আসমানী কিতাবের প্রতি বিশ্বাস __Why believe in the heavenly book?

 


ঈমানের মৌলিক শাখা হলো তাওহীদ, রিসালাত এবং আখিরাত। আর এই বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যম হলো আসমানী কিতাব। কেননা, কিতাবের মাধ্যমে আমরা উক্ত বিষয় সম্পর্কে জানতে পারি। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন -

وَٱلَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِمَآ أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَآ أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ وَبِٱلْءَاخِرَةِ هُمْ يُوقِنُونَ

এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে সেসব বিষয়ের উপর যা কিছু তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং সেসব বিষয়ের উপর যা তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। আর আখেরাতকে যারা নিশ্চিত বলে বিশ্বাস করে। 

সূরাঃ আল-বাকারা [2:4]


আরো পড়ুন...পাপ থেকে বাঁচতে সেরা উপায় ইব্রাহিম ইবনে আদহাম 

يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ ءَامِنُوا۟ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَٱلْكِتَٰبِ ٱلَّذِى نَزَّلَ عَلَىٰ رَسُولِهِۦ وَٱلْكِتَٰبِ ٱلَّذِىٓ أَنزَلَ مِن قَبْلُ وَمَن يَكْفُرْ بِٱللَّهِ وَمَلَٰٓئِكَتِهِۦ وَكُتُبِهِۦ وَرُسُلِهِۦ وَٱلْيَوْمِ ٱلْءَاخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَٰلًۢا بَعِيدًا

হে ঈমানদারগণ, আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন কর এবং বিশ্বাস স্থাপন কর তাঁর রসূলও তাঁর কিতাবের উপর, যা তিনি নাযিল করেছেন স্বীয় রসূলের উপর এবং সেসমস্ত কিতাবের উপর, যেগুলো নাযিল করা হয়েছিল ইতিপূর্বে। যে আল্লাহর উপর, তাঁর ফেরেশতাদের উপর, তাঁর কিতাব সমূহের উপর এবং রসূলগণের উপর ও কিয়ামতদিনের উপর বিশ্বাস করবে না, সে পথভ্রষ্ট হয়ে বহু দূরে গিয়ে পড়বে।

   সুরাঃনিসা [৪:১৩৬]

সূরা বাকারা 4 নং আয়াতে আল্লাহ তা'আলা মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও তার পূর্ববর্তী নবী রাসুলগণের উপর অবতীর্ণ কিতাবের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য বলে আখ্যা দিয়েছেন। সেই সাথে আখেরাতের ওপর বিশ্বাস করা জরুরি বলে উল্লেখ করেছেন। 

পড়ে সূরা নিসার 136 নং আয়াতে আল্লাহ, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও আসমানী কিতাব সমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন এবং এগুলো অবিশ্বাস কারীদের সম্পর্কে পথভ্রষ্ট হওয়ার কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।

সুরা বাকারার 4 নং আয়াতে খতমে নবুওয়াত এর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ নবী এবং তার উপর অবতীর্ণ কিতাবেই হলো শেষ কিতাব। কেননা, কোরআনের পরে যদি আর কোন কিতাব নাযিল করা হতো তাহলে পূর্ববর্তী কিতাবের নেয়ায় পরবর্তী কিতাবের প্রতি ও বিশ্বাস স্থাপন করার কথা বলা হতো।

কোরআনের পরে যদি অন্য কোন ওহী নাযিল হওয়ার সম্ভাবনা থাকতো, তাহলে তাওরাত-ইঞ্জিলে যেমনিভাবে কুরআন ও শেষ নবী মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পর্কে সুস্পষ্ট বিবৃতি দেওয়া আছে, ঠিক তেমনি কোরআনেও পরবর্তী ওহী প্রতি ইঙ্গিত থাকতো। 

যেহেতু কোনো ইঙ্গিত নেই, সেহেতু সুস্পষ্ট যে মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ই শেষ নবী। তাছাড়া পবিত্র কোরআনের প্রায় 50 টি স্থানে ঈমানের সাথে পূর্ববর্তী কিতাব ও নবী-রসূলগণের কথা উল্লেখ থাকলেও পরবর্তী কোন নবী রাসুল কিংবা কিতাবের বিন্দুমাত্র ইঙ্গিত নেই। (মাআরেফুল কুরআন)



আসমানী কিতাবের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন :

মহান আল্লাহতালা যুগে যুগে নবী রাসুলগণের উপর ওহীর মাধ্যমে যে কিতাব সমূহ অবতীর্ণ করেছেন তাকে আসমানী কিতাব বলে।

ঈমানের ৭টি রোকনের মাধ্যমে আসমানী কিতাবের প্রতি ঈমান আনা অন্যতম একটি  রোকন। আসমানী কিতাবের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা ফরজ এবং অস্বীকার করা কুফরি। যেমন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন -


يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ ءَامِنُوا۟ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَٱلْكِتَٰبِ ٱلَّذِى نَزَّلَ عَلَىٰ رَسُولِهِۦ وَٱلْكِتَٰبِ ٱلَّذِىٓ أَنزَلَ مِن قَبْلُ وَمَن يَكْفُرْ بِٱللَّهِ وَمَلَٰٓئِكَتِهِۦ وَكُتُبِهِۦ وَرُسُلِهِۦ وَٱلْيَوْمِ ٱلْءَاخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَٰلًۢا بَعِيدًا

আসমানী কিতাবের সংখ্যা:

সর্বমোট আসমানী কিতাব 104 খানা। তন্মধ্যে প্রধান কিতাব চার খানা। তথা:–

১. তাওরাত: এটি নাজিল হয়েছে ইবরানী ভাষায় হযরত মুসা (আঃ) এর উপর।

২. যাবুর: এটি নাজিল হয়েছে ইউনানি ভাষায় হযরত দাউদ (আঃ) এর উপর।

৩. ইঞ্জিল: এটি নাজিল হয়েছে সুরিয়ানী ভাষায় হযরত ইসা (আঃ) এর উপর ।

৪. কোরআন: এটি নাজিল হয়েছে আরবি ভাষায় হযরত মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর।


এছাড়া 104 খানা সহিফা রয়েছে। তন্মধ্যে–

১. 50 কানা শিস (আঃ) এর উপর

২. 30 খানা দাউদ (আঃ) এর উপর,

৩. 10 খানা ইব্রাহিম (আঃ) এর উপর,

৪. এবং মূসা (আঃ) এর উপর তাওরাত কিতাব নাযিল হওয়ার পূর্বে দশখানা সহিফা নাজিল হয়েছে। (সহিহ ইবনে হিব্বান পৃ: ২১৪)

এছাড়া কোনো কোনো কিতাবে মুসা (আঃ) এর পরিবর্তে আদম (আঃ) এর উপর 10 খানা কথা উল্লেখ আছে ।

সর্বশেষ আসমানী কিতাব:

সর্বশেষ আসমানী কিতাব আল কুরআন নাযিল হয়েছে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর। আল-কুরআন নাযিল হওয়ার ফলে পূর্ববর্তী অন্যান্য সকল আসমানী কিতাবের হুকুম রহিত হয়ে গিয়েছে। এখন পূর্ববর্তী কোনো আসমানী কিতাবের  হুকুমের অনুসরণ করা যাবে না । বরং কেবল মাত্র আল-কোরআনে খেয়েই মানতে হবে। তবে সকল আসমানী কিতাবের উপর বিশ্বাস রাখা জরুরী।

যেমন হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত আছে–

হযরত জাবের (রাঃ) মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন একদা ওমর (রাঃ) রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট হাসলেন এবং বললেনঃ হে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) , আমরা ইহুদিদের থেকে পূর্ববর্তী অনেক ঘটনা শুনি। তার থেকে কিছু ঘটনাকি লিখে রাখবো? তখন তিনি বলেন, ইহুদী-নাছারা ন্যায় তোমরাও  ধ্বংস হতে চাও? আমি তোমাদের নিকট সুস্পষ্ট বিষয় নিয়ে এসেছি।

অন্য হাদীসে এসেছে যদি মুসা (আঃ) ও বেঁচে থাকতেন তবে তাকেও আমার অনুসরণ করতে হতো। (আহমদ)

সুতরাং, আল-কোরআন এই হল সর্বশেষ নাযিলকৃত আসমানী কিতাব এবং সমস্ত জ্ঞান-বিজ্ঞানের ভান্ডার। এমন কোন বিষয় নেই, যা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এতে আলোচনা করেননি। এতে আলোচিত হয়েছে সামাজিক, অর্থনৈতিক, আধ্যাত্বিক, রাষ্ট্রীয়  বিষয়ে সুস্পষ্ট বর্ণনা। যেমন আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:–

কিতাবে কোন কিছুই আমি বাদ দেই নি। (সূরা আনআম –৩৮) অতএব আল-কুরআন এই হলো মানব জীবনের গ্রহণযোগ্য একমাত্র জীবন বিধান। ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন ধন্যবাদ। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ