কেন সহীহ আকিদার প্রয়োজন | Why Sahih Aqeedah is needed

 


মানব জীবনে সহিহ আকিদার প্রয়োজনীয়তা ও বাতিল আকিদার কুফল

 আকাইদ আকিদা শব্দের বহুবচন । আকিদা বলতে আন্তরিক বন্ধনকে বুঝায় । পরিভাষায় “ যে ইলম অর্জন করলে প্রকৃষ্ট দলিলের ভিত্তিতে দীনি আকিদা বিশ্বাসসমূহের প্রমাণ এবং এ বিষয়ে আরোপিত সন্দেহের অপনোদন করার যোগ্যতা লাভ করা যায় , তাকে ইলমুল আকাইদ বলে ” । 

বিশুদ্ধ আকিদার প্রয়োজনীয়তা শুধু মানুষের পার্থিব জীবনে সীমাবদ্ধ নয় , বরং তা ঐ চিরস্থায়ী জীবন পর্যন্ত প্রসারিত যে জীবনের কোনো শেষ নেই এবং কোনো সংকোচন নেই । একদিক থেকে তা মানুষের দুনিয়ার বুদ্ধিবৃত্তিক ও মানসিক সফলতার ভিত্তি , অন্য দিক থেকে তা চিরস্থায়ী জীবনের সফলতার মূল বিষয় । আর ইমান পৃথিবীর সুবিধাসমূহ প্রাপ্তির উপায় এবং শরিয়ত স্বীকৃত উপভোগের মাধ্যম । 

যেমন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন , “ তবে ইউনুসের সম্প্রদায় ছাড়া কোনো জনপদ কেন এমন হল না যারা ইমান আনত এবং তাদের ইমান তাদের উপকারে আসত ? তারা যখন ইমান আনল তখন আমি তাদের থেকে পার্থিব জীবনের হীনতাজনক শাস্তি দূর করলাম এবং ওদেরকে কিছু কালের জন্য জীবনোপভোগ করতে দিলাম । ” ( ইউনুস ৯৮ ) ।

আকিদার বিভ্রান্তি ও বিকৃতি সমাজে ও জীবনে বড় ধরনের ফেত্না - ফাসাদের কারণ । মানুষের প্রতিটি কর্মের বিশুদ্ধতা ও অশুদ্ধতা আকিদা বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে , চাই তা হোক ধর্মীয় বিষয় বা পার্থিব বিষয় । এ কারণেই প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরবদের আকিদা বিশ্বাস দীর্ঘ ১১ বছর কালধরে সংশোধনের কাজে ব্যাপৃত ছিলেন । এরপর তিনি প্রথম ইবাদত তথা নামাজ নিয়ে এসেছিলেন । 

যে ব্যাপারে হজরত জুনদুব ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন , “ আমাদের ভরপুর যৌবনে আমরা নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম - এর সাথে কাটিয়েছি । আমরা পবিত্র কুরআন শিক্ষার পূর্বে ইমানের শিক্ষা গ্রহণ করেছি । এরপর কুরআন শেখার মাধ্যমে আমাদের ইমান আরও বৃদ্ধি পেয়েছে । ( ইবনে মাজাহ )

 *কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে ইমান ও ইমানদার* 

 ইমান এর আভিধানিক অর্থ “ আন্তরিক বিশ্বাস ” । এ বিশ্বাসের অধিকারী মু'মিন । শরিয়তের পরিভাষায় , নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম - এর সত্ত্বা ও গুণাবলির প্রতি সর্বোচ্চ পর্যায়ের সম্মান প্রদর্শন , চূড়ান্ত তা'যিম প্রকাশসহ আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করা এবং তিনি আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে যা নিয়ে এসেছেন তার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করা এবং মুখে স্বীকৃতি দেয়া ।

 আকাইদ বিশারদগণের মতে “ ইমান হল আন্তরিক বিশ্বাস আর মৌখিক স্বীকৃতি পার্থিব জগতে শরিয়তের বিধি - বিধান বাস্তবায়ন করার জন্য শর্ত । ” আল কুরআনে ঐ সমস্ত লোকের অন্তরে ইমান লিপিবদ্ধ করেছেন ।  ইরশাদ হয়েছে , ( মুযাদালাহ -২২ ) । আরো ইরশাদ হচ্ছে , “ আর যখন তাদের অন্তরে ইমান প্রবেশ করল ” ( হুযরাত -১৪ ) । অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে , “ তার অন্তর ইমান দ্বারা প্রশান্ত ” । ( নহল -১০৬ ) । উক্ত তিনটি আয়াতে কারিমায় কলবকে ইমানের কেন্দ্রস্থল হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে । 

আর মুমিন ঐ ব্যক্তি যে আল্লাহর পক্ষ থেকে ইমান সংক্রান্ত বিষয়াবলি যেমন তাওহিদ , রিসালাত , মালাইকা , কিতাব ও তাকদির সম্পর্কে নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনিত বিষয়াবলির প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করেন । আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন , “ হে মুমিনগণ তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের উপর এবং রসুলের উপর অবতীর্ণ কিতাব ও পূর্বে নাজিলকৃত কিতাবের উপর ইমান আন । যে কেউ আল্লাহ , তাঁর ফেরেশতা , তাঁর কিতাবসমূহে , তাঁর রসুলগণ এবং পরকাল অস্বীকার করে , সে পথ ভ্রষ্টতার অতল তলে হারিয়ে যাবে ” ( নিসা ১৩৬ ) । 

ইমানের বিষয়সমূহ সম্পর্কে হাদিসে জিবরাইল আলাইহিস সালামে এক প্রশ্নের জবাবে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন , “ ইমান হল “ আল্লাহ , ফেরেশতা , আল্লাহর সাক্ষাৎ , রসুল , পুনরুত্থানে বিশ্বাস এবং তাকদিরের ভালো মন্দের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা । ” ( মুসনাদুল ইমামিল আ'যম ) ।

 


*আল কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে কুফর ও কাফের * 

 কুফর এর শাব্দিক অর্থ কোনো বস্তুকে ঢেকে ফেলা , আবৃত করা । শরিয়তের পরিভাষায় , “ আল্লাহর পক্ষ থেকে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সকল অকাট্য বিধান নিয়ে এসেছেন সে সবের কোনোটিতে নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অসত্য মনে করা ” । কোনো কাফের প্রকাশ্যে ইমান দাবি করলে সে মুনাফিক , ইমান আনার পরে কেউ কুফরি প্রকাশ করলে সে মুরতাদ , আল্লাহর প্রভুত্বের মধ্যে শরিক নির্ধারণ করলে সে মুশরেক , এবং রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নবুয়তের স্বীকৃতি প্রদান করার সাথে সাথে যদি কুফরি আকিদামূলক বক্তব্য প্রদান করে তাহলে সে হবে যিনদিক ( ধর্মচ্যুত ) , আল্লাহর একত্ববাদ , শরিয়ত ও নবুয়তকে অস্বীকার করা মারাত্মক কুফরি । 

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন অনেক আয়াতে কাফেরদের শাস্তির কথা বর্ণনা করেছেন এবং এ ব্যাপারে আমাদেরকে সতর্ক করেছেন । আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- “ নিশ্চয়ই যারা কুফরি করে আল্লাহর কাছে তাদের ধন - সম্পদ ও সন্তানাদি তাদের কোনো কাজে আসবে না এবং তারা জাহান্নামের অধিবাসী । চিরদিন সেখানে অবস্থান করবে ” ( আলে ইমরান ১১৬ ) ।

 আল কুরআনে কুফরির ৫ টি দিক রয়েছে । 

প্রথম দিক হল : তাওহিদকে অস্বীকার করা , যেমন ইরশাদ হচ্ছে , “ নিশ্চয়ই যারা কফরি করে তাদেকে আপনি ভয় দেখান বা না দেখান তা তাদের জন্য সমান , তারা ইমান আনবে না ” ( বাকারা ৬ ) ।

 দ্বিতীয়তঃ নেয়ামতের না শুকরিয়া করা , যেমন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন , “ আমার নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় কর , অকৃতজ্ঞ হয়ো না ( বাকারা ১৫২ ) ” । 

তৃতীয়ত : সম্পর্কচ্ছেদ করা , যেমন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন “ কিয়ামত দিবসে তারা পরস্পর সম্পর্কচ্ছেদ করবে ” ( আনকাবুত ২৫ ) ।

 চতুর্থত : অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করা , ইরশাদ হচ্ছে “ তাদের জানা বিষয় যখন তাদের নিকট আসল , তারা তা অস্বীকার করল ” ( বাকারা ৮৯ ) । 

পঞ্চমত : ঢেকে ফেলা বা ইমান গোপন করা , যেমন ইরশাদ হচ্ছে “ শস্য কৃষকদেরকে ( যারা জমিনে বীজ বপন করছে ) বিস্মিত করেছে ” ( হাদিদ ২০ ) । এখানে কুফফার বলতে তাদেরকে বুঝানো হয়েছে যারা জমিনের নিচে বীজ ঢেকে ফেলেছিল ।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ