ব্রেকফাস্টে অতিরিক্ত শর্করা গ্রহন হতে পারে মৃত্যুর কারণ

 


আমরা যেসকল রোগে বেশি মারা যাচ্ছি সবগুলোর পেছনে

শর্করা জাতীয় খাবারের বড় ভূমিকা আছে। কি অবাক লাগছে!

একটু ব্যাখ্যা করলেই বুঝতে পারবেন খুব সহজে বোঝানোর চেষ্টা

করবো।

ইনসুলিনের সঙ্গে সবার পরিচয় নিশ্চয় আছে?

আপনি কি জানেন শর্করা জাতীয় খাবার খেলে অগ্ন্যাশয় ইনসুলিন নিঃসরণ করে। আমরা চাল, আটা, ময়দা, আলু দিয়ে তৈরি এবং যেকোন ধরনের মিষ্টি, এমনকি মিষ্টি ফল যাই খাই না কেন সেটা রক্তে আসে সুগার হিসাবে। আর সুগার এলেই প্রথম ধাক্কায় অনেক পরিমাণ ইনসুলিন নিঃসরণ হয়। 

এটি ১০ থেকে ১৫ মিনিট চূড়ায় থাকে, পরে দ্বিতীয় ধাক্কায় আরো ইনসুলিন নিঃসৃত হয়। ইনসুলিন গ্লুকোজকে রক্ত থেকে দেহ কোষের ভেতর প্রবেশ করায় এবং গ্লুকোজ ভেঙে ATP বা শক্তি উৎপন্ন হয়, যেটা আমাদের স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে অত্যন্ত প্রয়োজন।


 সমস্যা হলো, আমরা যখন প্রয়োজনের চাইতে বেশি শক্তি শরীরে ঢুকাই, তখন শরীর তার প্রয়োজন পূরণ করার পর অতিরিক্ত শক্তিকে গ্লাইকোজেন এবং চর্বিতে রুপান্তর করে সঞ্চয় করে রাখে। ইনসুলিন হলো চাবি, এটা যেখানে লাগে (রিসেপটর) সেটা হলো তালা। আমরা সবসময় চাবি (ইনসুলিন) নিয়া দৌড়ের উপর থাকি। আপনার তালার ভেতর যদি কেউ চুয়িংগাম ঢুকিয়ে রেখে দেয় কিংবা মরিচা ধরে যায়, তাহলে তালা কি খুলবে?

 এখানে চাবির কোনো সমস্যা নাই, সমস্যা কিন্তু তালার। অর্থাৎ সমস্যা ইনসুলিনের না সমস্যা হলো রিসেপটরের; আমাদের পেটে যখন চর্বি জমতে থাকে, সাথে সাথে এমন চর্বি কিন্তু শরীরের সবখানেই জমছে, শুধু পেটেই জমছে তা কিন্তু নয়, এমনকি ঐ যে রিসেপ্টর সেখানেও চর্বি জমছে। ফলে কি হচ্ছে, ইনসুলিন রিলিজ হচ্ছে ঠিকই কিন্তু কাজ করতে পারছে না কারণ তালা নষ্ট।

 এটাকে আমরা বলছি ইনসুলিন রেজিস্টেন্স। ইনসুলিন যে শুধু রক্তে থাকা গ্লুকোজ শরীরের ভেতর প্রবেশ করায় তাই নয় এছাড়া আরো কিছু কাজও করে যেমন চর্বিকে ভাঙতে সাহায্য করে যে এনজাইম সেটাকে বাধা দান করেছে, 

যার কারণ ইনসুলিন এর উপস্থিতিতে চর্বি ভাঙতে বা গলতে পারে না। তাহলে কি হচ্ছে, আমরা শর্করা খাচ্ছি, রক্তে গ্লুকোজ আসছে, অগ্নাশয় ইনসুলিন নিঃসরণ করছে, ইনসুলিন কাজ করতে পারছে না, তখন অগ্নাশয় আরো বেশি ইনসুলিন নি:সরন করছে, এই ইনসুলিন চর্বি ভাঙতে বাধা দিচ্ছে, তো আরো বেশি চর্বি জমে যাচ্ছে, যার কারণে ইনসুলিন আরো কাজ করতে পারছে না, 

তো অগ্নাশয় আরো বেশি ইনসুলিন পাঠাচ্ছে, ইনসুলিন বেশি থাকায় চর্বি আরো বেশি জমছে, এভাবে ইনসুলিন বেশি থাকাতে আর চর্বি গলতে পারছে না, আর ঐদিকে রক্তে থাকা গ্লুকোজ কোষের ভেতর ঢুকতে পারছে না,

 সেও মেসেজ পাঠাচ্ছে আরো ইন্সুলিন চাই।  কিন্তু ইনসুলিন তো বেশি এমনিতেই আছে! এমনকি খালিপেটেও রক্তে গ্লুকোজ বেশি থাকছে এবং ইনসুলিনও বেশি থাকছে, এমনকি আপনি না খেয়ে থাকলেও ওজন কমছে না। 

কারণ চর্বি ভাঙতে পারছে না, এমনকি আপনি খালি পেটে হাঁটলেও ওজন কমছে না, কারণ তখনও রক্তে গ্লুকোজ এবং ইনসুলিন দুটোই বেশি আছে। তো আপনার শরীরে চর্বি বেড়েই চলেছে। অতিরিক্ত চর্বি ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স করছে, আপনার হচ্ছে ডায়াবেটিস, চর্বি রক্তনালীতে জমছে, আপনার প্রেশার বাড়ছে, রক্তে গ্লুকোজ বেশি থাকায় TG বাড়ছে। 

একটা TRIGLYCERIDE তৈরি হতে ৩টা গ্লুকোজ প্রয়োজন হয়। লিভারে চর্বি জমে হচ্ছে ফ্যাটি লিভার। লিভার তার স্বাভাবিক কাজ করতে ব্যর্থ হচ্ছে এবং আরো বেশি গ্লুকোজ তৈরি করে রক্তে পাঠাচ্ছে,

 পরিস্থিতি আরো খারাপ হচ্ছে, চর্বি যখন হার্টে জমা হচ্ছে তখন অক্সিজেন যেতে পারছে না হার্টে এবং ISHEMIC হার্ট ডিজিজ হচ্ছে, যখন হার্টের কোনো ধমনীতে জমছে তখন ব্লক করে দিচ্ছে। রক্তনালীতে জমে থাকা চর্বি আবার ছুটে গিয়ে কোথাও আটকে গিয়ে সেখানকার রক্ত চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করে দিচ্ছে, আর আপনারা সবাই জানেন রক্ত ছাড়া কোনো কোষই জীবিত থাকতে পারে না।

 ঘটনাটি যদি হার্টে ঘটে তবে মারাত্মক IG হয় অর্থাৎ হার্টের কিছু মাংসপেশীর চিরতরে মৃত্যু ঘটে, এটা যদি বড় অংশ হয় সেক্ষেত্রে রোগির প্রাণও চলে যায়, ঘটনা যদি মস্তিস্কে ঘটে তবে হচ্ছে ব্রেইন স্ট্রোক। তো আসলে রোগ একটাই সেটা হলো চর্বি, আর ইনসুলিন এই চর্বি জমাতে সাহায্য করছে আর চিনি এই ইনসুলিনকে ডেকে নিয়ে আসছে। আমরা সবাই আসলে মিষ্টিতে মরে যাচ্ছি, মিষ্টিতে ডুবে মরছি।

তাই শর্করা গ্রহন করতে হবে আমাদের শারীরিক একটিভিটির সাথে সামঞ্জস্য রেখে। যিনি সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করেন, মাঠে ঘাটে কাজ করেন, সারাদিন রিকশা চালান তিনি অতিরিক্ত শর্করা গ্রহন করলেও তার অতিরিক্ত শারীরিক একটিভিটির কারনে গ্লুকোজ বার্ন হয়ে যায়। এখন একজন সুস্থ মানুষ সারাদিনে কি পরিমান শারীরিক পরিশ্রম করে থাকেন তার উপরে আপনার শর্করা গ্রহন নির্ভর করে। (ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ সহ অন্যান্য রুগীদের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয়) 

এই ধরনের অতিরিক্ত কায়িক পরিশ্রম করেন দেশের ২০-৩০ শতাংশ মানুষ। বাকি ৬০-৭০% আমাদের যেটা করতে হবে শর্করা খাবার কম খেতে হবে। কারণ আপনি যে শর্করা খাবারই খান তা চিনি হিসাবে রক্তে আসে।

আর রক্তে চিনি আসলে ইনসুলিনও আসে আর অতিরিক্ত ইনসুলিনের

উপস্থিতিতে চর্বি গলতে পারে না।

আপনার শরীর, তার যত্ন নিবেনও আপনি। সুতরাং সিদ্ধান্তও আপনার।

জানার কোন শেষ নাই। সুস্থভাবে বাচতে হলে আমাদের বেচে থাকার সঠিক নিয়মাবলী অবশ্যই জানতে হবে। 



ডাঃ জাহাঙ্গীর কবির

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ