সাদা চাল নাকি লাল চাল কোনটি আমাদের জন্য ভালো ___alhadimedia360

 

Rice

সাদা চাল আর লাল চালের মধ্যে পার্থক্য অনেক, কোনটা আমাদের স্বাস্থ্যের কি উপকার আর অপকার করে তা আজকে বিস্তারিত বুঝিয়ে বলবো. প্রথমে বলি সাদা চাল আর সাদা আটা কিভাবে তৈরি হয়. ধান গম বা যেকোনো শস্য দানার তিনটি অংশ থাকে. শস্য দানার বাইরের আস্তরণকে বলা হয় ব্র্যান্ড. বাংলায় আমরা এই অংশটাকে সাধারণত কুড়া বলে চিনি. এই ব্র্যান্ড বা কু ড়াতে অনেক ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকে. আর কপার জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি, আর থাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার. এগুলোর একেকটা একেক রকম কাজ করে, আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে. 

শস্য দানা থেকে যখন মেশিনে সাদা চাল বানানো হয় তখন এই পুষ্টিকর বাইরের আস্তরণ অর্থাৎ ব্র্যান্ড বা কুড়া ফেলে দেওয়া হয়. তার মানে চাল থেকে শক্ত ফাইবার চলে যায়. তখন আমাদের জন্য এই চাপাতে সহজ হয়. নরম হয়. কিন্তু সাথে সাথে চালের পুষ্টি গুণও অনেক কমে যায়. শস্য দানার ভেতরে যে অংশটা দেখছেন সেটাকে বলে জার্ম. এখান থেকেই নতুন উদ্ভিদ জন্মাবে এই একদম পুষ্টি ভরপুর. ভিটামিন B, ভিটামিন E, স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী ফ্যাট, ফাইটো কেমিক্যালস আর অ্যান্টি অক্সিডেন্স থাকে এর মধ্যে. চালের মধ্যে এই অংশটা থাকলে সেই চাল বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায় না. এটা ফেলে দিলে অনেকদিন গুদামে বা দোকানে চাল রেখে দেওয়া যায়.

 তাই সাদা চাল বানানোর সময় এই পুষ্টিকর অংশটুকুও সরিয়ে ফেলা হয়. সাদা চালে থাকে শুধুমাত্র মাঝের অংশটা. অর্থাৎ এন্ডোস পার্বণ. এখানে য়ত কার্বোহাইড্রেট থাকে. আর খুব অল্প, পুষ্টি থাকে. সামান্য পরিমাণে কিছু ভিটামিন P, মিনারেল আর প্রোটিন থাকে. অর্থাৎ পুষ্টিগুণ একেবারেই কম যেখানে সেটাই থাকে সাদা চালে. সাদা আটা তেও তাই. গম থেকে যখন মেশিনে সাদা আটা বানানো হয়, নব্বই শতাংশ ভিটামিন ই, পঞ্চাশ শতাংশেরও বেশি ভিটামিন বি এবং প্রায় একশো শতাংশ ফাইবার উধাও হয়ে যায়. লাভ যেটা হয়, সেটা হলো, আটা দিয়ে সুন্দর পাউরুটি পরোটা নরম নরম পেস্ট্রি বানানো যায় সহজে. এবং সেগুলো অনেকদিন দোকানে সংরক্ষণ করা যায়. 

যখন শস্যদানার তিনটে অংশই অটুট থাকে সেটাকে বলে হুলগ্রীন. আমরা লাল চাল বলতে এই পুরো শস্য দানাকে বুঝাই. চালের রং লাল হতে হবে সেটা বাধ্যতামূলক নয়. তিনটে অংশই থাকলে এই চাল রান্না করতে সময় বেশি লাগে. খেতে আর একটু শক্ত লাগে. এতে অনেক ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকে. আবার যখন শস্য দানার তিনটি অংশই মেশিনে ঢুকিয়ে আটা বানানো হয়, সেটা হচ্ছে লাল আটা. বাজারে বিভিন্ন নামে পাওয়া যায়, hold, hold ইত্যাদি. 



এতক্ষণ বললাম দুই প্রকারের চালের পুষ্টিগুনের পার্থক্য. কিন্তু আপনি মনে করতেই পারেন এই পুষ্টির তরকারি থেকে নিয়ে নিবো. হাতের থেকে নেওয়ার দরকার নাই. তবে এই দুই প্রকারের চালের পার্থক্য পুষ্টিতেই শেষ নয়. তাই খুব সহজ করে বুঝাবো এই দুই প্রকারের চাল খাওয়ার পরে শরীরে কি ঘটে. এটা বুঝতে দুই ভাইয়ের কথা চিন্তা করতে পারেন. এক ভাই টাকা পেলে সাথে সাথে সব খরচ করে ফেলে. একটু পরে আর হাতে টাকা থাকে না. 

আরেক ভাই টাকা আস্তে আস্তে খরচ করে. ফলে তার হাতে বেশি সময় ধরে টাকা থাকে. কোন ভাই কোন চাল একটু বললেই বুঝবেন. কার্বোহাইড্রেট য়ার পরে আমাদের শরীর সেটা ভেঙে চিনি তৈরি করে. সেখান থেকে চিনি রক্তে প্রবেশ করে. রক্তে যখন চিনির পরিমান বাড়তে থাকে তখন আমাদের শরীর একটা হরমোন বানানো শুরু করে. 

এই হরমোনের নাম হলো ইনসুলি ইনসুলিন গিয়ে রক্তের চিনির পরিমান কমায়. চিনিগুলোকে রক্ত থেকে সরিয়ে আমাদের কোষের ভেতরে ঢোকায়. সেখান থেকে আমরা শক্তি পাই অথবা জমা থাকে. কার্বোহাইড্রেট খাওয়ার পরে কত দ্রুত রক্তে চিনির পরিমান বেড়ে যায় তার পরিমাপ হচ্ছে claysonic index. সাধারণ নিয়ম হল কম লাইসেন্সিক index এর খাবার গুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো. অর্থাৎ যে খাবারগুলো খেলে রক্তে আস্তে আস্তে পরিমান বাড়ে. 

হুট করে অনেক পরিমাণে বেড়ে যায় না, সেই খাবার গুলোও ভালো. যেসব খাবারের glayemics বেশি, সেগুলো রক্তে চিনির পরিমান খুব দ্রুত বাড়ায়. এমন একটা খাবার হলেও সাদা চালের ভাত. খুব তাড়াতাড়ি শরীর এই খাবার ভেঙে ছিনি তৈরি করতে পারে এবং অল্প সময়ে রক্তে অনেক পরিমাণ চিনি চলে আসে. রক্তে এত বেশি চিনি কমানোর জন্য পরিমাণ ইনসুলিন প্রয়োজন হয়. অন্যদিকে লাল চালের ভাতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম. এটা ভাঙতে শরীরের বেশ সময় লাগে. 

রক্তে চিনির পরিমান ধীরে ধীরে বাড়ে . ফলে ইনসুলিন কম প্রয়োজন হয় আর অনেকক্ষণ পেটটা ভরা ভরা লাগে আপনারা অনেকেই হয়তো ডায়াবেটিস রোগীদের ওষুধ হিসেবে ইনসুলিনের নাম শুনেছেন যারা ডায়বেটিসে ভোগেন তাদের শরীর হয় ইনসুলি তৈরী করতে পারে না অথবা শরীরে ইনসুলিন ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না. ফলে রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে থাকে. ওষুধ খেয়ে বা বাইরে থেকে ইনসুলিন নিয়ে রক্তে সুগার কমাতে হয়.

 তবে এখানে আরেকটা কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবেন. খাবারের গুনাগুন নির্ধারণ করার জন্য শুধুমাত্র গ্লাইসমিক ইনডেক্স ব্যবহার করাই যথেষ্ট নয়. এটা একটা উপায় মাত্র. যেমন চকলেট কেকের গ্লাইসমিক ইনডেক্স কম. তাই বলে সেটা যে স্বাস্থকর নয় এটা মোটামুটি আমরা সবাই আন্দাজ করতে পারি. আচ্ছা. পুষ্টিগুণ জানলাম. জানলাম এটা শরীরে কিভাবে কাজ করে. 

তবে কোন চাল কোন রোগ ঘটায় বা প্রতিরোধ করে. খুব সংক্ষেপে তিনটা গবেষণার কথা বলছি. এক আড়াই লক্ষেরও বেশি মানুষের ওপরে করা সাতটা গবেষণা একত্র করে দেখা হয়েছে যে যারা প্রতিদিন whole doing খায় আর যারা খায় না তাদের মধ্যে heart attack stroke এর ঝুঁকির মধ্যে কোনো পাত্ত আছে কিনা. 

ফলাফল কি পাওয়া গেল? যারা বেশি হোলগ্রীন বা গোটা সুসুদানা খেয়েছে তাদের heart attack, stroke ইত্যাদির ঝুঁকি একুশ শতাংশ কম ছিল. আর একটা গবেষণায় দেখা গেছে জাপানিজ ও চাইনিজ মানুষদের মধ্যে যারা সাদা ভাত সবচেয়ে বেশি খায়, তাদের মধ্যে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি পঞ্চান্ন শতাংশ বেশি. আবার প্রায় চার লক্ষ মানুষের উপরে করা, দশটা গবেষণা একত্র করে দেখা গেছে. 



যে যারা দিনে দেড় কাপ লাল ভাত খায় তাদের diabetes হবার ঝুঁকি কমেছে বত্রিশ শতাংশ শুধু heart attack, stroke diabetes এর মত প্রাণঘাতী ও সুখী নাথ কোষ্ঠকাঠিন্য বা পায়েলসের মতো পীড়াদার কসুককেও দূরে রাখে লাল চাল আর লাল আটা. আস্ত শস্য অর্থাৎ লাল চাল, লাল আটায় যে fiber থাকে, তা খাবার হজমে সাহায্য করে. মল নরম করে, ভারী হয়, ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয় না.  

 আমি আপনাকে একেবারে আজকে থেকে সাদা চাল বন্ধ করে লাল চাল খেতে শুরু করার জন্য convince করে ফেলা নয়. বরং আমি চাই বোঝেন আপনি কি খাচ্ছেন এবং সব জেনেশুনে নিজের স্বাস্থ্যের জন্য একটা সিদ্ধান্ত নেন.

 আর আপনার যদি মনে হয় যে আপনি খাদ্যাভ্যাসে একটা পরিবর্তন আনবেন refingreen এর বদলে whole green বা গোটা বেশি খাবেন তাহলে আপনার জন্য তিনটি পরামর্শ এক, আস্তে আস্তে শুরু করবেন প্রথমে নতুন কিছু খেলে সেটার স্বাদ ভালো নাই লাগতে পারে, একেবারে পুরোটা না বদলে অল্প অল্প করে বদলাতে পারেন সাদা ভাতের সাথে কিছু লাল ভাত মিশিয়ে খেলেন রুটি খেলে একটা সাদা আটা রুটি তার সাথে একটা লাল আটা রুটি খেলেন তারপর ধীরে ধীরে আপনি হয়তো সেই স্বাধে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন. 

 ভাত রুটি ছাড়াও অন্যান্য হোলগ্রিং খেতে যেমন নাস্তাই খাওয়ার জন্য স্টিল কাট ওচ বা রোল ওজ কিনে রাখতে পারেন তিন লাল আটা আর লাল চাল খেলেই যে পরিমাণে বেশি খাওয়া যাবে তা কিন্তু না সুষম খাবারের অংশ হিসেবে আপনি চাল আর লাল আটা খাবেন. আমরা দেখা যায় পুরো প্লেট ভাত নিয়ে অল্প একটু তরকারি দিয়ে খাচ্ছি. এটা না করে চেষ্টা করবেন প্রতিবেলায় পেটের অর্ধেক শাকসবজি ফলমূল দিয়ে ভরতে প্লেটের চার ভাগের এক থাকবে 

গোটা শস্য দানা যেমন লাল ভাত বা লালা আটার রুটি আর বাকি টুকুতে আপনি ডাল, মাছ বা মাংস নিলেন. তাহলে এখন পর্যন্ত আমরা লাল চাল আর লাল আটা নিয়ে কি কি জানতে পারলাম? এক লাল চাল, লাল আটায় অনেক ধরনের পুষ্টিকর উপাদান যেমন ভিটামিন মিনারেল ফাইবার আছে যা সাদা চাল বা সাদা আটায় পাওয়া যায় না. দুই এই খাবার গুলো স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেটের উৎস তিন, এই খাবারগুলো diabetes, heart attack, stroke, ইত্যাদি রোগের ঝুঁকি কমায়, এমনকি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে. তো আজ এই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ