রসায়ন বিজ্ঞানের জনক জাবির ইবনে হাইয়ানের জীবনী | alhadimedia 360


জাবির ইবনে হাইয়ান এর পারিবারিক পরিচিতি

আধুনিক রসায়নের পটভূমি মুসলমানদের হাতেই গড়ে উঠেছে। কারণ যে সকল যন্ত্রপাতি বিভিন্ন প্রণালী ও যোগ আজ সাধারণ মানুষের নিকট অজ্ঞাত, তা হাজার বছর পূর্বেই মুসলিম রসায়নবিদগণ আবিষ্কার এবং আয়ত্ত্ব করেছিলেন। 

আরব তথা মুসলিম রসায়নের প্রভাব আধুনিক রসায়নে এতো ব্যাপক যে, বর্তমান কেমিস্ট্রি (Chemistry) শব্দটিও আরবি শব্দ আলকিমিয়া থেকে এসেছে। 


রসায়নকে বিজ্ঞানের রূপ দেওয়ার ব্যাপারে ও রসায়ন চর্চায় অনেক মুসলমান বিজ্ঞানীদের অসামান্য অবদান রয়েছে আর জাবির ইবনে হাইয়ান তাদের মধ্যে অন্যতম।


জাবির ইবনে হাইয়ান উনার পুর্ণ নাম হল আবু আব্দুল্লাহ জাবির ইবনে হাইয়ান। উনি আবু মুসা জাবির ইবনে হাইয়ান নামেও পরিচিত।

কেউ কেউ উনাকে ' আল হারারানী' এবং ' আবু সুফী' নামেও অভিহিত করেন। 

                                    

জন্ম : উনি কোন তারিখে জন্মগ্রহণ করেন তা সঠিকভাবে নির্ণয় করা যায় না। উনি (৭২১ ইসায়ী) সালে জন্মগ্রহণ করেন। 

উনার পিতার নাম ছিলো ইবনে হাইয়ান। তৎকালীন আরবের দক্ষিণ অংশে ওউনার পূর্বপুরুষগণ বসবাস করতেন। 


শিক্ষা অর্জন : দক্ষিণ আরবেই জাবির ইবনে হাইয়ান উনার শিক্ষা লাভ শুরু হয়েছিল। শিক্ষা লাভের প্রতি উনার ছিল পরম আগ্রহ। যে কোন বিষয়ে বই পেলে উনি তা পড়ে শেষ করে ফেলতেন এবং এর উপর গবেষণা চালাতেন।

খুব অল্প সময়ের মধ্যেই উনি গণিতের বিভিন্ন শাখায় বিশেষ পারদর্শী বলে খ্যাত হয়ে ওঠেন। শিক্ষা সমাপ্তির পর জাবির ইবনে হাইয়ান উনার পিতার কর্মস্থল কুফা নগরীতে গিয়ে বসবাস শুরু করেন।

সেখানে উনি প্রথমে চিকিৎসা ব্যবসা আরম্ভ করেন এবং এই সূত্রেই উনার সাথে হযরত জাফর সাদিক ( রহমাতুল্লাহি আলাইহি) উনার সাথে পরিচয় ঘটে। এবং জাবের ইবনে হাইয়ান উনার অনুগত্য গ্রহণ করেন। 

পরবর্তীতে হযরত জাফর সাদিক( রাহমাতুল্লাহ আলাইহি) উনার দিক নির্দেশনায় এবং অনুপ্রেরণায় জাবির ইবনে হাইয়ান রসায়ন ও চিকিৎসা বিজ্ঞানে গবেষণা শুরু করেন। 

খুব অল্প সময়ের মধ্যেই রসায়ন ও চিকিৎসা বিজ্ঞানী হিসেবে উনার সুখ্যাতি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। 

ওই সময়ে ছিল আব্বাসীয় খলিফা হারুনের রশিদের রাজত্বকাল। কিন্তু খলিফা হারুনুর রশিদের সাথে উনার তেমন কোন পরিচয় ও সাক্ষাৎ হয়নি। 

কিন্তু খলিফার বারমাক বংশীয় কয়েকজন মন্ত্রীর সাথে উনার গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো।             


গবেষণা : একবার ইয়াহিয়া বিন খালিদ নামক জনৈক বারমাক মন্ত্রীর এক দাসী মারাত্মক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। তৎকালীন দেশের সু প্রসিদ্ধ চিকিৎসকগণ তার চিকিৎসা করে ব্যর্থ হন। এই সময় মন্ত্রী প্রাসাদে চিকিৎসার জন্য ডাক পড়ে জাবির ইবনে হাইয়ান উনার। 

জাবির ইবনে হাইয়ান মাত্র কয়েকদিনের চিকিৎসার মাধ্যমে তাকে সুস্থ করে তুলেন। এতে ইয়াহিয়া বিন খালিদ খুব সন্তুষ্ট হন এবং জাবের ইবনে হাইয়ান উনার সাথে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। 

বারমাক বংশীয় কয়েকজন মন্ত্রীর মধ্যস্থতায় উনি রাষ্ট্রীয় কিছু সুযোগ সুবিধা লাভ করেন। এর ফলে উনি রসায়ন বিজ্ঞান সম্পর্কে ব্যাপক গবেষণা করার সুযোগ পান। মন্ত্রী ইয়াহিয়া এবং তার পুত্র জাবির উনার নিকট রসায়ন বিজ্ঞান শিক্ষা শুরু করেন। জাবির ইবনে হাইয়ান বিভিন্ন বিষয়ে নতুন নতুন তথ্য ও বিভিন্ন পদার্থ আবিষ্কার করতে আরম্ভ করেন।খুব অল্প দিনের মধ্যেই উনি শ্রেষ্ঠ রসায়ন বিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিত হন।  

জাবির ইবনে হাইয়ান উনার জীবনের অধিকাংশ সময়ই বাগদাদে কাটিয়েছেন। কিতাবুল খাওয়াসের ঘটনাবলী থেকে বুঝা যায় যে অষ্টম শতাব্দীর শেষ দিকে উনি বাগদাদেই উনি রসায়ন ও চিকিৎসা বিজ্ঞানে গবেষণা চালিয়েছিলেন। বাগদাদেই উনার রসায়নাগার স্থাপিত ছিল। 


অবদান : জাবির ইবনে হাইয়ান উনার অবদান মৌলিক। উনি বস্তুজগত কে প্রধানত: তিনভাগে বিভক্ত করেন। 

প্রথম ভাগে স্পিরিট, দ্বিতীয় ভাগে ধাতু এবং তৃতীয় ভাগে যৌগিক পদার্থ। 

উনার এই আবিষ্কারের উপর নির্ভর করেই পরবর্তী বিজ্ঞানীরা বস্তু জগতকে তিনটি ভাগে ভাগ করেন। 

জাবির ইবনে হাইয়ান তিনি এমন সব বস্তু বিশ্বসভ্যতার সামনে তুলে ধরেন, যেগুলোকে তাপ দিলে বাষ্পায়িত হয়।

এ পর্যায়ে আছে কর্পূর, আর্সেনিক ও এমোনিয়াম ক্লোরাইড।উনি দেখান কিছু মিশ্র ও যৌগিক পদার্থ যেগুলোকে অনায়াসে চূর্ণে পরিণত করা যায়। 

নির্ভেজাল বস্তুর পর্যায়ে উনি তুলে ধরেন সোনা, রুপা, তামা, লোহা, দস্তা প্রভৃতি।


রাসায়নিক যন্ত্রপাতি আবিষ্কার : জাবির ইবনে হাইয়ান উনার 'আইনুস সানাহ' এবং আল রাজীর 'কিতাবুল আসরার' ও 'মাদখাল' গ্রন্থে আরব রাসায়নিক যন্ত্রপাতির বর্ণনা পাওয়া যায়। 

ব্যবহারিক রসায়নের সুচনাকারী : জাবির ইবনে হাইয়ান প্রতিটি বিষয়ই যুক্তির সাহায্যে বুঝবার ও অনুধাবন করার চেষ্টা করেছেন। উনি সর্বদা হাতে কলমে কাজ করতেন। প্রতিটি বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পর্যবেক্ষণ করে তার ফলাফল লিখে রাখতেন। উনি ওনার 'কিতাবুত তাজে' পুত্রকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছেন, রাসায়নিকের সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ কাজ হলো হাতে-কলমে পরীক্ষা চালানো।যে হাতে কলমে কিংবা পরীক্ষামূলক কাজ করে না তার পক্ষে সামান্যতম পারদর্শিতা লাভ করাও সম্ভবপর নয়"


                      


রাসায়নিক প্রণালী আবিষ্কার : মুসলিম রসায়ন বিজ্ঞানীদের হাতেই প্রায় সবগুলো রাসায়নিক প্রণালী আবিষ্কৃত হয়। জাবির ইবনে হাইয়ান বিশুদ্ধ পাতন (আত-তাকতির), ফিল্ট্রেশন(আত-তারশিহ), স্ফটিকীকরণের মাধ্যমে বিশোধন (আত-তাবাল্যুর), তরলীকরণ, বিশুদ্ধিকরণ, অক্সিডাইজেশন,বাস্পীকরণ(তাবখীর), কেলাসন(Crystallization), গলন(melting),ঊর্ধ্বপাতন প্রণালী আবিষ্কার করেন। পাতন,উর্ধ্বপাতন,পরিস্রাবণ,দ্রবণ,কেলাসন,ভস্মীকরণ, গলন,বাষ্পীভবন ইত্যাদি রাসায়নিক সংশ্লেষণ বা অনুশীলন গবেষণাগার কি কি রুপান্তর হয় এবং উনার ফল কি উনি তাও বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন।







একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ