পীর ও মাজার বিরোধী || নানা রকম অপপ্রচারের জবাব

 


মুরিদরা নিজ মোর্শেদকে কি মহান আল্লাহ মনে করে বাবা বলে ডাকে যে শিরক হবে মুরিদরা তাদের জীবনে আসা কোন বিপদের কথা আপন মোর্শেদকে জানিয়ে পরিত্রাণের উপায় জানতে চাইলেই কি শিরক হয়ে যায় মাজার জিয়ারতকারীরা কি মাজারে শায়িত ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ মনে করেন মাজারে শায়িত ব্যক্তিকে কি মহান আল্লাহ মনে করে মানত করেন পীর মোর্শেদের অনুসারীরা এবং মাজারে যারা মানত করেন তারা কি জানেন না যে, সবকিছুর মালিক মহান আল্লাহ এবং দেওয়ার মালিকও একমাত্র মহান আল্লাহ এরপরেও কেন মানুষ বিপদে পরলে আপন পীর মোর্শেদ কিংবা মাজারে ছুটে যান আর কেনই বা পীর মোর্শেদ বিরোধীরা পীর মোর্শেদ ও মাজারে যাওয়ার বিরুদ্ধে শিরকের ফতোয়া দেন


এর কারণ হলো অজ্ঞতা ও হিংসা। মহামারী হিসাবে করোনা আসার কিছুদিন আগেও দেশের শীর্ষ দুইজন জনপ্রিয় ইসলামি বক্তার মধ্যে কার চেয়ে কার মাহফিলে লোকসংখ্যা বেশি হয়, এই নিয়ে প্রকাশ্যে একজন আরেকজনকে দেখিয়ে দেওয়ার কথাবার্তা বলেছেন। অর্থাৎ কারো কাছে মানুষের বেশি যাওয়া বা না যাওয়াটাও এইসব আলেমদের মনকে প্রভাবিত করে। আর বেশি সংখ্যক মানুষের যাওয়ার সাথে যদি নগদ প্রাপ্তির বিষয়টি থাকে তাহলে তো তা অন্তরে জ্বালা আরো বাড়িয়ে দেয়।


খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন যে, এলাকার মসজিদ মাদ্রাসার আলেমদেরকে শুধুমাত্র দেখতে যাওয়া তো দুরের কথা বিপদে পরলেও মানুষ এদের কাছে যায় না। এমনকি দেশের নামকরা বক্তাদের কাছেও মানুষ যায় না যেভাবে পীরের দরবারে মানুষ যায়। শুধুমাত্র আপন পীরের দর্শন লাভ করে মনে প্রশান্তি লাভ করার জন্যই প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ পীরের দরবারে ছুটে যায় এবং আপন পীরের সাথে সাক্ষাৎ করে নজর মানত দেয়। আর আলেমদেরকে দেখার জন্য মানুষ তাদের কাছে যায় না এমনকি বিপদে পরলেও যায় না। নামাজের সময় হলে মানুষ মসজিদে নামাজ পড়তে যায়, শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসায় ক্লাস করতে যায়। 


ওয়াজমাহফিল আয়োজক কমিটি তাদের এলাকার মসজিদ মাদ্রাসার উন্নয়নের অর্থের জন্য সম্ভাব্য আয়ের (ওয়াজ শুনতে আসা লোকদের কাছ হতে অর্থ আদায়) হিসাব করে সেই বাজেট অনুযায়ী চুক্তি করে বক্তা আনা হয়। অর্থাৎ কমিটি যে বক্তাকে নির্ধারণ করে সেই বক্তাই মাহফিলে আসার সুযোগ পায়। এখানে মানুষের হেদায়েতের কোন বিষয় নেই। আয়োজক কমিটির চেষ্টা থাকে অধিক মানুষের সমাগম ঘটিয়ে যাতে বেশি বেশি কালেকশন করে বক্তার চুক্তির অর্থ পরিশোধ করে লাভের অংশটা বেশি হয়। বক্তাকে ওয়াজের নামে ডেকে এনে কমিটি যেমন অর্থ আয় করে তেমনি ওয়াজের নামে বক্তারও অর্থ প্রাপ্তি ঘটে। এর বাইরে এদের অর্থ প্রাপ্তির সুযোগ তেমন একটা নেই। জানাজা, মিলাদ পড়িয়ে আর কয় টাকা আয় হয়। আলেমদের কাছে এমনিতেই মানুষ যায় না। এদেরকেই রুজিরোজগারের জন্য মানুষের কাছে যেতে হয়। 


কিন্তু পীরেরা মানুষের কাছে যান না। মানুষই দলে দলে তাদের কাছে যায় এবং সামর্থ্য অনুযায়ী নজর মানত দেয়। এসব দেখে আলেমরা হিংসায় জ্বলে যায়। তারা চিন্তা করে আমরাও তো আলেম। আমরা কি পীরের চেয়ে পবিত্র কুরআন ও হাদীস কম জানি। তবুও মানুষ আমাদের কাছে না এসে পীরের কাছে যায়। পীরের কাছে এরা এমন কি পায় যে আমরা দিতে পারি না। এমন অজ্ঞতা ও হিংসা হতেই পীরের বিরুদ্ধে এরা নানারকম ফতোয়া দিয়ে থাকে। ঔরসজাত পিতা ছাড়া কাউকে বাবা ডাকা শিরক। সবকিছু দেওয়ার মালিক একমাত্র মহান আল্লাহ। মহান আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে কোন কিছু চাওয়া শিরক। কেউ যদি মনে করেন পীর বা মাজারে শায়িত ব্যক্তি আমার বিপদ দুর করে দিবেন তাহলে শিরকের গোনাহ হবে।


পীর বিরোধী আলেমরা এমন কথাগুলো হয় চরম অজ্ঞতার কারণে আর নয় তো হিংসার কারণে বলে থাকেন। পীরের কাছে কিংবা মাজারে মানত যারা করেন তারা পীর ও মাজার বিরোধীদের চেয়েও এটা বেশি বুঝেন যে সবকিছুর মালিক মহান আল্লাহ এবং দেওয়ারও একমাত্র মালিক মহান আল্লাহ। আর তা ভালভাবেই জানেন বলেই মহান আল্লাহর কাছ হতে পাওয়ার জন্যই তারা মহান আল্লাহর বন্ধু পীরের কাছে (অলিআল্লাহ) বা মাজারে যান।


বিপদ হতে পরিত্রাণের উপায় পেতে পীরের কাছে বা মাজারে যাওয়াটা শিরক কেন হবে তারা কি পীরকে বা মাজারে শায়িত ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ মনে করে যান যে শিরক হবে অসুখবিসুখও তো মানুষের জন্য বিপদ। অসুখ কে দেয় অসুখ হতে সুস্থ কে করেন তাহলে আমরা অসুখ নামক বিপদ হলে বিপদ হতে উদ্ধার পেতে ডাক্তারের কাছে যাই কেন ডাক্তার কি মহান আল্লাহ নাকি অসুখ দিলেন মহান আল্লাহ আর সেই অসুখ সারাতে ডাক্তারের কাছে যাওয়াটা কি মহান আল্লাহর সাথে লড়াই করা হয় না কারণ অসুখ দিয়েছেন মহান আল্লাহ আর সারাবেনও মহান আল্লাহ। মাঝখানে অসুখ হতে সুস্থ হওয়ার জন্য ডাক্তারকে কি মহান আল্লাহ মনে করে মানুষ ডাক্তারের কাছে যায়


আগেই বলেছি যে অলিআল্লাহ সম্পর্কে চরম অজ্ঞতা ও হিংসার কারণে এমন কথা বলা হয়। অলিআল্লাহর সাথে মহান আল্লাহর সম্পর্ক কি রকম সেই ধারণা এদের একেবারেই নেই। নয় তো তারা এমন কথা বলতেন না।


মানুষ বা কোন সৃষ্টিই মহান আল্লাহর সমকক্ষ হতে পারে না। কিন্তু অলিআল্লাগণ মানুষ হলেও উনারা মহান আল্লাহকে ধারণ করে আছেন। অলিআল্লাগণ মহান আল্লাহকে কিভাবে ধারণ করে আছেন তা একটা উদাহরণ দিলেই পরিষ্কার হবে। আপনার বাবা আমেরিকা বা লণ্ডনে থাকেন। বাংলাদেশ হতে ইন্টারনেটের সাহায্যে ভিডিও কল করে কম্পিউটারের স্ক্রিনে আপনি আপনার বাবাকে দেখছেন আর কথা বলছেন। কম্পিউটার স্ক্রিনে আপনার বাবার ছবি দেখে বাবা বাবা করে ডাকলেন। সংসারের নানারকম সমস্যার কথা বলে বাবাকে সাহায্য করতে বললেন। আপনার বাবা তো আপনার কাছ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে আমেরিকা বা লন্ডনে আছেন। আর আপনি কম্পিউটারের স্ক্রিনে বাবা বাবা ডাকতেছেন। 


বিজ্ঞানের প্রযুক্তি সম্পর্কে একেবারেই না জানা আমাজন জঙ্গলে কিংবা আফ্রিকার জঙ্গলে বসবাসকারী মানুষগুলো কম্পিউটারের স্ক্রিনে এভাবে আপনাকে বাবা বাবা করে ডাকতে দেখলে তারা মনে করবে আপনি কম্পিউটারকে বাবা বাবা করে ডাকছেন। বিজ্ঞানের প্রযুক্তি সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ মানুষটি নিজেই যে এ বিষয়ে অজ্ঞ তা বুঝতে না পেরে আপনাকেই চরম অজ্ঞ মনে করবে। পীর ও মাজার বিরোধী আলেমরা হলো বিজ্ঞানের প্রযুক্তি সম্পর্কে একেবারেই না জানা সেই মানুষটির মত অজ্ঞ। নিজেরাই যে চরম অজ্ঞ তা বুঝতে না পেরে অন্যকে অজ্ঞ মনে করেন।


অলিআল্লাগণ মহান আল্লাহর বন্ধু হলেও তারা আল্লাহ নন। তাঁরা মহান আল্লাহকে ধারণ করেছেন বলেই তাঁরা অলিআল্লাহ। আর আলেমরা কুরআন ও হাদীসের পণ্ডিত হলেও তারা মহান আল্লাহকে ধারণ করেন না অথবা ধারণ করার জ্ঞান তাদের নেই বলেই সমাজের আলেমদেরকে অলিআল্লাহ মনে করা হয় না। তাই মানুষ বিপদে পরলেও তাদের কাছে ছুটে যায় না।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ