এই যে মরতে হবে এই কথাটা কি কোন পশু পাখি জানে__Does any animal or bird know that he has to die?

 


মানুষ ও জিনতো জানে যে তাদের একদিন মরতে হবে. এই যে মরতে হবে এই কথাটা কি কোন পশু পাখি জানে মানে গরু, ছাগল, পাখি আরো ইত্যাদি তারা কি জানতে পারে যে তাদের মৃত্যু হবে. একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই ছিলেন ও থাকবেন বাকি সমস্ত কিছুই ছিল না. আছে আবার একদিন থাকবে না. আল্লাহ ছাড়া সবকিছুই তার নির্দিষ্ট জীবন পূর্ণ হওয়ার পর নিঃশেষ হয়ে যাবে. সব প্রাণের মৃত্যু হবে. মৃত্যুর মতো সত্য আর কিছুই নেই. সব জীব কে একদিন মৃত্যুবরণ করতেই হবে.

 মহান আল্লাহ তায়ালা কোরআন মাজিদ  সুরা আম্বেয়া.كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ ٱلْمَوْتِ وَنَبْلُوكُم بِٱلشَّرِّ وَٱلْخَيْرِ فِتْنَةً وَإِلَيْنَا تُرْجَعُونَ

প্রত্যেককে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি এবং আমারই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।

সূরাঃ আল-আম্বিয়া [21:35] 

كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ ٱلْمَوْتِ ثُمَّ إِلَيْنَا تُرْجَعُونَ

জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। অতঃপর তোমরা আমারই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে।

সূরাঃ আল-আনকাবু [29:57]

 وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ أَن تَمُوتَ إِلَّا بِإِذْنِ ٱللَّهِ كِتَٰبًا مُّؤَجَّلًا وَمَن يُرِدْ ثَوَابَ ٱلدُّنْيَا نُؤْتِهِۦ مِنْهَا وَمَن يُرِدْ ثَوَابَ ٱلْءَاخِرَةِ نُؤْتِهِۦ مِنْهَا وَسَنَجْزِى ٱلشَّٰكِرِينَ

আর আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউ মরতে পারে না-সেজন্য একটা সময় নির্ধারিত রয়েছে। বস্তুতঃ যে লোক দুনিয়ায় বিনিময় কামনা করবে, আমি তাকে তা দুনিয়াতেই দান করব। পক্ষান্তরে-যে লোক আখেরাতে বিনিময় কামনা করবে, তা থেকে আমি তাকে তাই দেবো। আর যারা কৃতজ্ঞ তাদেরকে আমি প্রতিদান দেবো

সূরাঃ আল-ইমরান [3:145]


অর্থাৎ প্রত্যেক নার্সকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে   এই মৃত্যু হয়ে থাকে আল্লাহতালার আদেশে.  অর্থাৎ, আর কোনো প্রাণী আল্লাহর অনুমতি ছাড়া মারা যায় না. তার নির্দিষ্টভাবে লিখিত আছে. আর যে দুনিয়ার প্রতিদান চাই আমি তা থেকে তাকে দিয়ে দিই. আর যে আখেরাতের বিনিময়ে চাই তা থেকেও দি. এবং আমি অচিরেই কৃতজ্ঞদের প্রতিদান দিব.

 অর্থাৎ সৃষ্টি করেছেন মহান আল্লাহতালা. আর এজন্যই সেটাকে আদেশ দেওয়ার দরকার হয়. আর যখন আদেশ আসে, তখন সেই প্রাণী মারা যায়. তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে, মৃত্যুর জন্য মানুষও হয়ে থাকে যেমন যে কেউ আত্মহত্যা করলে সেটা তার নিজের ভুল. আর সে এই পথ বেছে নেওয়ার জন্য তাকে জাহান্নামে যেতে হবে. কারণ আল্লাতালা নিজে নিজে আত্মহত্যা করাকে নিষেধ করেছেন. তারপরও যে এ কাজ করবে তার শাস্তি হবে জাহান্নাম.

 তবে আত্মহত্যার পথ মানুষ বেছে নিতে পারে কিন্তু মৃত্যু ঘটে আল্লাহর হুকুমে. মহান আল্লাহতালা যে জন্ম ও মৃত সৃষ্টি করেছেন. এই সম্পর্কে মহান আল্লাহতালা নিজেই বলে দিয়েছেন. 

ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلْمَوْتَ وَٱلْحَيَوٰةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا وَهُوَ ٱلْعَزِيزُ ٱلْغَفُورُ

যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন-কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাময়।

সূরাঃ আল-মুলক [67:2] 


অর্থাৎ, যিনি মৃত ও জীবিত করেছেন. যাতে তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন যে কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে উত্তম. আর তিনি মহাপরোক্রমশালী অতিশয় ক্ষমাশীল ,, এটা জানলাম যে আল্লাহতালা মৃত ও জীবন সৃষ্টি করেছেন. আমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য. আমরা এই জন্ম মৃত্যুর মাধ্যমে আমলেকে বেশি উত্তম হতে পারি. সেটা আল্লাহতালা মৃত দিয়ে পরীক্ষা করে থাকেন. 

জন্ম ও মৃত আল্লাহ তালার কুদরতের এক মহান সৃষ্টি. মানুষ ও জিন জানে তার মৃত্যুর কথা. মানুষ ও জিন জানে তাকে একদিন মরতেই হবে. আল্লাহ তালা কোরআন মাজিদে জিন জাতির  মৃত্যুর কথা অবহিত করেছেন নবী রসুলরা তাদের উম্মতের পার্থিব জীবনের পর আরেকটি জীবনের কথা বর্ণনা করেছেন. মানুষের মৃত্যুর কথা জানানোর কারণ হলো যাতে তারা মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে. 

মৃত্যুর পর যদি আর কোনো জীবন না থাকতো তাহলে মৃত্যু নিয়ে কোনো চিন্তার কারণ থাকতো না. কিন্তু মুমিন মাত্রই বিশ্বাস করেন যে মৃত মানে এক জীবন থেকে আরেক জীবনে প্রত্যাবর্তন. একটি জীবন শেষ করে আরেকটি নতুন জীবনের সূচনা করা দুনিয়ার জীবন আর মৃত্যুর পরে জীবন ইস্থায়ী. দুনিয়ার সুখ শান্তি. আখেরাতে সুখ শান্তির তুলনায়. তুচ্ছ ও অতি নগন্য. আল্লাহ তালা মানুষকে তার মৃত্যুর কথা জানিয়ে দিয়েছেন.

 কিন্তু কখন কার কোন জায়গায় মৃত্যু হবে তা গোপন করেছেন. হাদিস শরীফে বলা হয়েছে মানুষের চোখের দুই ভ্রুর মাঝখানে. মৃত্যু তারিখ লেখা আছে. কিন্তু মানুষ তা দেখতে পায় না. মানুষ ও জিন থেকে মৃত্যু তারিখ. অজ্ঞাত রাখার কারণ হলো যদি মানুষ ও জিন মৃতর নিদৃষ্ট তারিখ জানতো তাহলে এই পৃথিবী অচল হয়ে যেত. মানুষও জিন ঘর সংসার করতো না. মানুষ ও জিন মৃত্যুর সময় না জানার কারণে মানুষও জিন মনে করে দীর্ঘজীবী হবে. 

মানুষ এক এক জন এক এক সময় মৃত্যুবরণ করেন. তবে তার মৃত্যুর সময় ও তারিখ নির্দিষ্ট, যা আমরা জানি না. এ সম্পর্কে মহান আল্লাহতালা এরশাদ করেছেন      

وَمَآ أَهْلَكْنَا مِن قَرْيَةٍ إِلَّا وَلَهَا كِتَابٌ مَّعْلُومٌ

আমি কোন জনপদ ধবংস করিনি; কিন্ত তার নির্দিষ্ট সময় লিখিত ছিল।

সূরাঃ আল-হিজর [15:4] 

এই সব আয়াতগুলো থেকে তো জানা গেল যে মরতেই হবে আমাদের সবাইকেই. আর এটা আমরা আগে থেকে জানি. কিন্তু এখন প্রশ্ন আসে, পশুপাখিরা কি জানে যে তাদেরকে একদিন মরতেই হবে,  কোরআনে একাধিক আয়াত থেকে জানা যায় যে পশুপাখিও আল্লাহ তালার এবাদত করে তারাও আল্লাহতালার তাসবি পাঠ করে অর্থাৎ তারা জানে যে আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন. একমাত্র আল্লাহ তিনি আমাদেরকে পালন করছেন. এবং আমাদের কর্তব্য হচ্ছে সেই আল্লাহর ইবাদত করা.

 আর তারা তাই করেও থাকে. এর দলিল হচ্ছে মহান আল্লাহতালা বলেছেন أَلَمْ تَرَ أَنَّ ٱللَّهَ يُسَبِّحُ لَهُۥ مَن فِى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ وَٱلطَّيْرُ صَٰٓفَّٰتٍ كُلٌّ قَدْ عَلِمَ صَلَاتَهُۥ وَتَسْبِيحَهُۥ وَٱللَّهُ عَلِيمٌۢ بِمَا يَفْعَلُونَ

তুমি কি দেখ না যে, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যারা আছে, তারা এবং উড়ন্ত পক্ষীকুল তাদের পাখা বিস্তার করতঃ আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে? প্রত্যেকেই তার যোগ্য এবাদত এবং পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণার পদ্ধতি জানে। তারা যা করে, আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।

সূরাঃ আন-নূর [24:41]




অর্থাৎ তুমি কি দেখনি যে আসমান ও জমিনে যারা আছে তারা এবং সারিবদ্ধ হয়ে উড়ন্ত পাখিরা আল্লাহ তালার তাসবি পাঠ করে. প্রত্যেকেই তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা অবগত. এই আয়াত থেকে জানা যায় যে পাখিরা আল্লাহ তালার ইবাদত করে এবং কিভাবে করতে হবে তাও তারা জানে. অর্থাৎ তাদের এতটুকু জ্ঞান আছে যে আল্লাহ একজন আছেন যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন. 

আর তাই আমরা তার এবাদত করবো. এখন প্রশ্ন, তারা কি জানে যে তাদেরকে একদিন মরতেই হবে এর উত্তর নিয়ে কয়েক রকম মত আছে. যেমন কেউ বলে থাকেন যে, পশু পাখিরা জানেনা যে তারা একদিন মারা যাবে. কারণ আল্লাহতালা পশু পাখির মধ্যে রেখেছেন মানুষের রিজিক. কেউ কেউ বলেছেন, যদি পশুপাখি জানতো যে, তাদের একদিন মরতে হবে তাহলে তারা মৃত্যু চিন্তায় কঙ্কাল হয়ে যেত. আর এর ফলে মানুষের রিজিকের ঘার্তি দেখা দিতো.

 তাই আল্লাতালা পশুপাখির মাধ্যমে মানুষের রিজিকের ব্যবস্থা রেখেছেন. এবং মৃত্যুর বিষয়টি তাদের থেকে অজ্ঞাত রেখেছেন. যেহেতু পশুপাখি আল্লাহ তালার এবাদত করে তাই তাদের এতটুকু জ্ঞান আছে যে তারা জন্ম হয়েছে. এবং তারা একদিন মারা যাবে. আর এটাও যুক্তি যে যখনই আপনি কোনো পশু বা পাখিকে ধরতে যাবেন সে ভয়ে পালিয়ে যাবে.

 আসলে সে জানে যে তাকে ধরে মেরে ফেলা হবে. আর মরার ভয়ে সে পালিয়ে যায়. এখান থেকেও জানা যায় যে পশুপাখি মৃত্যুর কথা জানতে পারে আবার যদি দেখেন কোরবানির পশুতো ভালোভাবেই বুঝতে পারে যে তাকে কোরবানি দেওয়া হবে আর এ জন্যেই কোরবানির আগে থেকেই তার অবস্থা পাল্টে যায়. সে পশুর চোখে দুঃখ ভাব দেখা যায়. বিশেষত্ব যে পশুপাখি তারাও মারা যাবে সেটা তারা আগে থেকেই জানতে পারে এখন মানুষের কর্তব্য. 

আল্লাহ তায়ালা মানুষকে যেহেতু তার মৃত্যুর কথা জানিয়ে দিয়েছেন, তাকে একদিন মরতেই হবে সে তো তার উচিত হবে মৃত্যুর জন্য শত প্রস্তুত ও থাকা আর মুমিন যেহেতু বিশ্বাস করেন তার মৃত্যুর পরে আরেকটি জীবন আছে সেহেতু তার কর্তব্য হলো পরলৌকিক জীবনের সুখের, জন্য কাজ করা. তাদের ভাবা দরকার আমাদের আগে যারা মৃত্যু বরন করেছেন. তাদের অনেকের কবরও খুঁজে পাওয়া যায় না. 

আমাদের অবস্থাও একই রকম হতে পারে পরবর্তী সম্প্রদায় আমাদের কবরও খুঁজে পাবেন কি না তাও.বলা য়ায না তাই মুমিনদের উচিত সর্ব প্রকার গর্ভ অহংকার অন্যায় অবিচার পাপাচার ইত্যাদি অপকর্ম বর্জন করা আল্লাহর আদেশমতো পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র জীবন লাভ করা. এবং আখেরাতের সুখ শান্তি কামনা করা. আল্লাহ তাআলা আমাদের আখেরাতের সুখ শান্তির জন্য বেশি বেশি করে আমল করার, তৌফিক দান করুন. আমিন.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ