গলা টিপে মারা প্রাণী কেন হারাম | কুরআন ও বিজ্ঞান - alhadimedia 360

 



কোরআন মাজীদ রক্তকে হারাম করেছে। এক স্থানে স্পষ্ট ঘোষণা করেছে । রক্ত দ্বারা উদ্দেশ্য প্রবাহিত রক্ত, যা সর্বদা প্রবাহিত হতে পারে। কোন জীবিত প্রাণীর দেহ থেকে নির্গত হওয়ার পর পরই রক্ত জমাট হয়ে যায়। জমাট হয়ে যাওয়ার পর যা প্রস্তুত হয় তা হজম হওয়ার শক্তি সকল মানুষের পাকস্থলীতে থাকে না।

 বিড়াল, কুকুর, বাঘ, সিংহ, চিতাবাঘ ইত্যাদি রক্ত পিপাসু প্রাণীর শরীরেও থাকে না। সেজন্য কোন প্রাণী রক্ত পান করলে উহা তার পাকস্থলীর হজম কারক উপকরণও অকেজো করে দেয়। এভাবে রক্ত কেবল মাত্র নিজে হজম হয় না এমন নয় বরং উহার পরে আগত খাদ্যকেও হজমের অযোগ্য করে দেয়। পরিপাকের প্রক্রিয়াকে কিছুক্ষণ বিকল আর নষ্ট করার পর শরীর অবশেষে রক্তকে বের করে দেয়। এমন পরিস্থিতি হলে শূলবেদনা সৃষ্টি হতে পারে।


বিশেষজ্ঞগণ অবগত হয়েছেন যে, মানব শরীরে রক্ত পরিপাক করার মত কোন শক্তি নেই। কিন্তু আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে কোরআন ঘোষণা দিয়েছে যে, রক্ত পান হারাম। এ থেকেই চিকিৎসা আর রাসায়নিক গবেষণায় প্রমাণিত হল যে প্রাণীর রক্ত শরীরে আটকা পড়লে গোশত দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। কেননা মাত্র এক দিনে রক্তে হাজার হাজার জীবাণু সৃষ্টি হয়ে যখন রোগ জীবাণুর সংখ্যা অধিক বৃদ্ধি পায় তখন তা সনাক্ত করা যায় না, বরং খুব কঠিন হয়ে পড়ে।


গলা টিপে মারা প্রাণী কেন হারাম 

যে প্রাণী গলায় চাপা পড়ে মারা যায় তার শরীরের সমস্ত রক্ত দেহের মধ্যে থেকে যায়। ভিতরে রক্ত থাকার কারণে গোশত দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। উহার রং গাঢ় লাল হয়ে যায়। সে জন্য উহা কুশ্রী ও বিস্বাদ হয়ে যায়। শ্বাস আসা-যাওয়া বাধ্যতামূলকভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে রক্তে রাসায়নিক বিক্রিয়া শুরু হয়। যার ফলে গোশতের মধ্যে এমন পরিবর্তন আসে যে উহা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয়। আঘাত যে প্রকারেরই হোক না কেন উহাতে হিস্টামিনের উৎপত্তি হয়। উহার দূর্গন্ধ মাংসে বসে যায়।


আঘাত প্রাপ্ত প্রাণী হারাম হওয়ার কারণ

উপর থেকে পতিত, লাঠির আঘাতে মৃত প্রাণী বা মানুষের দেহে যখন আঘাত লাগে তখন উহার ব্যথা ও ভীতিতে তার শরীরে পরিবর্তন আসে। দৃষ্টান্তস্বরূপ, কোন মানুষ মোটর থেকে পড়ে গেলে বা শরীরের কোন অংশ মচকে না গেলেও আঘাতের প্রচণ্ডতায় এবং ব্যথা যন্ত্রণায় তার রং পরিবর্তন হয়ে যায়। নাড়ী দূর্বল ও নিস্তেজ হয়ে যায়। ঠান্ডা ঘাম নির্গত হয় । মুখ শুকিয়ে যায়। 

চিকিৎসা বিজ্ঞানে Sargical Shock বলে। রোগীর রক্ত চাপ হ্রাস পাওয়ার সাথে সাথে চোখের রং স্ফীত হয়ে যায়। সে অনুভব করতে পারে যে, সে মৃত্যু-পথের দিকে ধাবিত হচ্ছে। আঘাত মারাত্মক না হলেও উহাতে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর অবস্থা দাঁড়াতে পারে। লাঠির আঘাত ছুরির আঘাতের চেয়ে বেশী কষ্টদায়ক হয় । আঘাত পাওয়ার পর আহত স্থান প্রথমে লাল হয়ে যায়। অতপর ফুলে যায়। পরিশেষে উক্ত স্থান নীল রং ধারণ করে। ঝিল্লির মাঝে রক্তের শিরা ফেটে গেলে এমন হয় । আঘাত প্রাপ্তি আর ভীতির কারণে শারীরিক গঠনের মধ্যে এক প্রকার রাসায়নিক উপরকণ হিস্টামিন প্রস্তুত হয়। আঘাত থেকে যাবতীয় উদ্ভূত আলামত হিস্টামিনের প্রতিক্রিয়া। এমনকি “হোসসাসিয়াত” থেকে উৎপন্ন চর্মরোগ 'হিস্টামিন' এর কারণে হয়।


গভীর জঙ্গলে মানুষ হিংস্র জীব-জন্তু দেখলে ভীত হয়ে যায়। পরে “হিস্টামিন” পয়দা হয়। ফলে জীব-জন্তু অনেক দূরত্ব থেকে হিস্টামিনের গন্ধ পায়। বাঘ বনের কোন অংশে হিস্টামিনের গন্ধ পেলে বুঝতে পারে আশে-পাশে এমন প্রাণী উপস্থিত আছে, যা তার ভয়ে ভীত। তখন বাঘ উক্ত ঘ্রাণ ধরে অগ্রসর হতে হতে শেষ পর্যন্ত শিকার করে বসে। অথচ বাস্তবে উক্ত প্রাণী তার দৃষ্টি সীমার বাহিরে বহু দূরে ছিল ।


কোন প্রাণী আঘাত প্রাপ্ত হলে বা বিশেষ করে ভোতা অস্ত্রে আহত হলে হিস্টামিন পয়দা হবার ফলে রক্তের শিরাগুলো বিস্তৃত আর ঢিলা হয়ে যায় আর রক্তের চাপ বেড়ে যায়। যার কারণে মাংসের রং গাঢ় লাল হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, বরং এতে হিস্টামিনের গন্ধ উহাতে বসে যায়। উপর থেকে নীচে পতিত, লাঠি দ্বারা প্রহৃত আঘাত বা ধাক্কা খেয়ে পতিত আহত প্রাণীর মাংস খাওয়াকে কোরআন হারাম করে দিয়েছে। ইসলামের এ বিধান-কানুন পুরোপুরি বৈজ্ঞানিক বাস্তবতার উপর প্রতিষ্ঠিত। হিস্টামিন কখন, কোথায়, কিভাবে সৃষ্টি হয়, উহার কার্যকারিতা আর ক্রিয়াশীলতা ইত্যাদি যাবতীয় লক্ষণ আর অবস্থা ইসলাম বহু পূর্বেই প্রকাশ করে দিয়েছে।


উল্লিখিত সকল অবস্থায় আহত হওয়ার পর হিস্টামিন পয়দা হলে মাংস স্বাদহীন, রংহীন, শরীরের জন্য ক্ষতিকর হয়। কোরআনিক চিকিৎসা ভাষায় Blunt Injuries এ আহত প্রাণীর মাংস হারাম ঘোষণা করে মুসলমানদের রোগ-ব্যধি থেকে বাঁচার এক গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ পেশ করেছে। উল্লিখিত আলোচনার ভিত্তিতে বলতে হয় আঘাত প্রাপ্ত প্রাণীর মাংস মানুষের ভক্ষণের উপযোগী নয় । ইসলাম উহার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদান করে আমাদের প্রতি এক বিশেষ অনুগ্রহ করেছে।



প্রয়োজনে এ রকম আরো post পেতে আমাদের follow করতে পারেন। শেয়ার করে বন্ধুদেরও পড়তে সাহায্য করুন। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ