পবিত্র কুরআনে বর্ণিত ইরাম শহর ও রহস্যময় লুত সাগর সম্পর্কে বিজ্ঞান কি বলে

পবিত্র কুরআনে বর্ণিত ইরাম শহর ও রহস্যময় লুত সাগর সম্পর্কে বিজ্ঞান কি বলে | alhadimedia 360

কুরআন পাকের ৮৯তম সূরায় মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন (সূরা আল ফাজর, আয়াত : ৭) ইরাম নামের একটি নির্দিষ্ট শহরের কথা, যার কথা প্রাচীন ইতিহাসে উল্লেখ ছিল না এবং ইতিহাস বেত্তাদের জানামতে যার কোন অস্তিত্ব ছিল না। যা হোক ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর সংস্করণে “ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক”এক মজার তথ্য পরিবেশন করে,

 যাতে উল্লেখ করা হয় যে, ১৯৭৩ সালে সিরিয়ায় ‘ইবলা' শহর খননকার্য দ্বারা আবিষ্কৃত হয়েছে। আবিষ্কৃত শহরটি ৪৩ শতাব্দীর পুরাতন, কিন্তু সেটিও বিস্ময়কর ব্যাপার নয়। গবেষকরা 'ইবলা' শহরের গ্রন্থাগারে একটি নথি খুঁজে পান, যাতে ইবলা' শহরের লোকেরা যেসব শহরের সাথে ব্যবসা বাণিজ্য করেছে তার সবকটির নাম লেখা রয়েছে। ঐ তালিকায় ‘ইরাম” শহরের নাম উল্লেখ ছিল।

 

রহস্যময় লুত সাগর

কেউ বলে মৃত সাগর । কেউ বলে মরু সাগর। ঐ অঞ্চলের লোকেরা বলে লুত সাগর। পবিত্র বায়তুল মোকাদ্দাস ও জর্দান নদীর মাঝে এই সাগর । উত্তর-দকিঊষণে লম্বালম্বিভাবে বিস্তৃত। দৈর্ঘ্য ৭৭ কিলোমিটার। প্রস্থ ৫ থেকে ১৮ কিলোমিটার। সমুদ্র সমতল থেকে এর অবস্থান ৪০০ মিটার নীচে।


অপার রহস্যে ঘেরা এই সাগর। কোনো কিছু এর পানিতে ডোবে না। কোনো প্রাণী এর বুকে পড়লে মৃত্যু অবধারিত। এর পানি অত্যধিক লবণাক্ত। সাধারণত : সমুদ্র পানির লবণাক্ততা প্রতি হাজার গ্রামে ৩.৫ ভাগ । লুত সাগরের পানির লবণাক্ততার মাত্রা প্রতি হাজার গ্রামে ২৩৮ ভাগ । এই অতিরিক্ত মাত্রায় লবণাক্ততার কারণে এর পানির ঘনত্ব অনেক বেশী এবং এ কারনেই কোনো কিছু এতে ডোবে না। পানি বিষাক্ত। ফলে পান ও ব্যবহারের জন্য সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত। 

লবণের খনিতে কোনো প্রাণী পড়লে যেমন স্বল্প সময়ের মধ্যে বিলিন হয়ে যায়, তেমনি অতিরিক্ত লবণ মিশ্রিত এর পানিতে কোনো প্রাণী বা জীবজন্তু পড়লেও তা বিলীন হতে সময় লাগে না। রাসায়নিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এর পানিতে অত্যধিক পরিমাণে পটাসিয়াম ক্লোরাইড, ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড, ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড, সোডিয়াম ক্লোরাইড এবং সোডিয়াম সালফেট রয়েছে। এগুলোর সামান্যই কোনো কিছু বিষাক্ত হওয়ার জন্য যথেষ্ট।


এরূপ বিরল বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সাগর পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই । ভূবিজ্ঞানীরা এই বৈশিষ্ট্যের একটা ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। তাদের মতে, উষ্ণ মন্ডলে অবস্থিত লুত সাগরের চারদিকে মরু অঞ্চল থাকায় এর বাষ্পীয় ঘনত্ব বেশী । অন্যদিকে বৃষ্টিপাত কম এবং নদী দ্বারা সরবরাহকৃত পানির পরিমাণও কম। অধিক লবণাক্ততার এটাই কারণ। উল্লেখ করা যেতে পারে, লুত সাগরের সঙ্গে একমাত্র সংযোগ রয়েছে জর্দান নদীর। এই নদীর পানিও জলজ প্রাণী বসবাসের জন্য উপযুক্ত নয়।


 'লুত সাগর'- এই নামকরণ লুত (আঃ) এর আমলে সংঘটিত এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপনকরী ঐতিহাসিক ঘটনার সঙ্গে এর সংশ্লিষ্টতার আভাস দান করে। ঐতিহাসিকদের ধারণা মতে, লুত (আ) এর জাতির বসবাসস্থল ছিল লুত সাগরের এই জায়গাটি ।


অভিশপ্ত এই জাতিকে আল্লাহতায়ালা ধ্বংস করে দেন এবং একে ভবিষ্যত মানুষের কাছে দৃষ্টান্তস্থল হিসাবে চিরস্থায়ী করে দেন। বিভিন্ন সুত্র ও উৎস থেকে জানা যায়, লুত (আ) এর জাতির অবর্ণনীয় নৈতিক অধঃপতন ঘটেছিল। তারা স্ত্রী সংসর্গ ত্যাগ করে প্রকাশ্য দিবালোকে জন সমাবেশের মধ্যে সমকামিতার মত জঘন্য অপরাধে নিজেদের অভ্যস্ত করে ফেলেছিলো। 

পুরুষ লোলুপতা তাদের মধ্যে এতটাই প্রকট হয়ে উঠেছিল যে, অতিথি পর্যন্ত নিজেদেরকে নিরাপদ ভাবতে পারতো না। লুত (আ) এর স্ত্রীও এই পাপীদের সহযোগী ছিল। শুধু তাই নয়, ঐ এলাকা দিয়ে কোনো কাফের বা পথিক যাতায়াত করতে পারতো না। এরা সব লুটপাট করে নিতো। খুন করতো তাদের। এই অধঃপতিত ও বেপরোয়া জাতিকে আল্লাহতায়ালা কঠিন শাস্তির মাধ্যমে ধ্বংস করে দেন।

 ঐ জমিনের মাটিকে উল্টে তার গভীরে তিনি তাদের প্রোথিত করেন। একই সঙ্গে তাদের ওপর নিক্ষেপ করা হয় প্রস্তর। পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন সুরায় এ ঘটনা সম্পর্কে উল্লেখ পাওয়া যায়। সূরা আরাফে বলা হয়েছে :


“এবং আমি লুতকে প্রেরণ করেছি। যখন সে স্বীয় সম্প্রদায়কে বললঃ তোমরা কি এসব অশ্লীল কাজ করছ- যা তোমাদের পূর্বে সারা বিশ্বের কেউ করেনি? তোমরা তো কামবশতঃ পুরুষদের কাছে গমন কর নারীদেরকে ছেড়ে। বরং তোমরা সীমা অতিক্রম করছ। তার সম্প্রদায় এছাড়া কোনো • উত্তর দিল না যে, বের করে দাও এদের শহর থেকে। এরা খুব সাধু থাকতে চায়। অতঃপর আমি তাকে ও তার পরিবার-পরিজনকে বাঁচিয়ে দিলাম, কিন্তু তার স্ত্রী, সে তাদের মধ্যেই রয়ে গিয়েছিল। আমি তাদের ওপর প্রস্তর বৃষ্টি বর্ষণ করলাম । অতঃপর দেখ গোনাহগারদের পরিণতি কিরূপ হয়েছে।"


সূরা হুদে বলা হয়েছে : “যখন আমার আযাব এসে গেল তখন আমি বস্তিটিকে উল্টে দিলাম এবং তাদের ওপর স্তরে স্তরে প্রস্তর বর্ষণ করলাম যা আপনার প্রতিপালকের নিকট চিহ্নযুক্ত ছিল। সে বস্তিটি এ কাফেরদের থেকে বেশী দূরে নয়।”


লুত সাগর কেন ব্যতিক্রম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ অতঃপর তা আর ব্যখ্যার অপেক্ষা রাখে না। বলা বাহুল্য, লুত সাগরের এই বৈশিষ্ট সর্বকালের জ্ঞানবান ও চক্ষুবানদের জন্য এক নিদর্শন। 



 প্রয়োজনে এ রকম আরো post পেতে আমাদের follow করতে পারেন। শেয়ার করে বন্ধুদেরও পড়তে সাহায্য করুন। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ