ফেরাউনের লাশ ৩১১৬ বছর পানির নিচে অবিকৃত থাকার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ও আল-কোরআন|alhadimedia 360

 



এই প্রসংগটি কুরআনে বর্ণিত একটি সুবিখ্যাত ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবায়নের অত্যাশ্চর্য ঘটনা। হযরত মুসা (আ) এর নেতৃত্বে বনি ইসরাঈলগণ যখন গোপনে সিনাহ অভিমুখে যাত্রার উদ্দেশ্যে মিশর ত্যাগ করেন, তখন যিনি মিশরের রাজা (ফারাও-ফিরআউন) ছিলেন তার নাম কুরআনে দেয়া হয়নি। মিশর-তত্ত্ববিদ ও গবেষক-নিরীক্ষকগণ অবশ্য স্থির করেছেন যে, এই সময়কার ফিরআউনের নাম ছিল মারনেপতাহ্। পলায়মান ইহুদীদের পশ্চাদ্ধাবন করতে যে তিনি তার সৈন্যদলসহ লোহিত সাগরে নিমজ্জিত হয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন।


'আমি বনি ইসরাঈলদিগকে সমুদ্র পার করাইলাম এবং ফেরাউন ও তাহার সৈন্যবাহিনী বিদ্বেষ পরবশ হইয়া ও ন্যায়ের সীমালংঘন করিয়া তাহাদিগের পশ্চাদ্ধাবন করিল । পরিশেষে যখন সে নিমজ্জমান হইল, তখন সে বলিল, 'আমি ঈমান আনিলাম, কোন ইলাহ্ নেই সেই আল্লাহ্ ছাড়া, যে আল্লাহর উপর বনি ইসরাঈলগণ বিশ্বাসী এবং আমি আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভূক্ত। “(আল্লাহ্ উত্তর দিলেন) কি? এখন! পূর্বে তুমি তো অমান্য করিয়াছিলে এবং অশান্তি সৃষ্টিকারীদের অন্তর্ভূক্ত ছিলে; আজ আমরা কেবল তোমার (মৃত) দেহকেই রক্ষা করিব যাহাতে তুমি তোমার পরবর্তীদিগের জন্য নিদর্শন হইতে পার।

(আল্ কুরআন ১০:৯০-৯২) 


ফিরআউনের মৃত্যুকালীন এই উক্তি ও বর্ণনার উল্লেখ বাইবেলে নাই । কুরআনের ভাষায় আল্লাহ্ প্রতিশ্রুতি ছিল যে, ফিরআউনের দেহ বা লাশকে রক্ষা করা হবে। এই প্রতিশ্রুতি কিভাবে সত্যে পরিণত হয়েছে এবং কুরআনের একটি ভবিষ্যদ্বাণী যে, পূর্ণ হয়েছে তা এখানে আলোচ্য। কুরআন যখন নাযিল হয়েছিল তখন ফিরআউনদের মরদেহগুলি লোকচক্ষুর অন্তরালে শায়িত ছিল মিশরের রাজধানী কায়রো থেকে ৭/৮ কিঃমিঃ দক্ষিণে নীল নদের পাড়ে অবস্থিত লুকসুর-এর থিবিসের নেক্রোপলিস সমাধি-ভূমিতে। তখনকার দিনে সেইসব মৃতদেহ সম্পর্কে আরববাসীদের বা বাইরের অন্য দেশের কারো কিছু জানা ছিল না এবং জানা সম্ভবও ছিল না।

 মুহাম্মদ (স) -এর তো জানার প্রশ্নই ছিল না। ফিরআউনের মৃতদেহ মমির আকারে আবিষ্কৃত হয় উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে। সৈন্যদলের অন্যান্যের মত ফিরআউন মারনেপতাহর লাশ সমুদ্রের বুকে হারিয়ে বিনষ্ট হতে পারত, বা হাঙর-কুমীরের খাদ্য হতে পারত। সেরকম হওয়াই ছিল স্বাভাবিক । 


কিন্তু আল্লাহ্র ইচ্ছায় দেহটি উদ্ধার লাভ করে রাজকীয় প্রথা মতে মমিকৃত হবার এবং পরবর্তীকালের জন্য সংরক্ষিত হবার সৌভাগ্য লাভ করেছিল ।


আবিষ্কৃত হবার পর দেহটি ফিরআউন মারনেপতাহ্র বলে সনাক্ত করা হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে কুরআনে যেভাবে বর্ণিত হয়েছে এই ফিরআউনের মৃত্যু ঘটেছে ঠিক সেই ভাবে, পানিতে ডুবে যাওয়ার কারণে বা ডুবে যাবার প্রাক্কালে নিদারুণ কোন শকের কারনে। মমিটি আবিষ্কৃত হয় মিশর তত্ত্ববিদ মিঃ লরেট কর্তৃক ১৮৯৮ খৃস্টাব্দে থিরিয়েসেরন উপত্যকায় এবং সেখান থেকে মমিটি কায়রো শহরের তাজবীরে অবস্থিত জাতীয় যাদুঘরের ‘রয়াল মমিজ' কক্ষে মমিটি সংরক্ষিত রয়েছে এবং যে কেউ সেখানে গিয়ে দেখে আসতে পারেন।

 দেখলে বুঝতে পারবেন, কুরআনে দেয়া আল্লাহ্ প্রতিশ্রুতি কেমন বিস্ময়করভাবে পূর্ণ হয়েছে এবং কুরআনের বাণীকে সত্যতা দান করে কেবলমাত্র পিরামিডের মধ্যে নয়, একেবারে স্থায়ীভাবে নিদর্শন হিসাবে যাদুঘরে সংরক্ষণ লাভ করেছে।


কুরআনের সংশ্লিষ্ট আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়েছিল হিযরতের বছর চারেক পূর্বে। তখন মক্কা-মদীনার লোকেরা বা আরববাসীরা কেউ জানত না, সেই ফেরাউনের লাশ রক্ষা পেয়েছিল কিনা, বা কোথায় রয়েছে, যদিও সম্ভবত ঃ ইহুদীদের মাধ্যমে ইহুদী-পীড়ক সেই ফিরআউনের ঘটনাটা তাদের জানা ছিল।


 প্রয়োজনে এ রকম আরো post পেতে আমাদের follow করতে পারেন। শেয়ার করে বন্ধুদেরও পড়তে সাহায্য করুন। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ