প্রশ্ন-১. বিজ্ঞান বলতে কী বোঝ?
উত্তর: বিজ্ঞান হলো বিশেষ ধরনের জ্ঞান। সাধারণত বিজ্ঞান বলতে পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রাপ্ত বিশেষ জ্ঞানকে বোঝায় যা মানুষের জ্ঞানভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করে। বিজ্ঞানের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে ব্রিটিশ দার্শনিক টমাস হবস বলেন, “বিজ্ঞান বলতে বোঝায় কার্যকারণ সূত্রে প্রথিত জ্ঞান।” আধুনিক বিজ্ঞানের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো যুক্তিবাদ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং পর্যবেক্ষণ। সুতরাং বলা যায়, বিজ্ঞান হচ্ছে বিশেষ জ্ঞান, যা কার্যত পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষার ওপর নির্ভরশীল।
প্রশ্ন-২. বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: বিজ্ঞানসম্মত অনুসন্ধানের দক্ষ উপায়কে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি বলা হয়। বিজ্ঞানী যে যৌক্তিক পদ্ধতিতে সামাজিক ও প্রাকৃতিক বিষয়াবলির বর্ণনা, ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে সাধারণ তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করেন তাকেই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি বলা হয়। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হলো বিজ্ঞানের ভিত্তি। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি বাস্তব অবস্থা যেমন আছে তাকে তেমনিভাবেই অনুসন্ধান করে। সত্য উদ্ঘাটনই এ পদ্ধতির মুখ্য উদ্দেশ্য।
প্রশ্ন-৩. বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি মূল্যবোধের ঊর্ধ্বে - ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো এটা মূল্যবোধের ঊর্ধ্বে। কারণ বিজ্ঞান কোনো বিষয় বা ঘটনার ভালো-মন্দ, ঠিক ভুল, গ্রহণীয়-অগ্রহণীয় এ ধরনের মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে অনুসন্ধান করে না। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি কিছু সুনির্দিষ্ট পর্যায় অতিক্রম করে ঘটনার নিরপেক্ষ অনুসন্ধান চালায়। যেমন- সমস্যা চিহ্নিতকরণ, সমস্যার স্বরূপ নির্ধারন, সমস্যা সম্পর্কে পর্যবেক্ষণ, তথ্য সংগ্রহ, সংগৃহীত তথ্যের যথার্থতা যাচাই ও ভবিষ্যদ্বাণীকরণ। এ পদ্ধতি অনুসরণ করে গবেষণা করতে গিয়ে গবেষককে নিজের মূল্যবোধের ঊর্ধ্বে থেকে নিরপেক্ষ ও পক্ষপাতহীনভাবে অনুসন্ধান করতে হয়। তাই বলা যায়, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি মূল্যবোধের ঊর্ধ্বে।
প্রশ্ন-৪. সমাজবিজ্ঞান কোন অর্থে বিজ্ঞান? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: বিষয়বস্তু বিশ্লেষণের পদ্ধতিগত দিক থেকে সমাজবিজ্ঞান বিজ্ঞান হিসেবে বিবেচিত। সমাজবিজ্ঞানে যদিও প্রত্যক্ষভাবে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মতো গবেষণাগারে মানুষ বা সমাজকে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব না তবুও মানুষের সামাজিক আচরণকে যেকোনো প্রাকৃতিক প্রত্যয়ের মতো বৈজ্ঞানিকভাবে অনুসন্ধান করা সম্ভব। এছাড়া বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ করে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মতো সমাজবিজ্ঞানেও সূত্র নির্ণয় ও ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব । শুধু তাই নয়, সমাজবিজ্ঞানে কার্যকারণ সম্পর্ক ব্যাখ্যা করা হয়, যেমনটি আমরা প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে লক্ষ করি। সুতরাং এটা স্পষ্ট যে, বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ করতে গিয়ে সমাজবিজ্ঞান প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মতোই সুসংঘবদ্ধ কৌশল ব্যবহার করায় একে বিজ্ঞানের মর্যাদা দেয়া যায়।
প্রশ্ন-৫. গবেষণার সমস্যা নির্বাচন বলতে কী বোঝ? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: গবেষণার প্রথম পর্যায়ের কাজ হচ্ছে গবেষণার জন্য বিষয় বা সমস্যা নির্বাচন। দৈনন্দিন জীবনে যে সমস্ত ঘটনা বা বিষয় কৌতূহলের উদ্রেক করে, আমরা সে সমস্ত বিষয় বা ঘটনার কার্য-কারণ সম্পর্ক সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হই। এক্ষেত্রে গবেষক গবেষণা বিষয়ের আওতায় পড়ে শুধু এমন কোনো বিষয়কে সমস্যা হিসেবে নির্বাচন করেন। এছাড়া সমসাময়িক সমাজে সমস্যাটির পরিধি, গুরুত্ব, যৌক্তিকতা বিবেচনায় আনতে হয়।
প্রশ্ন-৬. কীভাবে অনুসিদ্ধান্ত যাচাই করা হয়?
উত্তর: গবেষণার জন্য প্রাপ্য তথ্যাবলিকে সারণিবদ্ধ করার পর যে কল্পনা বা কল্পনাসমূহ প্রণয়ন করা হয় তা প্রাপ্ত তথ্যাবলি দ্বারা সমর্থিত হচ্ছে কি না সেটা যাচাই করে দেখার মাধ্যমে অনুসিদ্ধান্ত যাচাই করা হয়। এ পর্যায়ের প্রধান কাজ হলো কল্পনা বা বিবৃতি বাস্তব ঘটনার সঙ্গে কতটা সম্পর্কযুক্ত বা সংগতিপূর্ণ তা যাচাই করে দেখা। এ যাচাই বাছাইয়ের কাজে গৃহীত বিবৃতি বা কল্পনা পুরোপুরি সমর্থিত হতে পারে অথবা নতুন একটি সাধারণ বক্তব্য বা সূত্র প্রণয়ন করা যেতে পারে।
প্রশ্ন-৭. ঐতিহাসিক পদ্ধতি বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: ঐতিহাসিক বর্ণনার ভিত্তিতে অতীত ঘটনা সম্পর্কে যুক্তিনির্ভর গবেষণার প্রচেষ্টাকে 'ঐতিহাসিক পদ্ধতি' বলে। অতীতকালের সামাজিক ঘটনাবলির ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মাধ্যমে বর্তমান সমাজ সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান লাভ করার প্যাকেই সমাজবিজ্ঞানে ঐতিহাসিক পদ্ধতি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এই পদ্ধতির সাহায্যে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক ঘটনা, সামাজিক প্রক্রিয়া এবং প্রাচীন সভ্যতার বিভিন্ন অনুষ্ঠান-প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।
প্রশ্ন-৮. সমাজ গবেষণায় ব্যবহৃত তুলনামূলক পদ্ধতি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: বিভিন্ন সমাজ ও সম্প্রদায়ের মধ্যে তুলনা করে তাদের জীবনযাপন পদ্ধতির সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার প্রক্রিয়াই হচ্ছে 'তুলনামূলক পদ্ধতি'। একটি সমাজের ব্যক্তি, গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠান তথা গোটা সমাজ অন্য সমাজ থেকে কতটা ভিন্নমুখী বা কতটা সমধর্মী সে সম্পর্কে গবেষণা করতে হলে তুলনামূলক পদ্ধতির প্রয়োজন হয়। এ পদ্ধতিতে প্রাপ্ত তথ্য বিভিন্ন সমাজের মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য নির্ণয়ে সাহায্য করে। এ পদ্ধতিতে একই যুগের বিভিন্ন সমাজের মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা যেমন সম্ভব হয়, তেমনি একই সমাজের অতীত এবং বর্তমানের মধ্যে তুলনামূলক গবেষণা করাও সম্ভব।
প্রশ্ন-৯. পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি বলতে কী বোঝ?
উত্তর: বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে নির্দিষ্ট কোনো বস্তু বা ঘটনা সুশৃঙ্খলভাবে নিরীক্ষণ করাকে পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি বলে। আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানী পি. ভি. ইয়ং পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির সংজ্ঞা প্রদানে বলেন, “দৃশ্যমান ঘটনা বা বিষয়কে সুশৃঙ্খলভাবে নিরীক্ষণ করাই হলো পর্যবেক্ষণ।" পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির উল্লেখযোগ্য কিছু বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- ক. কোনো গবেষণার নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, খ, সুশৃঙ্খলভাবে পরিকল্পিত থাকে, গ. সুসংঘবদ্ধভাবে ধারণ করা হয়, তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা ও যথার্থতা নিশ্চিত করার জন্য নিয়ন্ত্রণ করা হয় ইত্যাদি। এ পদ্ধতি প্রধানত দুই প্রকার। যথা সরাসরি অংশগ্রহণমূলক এবং অংশগ্রহণহীন পর্যবেক্ষণ। সাধারণত নির্দিষ্ট কোনো গোষ্ঠী বা সম্প্রদায় সম্পর্কে গবেষণা করার জন্য পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
প্রশ্ন-১০. সমাজ গবেষণায় ব্যবহৃত পরীক্ষণ পদ্ধতি বলতে কী বোঝ?
উত্তর: একটি সুনিয়ন্ত্রিত পরিবেশে দুই বা ততোধিক সামাজিক ঘটনা বা প্রপঞ্জের মধ্যে কার্য-কারণ সম্পর্ক নির্ণয় করার পদ্ধতিকে সমাজ গবেষণায় ব্যবহৃত 'পরীক্ষণ পদ্ধতি' নামে অভিহিত করা হয়। সমাজ গবেষণায় দুটি চলকের মধ্যকার সম্পর্কের রূপ-প্রকৃতি সম্পর্কে কোনো কল্পনা, যাচাই বা পরীক্ষা করে দেখার জন্যই পরীক্ষণ পদ্ধতির সাহায্য নেয়া হয়। এর একটি চলক হলো স্বাধীন, যার প্রভাব লক্ষ করা যায় আরেকটি নির্ভরশীল চলকের ওপর। যেমন— পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিকে স্বাধীন চলক এবং এর ফলে পরিবর্তনকে নির্ভরশীল চলক বলে আখ্যায়িত করা যায়।
প্রশ্ন-১১. ঘটনা অনুধ্যান পদ্ধতি বলতে কী বোঝায় ?
উত্তর: সমাজ গবেষণার ক্ষেত্রে একাধিক ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে একটি সাধারণ সূত্রে উপনীত হওয়ার প্রচেষ্টাকে বলা যায়। 'ঘটনা অনুধ্যান পদ্ধতি'। এ পদ্ধতিতে সমাজের এক বা একাধিক ব্যক্তি, দল, সমষ্টি, প্রতিষ্ঠান, ঘটনা, অবস্থাকে একক হিসেবে বিবেচনা করে গবেষণা কার্য সম্পাদিত হয়। এ পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহের প্রধান কৌশলগুলো হলো সাক্ষাৎকার, প্রশ্নমালা, অনুসূচি, ব্যক্তিগত চিঠিপত্র, পত্রিকার প্রতিবেদন, জীবন ইতিহাস, আত্মজীবনী ইত্যাদি।
প্রশ্ন-১২. নমুনা জরিপ পদ্ধতি বলতে কী বোঝ? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: সংগৃহীত সামগ্রিক তথ্য থেকে একটি বিশেষ অংশ পর্যবেক্ষণ করে ধারণা পাওয়ার পদ্ধতির নাম 'নমুনা জরিপ'। নমুনা থেকে সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে গোটা বা সমগ্র জনসংখ্যা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। নমুনা থেকে সংগৃহীত তথ্যের মাধ্যমে কোনো এলাকার জনসংখ্যার মতামত, মনোভাব, আয় ও জীবনযাত্রা প্রণালি সম্পর্কে ধারণ লাভ করা যায়। নমুনা জরিপে নমুনা চয়নে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন যাতে নমুনার মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণি, বয়স, পেশা ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের মানুষ থাকে এবং গোটা জনসংখ্যার মূল বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করতে পারে।
0 মন্তব্যসমূহ