শান্তির ধর্ম ইসলাম নিয়ে অশান্তি কেন? || ইসলাম ও মানবাধিকার


 ইসলাম , জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস ইসলাম আল্লাহর প্রদত্ত জীবন ব্যবস্থা । ইহা শাশ্বত মানবতার ধর্ম । যার ছায়াতলে সকল যুগ ও সময়ের সাদা - কালো , উঁচু - নিচু , ধনী - গরিব , সকলেই আশ্রয় নিতে পারে । “ কেউ যদি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দীন অন্বেষণ করে তা কষ্মিণকালেও আল্লাহ তাআলা গ্রহণ করবেন না । “ নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে দীন একমাত্র ইসলাম । এর উপর আল্লাহ তার সন্তুষ্টির চূড়ান্ত ঘোষণা দিয়ে ইরশাদ করেছেন “ আমি তোমাদের জন্য দীন হিসেবে ইসলামকে মনোনীত করলাম । ” আভিধানিক অর্থে ইসলাম হল আত্মসমর্পন করা , নিরাপত্তা প্রদান , আনুগত্য ও শর্তহীনভাবে মেনে নেয়া ।

 যেমন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন “ আসমান জমিনের সবকিছু তার জন্য সমর্পিত । ”

 সাধারণত : ব্যবহারিকভাবে আমাদের প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে দীন নিয়ে এসেছেন তার সমূদয় আকিদা ও বিধি - বিধানের সমষ্টিগত নাম হলো ইসলাম ।

 হাদিসের ভাষ্য মতে ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি বিষয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত  

১. এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা যে , আল্লাহ ছাড়া কোনো মা'বুদ নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রসুল । 

২. সালাত কায়েম করা , 

৩. জাকাত আদায় করা , 

৪. হজ্জ করা এবং 

৫. রমজানের রোজা পালন ।

 ইসলাম শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানকারী জীবন ব্যবস্থা । এখানে সন্ত্রাসের কোনো স্থান নেই । “ ইসলাম ও সন্ত্রাসের মধ্যে দূরত্ব এমন , যেমন আসমান ও জমিনের দূরত্ব । ” আমরা আমাদের প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনি , “ মুসলমান ঐ ব্যক্তি যার হাত ও মুখ থেকে মুসলমান নিরাপদ থাকে । 

 তিনি আরো ইরশাদ করেন- “ হুশিয়ার ! যে ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় নিরাপত্তা নিয়ে বসবাসকারী কোনো ব্যক্তির উপর অত্যাচার করবে , অথবা তাকে অপমান করবে , অথবা তার ক্ষমতার বাহিরে কোনো বোঝা তার উপর চাপিয়ে দিবে কিংবা তার সম্মতি ব্যতিরেকে তার কাছ থেকে কিছু ছিনিয়ে নিবে আমি ঐ ব্যক্তির বিরুদ্ধে কিয়ামতের দিন মামলার বাদী হব ” ( আবু দাউদ ) ।

 সুতরাং কেউ অন্য কোনো ব্যক্তিকে হত্যা কিংবা তার উপর জুলুম করতে পারবে না , চাই সে মুসলমান হোক বা অমুসলিম হোক । তবে অকাট্য যুক্তিযুক্ত কারণ ও তা যথাযথভাবে প্রমাণিত হলে স্বীকৃত আদালত তাকে শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দিতে পারবে । 

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন- “ যে ব্যক্তি কোনো ব্যক্তির হত্যার পরিবর্তে হত্যা অথবা পৃথিবীতে সন্ত্রাস সৃষ্টির লক্ষ্যে অন্য কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করবে , সে যেন সকল মানুষকে হত্যা করল । সুতরাং সন্ত্রাস কোনোভাবেই দীনের অংশ নয় । সীমালঙ্ঘণকারী নিজেরা পথভ্রষ্ট এবং অন্যকে পথভ্রষ্ট করেছে ” ।

 মৌলিকত্ব , সংজ্ঞা , কারণ , প্রকারভেদ , ফলাফল উদ্দেশ্য এবং শরিয়তের আলোকে বিধানগত দিক থেকে সন্ত্রাসবাদ ও জিহাদ সম্পূর্ণ আলাদা । কারণ জিহাদ আইন সম্মত বিষয় । আর সন্ত্রাস হারাম । কেননা সন্ত্রাস মানেই সীমালঙ্ঘন । যা নিরাপদ জনপদকে অস্থির করে , কল্যাণকর বিষয় ও জীবনের স্বাভাবিক গতি নষ্ট করে দেয় এবং সম্পদ , সম্মান , স্বাধীনতা ও মনুষত্ববোধের উপর আঘাত হানে । পক্ষান্তরে জিহাদ মানে সকল কল্যাণকর কাজে চেষ্টা করা , মানুষের জান - মাল , ইজ্জত বিনষ্টের চেষ্টা প্রতিহত করা , তাদেরকে স্বাধীন সম্মানজনক জীবনের নিশ্চয়তা প্রদান করা ।

 ইসলাম তার অনুসারীদেরকে কখনোই সীমালঙ্ঘণ করা , শান্তিপূর্ণ মানুষকে অস্থির করা , অন্যদের অধিকার ছিনিয়ে নেয়া কিংবা অন্যায়ভাবে কাউকে উচ্ছেদ করার নির্দেশ দেয় নি । 

 


ইসলাম ও মানবাধিকার : , ইসলাম এমন জীবনব্যবস্থা যা প্রতিটি মানুষকে , বরং প্রত্যেক সৃষ্টিকে তার প্রাপ্য অধিকার প্রদান করে । রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উচ্চ কন্ঠে ঘোষণা করেছেন , “ তোমরা প্রত্যেক হকদারের প্রাপ্য হক আদায় করে দাও ” । প্রাচীন ও আধুনিক কোনো ইতিহাসই এমন রাষ্ট্র ব্যবস্থা দেখেনি যে রাষ্ট্র ব্যবস্থা ধর্মীয় আদর্শের উপরে প্রতিষ্ঠিত হয়ে তার অনুসারী ও ভিন্ন মত পোষণকারীদের মধ্যে এমন ভারসাম্য স্থাপন করেছে- 

যেমনটি ইসলাম ও ইসলামি রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রদান করেছে । মুসলিম - অমুসলিম , ধনী - গরিব , সাদা - কালো ও দেশ থেকে দেশান্তর নির্বিশেষে সবার জন্য ইসলাম সমমানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে । 

ইসলাম পিতা - মাতা , ছেলে - মেয়ে , নারী - পুরুষকে পৃথক পৃথকভাবে উল্লেখ করে তাদের প্রত্যেকের প্রাপ্য বা হক ও অধিকার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে । অনুরূপভাবে ইসলাম মুসলমান , ইহুদি , খৃষ্টান ও শরণার্থীদের শ্রেণিগতভাবে উল্লেখ করে তাদের প্রাপ্য অধিকার প্রদান করেছে । ইসলাম প্রত্যেকের ধর্মীয় স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলে । 

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন , ধর্মীয় ব্যাপারে কোনো জোর জবরদস্তি নেই । ” নজরানের অধিবাসীদের সঙ্গে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সম্পাদিত চুক্তিতে আছে , নজরানবাসী ও তাদের আশ্রিতদের জন্য আল্লাহর নিরাপত্তা ও নবি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম - এর জিম্মাদারী রয়েছে- তাদের সম্পদ , জীবন , ভূমি , ধর্ম , উপস্থিত , অনুপস্থিত , বংশ , পরিবার , উপসনালয় , তাদের মালিকানাধীন স্বল্প বা অধিক সবকিছু রক্ষার দায়িত্ব রসুলের ।

 কোনো খৃস্ট ধর্মযাজক তার নিভৃতাবাস থেকে অবতরণ করতে বাধ্য নয় । কোনো পাদ্রী তার বৈরাগ্য থেকে বিরত থাকতে বাধ্য নয় । ইসলাম মুসলিম অমুসলিম সবার মধ্যে রক্ত , সম্পদ ও সম্ভ্রম রক্ষার ক্ষেত্রে সমতা বিধান করেছে ।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ