কম্পিউটার ব্যবহারে মানসিক সমস্যা ও আমাদের যা শিক্ষা দেয় ! ইন্টারনেট | Mental problems in computer use and what it teaches us! Internet

 


মানসিক সমস্যা : কম্পিউটার ব্যবহারে যেসব শারীরিক সমস্যা হতে পারে তার চেয়ে অনেক গুরুতর সমস্যা হচ্ছে মানসিক সমস্যা । ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ার কারণে আজকাল প্রায় সবাই এটি ব্যবহার করতে পারে । 

ইন্টারনেটে একদিকে যেমন তথ্য ও জ্ঞানের ভাণ্ডার উন্মুক্ত করে রাখা আছে ঠিক সেরকম সামাজিক নেটওয়ার্ক জাতীয় সার্ভিসের মাধ্যমে অসচেতন ব্যবহারকারীদের মোহগ্রস্থ করে রাখার ব্যবস্থাও করে রাখা আছে । মনোবিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখাতে শুরু করেছেন যে , মানুষ যেভাবে মাদকে আসক্ত হয়ে যায় সেভাবে অতিরিক্ত কম্পিউটার ব্যবহার , ইন্টারনেট বা সামাজিক নেটওয়ার্কে আসক্ত হয়ে যেতে পারে ।

 অতিরিক্ত কম্পিউটার গেম খেলে মৃত্যুবরণ করেছে এরকম উদাহরণও আছে । কাজেই সব সময়ই মনে রাখতে হবে আধুনিক প্রযুক্তি মাত্রই ভালো নয় , পৃথিবীতে যেমন অনেক অপ্রয়োজনীয় এবং ক্ষতিকর প্রযুক্তি আছে ঠিক সেরকম ভালো প্রযুক্তির অপব্যবহারের কারণে সেটি আমাদের জীবনে অভিশাপ হয়ে দেখা দিতে পারে ।


 ইন্টারনেট ও ই - মেইল ( Internet and e - mail )  

ইন্টারনেট : তোমরা এর মাঝে অনেকবার কম্পিউটার কী এবং সেটা কীভাবে কাজ করে সেটা পড়ে এসেছ । একটা প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটারগুলোকে সাধারণত একটা নেটওয়ার্ক দিয়ে পরস্পরের সাথে যুক্ত করে দেওয়া হয় , যেন একটা কম্পিউটার অন্য একটা কম্পিউটারের সাথে যোগাযোগ করতে পারে , আবার প্রয়োজন হলে একটা কম্পিউটার অন্য কম্পিউটারের Resource ব্যবহার করতে পারে । এই ধরনের নেটওয়ার্ককে LAN ( Local Area Network ) বলা হয়ে থাকে । 

আজকাল LAN তৈরি করার জন্য একটা সুইচের সাথে অনেকগুলো কম্পিউটার যুক্ত করে সুইচগুলোকে পরস্পরের সাথে যুক্ত করে দিতে হয় । যখন একটা কম্পিউটারকে অন্য কম্পিউটারের সাথে যোগাযোগ করতে হয় সেটি যদি তার নিজের সুইচের সাথে যুক্ত কম্পিউটারের মাঝে পেয়ে যায় তাহলে তার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে ।

 সেখানে না পেলে অন্য সুইচে খোঁজ করতে থাকে । একটি প্রতিষ্ঠানের একটি LAN কে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের অন্য একটি LAN এর সাথে যুক্ত করার জন্য রাউটার ( Router ) ব্যবহার করা হয় ।  বিভিন্ন নেটওয়ার্ক ( Network ) এর নিজেদের মাঝে Inter Connection করে Networking কে Internet বলা হয় । 

এই মুহূর্তে পৃথিবীর প্রায় নয় বিলিয়ন কম্পিউটার বা অন্য কোনো ডিভাইস ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত আছে এবং এই সংখ্যাটি প্রতিদিনই বাড়ছে । কাজেই ইন্টারনেট হচ্ছে নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্ক যেখানে প্রাইভেট , পাবলিক , শিক্ষা প্রতিষ্ঠান , ব্যবসা - বাণিজ্য , সরকারি - বেসরকারি স্থানীয় বা বৈশ্বিক সব ধরনের নেটওয়ার্ক জড়িত হয়েছে ।

 এই বিশাল নেটওয়ার্ক তৈরি করার জন্য নানা ধরনের ইলেকট্রনিকস , ওয়্যারলেস এবং ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে । ইন্টারনেট ব্যবহার করে এখন নানা ধরনের তথ্য আদান - প্রদান করা যায় এবং নানা ধরনের সেবা নেওয়া যায় । উদাহরণ দেওয়ার জন্য বলা যেতে পারে , ইন্টারনেটে রয়েছে নানা ধরনের ওয়েবসাইট , ইলেকট্রনিক মেইল , টেলিফোন এবং ভিডিও যোগাযোগ , তথ্য আদান - প্রদান , সামাজিক নেটওয়ার্ক , বিনোদন , শিক্ষা এবং গবেষণা টুল এবং নানা ধরনের ইন্টারনেটভিত্তিক সেবা ।

 সারা পৃথিবীর মানুষ এখন ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে এবং আমাদের জীবনধারার একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে । এখানে উল্লেখ করা যায় যে ইন্টারনেটে পৃথিবীর সকল মানুষেরই যোগাযোগ করার সমান সুযোগ আছে বলে নানা ধরনের প্রচারের সাথে সাথে অপপ্রচার এবং অপব্যবহারের সুযোগও তৈরি হয়েছে । 

নানা ধরনের ক্ষতিকর সফটওয়্যার তৈরি করে নেটওয়ার্কের ক্ষতি করা , বিদ্বেষ এবং হিংসা ছড়ানো , আপত্তিকর তথ্য উপস্থাপনের সাথে সাথে অপরাধীরাও তাদের কার্যক্রমে গোপনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে । কিছু নেতিবাচক বিষয় থাকার পরও ইন্টারনেট এই সভ্যতার সবচেয়ে বড় অবদান এবং এই প্রথমবার পৃথিবীর সকল মানুষ সমানভাবে একটি প্রযুক্তিতে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে । ভবিষ্যতের পৃথিবীতে এই নেটওয়ার্কের কী প্রভাব পড়বে দেখার জন্য সারা পৃথিবীর মানুষ আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে ।

 ই - মেইল : ইলেকট্রনিক মেইলের সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে ই - মেইল এবং ই - মেইল বলতে আমরা বোঝাই কম্পিউটার , ট্যাবলেট , স্মার্টফোন ইত্যাদি ডিজিটাল ডিভাইস দিয়ে নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে একজন বা অনেকজনের সাথে ডিজিটাল তথ্য বিনিময় করা ।

 1971 সালে প্রথম ই - মেইল পাঠানো হয় এবং মাত্র 25 বছরের ভেতরে পোস্ট অফিস ব্যবহার করে পাঠানো চিঠি থেকে ই - মেইলের সংখ্যা বেশি হয়ে গিয়েছিল । বর্তমানে ই - মেইলের ব্যবহার ছাড়া আমরা একটি দিনও কল্পনা করতে পারি না । কম্পিউটার , ল্যাপটপ , ট্যাবলেট বা অন্য কোনো ডিজিটাল ডিভাইস দিয়ে ই - মেইল পাঠাতে হলে সব সময়ই একটি ই - মেইল সার্ভারের দরকার হয় । 

এই ই - মেইল সার্ভার ব্যবহারকারীদের ই - মেইল সংরক্ষণ করে এবং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অন্য ব্যবহারকারীদের সাথে ই - মেইল বিনিময় করে । ই মেইল বিনিময় করার আরেকটি এবং বর্তমানে অনেক জনপ্রিয় উপায় হচ্ছে ইন্টারনেটের দেওয়া ই মেইল সার্ভিস । তাদের মাঝে Gmail , Yahoo , Hotmail ইত্যাদি ই - মেইলের সেবা শুধু যে বিনা মূল্যে দেওয়া হয় তা নয় , তারা ব্যবহারকারীদের ই - মেইল সংরক্ষণ করার দায়িত্বও গ্রহণ করে থাকে ।


ই - মেইল পাঠানোর জন্য প্রথমেই যিনি পাঠাবেন এবং যিনি পাবেন দুজনেরই ই - মেইলের ঠিকানার দরকার হয় । তোমরা সবাই ই - মেইল ঠিকানার সাথে পরিচিত এবং সবাই লক্ষ করেছ ই - মেইল ঠিকানাটি @ বর্ণটি দিয়ে ভাগ করা হয়েছে । যদি abc@def.com একটি ই - মেইল ঠিকানা হয়ে থাকে তাহলে @ এর পরের অংশটুকু হচ্ছে ডোমেইন নেইম , যেটা দিয়ে বোঝানো হয় ব্যবহারকারী কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ।

 প্রথম অংশটুকু হচ্ছে ব্যবহারকারীর কোনো ধরনের পরিচয় । একটি ই - মেইল একাধিক গ্রাহকের কাছে পাঠানো যায় । প্রয়োজনে ই - মেইলকে অন্য একজনকে “ কার্বন কপি ” হিসেবে ( CC ) পাঠানো যায় । ই - মেইলের শুরুতে বিষয় হিসেবে ই - মেইলের বক্তব্যটির একটি শিরোনাম লেখা যায় । 

শুধু তাই নয় ই - মেইলের বিষয়বস্তু লেখার পাশাপাশি তার সাথে অন্য কোনো ডকুমেন্ট বা ছবি সংযুক্ত করে পাঠিয়ে দেওয়া যায় । এটি বলা বাহুল্য মাত্র আমরা ই - মেইল ছাড়া এখন একটি মুহূর্তও কল্পনা করতে পারি না । ই - মেইল , ইন্টারনেট কিংবা ইন্টারনেটভিত্তিক নানা ধরনের সামাজিক নেটওয়ার্ক আমাদের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে । 

একই সাথে এই প্রযুক্তিগুলোর অপব্যবহার আমাদের জীবনে খুব সহজেই বড় ধরনের বিপর্যয় নিয়ে আসতে পারে । কাজেই এটা বলা বাহুল্য মাত্র এই অত্যন্ত শক্তিশালী প্রযুক্তিগুলো আমাদের দায়িত্বশীলের মতো ব্যবহার করতে হবে , এটি শুধু তথ্যপ্রযুক্তি নয় , সকল প্রযুক্তির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য ।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ