HSC অর্থনীতি ১ম পত্র - প্রথম অধ্যায় মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যা এবং এর সমাধান এর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য - ২

[ Economics Paper I ]


ক্রমহ্রাসমান সুযোগ বায় (Decreasing Opportunity Cost) : কোন দ্রব্যের উৎপাদন সমপরিমাণ বৃদ্ধি করতে গিয়ে যদি এর নিকটতম বিকল্প দ্রব্যের উৎপাদন ছাড়ের পরিমাণ ক্রমেই কমতে থাকে তবে তাকে ক্রমহ্রাসমান সুযোগ ব্যয় বলে।


স্থির সুযোগ ব্যয় (Constant Opportunity Cost ) : কোন দ্রব্যের উৎপাদন সমপরিমাণ বৃদ্ধি করতে গিয়ে যদি এর নিকটতম বিকল্প দ্রব্যের উৎপাদন ছাড়ের পরিমাণ স্থির থাকে তবে তাকে স্থির সুযোগ ব্যয় বলে। 

অর্থনৈতিক ব্যবস্থা (Different Economic System): মানুষ যে সকল প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও বিধি বিধান এর মধ্যে অর্থনৈতিক কার্যাবলী পরিচালনা করে তাকে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বলে। বর্তমানে পৃথিবীতে ৪ ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রচলিত আছে। যেমন :


ক) পুঁজিবাদ বা ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা


খ) সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা


গ) মিশ্র অর্থব্যবস্থা ও


ঘ) ইসলামী অর্থব্যবস্থা।


পুঁজিবাদী বা ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা (Capitalistic Economic System): যে অর্থব্যবস্থায় উৎপাদনের উপকরণগুলোর ব্যক্তিমালিকানা বিদ্যমান এবং সরকারী হস্তক্ষেপ ব্যতিরেখে অবাধ বাজার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দাম নির্ধারিত হয় তাকে ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা বলে। যেমনঃ যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, জার্মান, ইতালি ইত্যাদি দেশে পুঁজিবাদ বিদ্যমান।


সমাজতান্ত্রিক / নির্দেশনামূলক অর্থব্যবস্থা (Socialistic Economic System) : যে অর্থব্যবস্থায় সম্পদ ও উৎপাদনের উপাদানসমুহের উপর ব্যক্তিমালিকানার রাষ্ট্রীয় মালিকানা বিদ্যমান থাকে তাকে সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা বলে। যেমনঃ রাশিয়া, চীন, কিউবা ইত্যাদি দেশে সমাজতন্ত্র বিদ্যমান।


মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থা (Mixed Economic System): যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় এক দিকে ব্যক্তি স্বাধীনতা বা বেসরকারী উদ্যোগ এবং অপরদিকে সরকারী উদ্যোগ পাশাপাশি অবস্থান করে তাকে মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বলে। মূলত মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হচ্ছে পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রের সংমিশ্রণ। যেমন- বাংলাদেশ, ভারত পাকিস্থানসহ তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশে মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রচলিত আছে ।


ইসলামী অর্থব্যবস্থা (Islamic Economic System): যে সকল দেশের অর্থনীতি কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে পরিচালিত এবং ইসলামী শরিয়াহ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত তাকে ইসলামী অর্থব্যবস্থা বলে। যেমনঃ সৌদি আরব ইরান, কুয়েত ইত্যাদি দেশে ইসলামী অর্থব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে। ইসলামী অর্থব্যবস্থায় উৎপাদন, ভোগ ও বন্টন কুরআন এবং সুন্নাহর ভিত্তিতে পরিচালিত হয়।


বাজার অর্থনীতি (Market Economy) : অবাধ বাজার ব্যবস্থার উপর প্রতিষ্ঠিত অর্থনীতিই বাজার অর্থনীতি । বাজার অর্থনীতি বলতে এমন এক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে বুঝায় যেখানে বাজার শক্তিসমূহের ঘাত প্রতিঘাতের দ্বারা চাহিদা ও যোগানের সমতা দ্বারা স্বয়ংক্রীয়ভাবে দ্রব্যসামগ্রীর দাম নির্ধারিত হয়।


পুঁজিবাদী/ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Capitalistic Economy) : পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য সমূহ হচ্ছে : 

১। সম্পদের মালিকানা,

 ২। উদ্যোগের স্বাধীনতা,

 ৩। ভোক্তার সার্বভৌমত্ব,

 ৪ স্বয়ংক্রিয় দাম ব্যবস্থা।


সমাজতান্ত্রিক/নির্দেশভিত্তিক অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Socialistic Economy) : সমাজতান্ত্রিক/নির্দেশভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য সমূহ হচ্ছে : 

১। সম্পদের রাষ্ট্রীয় মালিকানা, 

২। শ্রেণী শোষণ অনুপস্থিত, 

৩। সরকারী মালিকানাধীন ও যৌথ উৎপাদন পদ্ধতি 

৪। কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা ও দাম সুনির্দিষ্ট।


 মিশ্র অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Mixed Economy) : মিশ্র অর্থ ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ হলো


১। সরকারী ও বেসরকারী খাতের সহ-অবস্থান,

 ২। সম্পদের ব্যক্তি মালিকানায় সরকারি নিয়ন্ত্রণ, 

৩। বাজরি প্রক্রিয়া কার্যকর তবে সরকারি নিয়ন্ত্রণ স্বীকৃত, 

৪। সম্পদের বন্টনে অসমতা । 

ইসলামী অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ (Characteristics of Islamic Economy) : ইসলামী অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ হচ্ছে:

 ১। ইসলামী শরিয়ার ভিত্তিতে পরিচালিত

 ২। সম্পদের ওপর নিরঙ্কুশ মালিকানা একমাত্র আল্লাহর

৩। সম্পদ উপার্জন, উৎপাদন ও ভোগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে হারাম-হালালের বিধান

৪। সুদ নিষিদ্ধ 

৫। জাকাত, ফিতরা, জিজিয়া, সদকা, ওয়াক্ফ প্রভৃতির মাধ্যমে ধনী-দরিদ্রের আয় বৈষম্য হ্রাস।


বজার অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য (Charecterstic of Market Economy) : বাজার অর্থনীতির বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ :

 ১। ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদ, 

২। সম্পদের ব্যক্তি মালিকানা, 

৩। উদ্যোগের স্বাধীনতা,

 ৪। স্বয়ংক্রিয় দাম ব্যবস্থা।


ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদ (Laissez-fair) : কোন প্রকার সরকারী হস্তক্ষেপ ছাড়াই স্বাধীনভাবে কেবল মাত্র চাহিদা ও যোগানের সমতার ভিত্তিতে দ্রব্য সামগ্রীর উৎপাদন, ভোগ, বিনিময়, বণ্টন ও দাম নির্ধারিত হওয়াকে

ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদ বলে।


অর্থনীতির সংজ্ঞা (Definition of Economics) : অর্থনীতির ইংরেজি 'Economics' শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ 'OKONOMIA' থেকে। 'OKONOMIA' শব্দের দুটি অংশ যার 'OIKOS শব্দের অর্থ 'গৃহ' এবং 'NEMEIN' শব্দের অর্থ 'ব্যবস্থাপনা'। তাই গ্রীক দার্শনিক এ্যারিস্টেটল অর্থনীতিকে গার্হস্থ্য বিষয়ক সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিজ্ঞান বলে অভিহিত করেছেন। অর্থনীতিবিদ এল রবিন্স এর মতে, “অর্থনীতি এমন একটি বিজ্ঞান যা মানুষের অসীম অভাব এবং বিকল্প ব্যবহারযোগ্য সীমিত সম্পদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে মানুষের মানবীয় গুণাবলীর আচরণ বিশ্লেষণ করে"।


ব্যষ্টিক অর্থনীতি (Microeconomics) : ইংরেজি Micro Economics এর Micro শব্দটি গ্রীক শব্দ Mikros থেকে এসেছে, যার অর্থ হল ক্ষুদ্র। কাজেই অর্থশাস্ত্রের যে শাখায় একক খাত যেমন ব্যক্তিগত আয়, ব্যক্তিগত ভোগ, ব্যক্তিগত চাহিদা, একক উৎপাদন ইত্যাদি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় আলোচিত হয় তাকে ব্যষ্টিক অর্থনীতি বলে।


সামষ্টিক অর্থনীতি (Macroeconomics) : সামষ্টিক অর্থনীতি এর ইংরেজি Macro Economics এর Macro শব্দটি গ্রীক Makros শব্দ থেকে এসেছে, যার অর্থ বিশাল। তাই বলা যায়, অর্থনীতির যে শাখায় সমগ্র অর্থনৈতিক কার্যক্রম যেমন- জাতীয় আয়, সামগ্রিক ভোগ, সামগ্রিক উৎপাদন, মোট বিনিয়োগ, ইত্যাদি বৃহৎ বিষয় আলোচিত হয় তাকে সামষ্টিক অর্থনীতি বলে।



দৃষ্টি আকর্ষণ: আপনার যদি ভালো লাগে লেখাটি অন্যদের সাথে শেয়ার করুন।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ