ইসলামের ত্রাণকর্তা হিসাবে হযরত আবু বকর ( রা . ) হযরত আবু বকর ( রা ) ইসলামের প্রথম খলিফা । তিনি এক সংকটময় মুহূর্তে খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন । তাঁর শাসনকাল ছিল মাত্র দুই বছর তিন মাস নয় দিন । কিন্তু এ স্বল্প সময়ে তিনি ইসলামের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় এক অভাবনীয় পরিবর্তন করতে সক্ষম হন । তাঁর শাসনামলে মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্য , বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন , ভন্ডনবিদের আবির্ভাব , যাকাত প্রদানে অস্বীকার , বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহ সহ কঠিন সমস্যা দেখা দিয়েছিল ।
হযরত আবু বকর ( রা ) -ই তখন একমাত্র ব্যক্তিত্ব যিনি কঠোর হস্তে সকল প্রতিকুল অবস্থার মোকাবিলা করেন এবং ইসলামি শাসন ব্যবস্থার সুষ্ঠু ভিত্তি স্থাপন করেন । এ প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ বিন মাসউদ ( রা . ) বলেন , “ এরূপ সংকটের দিনে হযরত আবু বকরের মতো খলিফা না থাকলে ইসলাম ও ইসলামি রাষ্ট্র কোনোটাই রক্ষা পেত না । ইসলাম ধর্ম ও সমাজ অনিবার্য ধ্বংসের কবলে পতিত হত । ” তিনি খিলাফত লাভের পূর্বে এবং পরে ইসলামের খিদমতের জন্য যে অসামান্য অবদান রেখেছেন সে প্রেক্ষিতে তাঁকে ন্যায় সঙ্গতভাবে ইসলামের ত্রাণকর্তা বলা হয় ।
সিদ্দিক উপাধি ও ইসলামের সেবক খলিফা হযরত আবু বকর ( রা ) মহানবি ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর জীবন সহচর ছিলেন । নেতৃস্থানীয় ও বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে তিনি সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন । তিনি নিঃসংকোচে মিরাজ শরীফে বিশ্বাস স্থাপন করেন বলে মহানবি ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) তাঁকে “ সিদ্দিক ” উপাধিতে ভূষিত করেন ।
ইসলামের সেবায় তিনি সর্বস্ব বিলিয়ে দেন । তিনি অনেক ক্রীতদাসদাসীকে নিজ অর্থে ক্রয় করে মুক্তিদান করেন । মদিনায় মসজিদ নির্মাণ ও তাবুক যুদ্ধে তিনি প্রচুর অর্থ দান করেন । হযরত ওমর ( রা ) বলেন , “ আবু বকর ( রা ) -কে ইসলামের খিদমতের ব্যাপারে কেহই অতিক্রম করতে পারবে না । ”
মহানবির বিশ্বস্ত বন্ধু : হযরত আবু বকর ( রা ) ছিলেন মহানবির বিশ্বস্ত বন্ধু । মহানবি ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর কঠিনতম মুহূর্তে তিনি তাঁকে ছায়ার মতো অনুসরণ করতেন । হিজরতের মহাসংকট কালেও মহানবি ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) তাকে বিশ্বস্ত বন্ধুরূপে গ্রহণ করেন । তিনি বদর , উহুদ , খন্দক , খায়বার , তাবুক প্রভৃতি যুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন । মহানবি হযরত মুহাম্মদ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) বলেছেন- “ যদি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে বন্ধুলপে গ্রহণ করতাম তা হলে আবু বকরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম । " হযরত তার উপর খুবই সন্তুষ্ট ছিলেন । ইসলামের ধারক ও বাহক এ মহাপুরুষ জাকাত প্রদানে অস্বীকৃতি দানকারী বেদুইন গোত্রগুলোকে ইসলামি বিধান অনুযায়ী কর প্রদানে বাধ্য করেন ।
খলিফা হওয়ার পর তিনি আরব উপদ্বীপ হতে সকল ভন্ডামী এবং অনৈসলামিক কার্যক্রমের অবসান ঘটান । ইসলামের এ ঘোরতর দুঃসময়ে তিনি অত্যন্ত দৃঢ় ও কঠোর হস্তে সমস্ত বিদ্রোহ দমন করেন । মাওলানা মুহম্মদ আলী যথার্থই বলেছেন , “ প্রতিকূল ঝড় সংকূল আবহাওয়ার মধ্য দিয়ে ইসলামের তরীকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার কৃতিত্ব একমাত্র তাঁরই প্রাপ্য । ”
ভন্ডনবিদের দমন : ইসলামের ইতিহাসের মহা সংকটময় মুহূর্তে ও সমস্যা সংকুল সময়ে হযরত আবু বকর ( রা ) খিলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন । ভল্ডনবিদের আবির্ভাব , যাকাত বিরোধী আন্দোলন ও সধর্মত্যাগীদের বিদ্রোহ ইসলামী শিশু রাষ্ট্রের ভিত্তিমূলে প্রচণ্ড আঘাত হানে । ফলে ইসলাম পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয় ।
হযরত আবু বকর ( রা ) খিলাফত লাভের পর থেকেই অধিকাংশ সময় স্বধর্মত্যাগী বা রিদ্দার যুদ্ধে মনোনিবেশ করেন । এ প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক হিটি বলেন , “ হযরত আবু বকর ( রা . ) এর স্বল্পকালীন খিলাফতের অধিকাংশ সময়ই তথাকথিত রিদ্দা যুদ্ধে ব্যাপৃত ছিল । তাঁর বলিষ্ট নেতৃত্বে ইয়ামামা ও অন্যান্য যুদ্ধে মহাবীর খালিদ ইবনে ওয়ালিদ এবং কতিপয় ইতিহাস বিখ্যাত সমর নায়কগণ অভিযান চালান । ফলে ভন্ডনবিগণ শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয় এবং ইসলাম নিশ্চিত ধ্বংসের হাত হতে রক্ষা পায় ইসলাম পুনরুজ্জীবিত হয় এবং ইসলামি রাষ্ট্রে স্থিতিশীলতা ফিরে আসে ।
বেদুইনদের দমন : হযরত আবু বকর ( রা . ) এর খিলাফত কালে বেদুইনগণ ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র করে তিনি কঠোরহস্তে বেদুইনদের ষড়যন্ত্র ও আক্রমণ দমন করে ইসলামকে বিপদমুক্ত করেন । তার নিকট থেকে তখন কিঞ্চিত পরিমাণ শৈতল্য প্রদর্শিত হলে ইসলাম সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যেত । বহিবিশ্বে ইসলামের প্রসার ও খলিফা হযরত আবু বকর ( রা . ) এর ঐকান্তিক ও নিরলস প্রচেষ্টায় ইসলাম ও ইসলামের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা সম্প্রসারিত হয় । এখন শুধু আরবের ভিতরই ইসলাম নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন হয়নি । বহির্বিশ্বেও ইসলাম বিভিন্ন সাম্রাজ্যের মোকাবেলা করে দ্রুতগতিতে সম্প্রসারণ করতে সক্ষম হয় । হিট্টি বলেন , বিশ্বজয়ে বের হওয়ার পূর্বে আরববাসীদেরকে নিজেদের দেশকে জয় করতে হয়েছিল ।
খলিফা হযরত আবু বকর ( রা ) এর চরিত্র ও কৃতিত্ব : হযরত মুহাম্মদ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) - এর ওফাতের পর হযরত আবু বকর ( রা ) ইসলামি রাষ্ট্রের প্রথম খলিফা নির্বাচিত হন । তিনি ছিলেন বিভিন্ন গুণে গুণান্বিত এক মহাপুরুষ । মহানবি ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) - এর উম্মতের মধ্যে তিনি হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ঠ মানব । তিনি অত্যন্ত ধৈর্য ও নিষ্ঠার সাথে মদিনার শিশু রাষ্ট্রকে সংকটাপন্ন অবস্থা থেকে রক্ষা করেন । ইসলামের প্রতি তাঁর অবদান , অতুলনীয় ও চিরস্মরণীয় । নিম্নে তাঁর চরিত্র ও কৃতিত্ব সম্পর্কে কিঞ্চিত আলোকপাত করা হল ।
নবী করীম ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর পরেই তাঁর স্থান তিনি ছিলেন মহানবি ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) - এর চারিত্রিক গুণাবলি বাস্তব প্রতিচ্ছবি । মহানবি ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর সকল গুণে তিনি গুণান্বিত ছিলেন । ইসলামের ইতিহাসের মহানবি ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর পরেই তার স্থান । উম্মাতের মধ্যে সর্বাপেক্ষা মর্যাদাবান ব্যক্তি ছিরেন তিনি । প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর ( রা ) দৃঢ় ও কঠোর নেতৃত্বের ফলে মদিনার ইসলামি শিশু রাষ্ট্রের অস্তিত্ব রক্ষা পায় । তাই তাকে ইসলামের “ ত্রাণকর্তা ” বলা হয় ।
ইসলামের একনিষ্ঠ সেবক : সর্ব প্রথম যে চারজন নারী ও পুরুষ ইসলাম গ্রহণ করেছেন হযরত আবু বকর ( রা . ) তাঁদের মধ্যে একজন । তিনি পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেন । তিনি ইসলাম গ্রহণ করার সাথে সাথেই ইসলামের প্রচার ও প্রসারের জন্যে চেষ্টা করেন । তাঁর প্রচেষ্টায় কুরাইশদের মধ্য থেকে বেশ কয়েকজন ইসলাম গ্রহণ করেন । তিনি চল্লিশ হাজার দিরহাম মহানবি ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর খেদমতে ও ইসলাম প্রচারে ব্যয় করেন ।
তিনি নগদ অর্থে মুশরিকদের নিকট থেকে মুসলিম কৃতদাস - দাসীদের ক্রয় করে স্বাধীন করে দেন । তাবুক যুদ্ধে সর্বস্ব এনে মহানবি ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর হাতে তুলে দেন । হযরত ওমর ( রা ) বলেন- “ হযরত আবু বকরকে ইসলামের খেদমতের ব্যাপারে কেউ অতিক্রম করতে পারবে না । ” সিদ্দিক উপাধি ইসলামের ত্রাণকর্তা হযরত আবু বকর ( রা . ) ছিলেন সত্য ও ন্যায়ের প্রতীক । মহানবি ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা ছিল অকৃত্রিম ও অন্তহীন । রসুল ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) তাঁকে সিদ্দিক বা সত্যবাদী উপাধীতে ভূষিত করেন । ইসলাম ও মহানবি হযরত মুহাম্মদ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর জন্য পৌত্তলিকদের হস্তে তিনি প্রহৃত হন । হিজরতের সময়ে তিন রসুল ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর সঙ্গী হিসেবে মদিনায় হিজরত করেন ।
অগাধ পান্ডিত্যের অধিকারী : খলিফা হযরত আবু বকর ( রা ) ছিলেন মহানবি ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর অন্তরঙ্গ বন্ধু সুখ - দুঃখের সাথী । তিনি ছিলেন অত্যন্ত বিচক্ষণ ও প্রজ্ঞাবান । যে কোন সমস্যা অনুধাবনে ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে তিনি ছিলেন অনন্য তিনি জ্ঞান - বিজ্ঞানে ছিলেন অতুলনীয় বক্তৃতা - ভাষণে ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী । বংশ ধারাবাহিকতা জ্ঞানে তিনি ছিলেন আরবের মধ্যে শ্রেষ্ঠ । স্বপ্ন ব্যাখ্যায় আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন । ইসলামি জ্ঞানে তাঁর মর্যাদা ছিল সকলের ঊর্ধ্বে । তাকওয়ার মূর্ত প্রতীক : হযরত আবু বকর ( রা ) ছিলেন মহানবি হযরত মুহাম্মদ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর চরিত্রের পূর্ণাঙ্গ প্রকাশ এবং এবাদত ও তাকওয়ার মূর্ত প্রতীক ।
তিনি কখনো কখনো নামাযে সারারাত কাটিয়ে দিতেন । অধিকাংশ সময় রোযা রাখতেন । একাগ্রচিত্তে নামায আদায় করতেন । তাঁকে নামাযরত অবস্থায় দেখলে প্রাণহীন কাষ্ঠ দণ্ডের মতো মনে হত । কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের সময় অনিচ্ছাকৃত ভাবে অশ্রু গড়িয়ে পড়ত । তিনি অস্ফুট স্বরে এমনভাবে ফুঁপিয়ে কাঁদতেন যে , আশেপাশে মানুষ জড়ো হয়ে যেত । এ কারণে তাকে “ আওয়াহুম মুনীব ” নামে আখ্যায়িত করা হতো ।
ইসলামের ধারক এবং বাহক : ইসলামের ধারক এবং বাহক হিসেবে প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর ( রা ) ধর্মীয় অনুশাসন অক্ষরে অক্ষরে পালন করতেন । কোন প্রকার ভীতি , বিদ্বেষভাব ও বিরুদ্ধাচরণ তাঁকে কর্তব্যচ্যুত করতে পারেনি । তিনি ইসলামের পূর্ণ অনুসারী বিধায় মহানবি ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর অন্তিমকালে তাঁকে ইমামতি করার আদেশ দেন । খলিফা নির্বাচিত হয়ে তিনি আরব ভূখণ্ড থেকে বিদ্রোহ ও ভন্ডনবিদের কঠোর হস্তে দমন করেন ।
প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর স্বহস্তে মদিনা রক্ষার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন । যাকাত প্রদানে অস্বীকারকারী বেদুইন গোত্রদের বিরুদ্ধে তিনি অভিযান প্রেরণ করে তাদেরকে পরাজিত করেন । তারা ইসলামি বিধান অনুযায়ী কর দিতে বাধ্য হয় ইসলামের প্রথম খলিফা হিসেবে তিনি আরব ভূ - খন্ড থেকে দুর্নীতি , প্রতারণা , ভণ্ডামী এবং অনৈসলামিক কার্যকলাপ ধ্বংস করে ইসলামের মর্যাদা বৃদ্ধি করেন । মৌলানা মুহাম্মদ আলী বলেন , “ প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্য দিয়ে ইসলামের তরীকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার কৃতিত্ব একমাত্র তাঁরই প্রাপ্য । ”
সফল রাষ্ট্র নায়ক : প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর ( রা . ) খিলাফত লাভ করার পরই আরব উপদ্বীপের মধ্যে বিশৃঙ্খলা , বিদ্রোহ , গৃহযুদ্ধ , অন্তর্বিপ্লব , হিংসা , বিদ্বেষ প্রভৃতি মহামারী আকার ধারণ করেছিল । তিনি তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা বলে আভ্যন্তরীণ শান্তি শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বিধান করেন । নব প্রতিষ্ঠিত ইসলামি রাষ্ট্রকে বহিশত্রু থেকে রক্ষা করেন এবং ঐক্য ও ধর্মপ্রীতি বজায় রাখতে সক্ষম হন । এখানেই হযরত আবু বকর ( রা ) রাষ্ট্র সংগঠক হিসেবে অসামান্য কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন । কেন্দ্রীয় শাসন গোত্র শাসনের ঊর্ধ্বে স্থান দান করেন ফলে সমগ্র আরব গোত্র কেন্দ্রীয় শাসনের অধীন হয়ে যায় । খলিফা হযরত আবু বকর ( রা ) বিশ্ব জয়ের পূর্বে আরব দেশ ও আবরবাসীদের প্রথম জয় করেছিলেন ।
কারণ , সুসংগঠিত রাষ্ট্র ব্যতীত পারস্য ও রোমান সাম্রাজ্য জয় করা সম্ভব নয় । হযরত উমর ( রা ) এর খিলাফত কালে ইসলামের প্রচার ও প্রসার ও ইসলামি রাষ্ট্রের সম্প্রসারণ হযরত আবু বকর ( রা ) এর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা , দূরদর্শিতা এবং বলিষ্ঠ সামরিক ব্যবস্থার জন্যই সম্ভব পর হয় । গণতন্ত্রের অনুসারী : রাষ্ট্রীয় কার্য - নির্বাহে খলিফা হযরত আবু বকর ( রা . ) গণতন্ত্রের অনুসারী ছিলেন । তিনি রাষ্ট্র নায়ক এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে কোন পার্থক্য নির্ণয় করতেন না । খলিফা নির্বাচিত হয়ে তিনি যে যুগান্তকারী ভাষণ প্রদান করে তা তার গণতন্ত্রের প্রতি পূর্ণ আস্থারই বহিঃপ্রকাশ । তিনি মসলিস আস - শুরা বা মন্ত্রণা পরিষদ গঠন করে কুরআন ও সুন্নাহর বিধান মোতাবিক রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন । তিনি জনগণকে পূর্ণ স্বাধীনতার ও সমঅধিকার দান করে প্রকৃত গণতান্ত্রিক সরকারের গোড়াপত্তন করেন ।
মহানবি ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) - এর উপযুক্ত প্রতিনিধি : মহানবি হযরত মুহাম্মদ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) - এর তিরোধানের পর ইসলামি রাষ্ট্রে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছিল হযরত আবু বকর ( রা ) ছিলেন তাঁর সম্পূরক । তিনি বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট মুসলিম জাহানকে সঠিক পথ প্রদর্শনে সমর্থ হন । আরব বিশ্বের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব , বিদ্রোহ , অরাজকতার অবসান ঘটাতে সক্ষম হন । মহানবি হযরত মুহাম্মদ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ) এর মৃত্যুর পর তিনি তাঁর উপযুক্ত প্রতিনিধি হিসেবে যাবতীয় কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে সক্ষম হন । হযরত আলী ( রা ) বলেন , “ রসুলে কারীমের পর আবু বকর শ্রেষ্ঠ মুসলমান ছিলেন । ”
আল কুরআন সংকলন : আল কুরআন বর্তমানে যেভাবে বিন্যস্ত রয়েছে এভাবে মহানবি ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর যুগে বিন্যস্ত ছিল না । তখন হাফিজদের বক্ষে বিন্যস্তভাবে রক্ষিত ছিল । লিখিত অবস্থায় বিচ্ছিন্ন পত্রে লিপিবদ্ধ ছিল । ইয়ামামার যুদ্ধে যখন বহু সংখ্যক হাফিজে কুরআন শাহাদাত বরণ করেন তখন হযরত উমর ( রা ) এর পরামর্শে বিভিন্ন পত্রকে মহানবি ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর বিন্যাসে অনুযায়ী গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । হযরত জায়েদ বিন সাবিত ( রা . ) যিনি মহানবি ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর সময় কাতিবি ওহি ছিলেন - এ কাজের দায়িত্ব নিলেন , তিনি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এ বিক্ষিত পত্রগুলোকে একত্র করে কুআন মজিদকে সঠিকভাবে গ্রন্থাকারে সংকলন করেন , এজন্য প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর ( রা . ) কুরআন সংকলনের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব । মহানবি হযরত মুহাম্মদ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম. ) ও ইসলামের প্রতি হযরত আবু বকর ( রা . ) এর অক্লান্ত সেবা , ত্যাগ - তিতিক্ষা ও অন্যান্য অবদানের কথা বিবেচনা করে তাঁকে ন্যায়সঙ্গতভাবে ইসলামের ত্রাণকর্তা ’ বলা হয় ।
0 মন্তব্যসমূহ