বাংলা দ্বিতীয় পত্র - দিনলিপি লিখন পাঠ - ৩

 



••  লঞ্চডুবির ঘটনা নিয়ে একটি দিনলিপি লেখ।

 ১৫ এপ্রিল, ২০১৮, রবিবার


ফেরিতে করে নদী পার হওয়ার অভিজ্ঞতা আমার আগে ছিল না। পাটুরিয়া ঘাট থেকে ফেরিতে উঠলাম দুপুরের ঠিক আগে। পদ্মা নদী পার হয়ে ওপারে যেতে অনেকে লঞ্চে গিয়েও উঠেছে। হঠাৎ পশ্চিম আকাশ কালো হয়ে যায়। বাতাস বইতে থাকে জোরালোভাবে। তখন আমরা নদীর মাঝখানে। আমাদের খুব কাছাকাছি একটি লঞ্চ ছিল। লঞ্চ থেকে মানুষের চিৎকার ভেসে আসছিল। এমন কালো মেঘ ও ঝড়ো বাতাসে আমরাও খুব ভয় পেয়েছিলাম। লঞ্চটিতে অতিরিক্ত যাত্রী থাকায় তা ঝড়ো বাতাসে প্রচণ্ডভাবে দুলছিল। মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে লগের ভেতরে ছোটাছুটি করছিল। কালবৈশাখী ঝড়ের তীব্রতায় লগটি কাত হয়ে যায়। ডুবতে শুরু করে লঞ্চটি। কেউ কেউ ঝাঁপ দিয়ে নদীতে সাঁতার কেটে আমাদের ফেরির দিকে আসার চেষ্টা করে। মানুষের আর্তনাদে চারদিক বিপন্ন হয়ে ওঠে। আমার চোখের সামনে লঞ্চটি ডুবে গেল। তাদের উদ্ধারের জন্য আমাদের ফেরি এগিয়ে যায়। অনেকে উঠে আসে, অনেকে ব্যর্থ হয় ঝড়ো বাতাস ও নদীর স্রোতের কাছে। মানুষের এমন কান্না আর হাহাকার আমি জীবনে এর আগে দেখিনি । লঞ্চডুবির এই করুণ অভিজ্ঞতা নিয়ে আমরা ওপারে পৌঁছাই। কষ্ট আরও বেড়ে যায় স্বজনদের হাহাকার দেখে। লঞ্চডুবির এই দুর্ঘটনায় আমার সারাদিন অস্থিরতায় কাটে। ভয়াবহতার কথা স্মরণ করে সারারাত ঘুমুতে পারিনি। রিপন আনসারী


বানিয়াজুড়ি, সাভার।


••  একটি গ্রাম্যমেলা দেখার অনুভূতি ব্যক্ত করে দিনলিপি রচনা কর।

 ১৪ এপ্রিল, ২০১৮



আমার নানাবাড়ি বাঘা এসেছি। আমার উদ্দেশ্য নানাবাড়ি বেড়ানো নয়। আমার উদ্দেশ্য ছিল পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে গ্রাম্যমেলা দেখা। আজ আমার সেই আশা পূরণ হয়েছে। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই পায়ে হেঁটে দুই মামাতো ভাইকে সাথে নিয়ে মেলা দেখতে রওয়ানা দিই। নানাবাড়ির পাশে রাইতা বাজার সংলগ্ন একটি প্রাচীন বটগাছের নিচে এই মেলাটি বসে। মেলাটি সাত দিন ধরে চলে। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসতে শুরু করেছে। দোকান ঘিরে শুরু হয়েছে ক্রেতাদের ভিড়। মিষ্টি, জিলাপি, পিঠার ঘ্রাণ ভাসছে বাতাসে। আমরা সেদিকে গেলাম। তিন ভাই পেটপুরে পিঠা দিয়ে নাশতা করলাম। মেলায় যে জিনিসটি আমাকে সবচেয়ে বেশি আনন্দ দিয়েছে তা হলো আমাদের ঐতিহ্য কুটির, মৃৎ ও কাঠের বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী যেমন- শীতলপাটি, পাখা, নকশিকাঁথা, হাঁড়ি, পাতিল, পুতুল ইত্যাদি। মেলার আরও যে বিষয়টি আমাকে খুব আনন্দ দিয়েছে তা হলো গ্রাম্য খেলা যেমন- হাডুডু, পুতুল নাচ, মোরগের লড়াই যেগুলো আমি পূর্বে কখনো দেখিনি। সারাদিন মেলায় ঘুরেছি, বটগাছের নিচে বসে বাউলের গান শুনেছি। বাড়ির জন্য জিলাপি-মিষ্টি কিনেছি। এই গ্রাম্যমেলাটি আমার স্মৃতিপটে সারাজীবন আঁকা থাকবে। নীলম খন্দকার বাগাইহাটি।




•• তোমার এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিনের একটি দিনলিপি রচনা কর।

 রংপুর। ২০ মে, ২০১৮


গত রাত থেকেই কেমন একটা অস্থিরতা অনুভব করছিলাম। জানি পরীক্ষার ফল আশানুরূপ হবে, তবু একটা চিন্তা ঘিরে রেখেছে কী হয় না হয়। আজ কিন্তু এমন চিন্তা বা অস্থিরতা নেই। ভালো ঘুম হওয়ার কারণে মনটা ফুরফুরে হয়ে আছে। যা হয় হবে— এমন একটা সাহসী ভাব এসে গেছে। গোসল করে নাশতা সেরে নিলাম। মা তাগিদ দিচ্ছেন, 'কী রে, স্কুলে যাবি না।' বাবা এসে মাধায় হাত বুলিয়ে বলছেন, 'চল, আমি তোর সঙ্গে যাই। তাঁদেরকে আশা দিয়ে চলে এসেছি স্কুলে। বন্ধুরা অনেকেই এসেছে। চুটিয়ে আড্ডা দিচ্ছি। দু-একজনের মুখ ভার হয়ে আছে। তাদেরকে সান্ত্বনা দিচ্ছি। এমন সময় নোটিস বোর্ডে রেজাল্ট টানানো হলো। গণিত স্যার রোল নম্বর এবং ফল ঘোষণা করছেন। আমি জিপিএ-৫ পেয়েছি। হেডস্যার ও অন্য স্যারদের সালাম করে দোয়া চাইলাম। বাসায় আসতেই বাবা-মা আমাকে জড়িয়ে ধরে আদর করলেন। মিষ্টি বিতরণ করা হলো ঘরে ঘরে। আত্মীয়স্বজনরা ফোনে খবর নিচ্ছেন আর দোয়া করছেন। বেশ রাত পর্যন্ত কেটে গেল এভাবেই। একসময় চোখজুড়ে ঘুম এলো।


••  বাংলা নববর্ষ উদযাপনের উপর একটি দিনলিপি লেখ ।

১৪ এপ্রিল, ২০১৮ মানিকগঞ্জ।

এবার বাংলা নববর্ষ উদযাপন করতে এসেছি গ্রামে। ঠিক গ্রাম নয়, ছোট শহর বলা যায়। সঙ্গে এসেছেন আব্বা, আম্মা, ভাই-বোন, মামা সবাই। ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফুরফুরে বাতাসে কিছুক্ষণ সবুজ প্রকৃতিতে মিশে গেলাম। তারপর পুকুরে গোসল সেরে নতুন পাঞ্জাবি-পাজামা পরে বেরিয়ে পড়লাম। এখানকার স্কুল মাঠের পাশে বিশাল বটগাছের নিচে উদীচীর বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। সবুজ ঘাসের উপর বসে কখনো নবীনদের সম্মিলিত কণ্ঠে, কখনো একক কণ্ঠে গান শুনে ভালো লাগল। তিন রাস্তার মোড়ে গেরুয়া পোশাক পরা বাউলরা মন মাতানো গান গাইছেন, শুনলাম কিছুক্ষণ। এর মধ্যেই চাচাত ভাই টেনে নিয়ে চলল নদীর পাড়ে। নৌকাবাইচ হবে। দশ-বারোটা নৌকা চমৎকারভাবে সাজানো, ঢোল-খঞ্জনি বাজিয়ে গান হচ্ছে। স্থানীয় এমপি সাহেব এসে গেছেন। শুরু হলো বাইচ। নৌকার দুদিকে বসা রঙিন পোশাক পরা লোকেরা বৈঠা ফেলছে একতালে আর তর তর করে নৌকা ছুটে চলেছে। কারা জিতল জানা হলো না। আলোচনা সভায় যোগ দিলাম। আলোচকরা খুব চমৎকার বললেন। নতুন কিছু বিষয় জানলাম। লাঞ্জ প্যাকেট দেওয়া হলো, খেয়ে নিলাম। তারপর ভাই-বোনেরা মিলে আব্বা-আম্মার সঙ্গে ছুটলাম মেলায়। হাটের মাঠে মেলা। অনেক লোকের সমাগম, হরেক রকম দোকান, নানা রকম আওয়াজ। এর মধ্যে ঘুরে ঘুরে দরদাম করে নানা জিনিস কিনতে এবং দেখতে খুব ভালো লাগছিল। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। সুতরাং সারাদিনের মিষ্টি আনন্দ নিয়ে এবার বাড়ি ফেরা।



•• সুন্দরবন ভ্রমণের বর্ণনা দিয়ে একটি দিনলিপি রচনা কর ।


১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, সোমবার।


সালমান রুশদি ১৯৮১ সালে প্রকাশিত তাঁর 'মিডনাইটস্ চিলড্রেন' উপন্যাসে সুন্দরবনের সৌন্দর্য-রহস্য সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন— 'জাদুময়, অপরিমেয়, অননুমেয়। পৃথিবীর ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের মধ্যে অনন্য সুন্দর সুন্দরবন ভ্রমণ করতে গিয়ে আমারও সেই অনুভূতি হয়েছে। পরিবারের সবার সঙ্গে বন বিভাগের লঞ্চে করে হিরণ পয়েন্ট এলাকায় গেলাম। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাঘ-হরিণের চারণভূমিতে ধীরে ধীরে নতুন ডালপালা-পাতাসমৃদ্ধ বন গড়ে উঠছে দেখে ভালো লাগল। নানা রঙের অনেক পাখি চোখে পড়ল, কিন্তু বানর বা হরিণ দেখা গেল না। একটা খালের ভেতর বেশ কিছুদূর ঢুকল লঞ্চটি। কাঁকড়া, বেজি চোখে পড়ল। বানরের শব্দ শুনে উপরে গাছের দিকে তাকাতেই কয়েকটা বানর দেখলাম। কেউ ফল খাচ্ছে, কেউ লাফাচ্ছে বা ডাল ঝাঁকাচ্ছে। জেলে বা বাওয়ালি কাউকে দেখলাম না। কাদার উপর বাঘের পায়ের ছাপ দেখালেন একজন খালাসি। লঞ্চ দ্রুত ফিরে এলো বন বিভাগের বাংলোয়। নদীর তাজা মাছ রান্না হয়েছে। মজা করে খাওয়া-দাওয়া সেরে রওয়ানা হলাম ঢাকার উদ্দেশে।


•• 'বিজয়ের দিনলিপি' এই শিরোনামে একটি দিনলিপি বর্ণনা কর।

১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮


ভোরের দিকে ঘুম ভেঙে গেল। বেশ ঝরঝরে লাগছে। মনে পড়ল আজ বিজয় দিবস। আজকের দিনে শোচনীয়ভাবে পরাজিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে যৌথবাহিনীর কাছে। আজ মুক্তিযুদ্ধের বিজয়, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের বিজয়। আজকের দিন আনন্দের, একই সঙ্গে বেদনার। কেননা ৩০ লক্ষ শহিদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে এ বিজয়। আজ অশ্রু ঝরানোর দিন- আনন্দাশ্রু এবং বেদনাশ্রু । এ অনুভূতি অকৃত্রিম, অনাস্বাদিত। মোবাইলে বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত তৈরি হয়ে নিলাম । জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাব। রাস্তায় বেরিয়ে দেখলাম ওরা গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দেশাত্মবোধক গান গাইতে গাইতে যাচ্ছি। মাঝে মাঝে গাড়ি থেকে নেমে মিছিলের সঙ্গে স্লোগান দিচ্ছি 'জয় বাংলা'। গাড়ি খালার বাড়িতে রেখে একটা মিছিলের সঙ্গে মিশে গেলাম। ওদের কাছ থেকে ফুল নিয়ে সশ্রদ্ধ চিত্তে অর্পণ করলাম শহিদদের স্মৃতির উদ্দেশে। আর মনে মনে তাঁদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করলাম। সারাদিন বিজয়ের স্মৃতিচারণ শুনে, গান গেয়ে, মজার খাবার খেয়ে, আনন্দে কাটিয়ে রাতে ফিরে এলাম ঢাকায় ।





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ