৯ বছর পর যখন বিদেশ থেকে কাউকে না জানিয়ে বাড়িতে আসলাম এসে দেখি আমার বউ অন্য পুরুষের সাথে এক বিছানাতে শুয়ে আছে। তখন বাড়িটা দেখি বেশ ফাকা। অবশ্য ফাঁকা থাকারই তো কথা। আমি আর আমার ওয়াইফ ও ছোট ছেলে ছাড়া আর কেউ থাকে না। কাউকে কিছুই না জানিয়ে সারপ্রাইজ দেবো বলে যখন বাড়িতে প্রবেশ করলাম। তখন একটা রুমের দরজা আধাখোলা অবস্থায় রয়েছে। দরজাটা ঠেলে ভিতরে ঢুকতেই দেখি আমার বউ পাশের তিন বাড়ি পরে আতিক ভাইয়ের সাথে একি বিছানাতে শুয়ে আছে। আমি এমনটা দেখবো কখনই ভাবতে পারিনি।
চোখ দুটো যেন অপলক ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। কোনো শব্দ ছাড়াই আমি বাইরে বের হলাম। দরজাটা আস্তে করে বাইরে থেকে লাগিয়ে দরজায় কাছেই ধপ করে বসে পড়লাম। আমি ভাবতেই পারছি না আমার বউ এমন করতে পারে। আমি চিন্তাই করতে পারছি না আমার বউ আমাকে ধোকা দেবে। সারা শরীরের লোপ আমার তখন দাঁড়িয়ে গেছে।
ডান হাত আর ডান পা আমার নিজে থেকেই কাঁপতে শুরু করে দিয়েছে। আমি ঠিক কি করবো বুঝতে পারছি না। চারিদিকে একবার তাকালাম। বাড়িটা বেশ উন্নত হয়েছে। হাত ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখি বেলা এগারোটা। তার মানে আমার ছেলে এখন স্কুলে। আর আমার বউ এই সুযোগটা নিয়ে যা ইচ্ছে তাই করছে? কিন্তু কেনো? আমার কি দোষ? ভিতরে থেকে তাদের কথা শুনতে পেলাম "ভাবি, তুমি এত হট কেনো? তোমাকে রেখে ভাই যে কিভাবে বিদেশে থাকে বুঝতে পারিনা।" সাথে সাথেই আমার বউ অহনা উত্তর দিলো "আতিক, তোমাকে না বলেছি আমাদের মিলনের সময় সিফাতের আব্বুর কথা বলবে না। শুনতে একদমই বিরক্ত লাগে। আর করতেও কেমন অসহ্য লাগে।" আতিক একটু জোরে হেসেই বলল " কি করতে অসহ্য লাগে? হেহেহে, আর কেন ভাবি, ভাই আবার কি করল? ভাই তো তোমাকে ভালোবাসে?" অহনা বলে উঠে "হুমম বাসে, কিন্তু কাছে তো আর থাকে না।
আমারো তো শরীরের কিছু চাওয়া পাওয়া থাকতে পারে।" আতিক আবারো হাসতে থাকে। তারপর বলে "হুমম তাই তো, কাজ ফাঁকি দিয়ে দিনে একবার আর রাতের দিকে একবার তোমার কাছে পড়ে থাকি। আমিও তোমাকে ভালোবাসি।" অহনা জবাব দেয় "আমিও তোমাকে এখন ভালোবাসি। আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরো না প্লিজ।"
আমি কান খাড়া করে ওদের কথা শুনতে থাকি। কখন যে আমার শরীর ঘামে ভিজে গিয়েছে খেয়াল করিনি। আমার ছেলেটা ক্লাস থ্রিতে পড়ে। ওর আসতে সেই বিকেল হবে। না জানি আতিক অহনার সাথে কতক্ষন এভাবে রোজ থাকে। গা থেকে শার্ট খুলে ফেললাম। আমার গায়ের লোপ যেন আরো বেশি করে দাঁড়িয়ে গেল। আমি ভাবতেই পারছি না এটা আমার সেই আগের অহনা। যাকে আমি কিনা ১৫ বছর ধরে ভালোবাসি। আর সে...
আমাদের বিয়েটা হয়েছিল প্রেম করেই। দুজনেই দুজনকে অনেক ভালোবাসতাম। অহনা পড়তো আমার থেকে তিন ক্লাস নিচে। মেয়েটা ছিল বেশ গোলগাল চেহারার। রোজ তাকে দেখতাম। কিন্তু কিছুই বলতাম না। প্রায় বছর খানিক ওর পিছনে ঘুরে ছিলাম। কিন্তু কোনোদিন কথা বলিনি আমি ওর সাথে। একদিন ওর বান্ধবিকে আমার কাছে পাঠায়। তারপর থেকে আমি ওর সাথে মাঝে মধ্যে কথা বলতাম।
এরপর একদিন তাকে প্রপোজ করি। সে রাজি হয়ে যায়। প্রেম শুরু হওয়ার সাত আট মাস পরেই ওর পরিবার ওকে বিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ দেয়। তাই বাধ্য হয়ে পড়া শেষ না করেই অহনাকে বিয়ে করতে হয়েছিল। বিয়ের বছর দেড়েক পরেই আমি অহনাকে রেখে বিদেশ চলে যায় সংসারের টানাটানিতে। এর মধ্যে দেশে আর একবারো আসিনি। অনেক দেনা, পাওয়ানা মিটিয়ে একেবারে দেশে ফেরার ইচ্ছে ছিল বলে আর আসেনি। এরমাঝে শুনি যে আমাদের একটা ছেলে হয়েছে নাম সিফাত। কিন্তু যখন সবাইকে অবাক করে দিয়ে বাড়িতে আসবো বলে ঠিক করেছি। আর বাড়িতে এসেই দেখি আমার বউ অন্য একজনের সাথে একি বিছানাতে,এটা দেখার পর আমি নিজেই তো অবাক হয়ে গিয়েছি।
"আচ্ছা ভাবি, ভাই যদি জানতে পারে যে আমি তোমার সাথে রাত কাটায়, তাহলে কি হবে?" আতিকের বলা কথাতে আমি আবার ওদের কথা শোনার জন্য কান খাড়া করলাম। অহনা বলে, "আরে ধুর ও কি ভাবে জানবে? ও তো দেশের বাইরে। ও তো এটাও জানে না, তোমার সন্তান আমার পেটে এখন। ওকে বলবো যেন খুব তাড়াতাড়ি বাসায় আসে। যাতে সবাই ভাবে এই দ্বিতীয় সন্তানটাও ওর। ও জানবে না, তুমি আরো ভালো করে আমাকে আদর করো তো।" আতিক হেসে দেয়।
ওর হাসির শব্দ আমার কানে বাজতে থাকে। বড্ড অসহ্য লাগছে আমার। চোখ দিয়ে পানি পড়া শুরু করে দিয়েছে। নিজেকে আজ বড্ড বেমানান লাগছে। যুদ্ধে বিদ্ধস্ত সৈনিকের মত আস্তাকুড়ে আজ পড়ে আছি যেন। তখনি শুনতে পেলাম আতিক বলছে "ভাবি, আজ সন্ধ্যা থেকে তোমার সাথে থাকবো সারারাত।
আমার বউ আজ বাপের বাড়ি যাবে মেয়েকে নিয়ে। তোমার সাথে থাকবো বলে আমি রয়ে গিয়েছি। প্লিজ ব্যবস্থা করো।" অহনা হেসে দেয়। ওর হাসি যেন বদ্ধ ঘরটাকে আরো বেশি চকচকে করে তুলল। আর আমার মনটাকে যেন ড্রিল দিয়ে ছিদ্র করে তুলল। অহনা বলে "আচ্ছা ঠিক আছে আমার জান, তোমার জন্য আজকে না হয় সিফাতকে ওর দাদুর বাসায় পাঠিয়ে দেবো। শ্বশুরকে বলবো যে আমি বাপের বাড়িতে যাচ্ছি ওর তো স্কুল রয়েছে আপনার থেকে স্কুল কাছে তাই আপনার কাছে রেখে যাচ্ছি, ব্যস হয়ে গেল।" আতিক হয়ত অহনাকে জড়িয়ে ধরেই আদুরে ভাষায় বলল "ওলে আমাল জানটারে.. কত্ত ভালো গো তুমি। তাহলে আজ সন্ধ্যায় দেখা হচ্ছে।
এখন যায়। দোকানে বসতে হবে তো বউ আবার ভাত পাঠিয়ে দেবে।" আতিক চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে লাগল। আমি আস্তে করে দরজাটা খুলে দিয়ে শার্ট নিয়ে দৌড়ে ছাদে চলে যায়। মনে মনে বললাম দেখতে চাই আজ সন্ধ্যার পরিবেশ কেমন। একটু পর দেখি আতিকে লুঙ্গি বাধতে বাধতে চলে যাচ্ছে। অহনা শুয়ে থাকলো। আমি শব্দ না করে নিচে আসলাম। দরজাটা তখনো অল্প খোলা আছে। আমি বাইরে চলে আসি। আতিকের বাড়ির সামনে চলে আসি। সারাটা দুপুর, বিকেল ওদের বাড়ির আশে পাশে লুকিয়ে থাকি।
যখন ওর বউ বাপের বাড়ি যাবে বলে বের হল, ওদের বাড়ির থেকে অনেকটা দুরে চলে গেল আমি তখন ওদের সামনে আসি। আমাকে দেখেই আতিকের বউ বলে.."আবির ভাইয়া না? আপনি কখন এলেন?" আমি তাড়াতাড়ি বলি "আজ আপনার মেয়েকে ওর নানু বাড়িতে পাঠিয়ে দিন।" সে বলে "কেনো?" আমি সবটা খুলে বলি। সে একাধারে কাঁদতে থাকে। আমি বলি, "আজ সন্ধ্যায় ওদেরকে ধরবো। আপনি আপনার মেয়েকে পাঠিয়ে দিন আপনার বাপের বাড়ি। আর আপনি আমার সাথেই সন্ধ্যা অবদি থাকুন।" সে তাই করল। আমরা বাইরে সন্ধ্যা অবদি থাকলাম।
যখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে, দুজনে আমার বাড়িতে গেলাম। যেয়ে দেখি ঘরটা আধা খোলা অবস্থায় আছে। ঘরের মধ্যে ডিম লাইটের আলো জ্বলছে। মিউজিক প্লেয়ারে স্লো মোশনে কুমার শানুর রোমান্টিক হিন্দি গান চলছে। আমরা দুজন দরজার বাইরেই দাঁড়িয়ে রইলাম। আমার বউ আতিকের বুকের উপর মাথা দিয়ে শুয়ে আছে। গায়ে তেমন কোনো কাপড় নেই। আর আতিক অহনাকে পরম আদরে জড়িয়ে ধরেছে। যা আতিকের জায়গাতে আমার থাকার কথা। আতিকে স্ত্রী রাইসা অঝোরে কেঁদেই চলেছে। সে বারবার বিড়বিড় করে বলছে তোকে আমি কত বিশ্বাস করতাম আর তুই কিনা। অহনা বলছে "আচ্ছা আতিক, যদি তোমার বউ জানতে পারে কোনোদিন যে আমার সাথে তোমার সম্পর্ক রয়েছে তখন কি হবে?" আতিক মুচকি হেসে উত্তর দেয় "ধুরর পাগলি ও জানবে কি করে? আমি কি একদম গাধা নাকি যে ও সব জানবে। তেমন কোনো কাজই আমি করিনা।" দুজনেই হাসতে থাকে।
"এই হাসিটা কি সারারাত চলবে?" আমার কথা শোনা মাত্রই ওরা দুজন লাফিয়ে ওঠে......
এই হাসিটা কি সারারাত চলবে?" আমার কথা শোনা মাত্রই ওরা দুজন লাফিয়ে ওঠে। আমার দিকে ওরা দুজন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষন। তারপর যখন ঘরের লাইট জ্বলে উঠল ওরা আরো বেশি অবাক হল।
কারন লাইট টা জ্বালিয়েছে রাইসা। আতিক ভয়ে চুপসে গেল। অহনা একবার আমার দিকে আরেকবার রাইসার দিকে তাকায়।
তখনি রাইসা ভয়ংকর কাজ করে বসে টেবিলে থাকা ফুলদানি নিয়ে আতিকের মাথায় জোরে মেরে বসে।
আতিকের মাথা থেকে রক্ত ঝরতে থাকে। রাইসা দৌড়ে চলে যাই বাইরে। আমি চেয়ার টেনে বসলাম আমার দিকে অহনা বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে। ঐ চোখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট।
আমি বললাম "কি দোষ আমার?
তোকে ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছি বলে অপরাধ? নাকি তোর জন্য কাজ করে টাকা পাঠায় আর তুই মজা করে বেড়াস সেটা আমার অপরাধ?
তুই সুখে থাকবি বলে এতকিছু করলাম এটাই কি আমার দোষ?"
কোনো কথা বলে না ও। ওর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। আতিক ব্যাথায় কাঁতরাতে লাগল।
তখনি রাইসা কোথা থেকে বটি নিয়ে এসে আতিকের গলাতে কোঁপ দিতে যাবে আমি আটকিয়ে দিই। আতিক ভয়ে আমাদের দিকে তাকায়।
রাইসা বলে "তোকে বিশ্বাস করা আমার দোষের ছিল তাই না? তোকে রোজ খেয়াল রাখা আমার ভূল ছিল তাই না? তুই নিজেকে অনেক চালাক ভাবিস তাই না?"
দুজনেই চুপ হয়ে গেল। আমি আর রাইসা ওদের দিকে তাকালাম। দুইজনে আমাদের দিকে কোনো কথা ছাড়াই তাকিয়ে আছে।
আমার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে। ওদের দিকে তাকালাম। অহনা বলে "আবির আমার ভূল হয়ে গেছে।
আমাকে মাফ করে দাও।" আতিকও এটাই বলে। আমি মুচকি হাসলাম। বললাম "তোদের জায়গাতে আজ আমাদের দেখলে তোরা কি করতি?"
ওরা কিছুই বলে না। অহনা আবার বলে "আমি জানি অন্যায় করেছি আমাকে তুমি মাফ করে দাও।" আমি কষে ওর গালে দুইটা চড় দিই। রাইসা বলে "ভাইয়া ওদের এখানেই মেরে ফেলি।"
আমি কিছুই বললাম না। রাইসাকে নিয়ে বাইরে বের হলাম। ঘরের দরজা আটকে দিয়ে চলে আসি বাইরে। রাইসাকে রেখে দোকান থেকে পেট্রোল কিনে নিয়ে আসি। তারপর বাড়িতে তা দিয়ে জ্বালিয়ে দিলাম। ওদের আত্মচিৎকার আমার কানে আসছে। আর আসি পৈশাচিক এক হাসি দিলাম।
- সমাপ্ত -
0 মন্তব্যসমূহ