কুরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান - alhadimedia 360

 

[3.7]


تِلْكَ آيَاتُ الْكِتَابِ الْحَكِيمِ

These are the verses of the Book of all science


এগুলো বিজ্ঞানময় কিতাবের আয়াত (সূরা লোকমান-২) আল-কোরআনের ৩২টি নামের মধ্যে একটি নাম হচ্ছে 'হিকমা'। আরবী হিকমা শব্দের অর্থ বিজ্ঞান। আল-কোরআন অনন্ত বিস্ময়ে সমৃদ্ধ একটি বিজ্ঞানময় গ্রন্থ । তবে মানুষ কর্তৃক প্রণীত সকল বিজ্ঞান গ্রন্থ থেকে এটি স্বতন্ত্র। যেমন, ছাত্রদেরকে পাঠ দানের জন্য শ্রেণীকক্ষে যেভাবে সূত্র উপস্থাপন করা হয়, H2+02 = H20 (পানি)। 

এ রকম প্রতীকি সমীকরণ আল কোরআন পেশ করে না। বরং হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের বিক্রিয়ায় যে পানি সৃষ্টি হয় তা কিন্তু সৃষ্টির শুরুতে সৃষ্টি করে দিয়েছেন মহামহিম আল্লাহ তা'আলা। পানি কি কি মৌলিক উপাদানে গঠিত, পানির পরমাণু সংখ্যা কত, পানির ধর্ম কি, পানিকে জীবনের স্ফুরণ বলা হয় কেন । এ সব তত্ত্ব আবিষ্কার করার জন্য জ্ঞানী লোকদেরকে পানির প্রতি আকৃষ্ট করা হয়েছে।


বীজ বপন করলে আল্লাহ তা'আলার নির্দেশে বৃক্ষ উদগত হয়। কিন্তু কিভাবে বৃক্ষ বায়ুমন্ডল থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন (02) ত্যাগ করে, কিভাবে বৃক্ষ নিজের খাদ্য (শর্করা) নিজেই তৈরী করে এবং বৃক্ষ যে ফল দেয় তার উপকারিতা, অপকারিতা, প্রভৃতি তথ্য আবিষ্কার করার জন্য আল-কোরআন বিবেকবান লোকদের মনযোগ আকর্ষণ করেছে।


চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ-উপগ্রহ-গ্রহাণু তথা সৌরজগত, গ্যালাক্সি, প্রভৃতি জ্যোতিস্ক বিশাল মহাকাশে সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে। এসব জ্যোতিষ্কের উৎপত্তি, এদের ঘূর্ণন প্রকৃতি, এদের মহাকর্ষ শক্তি, এদের উজ্জ্বলতা এবং এদের পরিণতি সম্পর্কিত তথ্যসমূহ আবিস্কার করার নিমিত্তে আল-কোরআন জ্ঞান চর্চাকারীদের জন্য নিদর্শন উপস্থাপন করেছে।


وتِلْكَ الْأَمْثَالُ نَضْرِبُهَا لِلنَّاسِ وَمَا يَعْقِلُهَا إِلَّا العلمون 

এসব উদাহরণ মানব জাতির জন্য পেশ করেছি কিন্তু জ্ঞানী লোকেরাই কেবল তা বুঝতে সমর্থ হবে। (আনকাবুত-৪৩)


 خَلَقَ اللهُ السَّمَوتِ وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ إِنَّ فِي ذَلِكَ لاية

للْمُؤْمِنين.

 Allah created the firmaments and the earth in true propotions. Verily in that is a sign for those whobelieve. 

আল্লাহ তাআলা যথার্থরূপে নভোমন্ডল এবং ভূ-মণ্ডল সৃষ্টি করেছেন, নিশ্চয়ই বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য এতে রয়েছে নিদর্শন। (আনকাবুত-88)


إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَوتِ وَالْأَرْضَ وَاخْتِلَافِ الَّيْلَ وَالنَّهَار لايت

لأولى الالباب .

 Indeed; In the creation of the heavens and the eatrh and the alternation of night and day, there are signs for men of understanding.


নিশ্চয়, নভোমন্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টিতে, রাত আর দিনের আবর্তনে অনেক নিদর্শন রয়েছে বোধ সম্পন্ন লোকদের জন্য। (আলে-ইমরান-১৯০)

 وَانْزَلَ من السَّمَاءِ مَاءً فَاخْرَجْنَا بِهِ أَزْوَاجًا مِنْ نَبَاتِ شَتَّى .

كُلُوا وَارْعَنُوا أَنْعَامَكُمْ إِنَّ فِي ذَلِكَ لايت لأُولى التهى . 

And it is he who sends down rain  the sky and thereby bring forth various kinds of vegetations from which you eat and on which you pasture your cattle. surely in these are signs for those who are endued with power of reasoning.


আর তিনি আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তা দ্বারা বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ উৎপন্ন করেন। তোমরা তা আহার কর এবং তোমাদের চতুষ্পদ জন্তু চরাও। নিশ্চয়ই এতে বিবেকবান সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে।


“চাঁদের আলো তার নিজস্ব নয়।” (ইউনুস-৫, নুহ-১৬) এসব তত্ত্ব সংশ্লিষ্ট আয়াতসমূহে স্পষ্ট করে বিবৃত হয়েছে। যা আধুনিক বিজ্ঞানীরা ১৪০০ বৎসর পরে আবিস্কার করেছে।


আল-কোরআন তার পরিভাষাগত স্টাইলে বৈজ্ঞানিক তত্ত্বগুলো বর্ণনা করেছে। কোন অধীত বিদ্যার সাজানো রচনা যেমন সহজে বুঝে নেয়া যায়। তেমনি করে সহজভাবে কোরআেেনর বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব বুঝা সম্ভব নয়। 

(ত্বোয়াহা -৫৩-৫৪)


“প্রাণের সাড়া এসেছে পানি থেকে।” (আম্বিয়া-৩০)

কোরআন সাজিয়ে বৈজ্ঞানিক ফর্মুলা উপস্থাপন করতো তাহলে এতোদিনে তার ঐশী বৈশিষ্ট্য সন্দেহযুক্ত হয়ে পড়তো। কারণ সময়ের প্রবাহে বিজ্ঞানের অনেক সাজানো তত্ত্ব এবং তথ্য হারিয়ে যায় কিংবা পরিবর্তন হয়ে যায় । যেমন, দ্বাদশ শতাব্দির বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন “সূর্য স্থির নক্ষত্র।” ঊনবিংশ শতাব্দিতে প্রমাণিত হয়েছে, সূর্য একটি গতিশীল নক্ষত্র।


অতএব, আল-কোরআন এমন বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব উপস্থাপন করে যা কোন কালে পরিবর্তন হবার নয়। কারণ জ্ঞান-বিজ্ঞানে পূর্ণ এ গ্রন্থ (আল কোরআন) যিনি অবতীর্ণ করেছেন তিনি সময়-কালের ঊর্ধ্বে সর্বজ্ঞানী মহান আল্লাহ ।


تَنْزِيلٌ مِّنْ حَكِيمٍ حَمِيدِ .

It (AL Quran) is revealed from Allah, ful of wisdom and worthy of praise. 

একটি প্রজ্ঞাময় প্রশংসিত আল্লাহর নিকট থেকে অবতীর্ণ গ্রন্থ।

(হা-মীম : ৪২) 

এ যাবৎ কাল বিজ্ঞানের যত শাখা প্রশাখা সম্প্রসারিত হয়েছে তার সামঞ্জস্যতা আল কোরআনে দৃশ্যমান। সমগ্র বিজ্ঞান এবং আল-কোরআন পাশাপাশি অধ্যয়ন করলে এ সত্য উপলব্ধি করা যায়। অধিকন্তু সাবলীল আয়াত দ্বারা কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। যারা নিবিড় চিত্তে এ গ্রন্থ অধ্যয়ন করবে, গবেষণা করবে, অনুসরণ করবে, তারা জ্ঞানের অসংখ্য উপকরণ আবিষ্কার করতে পারবে যা কোন বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধ অর্থে কিংবা নির্দিষ্ট একটি সূত্র দিয়ে বেধে দেয়ার মত নয়। তাই কোরআন তাঁর অন্তহীন জ্ঞানের বিশাল প্রজ্ঞার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে


ولوانَّ مَا فِي الْأَرْضِ مِنْ شَجَرَةِ أَقْلَامٍ وَالْبَحْرُ يَمُدُّهُ مِن بَعْدِهِ سَبْعَةُ أَبْخَرمَّا نَفِدَتْ كَلِمَتُ اللهِ إِنَّ اللهَ عَزِيزٌ حَكِيم .

এ পৃথিবীতে যত বৃক্ষ আছে সবই যদি কলম হয় এবং মহাসমুদ্রের সাথে আরো সাত সমুদ্র যুক্ত হয়ে যদি কালি হয় (সমস্ত বৃক্ষ আর সমুদ্রের পানিগুলি শেষ হয়ে যাবে) তবুও আল্লাহর কালাম (বিশেষ জ্ঞান) লিখা শেষ হবে না। অবশ্যই তিনি পরাক্রান্ত প্রজ্ঞাময়। (লোকমান-২৭)


উপরোক্ত আয়াত থেকে এ সত্য প্রতীয়মান হচ্ছে যে মহাবিশ্বের শেষ দিন পর্যন্ত যত জ্ঞান বিজ্ঞান আবিস্কার হবে তা অবশ্যই আলোচ্য কিতাবে বর্ণিত নিদর্শন সমূহের যথার্থ তথ্যের প্রকাশ ঘটাবে।

 وَمَا 

مِنْ غَانِيَةٍ فِي السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ الافى كتب مبين

 There is no secret in the heavens and the earth which has not been recorded in the clear book.

 সমগ্র আকাশ ও যমীনে এমন কোন বিষয় গোপনীয় নেই যা স্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ হয়নি। (নামল-৭৫)


সম্মানিত ঐশী গ্রন্থ আল-কোরআন তার অন্তহীন জ্ঞানের সুবিশাল ভান্ডার কোথায় সংরক্ষিত ছিল তা স্পষ্ট করে বলেছে :

بل هُوَ قُرَانٌ مَّجِيدٌ . فِى لَوْحٍ مَّحْفُوطٍ .

 That this Glorious Quran is (inscribed) in table well preserved.


বরং এ সম্মানিত কোরআন ফলকের মধ্যে সংরক্ষিত ছিল। (বুরুজ-২১, ২২) আরবী 'লাওহুন' শব্দের অর্থ ফলক আর 'মাহফুজ' অর্থ সংরক্ষিত । তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে এ ফলকটি কেমন, এর বিশেষত্ব কি, এবং কোরআনের সীমাহীন জ্ঞান-বিজ্ঞান এ ফলক কিভাবে ধারণ করেছে, মহানুভব আল্লাহ-ই ভাল জানেন ।

إنَّهُ لَقُرْآنٌ كَرِيمَ . فِي كِتَبٍ مَكْنُونٍ 

That this is indeed a Quran most honourable in a book well guarded. 

নিশ্চয়ই এটি এক সম্মানিত কোরআন যা সুরক্ষিত গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। (ওয়াকিয়া-৭৭-৭৮)


وإنه في أم الكتب لَدَيْنَا لَعَلِيٌّ حَكِيم 

Verily it is in safe custody With Allah in the Mother Book, exalted and full of wisdom.


নিশ্চয় এটি আল্লাহ তা'আলার কাছে রক্ষিত আসল কিতাবে বিধৃত আছে এবং তিনি পরাক্রান্ত প্রজ্ঞাময়। (যুখরুফ-৪)


ইউরোপীয় অমুসলিম বিজ্ঞানীরা সমগ্র বিজ্ঞানকে (Total science) উৎকর্ষতায় উপনিত করার গর্ভবোধ করে থাকেন। কিন্তু এ যাবৎ আবিষ্কৃত বৈজ্ঞানিক তত্ত্বসমূহ এবং আল-কোরআন পাশাপাশি অধ্যয়ন করলে এ সত্য প্রতীয়মান হয় যে, ১৪০০ বৎসর পূর্বে অবতীর্ণ “আল-কোরআন” থেকে বৈজ্ঞানিক উপকরণগুলো সংগ্রহ করে গোপনে পরীক্ষা চালিয়ে সফল হয়েছেন। তারা । 

অতঃপর সফলকাম তত্ত্বগুলির সাথে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীদের নাম জুড়ে দিয়ে তা প্রকাশ করেছেন। এ প্রসঙ্গে আমেরিকান লেখক George sarton রচিত "The life of seience" গ্রন্থের একটি উক্তি উদ্ধৃত করা হলো 


 “ইউরোপীয় জ্ঞানীদের মধ্যে যারা অগ্রগামী ছিলেন তারা বুঝতে পারলেন যে, আরবী গ্রন্থাবলী শুধু যে গুরুত্বপূর্ণ তা-ই নয় সে গুলো অপরিহার্যও বটে। কারণ এ সবের মধ্যে সঞ্চিত ছিল জ্ঞানের প্রচুর সম্পদ। এ কথা বললে মোটেও অতিরঞ্জিত হবে না যে, দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শতাব্দির মধ্যভাগ পর্যন্ত খৃষ্টান জ্ঞানীলোকদের প্রথম কাজ ছিল আরবী গ্রন্থের ল্যাটিন ভাষায় অনুবাদ।”


অনন্তর মহাবিশ্বের মহাবিস্ময় আল-কোরআন। জ্ঞান বিজ্ঞানের সকল উপাদান এতে সঞ্চিত আছে। আর সেসব উপাদান সংগ্রহ করে আধুনিক বিজ্ঞান সম্প্রসারিত হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও হতে থাকবে।



• দৃষ্টি আকর্ষ : যদি আপনাদের কাছে আজকের এই পোস্ট ভাল লেগে থাকে তাহলে আপনাদের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। প্রয়োজনে এ রকম আরো post পেতে আমাদের follow করতে পারেন। 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ