দুই সমুদ্রের পানি একত্রিত হয় না কেন? - আল-কোরআন ও বিজ্ঞান

 

[4.8]

দুটি সমুদ্রকে আল্লাহ তায়ালা পাশাপাশি প্রবাহমান করেছেন। তাদের মাঝে একটি অন্তরাল বা “বারযাখ” [Barrier Or anything that stands in the Way] সৃজন করেছেন, যা তারা অতিক্রম করতে পারে না। [সূরা আর রাহমান, আয়াত -১৯-২০]


সূরা আর রাহমানের এ আয়াত, পূর্ববর্তী, পরবর্তী আয়াতমালায় আল্লাহর অপার শক্তির কথা ব্যক্ত করা হয়েছে। এ আয়াতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সুক্ষ্ম বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে-


ক. দুটি সমুদ্রের বিরাট জলরাশি একটি সূক্ষ্ম জলস্রোতে মিলিত হওয়া একটি সাধারণ ব্যাপার ।


খ. দুটি সমুদ্রের মাঝে একটি বিশেষ ধাঁধা [ Obstacle and hindrance] থাকায় পরস্পর মিলিত না হওয়া । এ আয়াতে যে দু দরিয়ার কথা বলা হয়েছে সে বিষয়ে দুটো অভিমত পাওয়া যায।


ক. কারো কারো মতে মিঠা ও নোনা উভয় দরিয়া পাশাপাশি প্রবাহিত হওয়া সত্ত্বেও সেখানে বেশ দূর পর্যন্ত উভয়ের পানি আলাদা ও স্বতন্ত্র থাকে। একদিকে থাকে নোনা পানি আর অপরদিকে থাকে মিঠা পানি। কোথায়ও কোথায়ও এ মিঠা আর নোনা পানি উপরে নিচেও প্রবাহিত হয়। পানি তরল হওয়া সত্ত্বেও পরস্পরের সাথে মিশ্রিত হয় না। আল্লাহর এ মহা শক্তির কথা বলা হয়েছে। (তাফসীরে মা'আরেফুল কোরআন)


খ. আর কারো কারো মতে, রোম ও পারস্য সাগরের কথা বলা হয়েছে। আর এ বিষয়ে অন্যান্য তাফসীর [Explanation and the act of making clear] থাকাও অসম্ভব নয়।


বিজ্ঞানীদের অভিমত

বিজ্ঞানী কোষ্টা একজন প্রসিদ্ধ বিজ্ঞানী। খৃষ্ট ধর্মের সাথে তার গভীর সম্পর্ক ছিল।  সে সমুদ্রের পানি নিয়ে গবেষণা করেছিল, কি কারণে দুই সমুদ্রের পানির পরস্পর সম্মিলন ঘটে না। এক সমুদ্রের পানি এক রংয়ের এবং এক স্বাদের অপর সমুদ্রের পানি আরেক রংয়ের এবং আরেক স্বাদের।


বিজ্ঞানী কোষ্টারের গবেষণা সে সমুদ্রে গিয়ে প্রত্যক্ষ করল তারপর সে পানি সম্পর্কে গবেষণায় নিজের জীবন উৎসর্গ করে দিল এবং ‘কোষ্ট’ থিওরী' নামে একটি মতবাদ প্রতিষ্ঠা করল। কিছুদিন পর তার সঙ্গে একজন মুসলমান বিজ্ঞানীর সাক্ষাৎ হল, তাঁর সম্মুখে কোষ্টা যখন তার মতবাদ উপস্থাপন করল তখন তিনি বললেন— “আপনি তো এখন গবেষণা করেছেন। আমি আপনাকে শত শত বছর আগের গবেষণা দেখাতে পারব। যখন মুসলমান বিজ্ঞানী তাকে কোরআন দেখাল তখন কোষ্টা স্তম্ভিত হয়ে গেল এবং সে ইসলাম গ্রহণ করে ধন্য হল ।


ফ্রান্সের বিজ্ঞানী জাক ভি. কোষ্টা, যিনি সমুদ্রের ভিতর পানি রিসার্চ বিষয়ে প্রসিদ্ধ, তিনি বুঝতে পেরেছেন রোম সাগর | Medetrranian] এবং আটলান্টিক [Atlantic) মহাসাগর রাসায়নিক দিক থেকে একটি অন্যটির চেয়ে ভিন্ন রকম। তিনি এ বাস্তব সত্যটি অনুধাবন করার জন্য জিব্রাল্টারের দুই সমুদ্রের মিলন কেন্দ্রের কাছাকাছি সমুদ্রের তলদেশে গবেষণা চালালেন, সেখান থেকে তথ্য পেলেন যে— জিব্রাল্টারের উত্তর তীর [মারুকেশ] আর দক্ষিণ তীর [স্পেন] থেকে আশাতীতভাবে একটি মিষ্টি পানির ঝর্ণা উথলে উঠে। এ বড় ঝর্ণাটি উভয় সমুদ্রের মধ্য দিয়ে ৪৫° সূক্ষ্ম কোণে দ্রুত গতিতে অগ্রসর হয়ে চিরুণীর দাঁতের আকৃতি ধারণ করে বাঁধের ন্যায় কাজ করে । এ ক্রিয়াকলাপের ফলে রোম সাগর এবং আটলান্টিক মহাসাগর একটি আরেকটির সঙ্গে মিশতে পারে না।


সমুদ্রের মিলন কেন্দ্রে বাধার রহস্য

বিজ্ঞানী আব্দুল্লাহ আল-মুতীর [মৃত্যু ১৯৯৮ সাল] ভাষায় বলতে হয় : "এই যে বিশাল সাগর তা প্রাণেরও ভাণ্ডার। সারা দুনিয়ার যত প্রাণী আর উদ্ভিদ রয়েছে, পরিমাণের দিক থেকে প্রায় ৬ ভাগের ৫ ভাগই রয়েছে সমুদ্রে ....... একেবারে গভীর তলা পর্যন্ত ।

তাতে রয়েছে অসীম শরীরী [Organism] এবং আরো রয়েছে অসংখ্য অদ্ভুত ধরনের উদ্ভিদ। মোটকথা আল্লাহ তায়ালার কুদরতের এক বিরাট কারসাজি তাতে রয়েছে। এও সুস্পষ্ট কথা যে, বিভিন্ন প্রকারের প্রাণী বিভিন্ন পরিবেশে বাস করতে অভ্যস্ত। তাই, আল্লাহ তায়ালার কুদরত সমুদ্রগুলোতে একটি অপরটির মাঝে একাকার হতে দেয় না।

এ বক্তব্যটি আমাদের দৃষ্টিকে ২২ নাম্বার আয়াতে নিবদ্ধ করে দেয়। বিশেষ করে সমুদ্র তৈরির ধাঁচের দিকে এবং সামুদ্রিক উদ্ভিদ এবং মাছের বিভিন্ন প্রকারের দিকে। এ আয়াত উভয় সমুদ্রে মুক্তা এবং সামুদ্রিক মূল্যবান পাথরের উপস্থিতির কথা ঘোষণা করে। সমুদ্রের পানি পরষ্পর মিশ্রণ না হওয়ার কারণে সমুদ্রে বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ রয়েছে যে গুলোকে তাদের কুদরতী পরিবেশে দেখে সীমাহীন আনন্দ অনুভূত হয়। 


• দৃষ্টি আকর্ষ : যদি আপনাদের কাছে আজকের এই পোস্ট ভাল লেগে থাকে তাহলে আপনাদের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। প্রয়োজনে এ রকম আরো post পেতে আমাদের follow করতে পারেন। 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ