এইচএসসি - তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি দ্বিতীয় অধ্যায় - Mobile Communicaton


মোবাইলে যোগাযোগ - Mobile Communicaton

দুটি চলনশীল ডিভাইস বা একটি চলনশীল ও অন্যটি স্থির ডিভাইসের মধ্যে ডেটা ও তথ্য আদান প্রদানের জন্য ব্যবহৃত প্রযুক্তিই মোবাইল ফোন নামে পরিচিত।

 মোবাইল ফোন প্রযুক্তি দু'ধরণের ডিভাইসের সমন্বয়ে গঠিত। একটি চলমান, যা গ্রাহকের নিকট থাকে একে বলা হয় মোৱাইল স্টেশন (MS) বা মোবাইল ইউনিট বা মোবাইল সেট। অন্যটি স্থির ডিভাইস যা সার্ভিস প্রদান করে তাকে বলা হয় বেস স্টেশন বা Land Unit। মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডার তার সার্ভিস এলাকাকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে। প্রতিটি ভাগকে একটি সেল (Cell) বলে। সেলগুলি ষঢ়ভূজাকার, বর্গাকার, বৃত্তাকার হতে পারে। 

প্রতিটি সেল একটি অ্যান্টেনা এবং কিছু ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসসহ একটি ছোট অফিস নিয়ে গঠিত, অ্যান্টেনাসহ ছোট অফিসকে বলা হয় বেস স্টেশন। প্রতিটি বেস স্টেশন কন্ট্রোল করা হয় মোবাইল সুইচিং সংযোগ দ্বারা যেখান থেকে ব্যবহারকারী শনাক্ত করা, কল সংযোগ প্রদান, কল ইনফরমেশন রেকর্ডিং, বিলিং সিস্টেম ইত্যাদি কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রিত হয়। 

মোবাইল ফোনে একটি ক্ষুদ্র মাইক্রোচিপের প্রয়োজন পড়ে যেটিকে সিম কার্ড (Subscriber Identity Module or SIM Card) বলে। ব্যবহৃত সিম মোবাইল অপারেটরের সাথে সংযোগ স্থাপন, ফোন নম্বর সনাক্তকরণ, অন্যান্য মোবাইলের সাথে কল আদান-প্রদানের অনুমোদন প্রভৃতি নিয়ন্ত্রন করে। বর্তমানে প্রচলিত মোবাইল ফোনে অতিরিক্ত কিছু ফিচার যুক্ত করা হয়েছে। যেমন- SMS (Short Message Service System) অডিও রেকর্ডার, ভিডিও রেকর্ডার, ই-মেইল, গেমিং প্লাটফর্ম, টিভি ও USB পোর্ট, ব্লুটুথ, ওয়াইফাই, স্টিল ও ভিডিও ক্যামেরা প্রভৃতি। মোবাইল বা সেলুলার ফোন প্রযুক্তির প্রভারভেদ (Types of mobile or cellur phones technology).

বর্তমানে প্রচলিত মোবাইল ফোন প্রযুক্তিকে প্রধানত দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-


 জিএসএম (GSM - Global System for Mobile Communication) প্রযুক্তি ।


সিডিএমএ (CDMA - Code Division Mulliple Access) প্রযুক্তি ।


জিএসএম (GSM- Global System for Mobile Communication) : GSM এর পূর্ণরূপ (Global

System for Mobile Communication.) GSM বিশ্বব্যাপি সবচেয়ে জনপ্রিয় মোবাইল টেলিফোন সিস্টেম।


১৯৮২ সালে European Conference of Postal and Telecommunication Administration (ECPT) এর একটি মোবাইল টেলিফোন সিস্টেম প্রতিষ্ঠান হলো GSM । এটি ফুল ডুপ্লেক্স কমিউনিকেশন মোডে ভয়েজ ডেটা

স্থানান্তরের জন্য সার্কিট সুইচ নেটওয়ার্কের মধ্যে অধিক কার্যকর ও সুবিধা সম্পন্ন প্রযুক্তি। GSM হচ্ছে FDMA


(Frequency Division Multiple Access) এবং TDMA (Time Division Multiple Access) এর সম্মিলিত একটি চ্যানেল অ্যাকসেস পদ্ধতি।


সার্কিট ডেটা এবং পরবর্তীতে GPRS (General Packet Radio Service) ব্যবহার করে প্যাকেট ডেটা স্থানান্তরের জন্য এই স্ট্যান্ডার্ড সম্প্রসারণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে EDGE (Enhanced Data for GSM Evolution) প্রযুক্তির মাধ্যমে প্যাকেট ডেটা স্থানান্তরের গতি বৃদ্ধি করা হয়েছে। জিএসএম প্রযুক্তির ৩য় প্রজন্মের ভার্সনকে UMTS (Universal Mobile Telecommunication System) নামকরণ করা হয়। GSM সিস্টেমে ডেটা কমিউনিকেশন দ্রুত গতিতে ক্রয় এবং রোমিং সুবিধা পাওয়ার জন্য মোবাইল সেট পরিবর্তনের প্রয়োজন হয় না। বাংলাদেশে গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, টেলিটক ও এয়ারটেল GSM প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।


জিএসএম নেটওয়ার্কের সুবিধা (Advantages of GSM)


 জিএসএম নেটওয়ার্ক ভিন্ন ধরনের ফ্রিকুয়েন্সি রেঞ্জে কাজ করে

 ট্রান্সমিশন কোয়ালিটি উচ্চ ও গুণগত মানসম্মত।

 সিগন্যালের ক্ষয় ও দূর্বলতা অনেক কম। 

 প্রায় ২১৯টি দেশে ব্যবহৃত হয়। কাজেই আন্তর্জাতিক রোমিং সুবিধা বেশি পাওয়া যায়।

 যে কোন হ্যান্ডসেটে সিম কার্ডের সহজ ব্যবহার।

 তৃতীয় প্রজন্মের (3G) উপযোগী করে ডিজাইন করা।

 নিরাপদ ডেটা এনক্রিপশন।

 m-commerce পদ্ধতির উন্নতি

GPRS এবং EDGE সুবিধা প্রদান।


জিএসএম নেটওয়ার্কের অসুবিধা (Disadvantages of GSM)


 ডেটা ট্রান্সমিশন রেট তুলনামূলকভাবে কম।

 ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন।

 জিএসএম নেটওয়ার্ক সিস্টেম অনেক জটিল। 

 একাধিক ব্যবহারকারী একই ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করে।

 বিদ্যুৎ খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি।

কম ফ্রিকুয়েন্সিতে কল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। 

কিছু ইলেট্রনিক্সের ক্ষেত্রে ট্রান্সমিশনের বাধা সৃষ্টি করে। (যেমন- হেয়ারিং এইড, পেজার)


সিডিএম (CDMA) : CDMA এর পূর্ণরূপ হচ্ছে Code Division Multiple Access CDMA হচ্ছে বিভিন্ন রেডিও কমিউনিকেশন প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যবহৃত একধরনের চ্যানেল অ্যাক্সেস পদ্ধতি। এটি একাধিক ব্যবহারকারীকে একই ফ্রিকুয়েন্সির ব্যান্ড শেয়ার করার সুবিধা দিয়ে থাকে। এই ধারণাটি মাল্টিপল এক্সেস নামে পরিচিত। CDMA হলো TDM (Time Division Multiplexing) থেকে ভিন্ন এবং উচ্চ মানের ফ্রিকুয়েন্সি। একটি AMPS (Advanced Mobile Phone System) সেলের তুলনায় CDMA সেলের ক্ষমতা যথাক্রমে ৩ থেকে ৫ গুণ এবং ৬ থেকে ৭ গুণ বেশি।


সিডিএমএ নেটওয়ার্কের সুবিধা (Advantage of CDMA) 


নিরাপত্তা তুলনামূলকভাবে বেশি।

বিদ্যুৎ খরচ কম, ২০০ মাইক্রোওয়াট। ফলে গ্রামাঞ্চলে অধিক জনপ্রিয়।

অপেক্ষাকৃত কম সিগন্যালেও নেটওয়ার্ক চালু থাকে।

নেটওয়ার্ক সেল সাইজ অপেক্ষাকৃত বড়।

ই-মেইল আদান-প্রদানের সুবিধা পাওয়া যায় ।  

সিগন্যাল অবিচ্ছিন্ন অবস্থায় সহজ হ্যান্ড অফ হয়ে যায়।

শেয়ার বেচাকেনার সুবিধা আছে।

ছবি, গ্রাফিক্স, অডিও, ভিডিও এর সুবিধা পাওয়া যায় ।

ডেটা ট্রান্সফার রেইট তুলনামূলক বেশি। এই হার 153.6-6.614kbps |


CDMA নেটওয়ার্কের অসুবিধা (Disadvantages of CDMA )


 আন্তর্জাতিক রোমিং সুবিধা নেই।

 সকল ধরনের হ্যান্ডসেট ব্যবহারের সুবিধা নেই।

 ব্যবহারকারী বৃদ্ধি পেলে ডেটা ট্রান্সমিশনের গুণগত নাম হ্রাস পায় । 

 সিডিএমএ (CDMA) এর জনপ্রিয়তা ও ব্যবহার তুলনামূলকভাবে কম ।

এটি এখনও পরিপূর্ণ ও প্রতিষ্ঠিত নেটওয়ার্ক হিসেবে গড়ে উঠেনি।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ