আপনার ফোন আপনাকে বোকা বানাচ্ছে,কিন্তু কিভাবে?

লকডাউন শেষে একদিন বাইরে হাঁটতে বের হলেন। বেশ ফুরফুরে মেজাজ। হঠাৎ দেখা হয়ে গেলো এক বন্ধুর সাথে। এ যে সোনায় সোহাগা । দুই বন্ধুর আনন্দ কে দেখে?! 

 বন্ধুকে সুখ দুঃখের কথা বলছেন,সেও খুব মনযোগ দিয়ে শুনছে। তবে কিছুক্ষন যেতে না যেতেই সে কথা শোনার ফাঁকে ফাঁকে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে চোখ বুলিয়ে আবার পকেটে রেখে দিচ্ছে। আপনার কথা শুনতে সে আগ্রহী নয়, এই ভেবে আগেভাগেই সেন্টি খাওয়ার দরকার নেই। এমনও তো হতে পারে বেচারা কোন ডিসর্ডারে ভুগছে।। শুধু আপনার বন্ধু কেন , সম্ভবত আপনিও একই সমস্যায় আক্রান্ত  না,ভয় পাবার কোন ব্যপার নেই। 

 ফোনে কল বা মেসেজ না আসা সত্ত্বেও যদি আপনার মনে হয় যে ফোনটি ভাইব্রেট হচ্ছে তবেই এই সমস্যাটিকে ফ্যান্টাম ভাইব্রেশন সিন্ড্রোম (Phantom Vibration Syndrome) বলে। এটি একটি প্রযুক্তিগত বিভ্রান্তি। 


স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষই এই সমস্যার ভুক্তভোগী। 

 প্রযুক্তির এর যুগে স্মার্টফোন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিনের প্রায় পুরোটা সময়টাতেই আমরা কোন না কোনভাবে স্মার্টফোনের উপর নির্ভর করে আছি। বাসায় বা বাইরে যেখানেই যাই না কেনো, স্মার্টফোন সঙ্গে থাকা চাই-ই চাই। 

আবার কাজের ফাঁকে ফাঁকে বা অবসরে ফোনই হয় আমাদের সঙ্গী। ফোন ব্যবহার করতে করতে এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে একে আমাদের অচেতন মন (subconscious mind) শরীরের অংশ ভেবে বসে। 

যেমন, আপনি যদি চশমিশ (দীর্ঘদিন চশমা ব্যবহার করে থাকেন) হন, তবে তা অনেকটা আপনার শরীরের অংশ হয়ে দাঁড়ায়। মাঝে মাঝে তো এমন পরিস্থিতি হয় যে মুখে পানির ঝাপটা দেওয়ার পর মাথায় আসে, আয় হায়! চশমা খোলা হয়নি! 

দীর্ঘদিন ফোন ব্যবহার করার ফলে ব্যপারটা অনেকটা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে।  ২০১২ সালে আটলান্টার জর্জিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনলোজিতে প্রযুক্তির প্রভাব নিয়ে গবেষণারত ড. রবার্ট রোসেনবার্গের (Doctor Rosenberger) মতে, ভাইব্রেটেড ফোনকে শনাক্ত করাটা আমাদের এমন একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে

 যে, একটি ফোন বা মেসেজ মিস করার ভয়ে আমাদের সমস্ত শরীর অচেনভাবে সেই ভাইব্রেশনটি টের পাওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকি। তাই ভাইব্রেশনের মতো কোন শারীরিক অনুভূতি,যেমন, কাপড়ের নড়াচড়া এমনকি মাঝেমাঝে পেশির সংকোচনকেই ফোনের ভাইব্রেশন ভেবে ভুল করি।  

এখন নিশ্চই ভাবতে পারেন যে, ফোনের ভাইব্রেশনটাই বন্ধ করে দেই। না থাকবে বাঁশ, না বাজবে বাঁশি। কিন্তু না, এক্ষেত্রেও একটা সিন্ড্রোম হতে পারে যার নাম “রিংজাইটি” ( ringxiety)। এই সিন্ড্রোমটা আরো বেশি কমন। পড়তে বসলেন বা কোন কোলাহলপূর্ণ স্থানে গেলেন, হঠাৎ করে মনে হলো আপনার ফোনটি বেজে উঠেছে। হাতে নিয়ে দেখলেন আসলে কেউ ফোন বা মেসেজ দেয়নি।

 কিন্তু আপনি স্পষ্ট শুনতে পেয়েছেন আপনার ফোনের রিংটোন। অতিরিক্ত ফোন ব্যবহার করা এর অন্যতম কারণ। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, আমেরিকানরা প্রতি ঘন্টায় গড়ে ১৫ মিনিট স্মার্টফোন ব্যবহার করে। 


রিংজাইটি বা ফ্যান্টম ভাইব্রেশন সিন্ড্রোম খুব ভয়াবহ না হলেও কারো ক্ষেত্রে এটা এতোটাই বেড়ে যায় যে, তারা কোন কাজে ঠিক মতো মনোযোগ দিতে পারে না। স্মার্টফোনের এই যুগে স্মার্টফোন ব্যবহার তো আর বন্ধ করা সম্ভব না, তবে কিছু কিছু নিয়ম অনুসরণ করার মাধ্যমে এই সমস্যাগুলো থেকে রেহাই পাওয়া যায়। যেমন :


‌প্রতি ৯০ মিনিট অন্তর অন্তর ১০মিনিটের বিরতি নিন যা আপনকে প্রযুক্তিগত উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত করবে। 

‌মেডিটেশন করতে পারেন, এতে দুশ্চিন্তা, অস্থিরতা হ্রাস পাবে। কয়েকদিন পর পর ফোনের রিংটন পরিবর্তন করুন। হালকা কিছু ব্যয়াম করতে পারেন, এতে শরীরের জড়তা দূর হবে। 

‌মাঝেমধ্যে কোলাহলপূর্ণ যান্ত্রিক শহর থেকে দূরে, প্রকৃতির কাছাকাছি কোথাও সময় কাটানোর চেষ্টা করুন। 


প্রযুক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করুন, প্রযুক্তি যেন আপনাকে নিয়ন্ত্রণ না করে। 



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ