বাংলা দ্বিতীয় পত্র - দিনলিপি পাঠ -২




•• কলেজ জীবনের প্রথম দিনের অনুভূতি নিয়ে একটি দিনলিপি লেখ।


৪ আগস্ট, ২০১৮, শনিবার কলেজ জীবনের প্রথম দিন


স্কুলজীবনে স্বপ্ন ছিল কবে কলেজে ভর্তি হব, কবে কলেজে ক্লাস করব। সেই সুযোগ এলো আজকে। কিন্তু তখনকার মতো কৌতূহল অনুভব করছি না। বরং এক ধরনের আনন্দে শিহরিত হচ্ছি। এ অনুভূতির রং-রূপ-আকার কেমন তা বোঝাতে পারব না। তবে তার অস্তিত্ব বেশ জোরালো। কলেজ ড্রেস পরে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে তৈরি আমি। মা খাইয়ে দিলেন লুচি-মাংস । বাবা বাইকে করে নামিয়ে দিলেন কলেজ গেটে। ভেতরে ঢুকতে কেমন সংকোচ হচ্ছে। এক বন্ধু এসে টেনে নিয়ে গেল ক্লাসে। নাম পরিচয় বলে আমিও সবার সঙ্গে পরিচিত হলাম। প্রথম ক্লাসে এলেন ইংরেজি স্যার। আমাদের রোল নোট করে তিনি সবার সঙ্গে পরিচিত হলেন। তারপর প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিলেন। আমরা অডিটোরিয়ামে গিয়ে বসলাম। প্রিন্সিপাল স্যার নিজের পরিচয় দিয়ে টিচারদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। দুজন অধ্যাপক কলেজের পরিচিতিমূলক বক্তব্য রাখলেন। সব শেষে প্রিন্সিপাল স্যার উপদেশ ও নির্দেশনামূলক বক্তব্য রেখে দশ মিনিট অপেক্ষা করতে অনুরোধ করলেন। আমাদের হাতে তুলে দেওয়া হলো ক্লাস রুটিন, বুকলিস্ট ও কলেজ ম্যাগাজিন । হৃষ্টমনে চলে এলাম বাসায়।



•• ২৫ মার্চ রাতের ভয়াবহতা সম্পর্কে একজন তরুণের দিনলিপি লেখ।


২৭ মার্চ, ১৯৭১


নির্ঘুম রাত কাটল। খুব ভোরে উঠে বাশারকে নিয়ে বাইরে বের হলাম। আজ সকালে কারফিউ নেই। দুপুর থেকে আবার শুরু হবে। নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ, শিশু হাজার হাজার লোক রেললাইনের পথ ধরে পালিয়ে যাচ্ছে। তাদের সবার চোখে-মুখে মৃত্যুভয়। আমরা আউটার সার্কুলার রোডে হোটেল 'দ্য প্যালেসে'র সামনে একটা লাশ দেখে প্রথমে চমকে উঠলাম। তারপর রাজারবাগের দিকে এগিয়ে দেখলাম অসংখ্য লাশ। রক্ত শুকিয়ে জমাটবদ্ধ হয়ে আছে। দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ ব্যারাক থেকে তখনও ধোঁয়া উঠছে। লাশ আর রক্তের গন্ধে বাশার বমি করল। ওর মাথায় পানি দিতে চাইলাম, সম্ভব হলো না, কলটি বেশ দূরে। রুমাল ভিজিয়ে এনে ওর চোখ-মুখ মুছে দিলাম। একটু সুস্থ বোধ করলে ওকে নিয়ে দুপুরের আগেই বাসায় ফিরলাম। বাসায় ফেরার অল্পক্ষণ পর আমার সেন্ট গ্রেগরির ফ্রেন্ড সালেক এলো আর্মির পোশাকে, সঙ্গে তার বন্ধু ক্যাপ্টেন মাহমুদ। ওদের মুখে ক্যান্টনমেন্টের ভয়াবহ অবস্থার কথা জানলাম। মা ওদের অনেক জোর করলেন খেয়ে যাওয়ার জন্য। ওরা খেল না। আমার জামা-কাপড় পরে ছদ্মবেশে বাসা থেকে বের হলো কারফিউ শুরু হওয়ার আগেই শহর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার জন্য। তারপর কারফিউ শুরু হলো। শহরময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আর বাইরে যাওয়া হলো না। আজাদ


৩৯, বড় মগবাজার, ঢাকা।


•• একজন মুক্তিযোদ্ধার মুক্তিযুদ্ধকালীন দিনলিপি লেখ।


৩১ আগস্ট, ১৯৭১


কাল রাতে পাকিস্তানি সেনারা ঢাকা শহরের ২২টি মুক্তিযোদ্ধা আশ্রয় বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। এলিফ্যান্ট রোডের বাড়ি থেকে রুমী- জামীদের ধরে নিয়ে গেছে। আজাদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গেছে আজাদ, জুয়েল, বাশার, মনোয়ার, সেকান্দার, চঞ্চলকে। আজাদের খালাতো ভাই জায়েদ ও টগর গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আজাদের বাসায় আমিও ছিলাম। পাকিস্তানি মেজরের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে তার মেশিনগান ছিনিয়ে নিয়ে আত্মরক্ষা করেছি। সেখান থেকে দিলু রোডের বাসায় এসে আশ্রয় নিয়েছি। আমরা ঢাকার গেরিলা যোদ্ধারা যেভাবে পরিকল্পনা করেছি, সেভাবেই এগিয়ে চলছি। পাকিস্তানিদের অতর্কিত এ হামলা আমাদের মনোবল নষ্ট করতে পারবে না। আমরা আজাদ-রুমীদের উদ্ধারের অভিযান চালাব। এরই মধ্যে আমরা ঢাকার চারটি পাওয়ার স্টেশনের দুটি উড়িয়ে দিয়েছি। আমাদের স্ট্রিট ফাইট অব্যাহত। ঢাকাবাসীর মনোবল ফিরে এসেছে। ভয়টা এখন পাকিস্তানি আর্মির। তবু প্রিয় সতীর্থের মুখ বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। আমার প্রিয় আজাদ, প্রিয় জুয়েল, রুমী এখন কেমন আছে? সারাদিন অস্থিরতার মধ্যে পার করলাম।


কাজী কামাল


দিলু রোড, ঢাকা।




•• শিক্ষাসফরের এক দিনের দিনলিপি লেখ।


২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮


সূর্য ওঠার আগেই ঘুম থেকে উঠলাম। দুদিনের শিক্ষাসফরের আজ দ্বিতীয় দিন। পুঁথিগত বিদ্যাকে অর্থবহ করতে আমাদের কলেজ প্রতি বছরই শিক্ষাসফরের আয়োজন করে থাকে। ইতিহাস, বিজ্ঞান ও সাহিত্যের প্রতি বিশেষ আগ্রহী শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতি বছরই দেশের বিখ্যাত জায়গাগুলো ঘুরে আসার আয়োজন প্রশংসনীয়। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা পাশজন শিক্ষার্থীর একটি দল গতকাল এসেছি কুমিল্লার ময়নামতিতে। গত বছর একদল গিয়েছিল বাংলাদেশের লোকশিল্প জাদুঘর সোনারগাঁওয়ে। আজ সকালে আমরা ময়নামতি পাহাড়ি অঞ্চলগুলো ঘুরে দেখলাম। এখানকার অপূর্ব সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ আমাদের মুগ্ধ করেছে। আমরা এখানকার ছবি তুলেছি। এরপর গেলাম বৌদ্ধবিহার ও বৌদ্ধ যুগের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নিদর্শন দেখতে। এখানকার মূল্যবান প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দেখে আমরা অভিভূত হয়েছি। এখানকার বিভিন্ন বস্তু সম্পর্কে নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করলাম। সেগুলো কলেজ বার্ষিকীতে প্রকাশ করব বলে স্যারকে জানালাম। আমাদের সুশৃঙ্খল ঘোরাফেরা, বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানার আগ্রহ দেখে শিক্ষকরাও আনন্দিত। এখানে দেখে শেখার আনন্দ আমরা নতুন করে উপলব্ধি করলাম। বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্যের এ অভিজ্ঞান আমাদের মনের সীমানাকে আরও প্রসারিত করবে। এখানকার ঐতিহাসিক চিহ্ন ও নির্দশনসমূহ সংরক্ষণের জন্য পরামর্শসহ আমরা নিজেদের মতামত লিখিত প্রস্তাব আকারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করলাম। প্রস্তাব পেশ করায় আমাদের এ পরিকল্পনাকে তাঁরা স্বাগত জানালেন। সারাদিন আনন্দে কাটল।


দেবাশীষ রায়


ঢাকা কলেজ, ঢাকা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ