধর্ম, সংস্কৃতি, জীবনধারা ও রাজনৈতিক স্বার্থ আলাদা।
তাই তাদের এক রাষ্ট্রে রাখা সম্ভব নয়, বরং আলাদা রাষ্ট্র থাকা উচিত।
এই তত্ত্বের ভিত্তিতেই পাকিস্তান আন্দোলন জোরদার হয় এবং অবশেষে ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান গঠিত হয়।
৮. ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের তাৎপর্য আলোচনা করো।
উত্তর:
২৩ মার্চ ১৯৪০ সালে লাহোরে সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের অধিবেশনে শেরেবাংলা এ. কে. ফজলুল হক প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন।
মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের দাবি জানানো হয়।
পরবর্তীতে এই প্রস্তাবই পাকিস্তান সৃষ্টির ভিত্তি হয়।
লাহোর প্রস্তাবকে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধানিক দলিল বলা হয়।
৯. ১৯৪৬ সালের মন্ত্রী মিশন পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর:
ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে স্বাধীনতার রূপরেখা তৈরি করতে একটি মিশন পাঠায়।
কেন্দ্রীয় সরকার দুর্বল থাকবে, প্রদেশগুলো অধিক ক্ষমতা পাবে।
ভারতকে তিনটি গ্রুপে ভাগ করার পরিকল্পনা করা হয়।
তবে হিন্দু কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে মতবিরোধ হওয়ায় এ পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।
১০. ১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইনের তাৎপর্য কী?
উত্তর:
এই আইনের মাধ্যমে ভারতের দুই অংশ—ভারত ও পাকিস্তান আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে জন্ম নেয়।
ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে।
উভয় রাষ্ট্রকে কমনওয়েলথের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এটি ছিল ভারতীয় উপমহাদেশে ঔপনিবেশিক শাসনের চূড়ান্ত অবসান।
১১. ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব আলোচনা করো।
উত্তর:
পাকিস্তান সরকার উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দিলে বাঙালিরা প্রতিবাদ করে।
২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ তে পুলিশের গুলিতে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার শহীদ হন।
এর ফলে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯৫৬ সালের সংবিধানে বাংলা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
ভাষা আন্দোলন শুধু ভাষার অধিকার নয়, বরং জাতীয় চেতনার ভিত্তি হয়ে ওঠে।
১২. ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
উত্তর:
পূর্ববাংলায় মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন করে এবং বিপুল ভোটে জয়ী হয়।
যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা কর্মসূচি জনগণের সমর্থন পায়।
মুসলিম লীগ ভরাডুবি হয়।
এই নির্বাচন পাকিস্তানে বাঙালিদের রাজনৈতিক শক্তির পরিচয় দেয় এবং ভবিষ্যৎ আন্দোলনের ভিত্তি স্থাপন করে।
১৩. ১৯৫৬ সালের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করো।
উত্তর:
পাকিস্তান প্রথমবারের মতো একটি পূর্ণাঙ্গ সংবিধান প্রণয়ন করে।
পাকিস্তানকে “ইসলামি প্রজাতন্ত্র” ঘোষণা
করা হয়।
বাংলা ও উর্দু রাষ্ট্রভাষা করা হয়।
সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়।
যদিও এই সংবিধান মাত্র দুই বছর টিকে ছিল, তবুও এটি পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
• দৃষ্টি আকর্ষ
প্রয়োজনে এ রকম আরো post পেতে আমাদের follow করতে পারেন। শেয়ার করে বন্ধুদেরও পড়তে সাহায্য করুন।
0 মন্তব্যসমূহ