৮ হাজার বছর আগের কঙ্কাল থেকে কিশোরের প্রতিকৃতি তৈরি | alhadimedia 360


আজ থেকে প্রায় ৮ হাজার বছর আগে বর্তমান নরওয়ের পশ্চিম উপকূলে স্বাভাবিকের তুলনায় বড় মাথার এক কিশোর গুহার ভেতর একাকী মৃত্যুবরণ করেছিল। বিজ্ঞানীরা এখন এই প্রস্থর যুগের কিশোরের কঙ্কাল থেকে তার পুরো শরীরের প্রতিকৃতি (ছবি) তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।

বিজ্ঞানীরা ১৫ বছর বয়সী এই ছেলেটির নাম দিয়েছেন ভিস্টেগুটেন, নরওয়ের ভাষায় যার অর্থ হচ্ছে 'ভিস্তের ছেলে'। ছেলেটির কঙ্কাল যেখানে পাওয়া গেছে, সে জায়গার নাম ভিস্তে।

নরওয়ের হামলে প্রেস্টগার্ড জাদুঘরে ভিস্টেনগুটের কঙ্কাল এবং কৃত্রিমভাবে নির্মিত তার পুরো ছবি প্রদর্শন করা হচ্ছে।

পুরো শরীরের ছবি তৈরি করতে কয়েকমাস সময় লাগলেও ১৯০৭ সাল থেকে ছেলেটির অস্তিত্ব সম্পর্কে বিজ্ঞানী মহলে ধারণা ছিল। সেই সময় নরওয়ের র‌্যান্ডাবার্গের প্রস্থর যুগের একটি গুহায় প্রত্নতত্ববিদরা এই কিশোরের কঙ্কাল খুঁজে পেয়েছিলেন।

কেমন ছিল তার শারীরিক অবয়ব?

লম্বায় তার উচ্চতা ছিল ৪ ফুট ১ ইঞ্চি বা ১.২৫ মিটার। বয়সের তুলনায় এমনকি তখনকার মানুষের স্বাভাবিক উচ্চতার তুলনায় সে খাট ছিল। তবে তার একটি রোগও ছিল যার নাম 'স্কেপোসেফালি'। এই রোগের কারণে তার মাথা সামনের দিকে না বেড়ে পেছনের দিকে বাড়ে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, ছেলেটি হয়তো একাকী মারা গেছে। এ জন্য তাকে 'নিঃসঙ্গ বালক' নামেও ডাকতেন বিজ্ঞানীরা। গুহার ভেতর থেকে তার কঙ্কাল যে অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে সে দেওয়ালে হেলানরত অবস্থাতেই মারা গেছে।

সুইডেনভিত্তিক ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ অস্কার নীলসন বলেন, 'হয় মৃত্যুর পর তাকে কেউ এভাবে হেলান দিয়ে রেখে গেছে অথবা সে এভাবেই মারা গেছে। এ থেকে আন্দাজ করা যায় সে হয়তো নিঃসঙ্গভাব মারা গেছে, হয়তো পরিবার বা বন্ধু-বান্ধব কারও অপেক্ষায় ছিল। তবে তার মুত্যু সম্পর্কে আমরা এর বেশি আর কিছু জানতে পারিনি।'


স্কেপোসেফালির কারণে মাথার গঠন পরিবর্তন হলেও শারীরীক ও মানসিক বৃদ্ধিতে এই রোগের কোনো প্রভাব নেই। নরওয়ের ইউনিভার্সিটি অব স্ট্যাভেঙ্গারের মিউজিয়াম অব আর্কিওলজির অস্থিবিদ, যিনি নিজেও এই কিশোরের অস্থি পরীক্ষা করেছেন, শন ডেক্সটার ডেনহাম বলেন, 'মাথা একটু বড় এবং উচ্চতা একটু কম হলেও ছেলেটি সুস্বাস্থের অধিকারী ছিল।'

গুহাটির ভেতরে যে পরিমাণ খাবারের অবশিষ্টাংশ পাওয়া গেছে, তাতে মনে হচ্ছে সেখানে খাবারের কোনো অভাব ছিল না। বরং বাসিন্দারা গুহাটিতে থাকতেন, কাজ করতেন, ঘুমাতেন, রান্না করতে এবং খেতেন।

'ছবিতে ছেলেটির হাতে মাছ ধরার যে বরশি দেখা যাচ্ছে, হুবহু একইরকম না হলেও এমন একটি বরশি গুহার ভেতরেও পাওয়া গেছে।

শরীরের পূর্ণ ছবি তৈরির জন্য বিজ্ঞানীরা প্রথমে ছেলেটির কঙ্কালকে কম্পিউটেড টোমোগ্রাফি বা সিটি স্ক্যান করেন। এরপর সেখান থেকেব পাওয়া অবয়বেকর একটি প্লাস্টিকের রেপ্লিকা তৈরি করেন নেলসন। কিন্তু তিনি ছেলেটির মুখের টিস্যুর ঘনত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারছিলেন না। এ জন্য তিনি বর্তমানে উত্তর ইউরোপের ১৫ বছর বয়সী একজন ছেলের টিস্যু কেমন হতে পারে, সেখান থেকে ধারণা নেন। নেলসন বলেন, '৮০০০ বছর আগে জীবিত থাকা একটি ছেলের সঙ্গে এটি কতটা মিলল, সেটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কিন্তু আমাদের অনুমান অনুসারে সবচেয়ে কাছাকাছি যেতে পেরেছি।'

আর কী বোঝা গেল?

কঙ্কাল পরীক্ষার সময় নীলসন দেখেন, ছেলেটির কপাল তুলনামূলক ছোট এবং গোল। সম্ভবত স্কেপোসেফালির কারণে এমনটা হয়েছে। এ ছাড়া তার নাকের উপরের অংশ সংকীর্ণ থাকলেও নিচের দিকটা প্রশস্ত ছিল।

ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে জানা গেছে ছেলেটির শরীর ও চোখ ছিল বাদামি রঙের আর চুল ছিল ঘন কালো, যা সে সময় ওই অঞ্চলের মানুষদের সঙ্গে সামাঞ্জস্যপূর্ণ।

ছেলেটির পূর্ণ অবয়ব তৈরির সময় তার মুখে একটু হাসি দিতে চেয়েছিলেন নীলসন। কিন্তু 'ছেলেটি যে একাকী মারা গেছে' এই চিন্তা তিনি মাথা থেকে সরাতেই পারেননি।

'আমি তাকে কল্পনা করেছি সে হয়তো এখনই সমুদ্রের দিকে যাবে (তাকে যেখানে পাওয়া গেছে, তখন তার খুব কাছেই ছিল সমুদ্র) মাছ ধরতে। নরওয়ের এই অংশটিতে অনেক বাতাস থাকে। তাই আমি তার ছবিতে চুল ও কাপড় বাতাসে নড়ছে এমন একটা দৃশ্য রাখার চেষ্টা করেছি।'


গ্রন্থনা: আহমেদ হিমেল




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ