শূকরের মাংস কেন হারাম | কোরআন ও বিজ্ঞান

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোকে শূকরের মাংস ভক্ষণ হারাম হওয়ার রহস্য নিয়ে যা পাওয়া যায় তা হলো-


মুসলিম জাতির সংবিধান, গ্রন্থ আল কোরআন, শূকরের মাংস খাওয়াকে হারাম করেছে, যা উল্লিখিত আয়াতের মাধ্যমে জানতে পারলাম । কোরআনে মোট পাঁচ স্থানে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন কিছু আনুষঙ্গিক বিষয়ের সাথে শূকরের গোশত খাওয়াকে হারাম বলে ঘোষণা দেন । যেমন প্রথম স্থান : সূরা বাকারা, আয়াত নং ১৭৩ 

দ্বিতীয় স্থান : সূরা আনআম, আয়াত নং-১৪৫

 তৃতীয় স্থান : সূরা মায়িদা, আয়াত নং- ৩

চতুর্থ স্থান : সূরা নাহল, আয়াত নং ১১৫

বৈজ্ঞানিক গবেষণায় শূকরের মাংস খাওয়াকে অত্যন্ত ক্ষতিকর বলে সনাক্ত করা হয়েছে। যে ঘরে শূকর বসবাস করে বা গোশত খায় তাদের (ঘরের মাঝে যারা বসবাস করে) অস্তিত্ব হুমকীর সম্মুখীন হয়। কেননা, উহা চলা-ফেরা করার সময় বাহির থেকে বিভিন্ন প্রকার রোগ জীবানু নিয়ে আসে। এ সব ব্যধিই পরিবারের সদস্যদের মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তবে, গাভী, মহিষ,  (ছাগল) কবুতর ইত্যাদি কম বেশী যাই হোক না কেন এদের রোগ মানুষের মাঝে তত বেশী ক্ষতিকর প্রভাব ছড়ায় না ।


শূকরের কলেরা রোগ হয়, বসন্ত রোগ হয়। উহার অস্ত্রে পরজীব রোগ-ব্যধি পালিত হয়। অনুরূপ নাড়ীভূড়ি আর যকৃতে প্রতিপালিত হয় এমন একটি ভয়ংকর পোকা হল "FASCIO LOPIS BASKI" উহা শূকর আর কুকুরের শরীরে বেশী পাওয়া যায়। উহার বিষ ক্রিয়ায় দাস্ত, পেট ব্যাথা এমনকি মৃত্যুও হতে পারে । কুকুর আর শূকরের কাছাকাছি বসবাসকারী মানুষের মধ্যে এ রোগ ছড়ালে সারা জীবন সীমাহীন কষ্ট ও ভোগান্তির কারণ হতে পারে। ইউরোপে প্রাণীর উৎপাদন। কম হওয়ায় প্রায়ই তাদের খাদ্য ঘাটতি দেখা দিত। এজন্য তারা অষ্ট্রেলিয়া, কেনিয়া প্রভৃতি দেশ থেকে খাদ্য আমদানী করে ঘাটতি পূরণ করত।

 বিশ্ব যুদ্ধের আগে আর্জেন্টিনা থেকে গোশত জার্মানিতে আমদানী করা হত । যখন দেখা গেল ওখানকার শূকরের গোশতের কারণে জার্মানীদের মধ্যে অস্থি সন্ধির রোগ দেখা দিচ্ছে । তখন জার্মান সরকার মাংসের টুকরা পাঠানোর আগে চাক্ষুষ পরীক্ষা-নিরিক্ষার ব্যবস্থা করে। যদিও উহা কষ্টকর কাজ ছিল, কিন্তু উক্ত মারাত্মক রোগ থেকে বাঁচার জন্য এ একটি মাত্র ব্যবস্থা ছিল। যার ফলে জার্মানীতে আমদানীকৃত গোশতের মূল্য বৃদ্ধি পায় অনেকগুণ এবং সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা সরবরাহ আর আমদানীর ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট সংযুক্ত করে সাক্ষাৎকার দেয়, যে উহাতে পরজীবী পোকা নেই। 


কিন্তু কিছু দিন পর দেখা গেল যে, এত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা অবলম্বন করা সত্ত্বেও পোকা বাহিত রোগ আগের মতই বহাল রইল । তাই ইদানিং, অধিকাংশ দেশে শূকরের গোশত খুব গবেষণা আর পরীক্ষা করার পর বাজারজাত করা হয়।


ট্রাইকিনেলা স্পাইরালিস

এটা অত্যন্ত সাধারণ এক জাতীয় প্যারাসাইট যা শূকরের মাংস থেকে মানুষের মাংসে প্রবেশ করে। এই প্যারাসাইট দ্বারা আক্রান্ত হলে যে রোগের জন্ম হয় তাকে “ট্রাইকিনসিস” বলা হয়। এ রোগে আক্রান্ত হলে মানুষের “ভাইটাল অরগ্যান গুলো” নষ্ট হয়ে যায়, যার কারণে হঠাৎ করে মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে । পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, একমাত্র যুক্তরাজ্যেই ২০মিলিয়ন “ট্রাইকিনসিস” রোগী আছে।

 

 শূকরের গোশত খেলেই যে, এ রোগ ছড়ায় শুধু তাই নয়। পৃথিবীর একটি বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক সাময়ীকিতে প্রকাশ করা হয়েছে যে, এক লোক হাত দিয়ে সংক্রামিত শূকরের গোশত নাড়াচাড়া করছিল। তার বেশ কিছু দিন পর সে হাতের নখ মুখে দেওয়ার ফলে “ট্রাইকিনসিস” রোগে আক্রান্ত হয়।


আরো অনেক প্যারাসাইটের মধ্যে টিনিয়া সোলিয়াম  হলো একটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য প্যারাসাইট। ইহা সাধারণভাবে শরীরের মাংসপেশী, হৃদপিন্ড, মস্তিষ্ক, চোখ ইত্যাদি আক্রান্ত করে মারাত্মক উপসর্গের সৃষ্টি করে। বর্তমান বিশ্বে পার্ক টেপওয়ার্মে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৬০ মিলিয়নেরও বেশী। এদের অধিকাংশই শূকরের টেপওয়ার্ম দ্বারা আক্রান্ত ।


সার্ট কিন

বৈজ্ঞানিক গবেষণার দ্বারা অতি সম্প্রতি সাটসকিন নামক এক ধরণের নতুন “প্রোটিন” বা আমিষ শূকরের গোশত থেকে আবিষ্কৃত হয়েছে। চামড়ার বিভিন্ন প্রকার এলার্জি, এ্যাকজিমা, হাঁপানী ইত্যাদি রোগের জন্য এ সব প্রোটিন দায়ী। দেখা গেছে অত্যন্ত অল্প মাত্রায় সার্ট কিন খেলেও শারীরিক অসারতা ও গ্রন্থিসমূহে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হয়।


মিউকোপলিস্যাকারাইডস শূকরের গোশতের মধ্যে মিউকোপলিস্যাকারাইডস মাত্রাতিরিক্ত থাকায় ইহা ভক্ষণে শরীরের গ্রন্থিসমূহে বিভিন্ন প্রকার রোগের সৃষ্টি হয়।


জৈব স্নেহ

এটি বিজ্ঞান সম্মত বাস্তব সত্য যে, শূকরের গোশতের স্নেহ জাতীয় পদার্থের আধিক্যতা মানুষের শারীরিক স্থূলতা, এথরোস্কেলেরোসিস ইত্যাদির জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ। জীবদেহে দু'ধরণের চর্বি থাকে। যেমন :

১। যে চর্বি গোশতের বহির্ভাগে বিদ্যমান থাকে আর গোশতকে ঢেকে রাখে। এ ধরনের চর্বি সহজেই গোশত থেকে আলাদা করা যায়।

২। যে চর্বি গোশতের আঁশের মধ্যে মিশে ঘনীভূত অবস্থায় স্থির থাকে।


আমাদের অনেকেরই ধারণা যে, মাংসের বহির্ভাগে বিদ্যমান চর্বিকে সরিয়ে নিলেই গোশত চর্বিমুক্ত হয়ে যায়। কিন্তু মাংসের আঁশের সাথে যে চর্বি ঘনীভূত অবস্থায় মিশে আছে, সেগুলো সম্পর্কে সজাগ থাকার প্রয়োজনীয়তা আমরা অনেকেই অনুভব করি না। আর এ চৰ্বি আদৌ গোশত থেকে বের করে ফেলা সম্ভব নয়।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো যখন কোন তৃণভোজী প্রাণী যেমন গরু, ছাগল বা ভেড়ার গোশত চর্বি সহকারে খাওয়া হয়, তখন ঐ চর্বি শরীরের ভিতরে অধিকতর সহজভাবে রক্তপ্রবাহের সাথে মিশে গিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু শূকরকে যেহেতু ময়লা আবর্জনা খাওয়ানো হয়, তাই শূকরের গোশত ও চর্বি সহজে পরিপাক হয় না। আবার চর্বিও সহজে শক্তিতে পরিণত হয় না। এটা রক্ত প্রবাহের মাঝেই থেকে যায়। রক্ত প্রবাহের মাঝে এ চর্বি মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে বিদ্যমান থাকে বলে এটা হৃদপিণ্ডের ব্যাধি, অকাল বাধক, বাধক্যজনিত কারণে শারীরিক অসুস্থতার তীব্রতা এবং প্যারালাইসিসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।


গ্রোথ  হরমোন

গ্রোথ হরমনের আধিক্যতা শূকরের গোশতের মধ্যে বেশী থাকে বিধায় নিয়মিত এক নাগাড়ে খেতে থাকলে শরীরের স্বাভাবিক বর্ধন এবং আকৃতিতে ব্যাঘাত ঘটে। আধুনিক বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান এবং গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, শূকরের গোশতের চর্বি শূকরের পেট আর নিতম্বে খুব বেশী পরিমাণে বিদ্যমান থাকে বিধায় শূকরের গোশত যারা খায়, ঐ চর্বি তাদের শরীরে গিয়ে পেটে আর নিতম্বে জমা হতে থাকে। যার ফলে শরীর ধীরে ধীরে "ষ্টোভ” আকার ধারণ করে।


যৌন অক্ষমতা

শূকরের মাংসে অতি উচ্চ মাত্রায় চর্বি থাকে বলে নিয়মিত শূকরের মাংস খেলে শরীরের ভিটামিন ই [E]-এর ঘাটতি দেখা দেয়। এই ঘাটতি যৌন গ্রন্থিসমূহের স্বাভাবিক ক্রিয়ায় বিশেষ প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। যার ফলে যৌন দুর্বলতা এবং যৌন অক্ষমতা দেখা দেয় ।

ভিটামিন 'ই' এর অভাবে ক্রমান্বয়ে ভিটামিন 'এ'-এর অভাব দেখা দেয়। ভিটামিন 'এ'-এর অভাবে নানা রকম চর্ম রোগ ও চোখের অসুখ হয়।

ময়লা-আবর্জনা ভক্ষণে অভ্যস্ত শূকরের স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশী থাকে। যার ফলে তাদের Lymphatic System রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সর্বদা চাপের মুখে থাকে। এই Lymphatic System কর্তৃক উৎপাদিত রোগ প্রতিরোধক বস্তুগুলো শূকরকে রোগ থেকে রক্ষা করে, কিন্তু শূকরের গোশত ভক্ষণকারীদের শরীরে বিষের মত কাজ করে । এর ফলে শূকরের মাংস ভক্ষণকারীদের শরীরে চর্মরোগ ও নানা প্রকার জটিল রোগের সৃষ্টি হয়।


বিশ্বের বহু পণ্ডিত ব্যক্তি এ মত পোষণ করেন যে শূকরের মাংস খেলে মানুষ যৌন ক্ষুধার প্রতি উদাসীন হয়ে পড়ে। এর কারণ হিসাবে বলা হয়- শূকরই একমাত্র প্রাণী যা তার সাথী সম্পর্কে যৌন ক্ষুধার তাড়না বা ঈর্ষাভাব পোষণ করে না।


বর্তমানে অনেক বড় বড় আধুনিক বিজ্ঞানীরা মনে করেন, অনবরত শূকরের মাংস খেতে থাকলে মানুষ লজ্জা-শরম হারিয়ে ফেলে। তবে সব চাইতে মজার বিষয় হল এ কারণেই সমগ্র ইউরোপ লজ্জাশীলতা থেকে বঞ্চিত।

মূলতঃ শূকর নাপাক বস্তু। দেখতেও বিদঘুটে। কোন সুস্থ রুচি সম্পন্ন মানুষের পক্ষে এদের বহিরাকৃতি-অবয়ব-আচরণ দেখে এদের গোশত খাওয়ার প্রতি কোন আকর্ষণ থাকতে পারে না। ময়লা-আবর্জনার মাঝে এদের বিচরণ আর সর্ব প্রকার ময়লা-আবর্জনা ও মানুষের পায়খানা এদের প্রিয় ও লোভনীয় খাবার।


বর্তমান শতাব্দী হল বৈজ্ঞানিক যুগ, মানুষের জীবন যাত্রা বিজ্ঞান ভিত্তিক হয়ে পড়েছে। আজ বিজ্ঞানকে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই । এ কথা জাতি-ধর্ম-বর্ণ সবার জন্যই প্রযোজ্য। খাদ্য-দ্রব্যের গুণাগুণ বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে নির্ধারণ করে এদের ভাল-মন্দ দিকগুলো তুলে ধরা হয়েছে। সর্বশেষ বৈজ্ঞানিক গবেষণা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে, শূকরের মাংস খাওয়া স্বাস্থ্যের দিক দিয়ে ক্ষতিকর। প্রকৃত পক্ষে বিগত বছরগুলোতে বৈজ্ঞানিকগণ এই ক্ষতিকর বস্তুটি খাওয়ার বিরুদ্ধে মানুষকে সর্তক করে আসছেন। 



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ