চোখে পানি চলে আসার মতো - একটি শিক্ষণীয় গল্প -

 


গল্পঃ

ভাই: আপু, ও আপু

বোন: বল

ভাই: তোর জন্য আমি স্কুল যেতে পারিনা।

বোন: কেন, আমি কি করলাম?

ভাই: তুই আবার কি করবি?

বোন: তাহলে?

ভাই: তোর একটা চোখ নেই এই নিয়ে স্কুলের

ছেলেরা আমাকে খুব খেপায়। সমস্ত

ছেলেমেয়ে আমাকে কানীর ভাই, কানীর

ভাই বলে ডাকে। আমি আর স্কুলে যাবোনা।

বোন: শোন ভাই, একদম মন খারাপ করবিনা। ওদের

বলবি অসুখে আমার একটা চোখ নষ্ট হয়ে

গেছে। আমিও আগে খুব ভালো দেখতে

পেতাম।

ভাই: তোর জন্য সবাই আমাকে অপমান করে আর

তুই বলছিস মন খারাপ করতেনা। আমি আর

কখনোই স্কুল যাবোনা,,,

বোন: ভাই, তুই আমার কথা শোন। ওরা কিছুদিন

খেপিয়ে আপনা আপনিই ঠিক হয়ে যাবে তুই

একদম চিন্তা করিস না।

ভাই: না, আমি স্কুল যাবোনা।

বোন: আচ্ছা আজ আমি তোকে স্কুল নিয়ে

যাবো,,,ওদের কে সব বুঝিয়ে,,,,,,

ভাই: খবরদার তুই কখনো আমার স্কুলের সামনেও

যাবিনা। তাহলে আমি জীবনেও তোর সাথে

কথা বলবোনা,,, এটা বলেই শুভ হনহন করে

বেরিয়ে গেলো। শুভ ফিরলো বিকেলে। এসে

দেখে ওর মা দাঁড়িয়ে আছে। শুভ গাল ফুলিয়ে

ঘরে ঢুকলো।

মা: শুভ,

ভাই: হুম মা: আজ সারাদিন ভাত খাইছিস?

ভাই: না

মা: মন খারাপ?

ভাই: হুম।

মা: ভাত খেয়ে তোর আব্বুর সাথে দেখা করে

আয়। উনি তোকে ডাকছিলো,,,

ভাই: ভাত খাবোনা

মা: তাহলে যা তোর আব্বুর সাথে দেখা করে

আয়। শুভ উঠে গেলো।

ভাই: বাবা ডেকেছো?

বাবা: আয় ব্যাটা আয়, তুই নাকি আজ সারাদিন

ভাত খাসনি,

ভাই: হুম

বাবা: কেন, মন খারাপ?

ভাই: হুম, অনেকটা।

বাবা: মন খারাপ হলেও ভাত খাওয়া জায়েজ

আছে। যা ভাত খেয়ে আয়

ভাই: না খাবোনা

বাবা: সত্যি খাবিনা?

ভাই: উহু

বাবা: আচ্ছা থাক খাওয়া লাগবেনা। আজ সন্ধ্যায়

আমরা সবাই বাইরে খাবো, ঠিক আছে?

ভাই: না আমি যাবোনা।

বাবা: কেন যাবিনা, তোর আপু যাবে বলে?

ভাই: হুম

বাবা: আচ্ছা ওকে, তোর আপুকে নিবোনা। এবার

খুশিতো?

ভাই: হুম

বাবা: যা, তোর মাকে বল রেডি হতে। তুই ও রেডি

হয়ে নে,

ভাই: সন্ধ্যা হতে তো এখনো অনেক দেরি।

বাবা: তাও ঠিক, আচ্ছা এক কাজ কর। এখানটায় বস

তোকে একটা গল্প বলি। গল্প শুনবিতো?

ভাই: হুম শুনবো

বাবা: শোন তাহলে,, অনেক বছর আগের কথা। প্রায়

২৪-২৫ বছর আগের, এক দম্পতীর কোনো সন্তান

হচ্ছিলোনা। তারা সন্তানের আশায় অনেক

কিছু করলো, শত সাধনার পর এক চাঁদনী রাতে

বিধাতা তাদের কথা শুনলেন, তাদের কোল

জুড়ে তিনি অপরুপ সুন্দর এক কন্যা সন্তান

দিলেন। মেয়েকে দেখে সবাই অবাক, এতো

সুন্দর কোনো মানুষ হয়? এই মেয়েটা মানুষ

নাকি অন্যকিছু? অই দম্পতীর ছোট্ট ঘর

ক্ষনিকেই আলোতে ভরে গেলো, চাঁদনী

রাতে জন্ম বলে অই মেয়েটির নাম রাখা

হলো, চাঁদনী। ধীরেধীরে মেয়েটি বড় হতে

লাগলো। শরীরের সাথে সাথে মেয়েটির রুপ

ও পাল্লা দিয়ে বাড়তে লাগলো। অই দম্পতীর

আর কিছুই চাওয়ার ছিলোনা। এত সুন্দর মেয়ে

যাদের থাকে তাদের আর কিচ্ছু লাগেনা।

মেয়েটির যখন ৫ বছর বয়স তখন সবাই বুঝে

ফেললো এই মেয়েটির মত শান্ত আর ভদ্র

মেয়ে খুব একটা হয়না। এই মেয়েই বংশের

মান রাখবে। মেয়েটি বড় হতে লাগলো।

মেয়েটির যখন দশ বছর বয়স তখন অই দম্পতীর

ঘর আলো করে একটা পুত্র সন্তান এলো। পুত্র

সন্তানটিও ছিলো তাদের নয়নের মনি। আর

বোনটি তার ভাইকে এতোটা পছন্দ করতো যে

তা দেখে মা বাবারই মাঝেমাঝে হিংসে

হতো। এভাবেই চলছিলো অই দম্পতীর জীবন।

ছেলেটির বয়স যখন ৫ বছর তখন একদিন হঠাত

করে খাট থেকে পড়ে গিয়ে ভীষন ব্যথা পায়

ছেলেটি। ব্যাপারটিকে খুব গুরুত্ব দেয়নি

কেউই। ধীরেধীরে সমস্যা টা গাঢ় হয়ে

দাঁড়ায়। ছেলেটি চোখে ঝাপসা দেখতে শুরু

করে তড়িঘড়ি করে হাসপাতালে নিলে

ডাক্তার জানায় দুদিনের ভেতর আই

ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে হবে তানাহলে

চিরদিনের মত একটা চোখ অন্ধ হয়ে যাবে।

পাগলের মত হয়ে যায় ছেলেটির বাবা,

দুদিনের ভেতর চোখ কোথা থেকে জোগাড়

করবে? কোনো উপায় না দেখে মাথা নিচু

করে বসে থাকে হাসপাতালের করিডোরে

তখন কেউ একজন কাধে হাত দিয়ে বললো,

বোন: বাবা, আমি দুচোখ দিয়ে যা যা দেখার সব

দেখে নিয়েছি। বাকিটা জীবন এক চোখ

দিয়েই দেখতে পারবো। আমার ভাইটা এখনো

কিছুই দেখেনি,,,,,,,,"এটুক বলেই ধরনীর

সবচেয়ে সুন্দর চোখের মেয়েটি হাউমাউ করে

কেঁদে দিলো,,,,,,,

ভাই:বাবা,

বাবা: হুম

ভাই: অই ছেলেটাকি আমি?

বাবা: নাহ, তুই হবি কেন?

ভাই: বাবা তুমি একদম মিথ্যে বলোনা। আমি যখন

তোমাদের জিজ্ঞেস করতাম আমার বাম

চোখটা এত সুন্দর কেন তোমরা কোনোদিনই

আমাকে বলনি,,,,, বাবা, তুমি কাদছো কেন?

বাবা: এমনিতেই, তুই যা রেডি হয়ে নে।

ভাই: আচ্ছা। শুভ উঠে গেলো। চুপিচুপি তার

বোনের রুমে গিয়ে ঢুকলো।

ভাই: আপু

বোন: হুম

ভাই: কি করিস?

বোন: কিছুনা

ভাই: আপু তোকে একটা গল্প বলবো শুনবি?

বোন: কিসের গল্প?

ভাই: ধরনীর সবচেয়ে খারাপ ভাইয়ের গল্প, শুনবি?

বোন: না, শুনবোনা

ভাই: আপু একটা অনুরোধ করি?

বোন: কর

ভাই: রাখবি?

বোন: হুম

ভাই: তোর পা দুটো এদিক দে আমি ধরে বসে

থাকি। আপু তুই কখনো আমাকে মাফ করিস না,,, তোর দোহাই লাগে তুই কখনো আমাকে মাফ করিস না,,,,, এটুক বলেই শুভ আকাশ বাতাস কাপিয়ে কেঁদে উঠলো। চাদনী জড়িয়ে ধরলো তার ভাইকে। এক দেহের দুটি চোখ একই সাথে দুই স্থানে কেঁদে উঠলো। একই সাথে ঝরাতে লাগলো।


প্রয়োজনে এ রকম আরো গল্প পেতে আমাদের follow করতে পারেন। শেয়ার করে বন্ধুদেরও পড়তে সাহায্য করুন। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ