আল কুরআন সংকলনের ইতিহাস ___ History of the compilation of Al-Quran


 মহাগ্রন্থ আল-কুরআন একবারে নাজিল হয়নি, বরং প্রয়োজনানুসারে ধীরে ধীরে দীর্ঘ 23 বছর যাবৎ নাযিল হয়েছে। যার সূচনা হয়েছিল মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর 40 বছর বয়স কালে সূরা আলাকের এর প্রথম 5 আয়াত এর মাধ্যমে। তখন তিনি মক্কার অদূরে হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানমগ্ন ছিলেন। পরবর্তীতে পবিত্র কুরআন সংকলন করে গ্রন্থাকার সাজানো হয়েছে জানা প্রয়োজন যে কুরআন সংকলনের ইতিহাস কয়েকটি যুগে বিভক্ত।

মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর যুগ

মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর জীবন দশায় কুরআন সংরক্ষণ ও সংকলনের জন্য মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজে মুখস্থ করা ছাড়াও আরো দুইটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। যথা

১) একদল সাহাবী কোরআন মুখস্থ করে নিতেন। তাদেরকে হাফেজ বলা হতো।

২) আরেকদল সাহাবী নাযিলকৃত কালামে পাককে কাঠ, বাকল, চামড়া, হাড়, পাথর ইত্যাদিতে লিখে নিতেন। তাদেরকে কাতেবে ওহী বলা হতো। মহানবী (সাল্লাল্লাঊহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর দরবারে মোট 42 জন কাতেবে ওহী ছিলেন।



হযরত আবু বকর (রাঃ) এর যুগ

মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর যুগে কোরআনকে গ্রন্থ আকারে সাজানো হয়নি। তবে কোন সূরার অবস্থান কোথায় আবার কোন আয়াত আগে কোন আয়াত পড়ে তা নির্ধারিত হয়। 

হযরত আবু বকর (রাঃ) এর আমলে ভন্ড নবী মুসায়লামাতুল কাজ্জাবের বিরুদ্ধে ইয়ামামার যুদ্ধে কোরআনের হাফেজগণের একটি বৃহত্তর জামাত  শাহাদাত বরণ করেন। 

তখন হযরত ওমর (রাঃ)  এর পরামর্শে হযরত আবু বকর  (রাঃ) এর প্রধান কাতেব যায়েদ বিন সাবেত (রাঃ) এর নেতৃত্বে একটি কোরআন সংকলন বোর্ড গঠন করেন।

তারা অনেক চেষ্টা করে হাফেজদের স্মৃতি হতে এবং কাঠ, হাড়, পাতা, চামড়া, ইত্যাদিতে লিখিত কুরআন একত্রিত করে গ্রন্থাকার সংকলন করেন। হযরত আবু বকর (রাঃ) এর ইন্তেকালের পর উক্ত গ্রন্থ খানা ওমর (রাঃ) এর কাছে ছিল। 

উমর (রাঃ) নিজের শাহাদাতের পূর্বে উহা স্বীয় কন্যা ও উম্মুল মুমিনীন হাফসা (রাঃ) এর কাছে রেখে যান । হযরত উসমান (রাঃ) তার কাছ থেকে নিয়ে কোরআন কপি তৈরি করেন।



হযরত উসমান (রাঃ) এর যুগ :

হযরত উমর  (রাঃ) এর আমলে ইসলাম বিজয়ী বেশে পৃথিবীর দূর-দূরান্তের ছড়িয়ে যায়। হযরত উসমান   (রাঃ) এর আমলে হযরত হুযাইফা ( রাঃ) ইয়ামেন ,আরমিনিয়া, আজারবাইজান সীমান্তে জিহাদে মশগুল থাকা অবস্থায় দেখলেন সেখানে মানুষের মাঝে কোরআনের পটন রীতি নিয়ে মতবিরোধ চলছে।

এমনকি একদল অপর দলকে কাফের পর্যন্ত বলেছে। তিনি জিহাদ থেকে ফিরে হযরত উসমান (রাঃ) কে এক রীতিতে কুরআন পড়ার রেওয়াজ জারি করার কথা বললেন। উসমান  (রাঃ) জায়েদ বিন সাবেত (রাঃ) এর সাথে আরও তিনজন কুরাইশ ক্বারিকেদিয়ে পুনরায় কুরআন সংকলন করলেন এবং সাতটি কপি করে বিভিন্ন প্রদেশে এ পাঠিয়ে দিলেন।আর কোরাইশী লাহজা ছাড়া বাকি কপিগুলো পুড়িয়ে দিলেন।

আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে উসমান (রাঃ) এর সেই রীতির কোরআনে বিদ্যমান রয়েছে। উসমান (রাঃ) এ কাজে অগ্রণী ভূমিকা রেখে জাতিকে কোরআন পাঠে বিভক্ত হওয়া থেকে রক্ষা করেন বিধায় তাকে কোরআন একত্র কারী বলা হয় ।

মুদ্রণ যন্ত্র আবিষ্কার হওয়ার পূর্ব  পর্যন্ত মাছহাফে উসমানিয়া  অনুকরণে সুন্দর হস্তলিপি দ্বারা কোরআন লেখা কতো। ১১৩ হিজরীতে প্রথম জার্মানির হামবুর্গ কোরআন মুদ্রণ হয়, যার এক কপি এখনো মিশরের সংরক্ষিত আছে । 

কোরআন মাজিদে হরকত ও নুকতা সংযোজন করেছেন হযরত আবুল আস ওয়াদ দোআইলি এবং পরবর্তীতে খলীল আহমদ ফরাহিদী রহ. । সংযোজন করেন তো আজ এ পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ